#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁
#পর্বঃ৪৩
#লেখনীতে_suraiya_rafa
[ক,পি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য]
পরন্ত বিকেলে মিয়িয়ে যাওয়া সূর্য কীরণ তীরের ফলার মতোই তীর্যক আকার ধারন করেছে। সেই তীর্যক সূর্য কীরণের সোনালী আলোক রশ্মিটুকু আঁচড়ে পরছে নীলিমাদের দোতলা ভবনের ছাঁদে। যেখানে এই মূহুর্তে নির্দিধায় নৃত্য করতে সয়ং নীলিমা।
নাচে ওর বাধ্যবাধকতা নেই, শখ করেই নাচ শেখা। যেমনটা চারুকলায় গিয়ে আঁকাআকির ক্ষেত্রে। আব্বাজানের একমাত্র মেয়ে হওয়ায়,মেয়ের কোনোরূপ শখ আহ্লাদের ত্রুটি রাখেন না নীলিমার বাবা তাইয়েব জামান।
ছোটবেলা থেকেই বাবার আহ্লাদ পেয়ে পেয়ে নীলিমা ও হয়েছে একরোখা আর বড্ড বেয়ারা। যাকে দেবে তো হৃদয় উজাড় করে দেবে, আর যাকে দেবে না তাকে একরত্তি ও না। পছন্দ অপছন্দের ক্ষেত্রেও একই স্বভাব নীলিমার। তবে বর্তমানে ওর অপছন্দের শীর্ষে রয়েছে সায়র, এক কথায় ক্রীতিক কুঞ্জের সেই বিদেশি বাঁদর টা। অতো নাম মনে রাখার সময় আছে নাকি নীলিমার?
অপছন্দের শীর্ষ তালিকার মানুষটার কথা ভাবতেই গিয়েই বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে গেলো নীলিমার, মনমনে ভাবলো,
—- মানুষ এতোটা বি’রক্তিকর আর অ’সহ্য কি করে হতে পারে? কি করে?
সায়রের কথা ভাবতে গিয়ে নীলিমা যখন বারবার নাচের মূদ্রায় ভুল করছিল আর চোখ মুখ খিঁচিয়ে সায়রের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছিল, ঠিক তখনই বাড়ির সামনে স্ট্যান্ড করা বাইক দেখে চোখ আটকে গেলো নীলিমার।
ও নাচ বাদ দিয়ে এগিয়ে এসে ছাদের পাঁচিল ঘেঁষে দাড়াতেই দেখতে পেলো সায়র দাঁড়িয়ে আছে। সায়রকে দেখে নীলিমা কটমটিয়ে বললো,
— এখন বুঝেছি, শনি তাকিয়ে ছিল বলেই তখন বারবার ভুল করছিলাম।
আপাতত ওর দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাত নাড়ছে সায়র, আর সায়রের থেকে কিছুটা দূরে অন্যদিকে তাকিয়ে সিগারেট ফুঁকছে অর্ণব। নীলিমাকে উঁকি দিতে দেখেই সায়র নিচ থেকে কথা ছুড়লো,
— উপরে আসবো কি?
নীলিমাদের ছোট্ট বাড়ি, ছাঁদে আসার সিঁড়ি টাও বাইরের দিকে, যে কেউ চাইলেই ফট করে উঠে আসতে পারবে,আপাতত সেসব কথা বাদ, এই বাঁদরটা কি করে ওর ঠিকানা খুঁজে পেলো সেটাই ভাবনার মোক্ষম বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে নীলিমা মস্তিষ্কে।
নীলিমাকে নিস্প্রভ চোখে ধ্যান মগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সায়র আর অনুমতির অপেক্ষা করলো না, তরতর করে সিঁড়ি ডিঙিয়ে উঠে এলো নীলিমাদের ছাঁদে।
সায়র উপরে এসে নীলিমার চুলে টোকা মা’রতেই ভ্রম ছুটে গেলো নীলিমার, ও তৎক্ষনাৎ সায়রের দিকে অ’গ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
—- ব’দমাশ পুরুষ, আপনি এখানে কি করছেন? আমাদের বাসার ঠিকানাই বা খুঁজে পেলেন কি করে?
সায়র একটা চমৎকার হাসি দিয়ে বললো,
— কি যে বলোনা, আমার না হওয়া শশুর বাড়ি আর আমি খুঁজে পাবোনা?
সায়রের কথায় নীলিমার চোখ কপালে, ও হতবাক হয়ে বললো,
—- আশ্চর্য, কে আপনার শশুর?
— কেন, তোমার আব্বাজান।
নীলিমা এবার মেকি হাসলো, সায়রের সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
— ওহ তাই বুঝি? আমার আব্বাজান বুঝি আপনার শশুর? তা একটু ডেকে পাঠাই, বলি তার একমাত্র জামাই কে একটুখানি জামাই আদর করে যেতে?
