প্রেমসুধা #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ৩

0
310

#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩

ভেজা গায়ে একটা টাউজার পরে কাঁধে টাওয়াল নিয়ে বেরিয়ে এলো তৌসিফ। চুলগুলো থেকে টুপুরটুপুর এখনও বিন্দু কণা ঝড়ে যাচ্ছে। সুন্দর মানুষটাকে বেশ মানালো এতে। বড়ই আফসোস হলো তার জন্য। এত সুন্দর এই পুরুষটার এহেন ভেজা রুপ কারো মতিভ্রম করালো না? খাটের কোণে বসা রমণীর কি একটু চক্ষু ও ধাধালো না?
পুরুষটার শরীরের মতাল মতাল ঘ্রাণটা কি নারীটির নাসারন্ধ্রে ও ঠেকলো না?
তৌসিফ গভীর দৃষ্টি ফেলে দেখলো পৌষ’কে। হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা। কিছুটা মায়া হলো তৌসিফের। এমন টা না হলেও হতো। মেয়েটাকে একটু সময় দেয়া উচিত ছিলো। তৌসিফ চেয়েছিলোও তাই কিন্তু পৌষ’র জন্য তা হলো না। ধৈর্য্যর পরিক্ষায় বরাবরই শূন্য’র কোঠায় তৌসিফ তালুকদার। তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী’কে মুগ্ধ নয়নে দেখলো সে। গলার স্বর খাদে নামিয়ে ডাকলো বহু আদরের স্বরে,

— পৌষরাত।

ঝঙ্কার তুললো এই ডাক পৌষ’র দেহে। এতটা খন, এতটা ঘন্টা পর এই লোক কথা বললো। পৌষ’র কান ভেদ করে ডাকটা কলিজায় লাগলো একদম৷ ফালাফালা করে দিলো তার খয়েরী রঙের হৃদযন্ত্রটাকে। আহত চোখদুটো দিয়ে পানি গড়ালো। পৌষ মাথা তুললো না। একটা বার চেয়েও দেখলো না অনুতপ্ত তৌসিফ’কে। রা করলো না মুখে।
উত্তরের আশায় থেকে হাল ছাড়লো তৌসিফ। পৌষ’র এলোমেলো চুলে এক হাত রেখে বললো,

— চলো গোসল করবে।

এবারেও পৌষ নড়লো না৷ তৌসিফ পুণরায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই হুট করে বালিশে মুখ গুজে শুয়ে পরলো পৌষ। পায়ের সামনে থাকা কাঁথাটা দিয়ে ঢেকে নিলো নিজেকে আপাত মস্তক।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তৌসিফ দেখলো। চাইলো একবার ডেকে বলতে খাবারের কথা। পাশেই টেবিলে পরে আছে। ঐ বাড়ীতেও তো খেলো না৷ এখনও খেলো না। তৌসিফ নিজে একাই খেতে বসলো। ভাতে হাত দিলেও ভক্তিতে টানলো না। উঠে হাত ধুয়ে সরে গেলো সেখান থেকে। পৌষ ঘুমিয়েছে কি না বুঝা গেলো না। তৌসিফ বারান্দায় চলে গেলো ধীর পায়ে। দূর আকাশে আজ চাঁদের আনাগোনা নেই। একদম খালি সেটা তৌসিফেরই মতো। সিগারেট জ্বালিয়ে তাতে টান দিলো সাথে সাথেই নাক, মুখ ভর্তি ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে উঠলো চারপাশ।

