মনশহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ #৩য়_পর্ব

0
270

#মনশহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
#৩য়_পর্ব

“কে আবার, তোমার পাড়ার গু’ন্ডাটা, অভ্র। শুধু মারেই নি, বলেছে তোমার সাথে কথা বললে ও আমাকে আইসিউতে পাঠিয়ে দিবে। ঐন্দ্রিলা আমি আগে জানলে কখনো তোমার সাথে প্রেম করতাম না। আমাকে মাফ কর। আজ থেকে তোমার আমার ব্রেকাপ”

পিয়ালের দিকে স্তব্ধিত চোখে তাকিয়ে আছে ঐন্দ্রিলা। তার কানে কথাগুলো আসছে বলে কিন্তু মস্তিষ্ক অনুধাবণ করতে পারছে না। বিমূঢ় স্বরে শুধালো,
“তুমি আমার সাথে ব্রেকাপ করতে চাও?”

পিয়াল একটু রয়ে সয়ে বলল,
“ব্রেকাপ একটা খুব নরমাল ব্যাপার ঐন্দ্রিলা। এখানে ভেঙ্গে পড়ার কিছু নেই। আর এমন তো নয় যে, আমাদের সম্পর্ক যুগ যুগান্তরের। মাত্র তিনমাসের ই তো”

হ্যা পিয়াল এবং ঐন্দ্রিলার সম্পর্কটি তিনমাসের। ঐন্দ্রিলা পিয়ালকে পাগলের মত ভালোবাসে এমনটা নয়। তবুও এই ব্রেকাপ কথাটা মানতে কষ্ট হচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। মস্তিষ্ক মানতেই পারছে না। কোথাও না কোথাও সে পিয়ালকে ভরসা করতে শুরু করেছিলো। পিয়াল গাধা প্রকৃতির ছেলে, এক নম্বরের ভীতুর ডিম। এজন্য তার প্রতি খুব মায়া হত ঐন্দ্রিলার। এখনো মনে আছে এই ছেলেটা প্রেমের আগে সারা সারা রাত ঐন্দ্রিলার জন্য বসে থাকতো, যেনো মেয়েটি একটু তার সাথে কথা বলে। তখনও ঐন্দ্রিলা রাগচটা ব্যাবহার ই করতো তার সাথে। খ্যাচম্যাচ করতো অথচ ছেলেটি প্রেমগলা স্বরে বললো,
“তোমার রাগী কন্ঠ শুনলেই চিত্ত শান্ত হয়ে যায়। প্রেম হলে রাগতে ভুলো না। যদি ভুলেও যাও আমি রাগিয়ে দিবো তোমায়”

অথচ আজ ছেলেটা এমন কাপুরুষ সেটা মানতে পারছে না। ঐন্দ্রিলা বিমূঢ় স্বরে শুধালো,
“সামান্য মারে তোমার প্রেম উধাও হয়ে গেলো?”
“আজিব আমি তোমার জন্য মার খাব কেনো?”

পিয়ালের উক্তিটা মাথায় শুন ধরিয়ে দিলো। ঐন্দ্রিলার দৃষ্টি ধারালো হয়ে গেলো। ক্ষণিকের কষ্টটা ধপ করে অপমানের মত ঠেকলো। কি বিশ্রী অপমান। ঠিক ই তো তিনমাসের প্রেমের জন্য সে মার খাবে কেনো? নিজের উপর চরম রাগ হলো। কেন দ্বিতীয়বার ভুল মানুষকে বিশ্বাস করতে গেলো সে? পিয়াল একটু থেমে বললো,
“আমাদের প্রেম মাত্র তিনমাসের ঐন্দ্রিলা। তিনমাসে এতোও প্রেম হয় নি যে আমি আইসিউ যাবার রিস্ক নিবো। বি প্রাকটিক্যাল। এমনেই তোমার জন্য মার খেয়ে হাসপাতালে পড়েছিলাম। তিন দিনের কেবিন ভাড়া এসেছে বিশ হাজার। তোমার সাথে প্রেম করে আমার বিশ হাজার গচ্ছা। এই বিশ হাজার আমার এক মাসের বেতন জানো তুমি………”