সায়র নিজের শার্টের কলারটা পেছনে ঠেলে বললো,
— হ্যা হ্যা বলো। আই এপ্রেসিয়েট।
সায়রের কথায় হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে নীলিমা তৎক্ষনাৎ গলা ছেড়ে ডেকে ওঠে,
— আব্বাজান, হুনতাছেন?
তৎক্ষনাৎ নিচ তলা থেকে এক গুরুগম্ভীর কর্কষ আওয়াজ ভেসে এলো,
—- কিতা অইছে আম্মাজান, ডাক পারতাছেন ক্যালা?
নীলিমা আবারও চেচিয়ে বলে ওঠে,
—- ছাঁদে আইয়েন, দেইখা যান বালা, আমগো ছাঁদে বিদেশি বাঁন্দর লাফাইয়াছে।
—- কি কইতাছেন আম্মাজান এসব? লাঠি নিয়া আমুনি?
—- না আব্বাজান, বাঁশ নিয়া আহেন, আছোলা বাঁশ।
নীলিমার কথায় সায়র হতবিহ্বল, হতভম্ব হয়ে মুখ হা করে দাঁড়িয়ে আছে, শেষমেশ হবু শশুরের কাছ থেকে কিনা আছোলা বাঁশ খাওয়ার হু’মকি এলো? এ কেমন দস্যি মেয়ে?
নীলিমা মিটিমিটি হেসে আবারও গলা উঁচিয়ে কিছু বলবে তার আগেই তরিৎ বেগে এগিয়ে এসে আলতো হাতে ওর মুখটা চেঁপে ধরলো সায়র। নীলিমার ডাগর ডাগর কৌতহলী চোখের দিকে তাকিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,
—- এ্যাই মেয়ে, তুমিকি সত্যি সত্যি আমাকে মা’র খাওয়ানোর প্ল্যান করছো নাকি?
নীলিমা সায়রের হাতের মধ্যে থেকেই বোকা বোকা চোখে হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।
নীলিমার চোখের দিকে তাকিয়ে তৎক্ষনাৎ ফিক করে হেঁসে দিলো সায়র, হাসতে হাসতে বললো,
—- তুমি বুঝি বাড়িতে এভাবে কথা বলো? ইটস সো ফানি ইয়ার।
সায়রের কথা শুনে নীলিমার ম্লান হয়ে যাওয়া উ’গ্র মেজাজ টা আবারও তরতরিয়ে মাথায় চড়ে উঠলো, ও সায়রকে ধা’ক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো,
—- ভাষা নিয়ে মশকরা করলে সত্যি সত্যি আজ আব্বাজানকে দিয়ে আপনার শশুর বাড়ি আসার শখ মিটিয়ে দেবো, বলে দিলাম।
সায়র চোখ ছোট ছোট করে সন্দিহান গলায় বলে,
—- তারমানে তুমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে হলেও সীকার করছো যে আমি আমার হবু শশুর বাড়িতে এসে পরেছি। তাইতো?
নীলিমা কটমটিয়ে বললো,
—- আপনি চাইছেন টা কি বলুন তো?
সায়র দুষ্ট হেসে বললো,
— তেমন কিছু নয়, আপাতত একটু জামাই আদর খেতে চাচ্ছি ,খাওয়াবে নাকি?
নীলিমা রাগী নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
—- একটু দাড়ান খাওয়াচ্ছি আপনাকে জামাই আদর, পরক্ষনেই গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো ও,
—– আব্বাজান, হুনতাছেন!
সায়র বোধ হয় কুক্ষণেও আশা করেনি যে, নীলিমা আবারও চেঁচাবে। হঠাৎ এভাবে চেঁচিয়ে ওঠাতে সায়র নিজেও ভড়কে গিয়েছে,
ওদিকে ভেতরের সিঁড়ি থেকে ধাপ ধাপ আওয়াজ ভেসে আসছে, কেউ একজন এগিয়ে আসতে আসতে বলছে,
— আইতাছি আম্মা, বাঁশ খান জোগাড় করতে দেরি অয়া গেলোগা।
এ কথা শুনে সায়র চোখ বড়বড় করে উপরওয়ালার নাম জপে বলে উঠলো ,
—- হে খোদা এ কাদের পাল্লায় পরলাম আমি? যেমন মেয়ে তার তেমন বাপ, মেয়ে বাঁশ জোগাড় করতে বললো, অমনি বাপ বাঁশ নিয়ে হাজির?
তাইয়েব জামান সিঁড়ি ঘরের কাছাকাছি চলে আসাতে নীলিমা সায়রের দিকে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে বললো,
— এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? যান’না। আব্বা দেখে ফেললে খবর আছে।
সায়র নিচে যেতে যেতে অভিমানী সুরে বললো,
—- আব্বাজানকে বাঁশ দিতে ডেকে এনে এখন আর দরদ দেখাতে হবে না। আসছি বায়।
***********************************************
সন্ধ্যা থেকেই তীব্র বর্ষন। বৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে মুখরিত চারিপাশ। রৌদ্রের খাঁ খাঁ বিকেলের ইতি টেনে মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে ,
এ বুঝি জৈষ্ঠ্যের পূর্বাভাস?
