শিশির_ভেজা_রোদ্দুর Part_15

0
1665

শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_15
#Writer_NOVA

মিনিট পাঁচ হয়ে গেছে কেউ তো বের হয় না।একটু পর দেখলাম এনাজ ছেলে দুটোকে নিয়ে বের হলো।আমার কাছে মনে হলো ছেলে দুটো স্বাভাবিকভাবে হাঁটছে না।একজন তার চোখে হাত দিয়ে রেখেছে। আরেকজন পা টেনে টেনে হাঁটছে। তবে এনাজের মুখে হাসি লেগেই আছে। আবছা আলো থাকায় আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না। আমি আইসক্রিম হাতে উৎসুক চোখে উঁকি ঝুঁকি মেরে সব দেখছি।এদিকে আমার আইসক্রিম যে গলে গলে নিচে পরছে সেদিকেও আমার খেয়াল নেই। হঠাৎ মাথায় বেশ জোরেই একটা থাপ্পড় পরলো।আহ্ শব্দ করে একহাতে মাথা ধরে পেছনে তাকালাম।তাকিয়ে দেখি তায়াং ভাইয়া মুখটাকে বাংলার পাঁচের মতো করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর তন্বী খুব মনোযোগ সহকারে আইসক্রিম খাচ্ছে।যদি এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও লেগে যায় তাহলেও বোধহয় ওর কোন হুশ ফিরবে না। তায়াং ভাইয়ার দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

—কি রে পাঠা মারলি কেন?

—উঁকি ঝুঁকি মেরে কি দেখিস?

—এনজিও সংস্থা এখনো আসে না কেন?

—এনজিও সংস্থা কে? এক মিনিট, এক মিনিট তুই কি এনাজ কে এনজিও সংস্থা বলিস।

—এতদিনে গাধার বুদ্ধি খুলছে।

আমি বিরবির করে কথাটা বলেও বিপদে পরে গেলাম।কারণ ভাইয়া শুনে ফেলেছে। তায়াং ভাইয়া হুংকার দিয়ে বললো,

—এই শাকচুন্নি গাধা কে হ্যাঁ?তোর তো সাহস কম বড় না।আমাকে গাধা আর আমার জানে জিগার দোস্তকে এনজিও সংস্থা বলিস।

—কেন তোর জানে জিগার দোস্ত যে আমায় টিডি পোকা বলে, তুইও তো আমাকে শাঁকচুন্নি বলিস।তখন কিছু হয় না।আর আমি বললেই দোষ।

—তুই এত মনোযোগ দিয়ে উঁকি মেরে কি দেখছিস তাই বল?

—তোকে কেন বলবো?তুই আমাকে মারলি কেন?এমনি মাথাব্যথা করে কয়েকদিন ধরে। আবার মাথায় থাপ্পড় দিছিস।এখন আমার মাথাব্যথা উঠলে তোরে খাইয়া ফালামু কিন্তু।

আমাদের কথার মাঝখানে তন্বী আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—কি হয়েছে তোমরা ঝগড়া করছো কেন?এটা একটা বাজার।এখানেও তোমরা শুরু করছো।

আমি ঝাঁঝালো গলায় উত্তর দিলাম,
—শুরুটা আমি করিনি।তোর ভাই শুরু করছে।

কথা বলতে বলতে আমার চোখ পেছনের দিকে চলে গেলো।আবার দেখলাম এনাজ দুটো ছেলের গলাগলি ধরে সেই চিপা গলিতে নিয়ে গেলো।আমি ঝগড়া ছেড়ে সেদিকে মন দিলাম।মিনিট চার পর সে দুটোকে নিয়ে এনাজ হাসতে হাসতে বের হলো।কিন্তু সাথের দুটোর অবস্থা বেশি ভালো না।এই দুটোর পালা শেষ হতেই একিভাবে আরো দুজনকে নিয়ে গেলো।ওরা বের হওয়ার আগে তায়াং ভাইয়া আমাদেরকে বললো,

—নোভা,তন্বী।

— হ্যাঁ ভাইয়া বল।

আমরা দুজন একসাথে উত্তর দিলাম।ভাইয়া সবগুলো দাঁত বের করে ক্লোজআপ পেস্টের এড দিয়ে বললো,
—একটা ম্যাজিক দেখবি?

তন্বী বললো,
—কি ম্যাজিক ভাইয়া?

—দেখবি কিনা তা বল?