কথাটা শেষ হবার পূর্বেই সপাৎ করে তার রুক্ষ্ণ গালে চ’ড় বসিয়ে দিলো ঐন্দ্রিলা। আকস্মিক আক্রমণে পিয়াল চক্ষু চরাগগাছ। ধাতস্থ হতেই অনুধাবিত হলো তার গাল জ্বলছে কারণ সেখানে ঐন্দ্রিলার পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ। ঐন্দ্রিলা বরফ শীতল স্বরে বললো,
“মানুষের বাচ্চা হলে এই থা’প্প’ড়টা আজীবন মনে রাখবে। তুমি কি আমার সাথে ব্রেকাপ করবে, আমি তোমার মুখ দেখবো না। আর তোমার বিকাশে বিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিবো, ক্যাশ আউট খরচ সহ। ঐ টাকা দিয়ে ধুয়ে ধুয়ে পানি খেও, গা’ধা কোথাকার”

ঐন্দ্রিলা এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না। দ্রুত পায়ে হাটতে লাগলো। পেছন থেকে পিয়ালের কন্ঠ কানে আসছে। সে ডাকছে। কিন্তু ঐন্দ্রিলা দাঁড়ালো না। সে এই গা’ধার মুখ দেখবে না কখনো।

*****

আকাশ তীব্রস্বরে হুংকার দিচ্ছে। কাঁপছে ধরণী। এলোপাঁথাড়ি মাতাল হাওয়ায় উড়ছে ধুলো। মানুষেরা ছুটছে একটা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। এখন ই কেঁদে ভাসাবে ধরণীর বুক। অথচ এই ঝড়ো হাওয়ায় মাতাল পায়ে হাটছে ঐন্দ্রিলা। চুলগুলো উড়ছে দ্বিগবিদ্বিগ। মেঘলা কৃষ্ণ গগণের মতো ঐন্দ্রিলার মনআকাশেও আজ জমেছে মেঘমেদুর। তারা গর্জন করছে কিন্তু বর্ষে না। কারণ ঐন্দ্রিলা অন্যের জন্য কাঁদে না। তবে সারাশরীরে ভীষণ রাগ ভীড় করেছে। যে হাতে পিয়ালকে মে’রেছে সেটা জ্বলছে। সেই সাথে অন্তরটাও। একটা প্রেমিক জুটিয়েছিলো, এই দূর্দিনে সেটাও কাপুরুষ বের হল। এই সব কিছু হয়ে ঐ মহাবা’দ’র ছেলেটির জন্য। সে তার জীবনটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিচ্ছে। অথচ বিন্দুমাত্র গ্লানি নেই। ঐন্দ্রিলা থামলো। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। তারপর একটি রিক্সাকে ডাকলো। ভাড়া বিশ টাকার বদলে রিক্সাওয়ালা চল্লিশ টাকা চাইলো। তাতেও রাজি হলো ঐন্দ্রিলা। কারণ এখন সে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে। এই দশ-বিশ টাকায় তার কিচ্ছু যায় আসে না।

******

বিল্লাল চেয়ারে গা এলিয়ে রেখেছে। ছেলেপুলে গুলো খেতে গেছে। এখনো আসে নি। অভ্র গোডাউনের ভেতরে। সারের বস্তা গুনে মিলাচ্ছে। বিল্লালের গুডাউনের ভেতর গরম লাগছিলো বিধায় বাহিরে এসে বসেছে। আজ তুমুল বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে। আকাশের দিকে বৃষ্টির আগমণের প্রতীক্ষাই করছিলো অমনি ঝড়ের বেগে একটি ব্যাটারি চালিত রিকশা থামলো দোকানের সামনে। রিকশা থেমে সেকেন্ডের মধ্যে নামলো ঐন্দ্রিলা। বিল্লালকে কাঠকাঠ গলায় বললো,
“বিল্লাল, অভ্র কোথায়?”
“হ্যা?”
“বলছি হা’রা’মীটা কোথায়?”