পুরো ঢাকা শহরে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হচ্ছে, যার দরুন, চারিদিক ধোঁয়াসা আর মানব শূন। সেই শেষ বিকেল থেকে বাংলা একাডেমির গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে অরু, অথচ এখন সন্ধ্যা পেরিয়ে জলোচ্ছ্বাসিত রাত।
অনুর বিয়ের কত কত আয়োজন, মন খারাপের পশরা, সবকিছুকে একপাশে ঠেলে সকাল সকাল বাংলা একাডেমিতে এসেছিল অরু। এর কারণ, আজকেই ওর প্রথম লেখা সাবমিট করার শেষ দিন ছিল। পুরো উপন্যাস নয়,একাংশ মাত্র।
ক্রীতিকের হাজার মাইল দূরত্ব যখন অরুকে খুব পো’ড়াতো, একাকীত্বের য’ন্ত্রনায় ডু’বিয়ে দিতো, সে’সময়টাতেই এক সমুদ্র য’ন্ত্রনায় হাবুডুবু খেতে খেতে একাডেমির সবার উৎসাহে লেখা শুরু করেছিল অরু।
পুরোপুরি শেষ না হলেও যেটুকু লেখা হয়েছে সেটাই আজ জমা দিতে আসা। প্রতীক্ষা একটাই প্রথম বার না হলেও কয়েকবার চেষ্টা করলে প্রকাশনীদের নজরে আসলেও তো আসতে পারে।
কিন্তু দিন শেষে কি হলো? বৃষ্টির মাঝে পুরো দস্তুর আটকে পরলো অরু। শেষ বিকেলে যখন ঝুম বৃষ্টি নামলো তখন রিকশা কিংবা গাড়ি নিয়ে একে একে সবাই একাডেমি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। অরুর বুদ্ধি বরাবরই কম, কিংবা বেশি বলেই ,বারবার ভুল করে বসে থাকে মেয়েটা, আজও সেটাই হলো, ঝুম বৃষ্টির মাঝে অরু আর রিকশা নিলোনা, মনেমনে ভাবলো,
—- বৈশাখের ঝড়, একটু বাদেই থেমে যাবে নিশ্চয়ই। কষ্ট করে খানিকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলে, বৃষ্টি কমার সাথে সাথে রিকশা সিএনজি সব হাতের কাছে পাওয়া যাবে। এখন গায়ে বৃষ্টি লাগিয়ে কি লাভ? শুধু শুধু।
কিন্তু বলেনা, অভাগা যেদিকে যায়, দূ-কুল শুকিয়ে যায়, অরুর ক্ষেত্রেও সেটাই হলো। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে নিশুতি রাতে ছেয়ে গেলো ধরনী,
তবুও বৃষ্টি তো কমলোই না উল্টে ঝড়ের তান্ডবে চারিদিক লন্ডভন্ড।
একাডেমির গেইট বন্ধ হয়ে গিয়েছে অনেকক্ষন আগে। চারিদিকে মানুষ তো দূরে থাক একটা নেড়ি কুকুরের ও আওয়াজ নেই। রাস্তায় অবশিষ্ট সোডিয়ামের নিয়ন আলোটুকু তীর্যক আলো ছড়াচ্ছে চারিপাশে, তবে ঝড়ের তান্ডবে সেটাও ক্ষীণ মনে হচ্ছে।
প্রথমে ঝুম বৃষ্টি আর এখন দা’নবীয় ঝড়, বিদ্যুৎ এর ঝলকানিতে ক্ষনে ক্ষনে গ’র্জে উঠছে আকাশ। তারউপর ঘূ’র্নিবায়ু। অরুর মনে হচ্ছে এই দূ’র্যোগের মাঝে আশেপাশের জড়বস্তুর মতোই ও নিজেও উড়ে গিয়ে অন্য কোথাও ছি’টকে পড়বে। কারণ বাতাসের তান্ডবে অরুর রোগা পাতলা তনু শরীরটা ভে’ঙে চু’ড়ে যাওয়ার উপক্রম।
ঝড়ের সাথে তাল মিলিয়ে বারংবার গগন কাঁপানো বিকট ব’জ্রপাতে কেঁপে উঠছে অরু। ঝড়বৃষ্টি যাও সহনীয় ছিল। কিন্তু এই ব’জ্রপাতের আওয়াজ অরুর কলিজায় গিয়ে লাগছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি ওর মাথার উপরেই এসে পরলো বুঝি ভয়’ঙ্কর বিদ্যুৎের হল্কাখানি।
এই ঝড়ের মধ্যে একা একা এমন নিস্তব্ধ পরিবেশে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে তীব্র ভ’য়ে আর আ’তঙ্কে অরুর গলা শুকিয়ে কাঠ, বুকের কাছটা হাঁপরের মতো ওঠানামা করছে, মাথাটা ঝিমুনি দিয়ে উঠছে ক্রমশ।
গেইটের সামান্য সরু ছাউনি ওকে বৃষ্টি কিংবা বজ্রপাত কোনোকিছুর হাত থেকেই রক্ষা করতে পারছে না। প্রকৃতির এমন দান’বীয় বি’ধ্বংসী রূপ দেখে অকস্মাৎ বসে পরে কানে দু’হাত দিয়ে শব্দ করে কেঁ’দে উঠলো অরু। বসার সঙ্গে সঙ্গেই এক তীব্র জলো’চ্ছ্বাসের ছাঁট এসে আঁচড়ে পরলো ওর চোখেমুখে, এমতাবস্থায় না চাইতেও আ’তঙ্কে চিৎকার দিয়ে উঠলো অরু,
—- মা, ভয় করছে!!