খুক খুক কাশির শব্দে তৌসিফের কান সজাগ হলো কিছুটা। নিশ্চিত সিগারেটের গন্ধটা হয়তো পৌষ সহ্য করতে পারে না তাই কাশছে। অ্যাশ ট্রে’তে পিষে বড় বড় শ্বাস ফেলে মুখে একটা চুইংগাম চিবুলো তৌসিফ। যতটুকু পারলো নিজেকে ফ্রেশ করে রুমে ঢুকলো। নাক, মুখ ঢেকে এভাবে ঘুমাতে দেখে তৌসিফের ই যেন দম বন্ধ দম বন্ধ অবস্থা। এভাবে কিভাবে ঘুমায় মানুষ। পৌষ’র দিকে ঝুঁকে কাঁথাটা মুখ থেকে সরাতে চাইলো। লাভের লাভ ছাই কিছুই হলো না। পৌষ আরো মুড়িয়ে শুয়ে রইলো। দেখে মনে হলো একদম প্যাকেট করা। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তৌসিফ ও পাশে শুয়ে পরলো। সোজা দৃষ্টিটা তার বদ্ধ রুমের দেয়ালে। এই রুমটাতে তার হাজার খানিক স্মৃতি। কতশত আদুরে আদুরে মুহূর্ত। সবটা ঘিরে থাকা এক সুন্দরী রমণী। না চাইতেও তৌসিফের মস্তিষ্ক একবার তুলনা দিয়ে ফেললো। পৌষ সেই তুলনায় ততটা সুন্দর না। তার পিয়াসা ছিলো একদম লাল পেয়ারার মতো মিষ্টি। তার চাল চলন, বাচন ভঙ্গি, হাটা চলা সব কিছু মুগ্ধতা ছড়াতো। কেউ না চাইলেও দ্বিতীয় বার ঘুরে তাকে দেখতো। সবচাইতে সুন্দর রমণীকে নিজের ঘরণী করেছিলো তৌসিফ তালুকদার। সমস্যা রয়ে গেলো ঘাটে। যেই ঘাটের পানি স্বচ্ছ দেখে তৌসিফ মুখ ডুবালো। চাইলো প্রাণ ভরে পান করে তৃষ্ণা মেটাতে সেই পানিই ছিলো দূষিত। পানি জিনিস টা কিন্তু অদ্ভুত। এটা নষ্ট হোক। দূষিত হোক। এটা দেখে বুঝা যায় না। যতক্ষণ না পানি মুখে নেয়া হবে, এর স্বাদ গ্রহণ করা হবে ততক্ষণ বুঝা দায় আসল সমস্যা টা কি ঐ পানিতে। যেই পানিকে তৌসিফ অমৃত, বিশুদ্ধ সুধা ভেবে পান করেছিলো, মজে ছিলো যার রসে ভরা প্রেমে সেই প্রেমের সুধা তাকে ঘোল খায়িয়ে ছাড়লো। ছাড়লো তো ছাড়লো একদম ভরা মাঠে একা ছেড়ে চলে গেল। তৌসিফ তখন সাতার না জানা এক সাঁতারু। সে ডুবলো। শুধু কি ডুবলো সে অতলে হারিয়ে গেলো। সকলের সম্মুখে ডাট, ফাটে চলা তৌফিক তালুকদারের মুখে চুনকালি মেখে চলে গেলো পিয়াশা। সে পিছু তাকায় নি। এত এত প্রেমের সুধা রেখে সে তার সুখ খুঁজেছিলো ভিন্ন কিছুতে।
যাকে তৌসিফ নিজের গন্তব্য ভেবে থমকে ছিলো তার সেই গন্তব্য নিজেই আরেক গন্তব্য খুঁজছিলো। দোষটা তাহলে কাকে দেয়া যায়? প্রশ্ন টা তো রয়েই যায়।

________________

ভোর কেটে গিয়ে সকাল হতে শুরু করলো। চারপাশে পাখির এমন কান ধাঁধানো শব্দ যা শুনে আর টিকতে পারলো না পৌষ। ক্ষুধায় পেটটা যখন মুচড়ে উঠলো তখনই অলস পৌষ মুখ থেকে কাঁথা সরালো। দিন দুনিয়ার হুশ হারিয়ে পৌষ তখন সব ভুলে গিয়েছে। তবে সাময়িক সুখ তার কপালে সইলো না। বিশাল চওড়া চওড়া দুটো পেশি বহুল বাহুতে নজর পরতেই চমকে তাকালো পৌষ। ফর্সা বাহুতে ফাটা চোখে তাকিয়ে যতটুকু পারলো নজর লাগালো ও। বলা তো যায় না এই সুযোগ আবার আসবে না কি?
গতরাতের কিছু কথা মনে পরতেই পৌষ’র ধ্যান ভাঙলো। উদাম গায়ে থাকা তৌসিফ তালুকদারকে আরেকবার দেখেই সে ওয়াশরুম ছুটলো। রাত ভর সে চেপে রেখেছিলো। এখন ওয়াশরুম যাওয়াটা মাস্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই দুই বার ইউরিন ইনফেকশন হয়েও শিক্ষা হলো না তার। পৌষ জানে আগামী দুই বারেও তার শিক্ষা হবে না৷
ওয়াশরুম ঢুকা মাত্র বাঁধলো বড় বিপত্তি। এত বড়সড় সাদা বাথরুম পৌষদের না৷ উচ্চ মাধ্যমিক পরিবারের যা থাকে তা তাদের আছে। ইয়া বিশাল বড় এক জমিদার বাড়ী ও বলা চলে তবে এই রাজপ্রাসাদের ন্যায় না৷ মুখ ভেঙালো পৌষ। ফকিন্নিদের আবার এত ঢং। হলুদ বাত্তি জ্বালায় রাতে অথচ এখন দিন দাহারে ও এসব হলুদ বাতি দেখতে হবে? বাথরুম মানেই তো রেস্ট রুম। এই রেস্ট রুমে হলুদ বাতি কে লাগায়? আজব!

#চলবে….

[ ফাইনাল পরিক্ষা চলে….পরিক্ষার পর থেকে রেগুলার আসবে ইনশা আল্লাহ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here