বিল্লালের সময় লাগলো বুঝতে কি হচ্ছে! আমতা আমতা করে বলল,
“গোডাউনে”
“আচ্ছা, তুমি উনাকে চল্লিশ টাকা দিয়ে দাও”

একেবারে কঠিন ফরমান জারি করে গটগট করে গোডাউনের দিকে চলে গেলো ঐন্দ্রিলা। বিল্লাল হতবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। বৃষ্টি ধরণীতে আসবে কি না সন্দেহ থাকলেও গোডাউনে যে আজ কালবৈশাখী, সিডর, আয়লা, আমফান সব হবে তাতে সন্দেহ নেই। হতাশ নিঃশ্বাস ফেললো বিল্লাল। রিকশা ওয়ালাকে পঞ্চাশ টাকা নিয়ে বললো,
“আমার বন্ধুর জন্য দোয়া করবেন। বেচারার জীবনে তুফান আসছে”

রিকশাওয়ালা ফিক করে হেসে বললো,
“আল্লাহ আপনার ভালা করুক”

******

অভ্র কাজে নিমগ্ন। সারের বস্তাগুলো গুনে টুকে রাখলো সে। চেয়ারে বসতে না বসতেই ঝড়ের বেগে ঐন্দ্রিলা হাজির হলো তার সামনে। এই বিস্ময় কাটিয়ে উঠতেই যাবে অমনি প্রশ্ন ছুড়লো,
“তুই পিয়ালকে মেরেছিস কেনো?”

অভ্র স্থির চোখে তাকিয়ে রইলো কয়েক পল। এর পর হিসাবের খাতাটা খুলতে খুলতে বললো,
“এমনি, ওর থোবড়া আমার ভালো লাগে নি”

অভ্রের কথায় আকাশ থেকে পড়লো যেন ঐন্দ্রিলা। প্রথমে বাকশুন্য হয়ে গেলো এমন উৎকট উত্তরে। তারপর রাগে মস্তিষ্ক ফেঁটে যাবার যোগাঢ় হলো। তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
“তুই কি ওর সাথে বিয়া বসতি নাকি যে ওর থোবড়া তোর ভালো লাগে নি?”
“ওমা, সে আমার বউ এর সাথে প্রেম করছে আমার দেখা লাগবে না তার চেহারা সুরত কেমন? আমার একটা দায়িত্ব আছে”
“তোর দায়িত্বের গুষ্টি কিলাই। তোর জন্য আজ সে আমার সাথে ব্রেকাপ করেছে। তোর কি আমার সুখ সহ্য হয় না?”

রাগে গজগজ করতে করতে ঐন্দ্রিলা কথাটা বললো। কথাটা শেষ হবার পরমুহূর্তেই অভ্র অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। হাসতে হাসতে বলল,
“কি রামছাগল আমদানী করেছিস যে সামান্য মারেই লেজ গুটিয়ে পালায়? তোর পছন্দ আছে”

অভ্র এবার উঠে দাঁড়ালো, ঐন্দ্রিলার সম্মুখে দাঁড়ালো। একটু ঝুকে মুখখানা ঐন্দ্রিলার মুখের সামনে এনে বললো,
“দেখেছিস তোর প্রেমিক তোর জন্য একটু মার খেতে পারে না। অথচ আমি তোর জন্য মানুষকে মারতে পারি। আমি কত্ত ভালো ছেলে”

অভ্রের কথাটা শুনে মুখ কুচকে ফেললো ঐন্দ্রিলা। হাত জোর করে রাগী স্বরে বললো,
“এতোই ভালো যখন আমাকে একটু রেহাই দে। একটু শান্তি দে”