চারিদিকে প্র’লয়ঙ্কারী ঝড়ের তান্ডব। না চাইতেও ক্রীতিকের চেহারাটা বারবার ভেসে উঠছে অরুর মানস্পটে। অথচ অরু জানে ক্রীতিক যেই পরিমাণ রে’গে আছে, আজ ভ’য় পাওয়া তো দূরে থাক, অরু ম’রে গেলেও ক্রীতিক নিজের জিদ খুয়িয়ে ওকে নিতে আসবে না, কখনোই না।
ক্রীতিক যদি অরুর খোজ করতো কিংবা অরুর জন্য কোনোরূপ চিন্তাই হতো ওর মনে, তাহলে তো যখন ঝড় শুরু হলো তখনই নিতে আসতো, এতো দেরী করতো না নিশ্চয়ই?
অরু বারবার ভুল প্রমানিত হয়, মিথ্যে আশায় বুক বাধে,মানুষটা ওর উপর রেগে আছে যেনেও তার পথ চেয়ে বসেছিল, এবার হলোতো? ঝ’ড়বৃষ্টির তা’ন্ডবে ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে গেলো অথচ অরুকে নিতে কেউ এলোনা, কেউ না।
এই পর্যায়ে এসে অরুর মনে হচ্ছে ও আসলেই খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়। ক্রীতিকের জীবনে তো অন্তত নয়। কিছু অযাচিত ভাবনায় পরতে পরতে আকাশের প্র’কান্ড গ’র্জনে আবারও কম্পিত কন্ঠে চিৎকার দিয়ে উঠলো অরু,
—-আ’মা ভয় করছে!
চিৎকার দেওয়ার পরপরই গা ছেড়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো অরু, কাঁদতে কাঁদতে বললো,
—- আমি বাড়ি যাবো, আমি মায়ের কাছে যাবো,আপার কাছে যাবো, কোথায় তুমি জায়ান ক্রীতিক? এই বিদ্যুৎের আলোতে আমার খুব ভ’য় করছে।
আবারও মুখের উপর জলো’চ্ছ্বাসের ছাট পরার সঙ্গে সঙ্গে আহাজারী বন্ধ হয়ে গেলো অরুর। মনে হচ্ছে চারিদিকের শ’ত্রুরদল ঘিরে রেখে আছে ওকে, অরু একটা টু শব্দ করলে আবারও ওকে মা’রতে এগিয়ে আসবে ওরা। সেই ভেবেই ভয়ের চোটে শুকনো ঢোক গিলে চুপসে গেলো মেয়েটা, অরুর এখন সন্দেহ হচ্ছে কাল সকাল অবধি আদৌও ও বেঁচে থাকবে তো?
এটাই ছিল মূর্ছা যাওয়ার আগে অরুর শেষ ভাবনা, কারন অরুর এখন মনে হচ্ছে ও চেতনা হারাবে খুব শীঘ্রই।
তবে হারালো না, গল্পের পেছনেও যেমন গল্প থাকে, তেমনই অরুর ছোট্ট মস্তিষ্কের ভাবনা যেখানে গিয়ে শেষ হয়, ক্রীতিকের ভাবনা সেখান থেকেই শুরু। অরুর আধোও আধোও চোখ জোড়া শেষবারের মতোন যখন চারিদিকে কাউকে খুজে না পেয়ে সর্বশান্ত, ঠিক সেই সময় দিশেহারা কন্ঠে পেছন থেকে চিৎকার দিয়ে ওকে ডেকে উঠলো কেউ,
—- অরুউউউ!