আমি বললাম,
—হ্যাঁ দেখবো।

তায়াং ভাইয়া একগালে ভিলেন টাইপের হাসি দিয়ে বললো,
—ফুচকার স্টলে যে ছেলেগুলো তোদেরকে টিজ করেছিলো সে ছেলেগুলো নিজে এসে একে একে তোদেরকে সালাম দিয়ে তারপর তোদের কাছে মাফ চাইবে।

তন্বী নাক,মুখ কুঁচকে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
—তোরা কিছু না করলে তো আর ওরা এমনি এমনি আসবে না। এনাজ ভাইয়া যে ওদের তেরটা বাজাতে গেছে তা আমি ভালো করেই জানি।তখন তোদের চুপচাপ থাকার ভঙ্গিটাই আমার কাছে ঝড় আসার পূর্বাভাস মনে হয়েছে। যখন তোরা দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিলি আর তুই বললি ভালোমতো বিল দিয়ে আসিস।তখুনি আমি পুরো ক্লিয়ার বুঝে গেছি তোরা ঠান্ডা মাথায় প্ল্যান করে মাঠে নেমেছিস।আর মোবাইলে দুজন যে একে অপরের সাথে পাশাপাশি বসে চ্যাটিং করছিলি তাও আমি জানি।তোদের আমি ভালো করেই চিনি।

তায়াং ভাইয়া মুচকি হেসে বললো,
—বাহ,আমাদের তো ভালোই চিনে গেছিস।

আমি তো অবাকের ওপর অবাক।তন্বী এতকিছু টের পেয়ে গেলো আর আমি ঘন্টাও টের পেলাম না। আমি কিছুটা রেগেই তন্বীকে বললাম,
—শয়তান ছেমরি। তুই এতকিছু জানিস আর আমাকে কিছু বললিও না।তোর সাথে কথা নেই, যা ভাগ।

—আরে নোভাপু তুমি আমার ওপর রাগছো কেন? তুমি তো ধরতে গেলে এখনো নতুন। এদের সাথে আরো কয়েকদিন থাকো তুমিও বুঝে যাবে।

আমাদের কথা শেষ হওয়ার আগেই ছেলে ছয়টা হুড়মুড় করে আমাদের সামনে এসে একে একে সবাই সুন্দর করে সালাম দিলো।চিকনা ছোকরাটা হাতজোড় করে বললো,

—আমাদের মাফ করে দাও বোন।আমরা না বুঝে তোমাদের সাথে অন্যায় করেছি।জীবনে আর কখনও কোন মেয়েকে টিজ করবো না।

ওদের একেকটা অবস্থা দেখে আমি আরেকদফা অবাক। একেকজন মুখে রক্ত জমে আছে। ঠোঁট কেটে রক্ত পরছে।চোখ কালা হয়ে গেছে। পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে। একজন হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এদের ওপর যে ঝড় গেছে তা তাদের প্রত্যেকটার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি টিপ্পনী কেটে বললাম,

—তা ভাইয়া আদর-যত্ন কেমন করলো? আপ্যায়নের কোন ত্রুটি হয়নি তো?

তন্বী বললো,
—হয়েছে, হয়েছে। এবার যার যার বাসায় যান।এর পরেরবার এই ধোলাইয়ের কথা মনে রাখবেন।আর কোন মেয়ের সাথে দুজন ছেলে দেখলে সাহস দেখিয়ে টিজ করতে যেয়েন না।কখন আবার দুই থেকে পুরো ক্রিকেট টিম হয়ে যায় তাতো বলা যায় না।তাহলে আবার এই অবস্থা হবে।

তায়াং ভাইয়া ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—তা ভাইসকল খাতিরদারিটা কেমন ছিলো?মন ভরছে তো।নাকি আরো করতে হবে?আমি আরেকটু করবো নাকি?

তাদের থেকে ব্লু শার্ট পরিহিত ছেলেটা বললো,
—না ভাই তার আর দরকার নেই। এই খাতিরযত্নেই আমরা শেষ। আরো করলে মরে যাবো।

তায়াং ভাইয়া একজনের পিঠে চাপর মারতেই সে আউচ করে চেচিয়ে উঠলো।তায়াং ভাইয়া বললো,
—ওফস সরি ছোট ভাই।শরীরে বোধহয় একটু বেশি লাগছে।সমস্যা নেই। ছ্যাচা মার তো।এখন ততটা ব্যাথা করবে না। সকালে ঘুমের থেকে উঠে টের পাবে,
কত ধানে কত চাল।

💖💖💖

তায়াং ভাইয়া শেষের কথাগুলো আস্তে বললেও আমি কিন্তু স্পষ্ট শুনতে পেরেছি।ভাইয়ার কথা বলা শেষ হতে দেরী ছেলেগুলো পেছনে একবার তাকিয়ে পড়িমরি করে ছুট মারতে দেরী নয়।ওদের এরকমভাবে দৌড়াতে দেখে আমি প্রথমে অবাক হলাম।পরে পেছনে তাকিয়ে দেখি এনাজ শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।এবার বুঝলাম ছেলেগুলোর দৌড়ানোর রহস্য। শার্টের হাতা ফোল্ড করা শেষ করে চুলগুলো পেছনে সেট করতে করতে তায়াং ভাইয়াকে বললো,

—এই কয়েকটার খাতিরযত্ন তো আমিই পারি।তুই আবার ইমরান, রায়হান, শাহেদকে কেন ডাকতে গেলি?