অভ্র তার কথা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বলল,
“দুপুরে ভাত খেয়েছিস? খাস নি তো দাঁড়া”

বলেই বিল্লালকে ডাকলো সে। বিল্লাল ভয়ে ভয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। না সুনামি আসে নি। তবে ঐন্দ্রিলা এখনো রাগে গজগজ করছে। একটু আগ অবধি তার ক্রোধাগ্নি স্বর বাহিরে অবধি শোনা যাচ্ছিলো। বিল্লালকে দেখেই একটা পাঁচশত টাকার নোট ধরিয়ে দিলো অভ্র। বললো,
“এখনি পল্টুর দোকানে যা, সিঙ্গারা নিয়ে আয়। নতুন করে ভেজে আনবি। আলুতে ইচ্ছেমত ঝাল যেনো থাকে। আর অবশ্যই সস আনবি। পার সিঙ্গারা দুটো করে সস”
“এতো সস?”
“আমার বউ আবার সসের সাগরে সাতার কাটতে ভালোবাসে”

ঐন্দ্রিলার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আগুন ছুড়ছে অভ্রের দিকে। বিল্লাল সেদিকে তাকালোই না। দৌড়ে যেয়ে বিশ মিনিটের মধ্যে ফিরে এলো সিঙ্গারা নিয়ে। অভ্র জোর করে ঐন্দ্রিলাকে বসালো চেয়ারে। সিঙ্গারার প্লেট এগিয়ে বললো,
“শোন বাবু, এতো রাগ করিস না– রাগ করলে তোর মুখে ভাঁজ পড়ে যাবে। এমনেই তোকে খালাম্মা লাগে। আরোও বুড়ি হলে দাদী লাগবে। আমার আবার দাদীদের চুমু খেতে ভালো লাগে না। তখন তুই বলে বেড়াবি তোর বর আনরোমান্টিক। এর থেকে বলি কি ঠান্ডা হ, রাগ করিস না। নে সিঙ্গারা খা। সস এনেছি। পার সিঙ্গারায় দুটো প্যাকেট”
“ওই সসের সাগরে ডুবে ম রে যা! বে’য়া’দ’ব”
“আমি মরে গেলে তুই সবার আগে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদবি”

এই নির্লজ্জের সাথে কথা বলে লাভ নেই। সদ্য গরম ভাঁজা পল্টুর দোকানের সিঙ্গারা দেখে লোভ সামলাতে পারলো না ঐন্দ্রিলা। ওই গাধা পিয়ালের জন্য দুপুরে খাওয়া হয় নি। তাই প্লেটটা নিয়ে নিঃশব্দে খেতে লাগলো। আর অভ্র মুখে হাত দিয়ে তার লালচে মুখখানা দেখছে আর নিঃশব্দে হাসছে। বিল্লাল দূর থেকে এই দৃশ্যটি দেখলো। কে বলবে, এরা একে অপরের মহাশত্রু। কি সুন্দর মুখোমুখি বসে সিঙ্গারা খাচ্ছে। আহা! একেবারে যেনো প্রেমিক প্রেমিকা। ঢং যতসব।

******

ঐন্দ্রিলা ঠিক করলো ঘরে এবার একটি হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে। বিয়ের দিন বেশি দূরে নেই। এখন যদি কিছু না করে এই অভ্রকে সারা জীবনের জন্য গলায় ঝুলাতে হবে। এই তো গতকালও মাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলো সে। সাবেরা তখন কাপড় ভাজ করছিলেন। ঐন্দ্রিলা তার পাশে বসলো। সদর্পে বললো,
“মা আমি অভ্রকে কি করে বিয়ে করি? ও সারের ব্যাবসায়ী। আমারো একটা ক্লাস আছে। লোকে জিজ্ঞেস করলে কি বলবো? আমার বর কি করে- সে কি না সার বেঁচে?”