চেনা পরিচিত আন্তরিকতা জড়ানো পুরুষালী কন্ঠস্বরটা কর্ণগহ্বরে পৌঁছাতেই অকস্মাৎ পেছনে চাইলো অরু, ক্ষনিকের বিদ্যুৎ হল্কানির আলোয় দেখতে পেলো ঝড়ের মাঝে ফুল ফর্মাল গেটাপে বৃষ্টিতে ভিজে জুবুথুবু হয়ে ওর সামনেই দাঁড়িয়ে আছে ওর স্বামী, ওর ব্যক্তিগত পুরুষ, ওর ব’দমেজাজি লোকটা, ওর জায়ান ক্রীতিক।
ক্রীতিক এখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজে যাচ্ছে, কিন্তু অরু একনজর ক্রীতিকের মুখশ্রী পরখ করেই,মাথাটা নুয়িয়ে তীব্র অভিমানে খুনখুনিয়ে বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠলো, ওর কা’ন্নারা ক্রীতিককে স্পষ্ট জানান দিচ্ছে,
—- আরও আগে কেন এলেনা? তুমি জানো আমি কতোটা ভ’য় পেয়েছি?
ক্রীতিকের ঠান্ডার ধাঁচ আছে, একটুতেই ঠান্ডা লেগে যায়, তার উপর ঝড়বৃষ্টির মাঝে শাপলা চত্বরের জ্যামে পরে গাড়িটা ওখানেই ফেলে রেখে হেটে হেঁটে এতোদূর এসেছে।
এখন আবার তার ছোট্ট বউটা অভিমান করে বসে আছে। তাই কয়েকদফা হাঁচি দিয়ে, অরুর কাছে এগিয়ে গেলো ক্রীতিক। প্রথমে অরুর ব্যাগটা নিজের গলায় ঝোলালো, তারপর একটানে অরুকেও কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা দিলো ঝড়ের মাঝেই।
এখনো আগের মতোই ঝড় হচ্ছে, গগন কাঁপানো বজ্রপাতে কম্পিত হচ্ছে ধরনী, অথচ অরু একটুও ভ’য় পাচ্ছে না কি আশ্চর্য!
ভয়ের বদলে এখন ওর মাথায় যেটা ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হলো কেবলই অভিমান, অভিমানের তোপে হৃদয়টা শক্ত হয়ে আছে ওর, অগত্যাই ক্রীতিকের কোলে বসে সেটারই বহিঃপ্রকাশ ঘটালো অরু, নিজের ছোট ছোট কোমল হাতে ওর চওড়া বুকে ধা’ক্কা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঠোঁট ফুলিয়ে বলে ওঠে ,
—- ছেড়ে দিন যাবোনা আপনার সাথে। আমি একাই যেতে পারবো।
ক্রীতিক নিজের হাঁচি সংবরন করে বললো,
—- বেইবি, দেখ আমার ঠান্ডা লেগে গিয়েছে, যা বলার বাড়িতে গিয়ে বলিস, আমাকে মা’রিস তখন, আমি কিচ্ছু বলবো না, চুপচাপ সহ্য করবো । কিন্তু এখন নামিয়ে তোর রা’গ ভাঙাতে পারবো না, অলরেডি অনেক ভিজেছি। আমার নি’উমোনিয়া হলে তখন কিন্তু তুইই সবথেকে বেশি কা’ন্নাকাটি করবি।
ক্রীতিকের ইমোশনাল ব্লাকমেইলে অরু চুপ হয়ে যেতে বাধ্য হয়, অগত্যাই ক্রীতিকের গলা জড়িয়ে ধরে চুপচাপ ফোপাঁতে থাকে অরু।
অতঃপর হেটে মেইন রাস্তায় গিয়ে তবেই একটা সিএনজির দেখা পায় ওরা, সেটাকে বলে কয়ে ডাবল ভাড়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তবেই ক্রীতিক কুঞ্জের রাস্তা ধরানো হলো। ক্রীতিক একা থাকলে হয়তো এতো কসরত করতে যেতোনা, মূলত অরুর সেইফটির জন্যই এতো খাটুনি।
***********************************************
রুমে এসে কোল থেকে নামিয়ে দিতেই অরু এক ছুটে বারান্দায় চলে যায়। পুরো রুম অন্ধকারে ছেয়ে আছে, বাইরে তীব্র বর্ষন। অরু, ক্রীতিক দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজে একাকার।
অথচ অরু রাগের চোটে আবারও ছুটে বেলকনিতে চলে গেলো। ক্রীতিক আলো জ্বালানোর প্রয়োজন বোধ করলো না।
বরং দ্রুত হাতে দরজা লক করে, অরুর তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে এগিয়ে গেলো বারান্দার কাছে। অরু বৃষ্টির দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে, ওর পরনে ভেজা টপস আর স্কার্ট। ক্রীতিকের ইন করা সফেদ শার্টটাও ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে রয়েছে। ও সে’সবে পরোয়া করলো না,উল্টে এগিয়ে গিয়ে অনেকটা ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে পেছন দিক থেকে অরুর ভেজা চুলে ক্রমাগত চুমু খেতে খেতে কাতর গলায় বললো,
—- আ’ম সরি হার্টবিট, ইট’স মাই ফল্ট, আর কখনো এমন হবে না, কখনো তোমাকে এতোটা ক’ষ্ট দেবো না, কালকের জন্য আ’ম রিয়েলি সরি। আর আজ আমি বুঝিনি তুমি এতোটা ভ’য় পাবে, তাহলে আর জ্যামে বসে সময় নষ্ট করতাম না তখনই হাটা ধরতাম।
একান্ত ঘনিষ্ঠ মূহুর্তে ক্রীতিক অরুকে তুমি করে ডাকছে, তারউপর এভাবে কাকুতি মিনতি করে সরি বলছে। অরু কল্পনাতেও হয়তো ক্রীতিকের এই রূপ আবিষ্কার করেনি কোনোদিন, অথচ আজকে এসব অরুর চোখের সামনে ঘটছে। ভালোবাসা মানুষকে কতটা দূর্বল আর কতটা অপারগ বানিয়ে দেয় তার জলজ্যান্ত প্রমান জায়ান ক্রীতিক।
কাল নিজেই রাগ করলো আর আজ নিজেই সরি চাচ্ছে। ক্রীতিকের এহেন ভালোবাসায় মাখামাখি আওয়াজে নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না অরু।কোনোরূপ ছলচা’তুরী না করেই ক্রীতিকের দিকে ঘুরে ওর চওড়া ঢেউ খেলানো বুকে মাথা এলিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো ও। কাঁদতে কাঁদতে ক্রীতিকের ভেজা শার্টটা খা’মচে ধরে বললো,
—- আমি ভেবেছিলাম আপনি আজ আর আসবেন না, এই ঝড়ের মাঝেই ম’রে পরে থাকবো আমি।
ক্রীতিক গ্রীবাটা নিচে নামিয়ে একহাতে অরুর ভেজা চুল গুলো কানে গুঁজে দিতে দিতে হাস্কিটোনে বললো,
— না এসে কি করে থাকতাম?আমার আত্নাটা যে তোর মাঝে। হাজার বার বিচ্ছেদের পরেও উপসংহারে আমি তোকেই চাই অরু, শুধু তোকে। নো ওয়ান এলস।
অরু আবারও ঠোঁট কামড়ে কেঁদে ওঠে, কাঁদতে কাঁদতে শুধায়,
—- কি আছে আমার মাঝে?কেন এতো ভালোবাসা?
ক্রীতিক ঠোঁট উল্টে নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো,
—- জানিনা তো, তবে হ্যা, একটা জিনিস আছে যা আমার এখনই চাই, রাইট নাও।
মূহুর্তেই ক্রীতিকের কথার ধরন পাল্টে গিয়েছে, কন্ঠে ভর কাছাকাছি আসার প্রখর আকুতি, তা অরু স্পষ্ট টের পেয়েছে। টের পাওয়ার দরুন, ক্রীতিকের কাছ থেকে ছুটে গিয়ে কয়েক কদম দূরে সরে গেলো অরু।
অরু দূরে সরে যাওয়াতে ক্রীতিক খানিকটা বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
—- কি হয়েছে?
অরু মুখ কাঁচুমাচু করে বললো,
—- আপনাকে ভ’য় করছে, সেবারের মতো যদি আমাকে হ্যা’ন্ডকাফ্…..
অরুর কথা শেষ হওয়ার আগেই ওর হাতে হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে ঘুরিয়ে নিয়ে এলো ক্রীতিক, অতঃপর ওর লম্বা চুলগুলো সরিয়ে আলতো হাতে অরুর ওড়নাটা টেনে খুলতে খুলতে বললো,
—- এখানে হ্যা’ন্ডকাফ্ কোথায় পাবো হুম? শুধু একটু কথা শুনবি তাহলেই হবে।
অরু আবারও ক্রীতিকের থেকে সরে তারাহুরো পায়ে বেতের সোফায় গিয়ে বসে পরে। অরুর কান্ডে এবার বিরক্ত হয়ে গেলো ক্রীতিক, কিছুটা ধমকে উঠে বললো,
—- কি হয়েছে, রা’গাচ্ছিস কেন আমাকে?
অরু অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ক্রীতিকের পানে, ওর ঠোঁট জুগল তিরতিরিয়ে কাঁপছে। চোখের কোটর নতুন উদ্যমে ভিজে উঠেছে অশ্রুজলে। এমন একটা মূহুর্তে অরুকে কাঁদতে দেখে ক্রীতিক এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসে, অরুকে নিজের উরুর উপর বসিয়ে গভীর গলায় শুধালো,
—- আমার টাচ খারাপ লাগছে? চলে যাবো আমি?
অরু মাথা নুইয়ে না সূচক মাথা নাড়ালো।
ক্রীতিক বললো,
—- তাহলে কাঁদছিস কেন? হোয়াই?
অরু এবার মুখ খুললো, ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
—- সবাই বলে আমি শুকিয়ে গিয়েছি, আগের মতো সৌন্দর্য নেই আমার। ভয় হচ্ছে এখন আপনিও যদি আমাকে অসুন্দর আবিষ্কার করেন, আমার উপর আপনার অনীহা চলে আসে তখন?