সাবেরা ঐন্দ্রিলার দিকে না তাকিয়ে নির্লিপ্ত গলায় বললো,
“তোমার বাপ সরিষার তেল ভাঙ্গে”

সালাম সাহেব পাশেই হেলান দিয়ে শুয়ে ছিলেন। বউয়ের কথায় সে কেশে উঠলেন। ঐন্দ্রিলা বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার বাবার মিল আছে, সরিষার তেল প্রডিউসের মিল আছে। সে তেল ভাঙ্গে না”
“অভ্রেরো বিশাল দোকান আছে। ছেলে সৎ, কর্মঠ, ভালো ইনকাম। আমার আর কি চাই?”

এই জেদি মহিলার সাথে কথা বলে আর পারলো না ঐন্দ্রিলা। কিন্তু আজ যা হয়েছে তার পর চুপ করে থাকা যায় না। ঐন্দ্রিলা বাসায় এসেই সাথে সাথেই চলে গেলো রান্নাঘরে। সাবেরা খানম সালাম সাহেবের জন্য চা বানাচ্ছিলেন। ঐন্দ্রিলা শক্ত কন্ঠে বললো,
“মা আমি বিয়ে করবো না। আমার নিজস্ব একটা মতামত আছে কিন্তু, আমি একজন এডাল্ট”

সাবেরা চা বাড়তে বাড়তে দায়সারাভাবে বললেন,
“তা এডাল্ট মানুষ, নিজের চায়ের কাপটা তো নিজে রান্নাঘর অবধি আনতে পারো না। আমার নিয়ে আসতে হয়। তোমার কাপড় গুলো আমি ভাজ করে দেই। তুমি অন্তত আমাকে এডাল্ট ভাষণ দিও না”

সাবেরা সূক্ষ্ম অপমান দাঁত কামড়ে শুনলো ঐন্দ্রিলা। হতাশ স্বরে বললো,
“তুমি আমাকে অপমান করছো”
“সম্মান কামাও তারপর অপমান গায়ে লাগিও”

ঐন্দ্রিলা বাবার দিকে তাকালো। কিন্তু বউকে ভালোবাসায় তিনি কিছু বললেন না। চরম পত্নীভক্ত কি না। ঐন্দ্রিলা এবার আর সহ্য না করতে পেরে বললো,
“অভ্র একটা গুন্ডা না, রাস্তাঘাটে মানুষকে ধরে ধরে পেটায়। চোখ কালো করে দেয়, হাত ভেঙ্গে গলায় ঝুলিয়ে দেয়”

সাবেরা খাতুন তার হাতের কাজে ক্ষান্ত দিলেন। ঐন্দ্রিলার দিকে চাইলেন। তারপর বড়ই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন,
“ছেলেমানুষ মারপিটা করবে না তো কি তুমি মারপিট করবে”
“মানে কি? তুমি এটাকে সাপোর্ট দিচ্ছো?”
“দেখো, ও একজন দামড়া জোয়ান ছেলে। রক্ত গরম। একটু হাত পা চালানো তো মন্দ না। ছেলে মানুষকে অন্তত ভেজা বেলাই রুপে ভালো লাগে না”
“আমার বাবা তো মারপিট করে না”
“তোমার বাবা ওর বয়সে কত জনের মাথা ফাটিয়েছে সেই হিসেব তার কাছেও আছে বলে আমি মনে করি না। তোমার বাবা যদি ন্যাদা টাইপ হতেন আমি তাকে বিয়েও করতাম না”

সালাম সাহেব তখন লাজুক স্বরে বললেন,
“আহ! সাবেরা তুমি যে কি বলো না”
“মিথ্যে তো বলছি না। কোন ছেলে আমাকে প্রেমের কথা বলতে আসলেই তো তুমি তাদের মে’রে খেদাতে”