ক্রীতিক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,এই মেয়ে কেন তার অবসেশনটা বুঝতে পারেনা কে জানে? অরু সুন্দর, অসুন্দর, শুকিয়ে গেলো না মোটা হলো, তা নিয়ে ক্রীতিকের বিন্দু মাত্র মাথা ব্যথা নেই। তার চেয়েও বড় কথা সৌন্দর্য বিশ্লেষণ করা তো দূরে থাক, অন্য মেয়েদের দিকে ওই চোখে তাকানোর মতোও ধৈর্য নেই ক্রীতিকের, কি করেইবা থাকবে? এক অরুকে দেখতে দেখতেই তো ওর জীবন পার।
ক্রীতিক চুপচাপ বসে আছে দেখে অরু নাক টেনে পেছনে তাকিয়ে শুধালো,
—- রাগ করেছেন?
ক্রীতিক হ্যা না কিছুই বলেনা,কোনোরূপ ও’য়ার্নিং ছাড়াই একটানে অরুর সম্ভ্রমটুকু খুলে ছু’ড়ে ফেলে দেয় মেঝেতে, সাথে নিজের শার্টটাও, তারপর ওকে কোলে নিয়ে বেডের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,
—- আজ আমিও দেখবো কি কমতি আছে তোর মাঝে, যা আমাকে উ’ন্মাদ করে দিতে ব্যর্থ। জায়ান ক্রীতিক যদি তোর সৌন্দর্যে আবিষ্ট হয়ে তোর মাঝে ডুব দেওয়ার জন্য একবার উ’ন্মাদ হয়ে পরে,তবে পৃথিবীর সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে তুই তুলনাহীন বেইবি।
আমাকে যতদিন এভাবে উ’ন্মাদ করতে পারবি, ঠিক ততোদিন তুই অতুলনীয় সৌন্দর্যে আবৃত থাকবি। আর বারবার সেই সৌন্দর্যের সবটুকু পরম আবেশে আহরণ করবো আমি, শুধুই আমি। ইউ ক্যান মার্ক মাই ওয়ার্ড।
ক্রীতিকের এতো ভারী ভারী কথা বোঝার সাধ্যি নেই অরুর। আপাতত ও এসব বোঝার অবস্থাতেও নেই। স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া মিষ্টি য’ন্ত্রনায় এলোমেলো অরু, সেই সাথে পরিপূর্ণ ও।
বর্ষনের শেষ রাতে অরুর চোখের কার্ণিশ বেয়ে আবারও গড়িয়ে পরলো কয়েকফোঁটা তপ্ত নোনাজল, তবে এই জলে দুঃখ ছিলোনা, ছিল একরাশ ভ’য়াভহ পূর্ণতা।
***********************************************
বৈশাখী ঝড়ের তান্ডব শেষে আজ সকাল সকালই সূর্যি মামার দেখা মিললো পূবের আকাশে। দক্ষিণের জানালাটা হাট করে খুলে রাখায় সূর্যের আলোয় ফকফক করছে চারিপাশ। তীক্ষ্ণ আলোতে খুব সকালেই ঘুম ছুটে গেলো অরুর। ঘুম ছুটে যাওয়ায় কিছুটা আড়মোড়া ভেঙে চারিদিকে চোখ ঘুরাতেই ও নিজেকে আবিষ্কার করলো ক্রীতিকের শরীরের নিচে।
ক্রীতিক উপুর হয়ে অরুর বুকে মাথা রেখে,দু-হাতে অরুর কোমড় জড়িয়ে ধরে নির্বিগ্নে ঘুমুচ্ছে। অরু ঘুমু ঘুমু চোখে লাজুক হেসে খানিকক্ষণ ক্রীতিকের সিল্কি চুলের ভাঁজে হাত বোলালো, তারপর আস্তে করে রয়ে সয়ে উঠে গেলো বিছানা থেকে।
শরীরটা ব্য’থায় টনটন করছে, মনে হচ্ছে অতি শীঘ্রই জ্বর আসবে, অরু সেসব ব্যথাকে পাত্তা দিলোনা। বিশাল হাই তুলে, খাট থেকে নেমে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ড্রেসিন টেবিলের সামনে। মেঝেতে এখনো ওদের ভেজা জামা কাপড় গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অরু সেদিকে একনজর পরখ করে, চোখ ঘুরিয়ে আয়নায় তাকালো, ওর পড়নে ক্রীতিকের গ্রে রঙের ওভার সাইজ টিশার্ট।
কাল গভীর রাতে এলিসাকে কল দিয়ে নিজের ক্লজেট থেকে কিছু জামা কাপড় আনিয়েছিল ক্রীতিক। অরু আবার তাতেও ভাগ বসিয়েছে, ট্রাউজারটা ক্রীতিককে দিলেও টিশার্ট টা নিজেই পরে নিয়েছে। আর এখন সেটাকে নাকের কাছে নিয়ে বারবার নাক টেনে সুঘ্রাণ নিচ্ছে, ওর পছন্দের স্যান্ডাল উড পারফিউমের মন মাতানো সুঘ্রাণ।
—- কিসের ঘ্রান নিচ্ছিস এভাবে?
ক্রীতিকের ঘুমন্ত হাস্কিস্বরে লাফিয়ে উঠলো অরু। চকিতে পেছনে চেয়ে দেখলো হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছে ক্রীতিক। অরু নিজের কান্ড এড়াতে এগিয়ে গিয়ে নিজের কালসিটে কলার বোন গুলো দেখিয়ে অভিযোগের সুরে বললো,
—- দেখুন তো কি করেছেন কাল রাতে, সব জ্ব’লে যাচ্ছে।
ক্রীতিক দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
—- বুকে আয়।
অরু গেলো। ক্রীতিক অরুর গলায় কয়েকদফা চুমু খেয়ে বললো,
—- কমে যাবে এন্টিসেফটিক লাগিয়ে নিস।
অরু ঠোঁট ফুলিয়ে বসে আছে কোনো কথা নেই। ক্রীতিক অরুকে বাহুর মধ্যে নিয়েই পকেট থেকে দুটো আঙটি বের করলো, একটাতে পাথর বসানো, পাথরের চিকচিক দেখে মনে হচ্ছে দামি কোনো হিরে। অন্যটা শুধু হোয়াইট গোল্ডের গোলাকার রিং।
ক্রীতিক একটা রিং নিজের আঙুলে পরে অন্যটা অরুর অনামিকা আঙুলে পরিয়ে দিলো। অরু চিকচিক করতে থাকা হাতের আংটি টা নাড়িয়ে চাড়িয়ে শুধালো,
—– এটা কেন?
ক্রীতিক বললো,
—- তুই যে বিবাহিত তার প্রমান, তাছাড়া বিয়ের পর থেকেই এতো এতো ঝামেলা যে তোকে একটা আংটি কিনে দেওয়ার সুযোগ ও হয়নি আমার, তাই কাল শপিং এ গিয়ে কিনে ফেললাম, পছন্দ হয়েছে?
অরু মুচকি হেসে জবাব দিলো,
— খুউউব।
—-তাহলে চুমু খা।
ক্রীতিকের কথায় অরু ভড়কে গিয়ে বললো,
—- কিহ।
—- চুমু খেতে বলেছি তোকে, আমার টাইম নেই অরু, যেতে হবে।সায়র আর অর্ণব কল করতে করতে ফোনের মাথা খেয়ে ফেলছে। এই রুমে এভাবে দেখে ফেললে হুলস্থুল লাগিয়ে দেবে ওরা দুজন । তুই কি চাস আমাদের এভাবে দেখুক ওরা?
অরু শুকনো মুখে না সূচক মাথা নাড়ালো।
ক্রীতিক পুনরায় বললো,
—- তাহলে যা বলছি তাই কর, দ্রুত।
অরুর আর কিইবা করবে স্বামী মহোদয়কে খুশি করার এক আকাশ ইচ্ছে সরূপ ছোট্ট করে হামি দিয়ে দিলো গালে। ক্রীতিক অরুর কপালে বেশ কয়েকটা চুমু খেয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,
—— ডোন্ট ফরগেট টু টেইক ইউর পেইন কিলার বেইবি।
***********************************************
ফ্রেশ হয়ে এসে ক্রীতিকের টিশার্ট ছেড়ে মাত্রই নিজের জামা কাপড় গায়ে চড়িয়েছে অরু, ওড়নাটা এখনো নেয়নি যার দরুন গলার দা’গ গুলো স্পষ্ট দৃশ্যমান। অরু সেগুলোতে আলতো হাতে এন্টিসেফটিক লাগাচ্ছিল,ঠিক তখনই হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে অনু। ভেতরে আসতে আসতে অনু বলে,
—– শুনেছিস রূপাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাও কাল রাত থেকে।
অরু হাতের কাজ রেখে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,
—- কি বলিস আপা?
অনু আর কথা আগানোর সুযোগ পেলোনা, উল্টো চোখ ছোট ছোট করে অরুর দিকে সন্দিহান হয়ে তাকিয়ে বললো,
—- কাল রাতে ক্রীতিক ভাইয়া তোর রুমে ছিল?
আপার প্রশ্নে অরু হা না কিছুই বললো না, ধরা খেয়ে যাওয়া চোরের মতো শুধু উপর নিচ মাথা ঝাকালো কিছুক্ষণ ।
অনু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সাবলীল ভঙ্গিতে বলে,
—- জানি, কাল আমিই ক্রীতিক ভাইয়াকে কল করেছিলাম, তুই বাড়িতে ফিরছিলি না দেখে।
চলবে…….