ঐন্দ্রিলা হতবাক দৃষ্টিতে মা-বাবার দিকে চেয়ে রইলো। অবিশ্বাস্য কন্ঠে শুধালো,
“আমার বাবা মাথা ফাটিয়েছে?”
“হ্যা, তার যা রাগ ছিলো বিয়ের আগে। এদিক ওদিক হলেই মানুষকে উঠিয়ে মাটিতে আছাড় দিত। একবার জেলেও গেছে। অভ্রের সেই রেকর্ড তো নেই। পুরুষ মানুষ বাহিরে সিংহ ঘরে বেড়াল এটা হলেই সংসার সুখের হয়। অভ্রকে দেখে আমার তাই মনে হয়েছে”

নিজের কোমল, ভালোমানুষী বাবার এমন হিস্টোরি শুনে ঠিক কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে জানা নেই ঐন্দ্রিলার। তবে এসব মেইন কথা নয়। আসল কথা অভ্র একটা বদ। ঐন্দ্রিলা নাছোড়বান্দা। আজ বিয়ের হেস্তনেস্ত করবেই। সে অসহায় স্বরে বললো,
“আমি অভ্রকে পছন্দ করি না মা। দেখা যাবে বিয়ে পর রাগে ওর মাথা ফাটিয়ে দিবো”

সাবেরা পেঁয়াজ কাটছিলেন। কিন্তু সেই কর্তন থেমে গেলো। চাইনিজ চপার রেখে দিলেন চপিং বোর্ডে। শান্ত স্বরে বললেন,
“সমস্যা নেই তো, তোমার নানা আমাকে অনেক সোনা দিয়েছেন। ওগুলো বেঁচে তোমাকে বেইল করিয়ে দিবো”

তিনি একটু থেমে আবার বললেন,
“তুমি একটা পুরোদস্তর আমড়া কাঠের ডেকি মা, তোমাকে অন্যের ঘাড়ে গছিয়ে দেবার কথা আমি দুঃস্বপ্নে ভাবতেও পারি না। কাননকে দিচ্ছি কারণ সে নিজ দায়ভারে তোমাকে চাইতে এসেছে। আমি তো তাকে দেখেই অবাক এমন আশ্চর্যও হয় নাকি। বিয়ের পর যদি কানন আমাকে ধরেও আমি বলবো, তুমি নিজ দায়িত্বে নিয়েছো ডিফেক্টিভ পিস। আমার দায়ভার নেই। আর বাড়ির পাশের মানুষ তারা। যদি একটু ট্যা টু টু টু করে তাদের নাকে ধরি দেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে”
“কিভাবে?”
“ওদের বাড়ির মাঝে তোমার দাদার ১ শতক জমি আছে। সেটা তাদের লিখে দেওয়া হয় নি। তোমার সাথে একটু এদিক ওদিক করলেই আমি ওই বাড়িতে রোডরোলার চালাবো। তাই মা এই সুযোগ আমি হাত ছাড়া করতে পারবো না।“

মায়ের এমন মহা পরিকল্পনায় ক্ষণিকের জন্য হলেও ঐন্দ্রিলার মাথায় খেললো, অভ্রকে বিয়ে করা এতো খারাপ বুদ্ধি নয়। সালাম সাহেব স্ত্রীর প্রশংসা করে বললেন,
“তোমার তো সেই বুদ্ধি”

তখনই ঐন্দ্রিলা হতাশ গলায় বললো,
“এতো বুদ্ধি হয়ে কি হবে বাবা? মা মানুষ চিনে না। সব নাহয় আমি মেনেই নিলাম, কিন্তু অভ্র তো চরিত্রহীন। মিনিটে মিনিটে গার্লফ্রেন্ড বদলায়। সেটার কি হবে?”……………

চলবে

[টানা তিনদিন গল্প দেওয়ার রেকর্ড করলাম। অথচ তোমরা রেসপন্স করো না, পাষান]

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here