—তুই একা পারবি তা আমি জানি।কিন্তু তোকে যদি দু-একটা দিয়ে বসে তাহলে আমি শেষ। সেই ভয়ে ওদের ডেকে আনলাম।

এনাজ ঘেমে নেয়ে একাকার। মাথাও ঘেমে গেছে। টপটপ করে ঘাম পরছে।পকেট থেকে টিস্যু বের করে মুখ মুছে টিস্যুটাকে রাস্তার ওপর পাশে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।আমি এদের কথার মাথামুণ্ডু কিছু বুঝলাম না।
কিন্তু মিনিট দুই পর দেখলাম ইমরান হাশমি ভাইয়া, রায়হান ভাইয়া,শাহেদ ভাইয়া সাথে আরো দুজন ক্রিকেট ব্যাট, স্ট্যাম্প হাতে আমাদের দিকে আসছে।আমাকে দেখে ইমরান হাশমি ভাইয়া রায়হান ভাইয়ার পেছনে লুকালো।আমি কপাল কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করলাম,

—ইমরান হাশমি ভাইয়া, আপনারা এখানে কেন? আর এই ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম নিয়ে কি করেন?

ইমরান হাশমি ভাইয়া হে হে করে হাসতে হাসতে বললো,
—ক্রিকেট ম্যাচ ছিলো।সেখান থেকে ফিরছি।তাই এগুলো সাথে।তাই নারে রায়হান?

রায়হান ভাইয়াকে খোঁচা মেরে তাড়া দিতেই রায়হান ভাইয়াও ইমরান হাশমি ভাইয়ার সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
—হ্যাঁ একদম ঠিক।

তন্বী ধমকের সুরে বললো,
—ডাহা মিথ্যে কথা।আজকে কোন ক্রিকেট ম্যাচ ছিলো না। যদি কোন ক্রিকেট ম্যাচ থাকতো তাহলে পৃথিবী উল্টে গেলেও তায়াং ভাইয়া ও এনাজ ভাইয়া আমাদের সাথে আসতো না।তারা দুজন যে কিরকম ক্রিকেট পাগল তা আমার থেকে কেউ ভালো জানে না। নিশ্চয়ই ভাইয়া এদেরকে ক্রিকেটের জিনিসপত্র নিয়ে এখানে আসতে বলেছে।যাতে ঐ ছেলেগুলোকে সবাই একসাথে মিলে শিক্ষা দিতে পারে।এনাজ ভাইয়াকে একা পাঠাবে না বলে ম্যাসেজে তাদেরও ডেকে আনছে।

আমি এবার অজ্ঞান হবো।এরা তাহলে মোবাইলে এসব করেছে। আর আমি কতকিছু ভেবে ফেলছি।তায়াং ভাইয়া পেছন থেকে তন্বীর হিজাবের ওপর খোপা টেনে ধরে বললো,

—মাতবর হয়ে গেছিস?আমাদের সবকিছু মুখস্থ হয়ে গেছে তোর?কি করি না করি সব দিকে খেয়াল কে দিতে বলে তোকে? ছোট আছিস ছোটদের মতো থাকবি। দু আনার মানুষ অথচ নজরদারি ছয় আনার।

তন্বী ভাইয়ার হাতে থাপ্পড় দিতে দিতে বললো,
—ভাইয়া ছাড় লাগছে।এগুলো আমার সত্যিই মুখস্থ হয়ে গেছে।

তায়াং ভাইয়া তন্বীর খোঁপা ছেড়ে ইমরান ভাইয়াদের বিদায় জানালো।এবার বোধগম্য হলো সবকিছু। এরা সবাই মিলে ঐ ছয়টাকে আচ্ছা করে শিক্ষা দিয়েছে। ইমরান হাশমি ভাইয়া, রায়হান ভাইয়া, শাহেদ ভাইয়া আমাদের থেকেও বিদায় নিলো।প্রত্যেকে তায়াং ভাইয়া ও এনজিও সংস্থাকে জড়িয়ে ধরে উল্টো দিকে পথ ধরলো।আমরাও হাঁটতে লাগলাম বাড়ির দিকে।এখান থেকে হেঁটে দশ মিনিটে বাসায় পৌঁছে যাওয়া যায়।আমরা চুপচাপ হাঁটতে লাগলাম।হাঁটতে হাঁটতে আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম,

—আমি তো ভেবেছিলাম তায়াং ভাইয়া, তোরা ওদেরকে ভয় পেয়ে গেছিস।তোরা দুইজন আর ওরা ছয়জন। তাই সব শুনেও না শোনার ভান করছিস।আর ওদেরকে কিছু না বলেই ছেড়ে দিবি।

এনাজ সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেই বললো,
—ছেড়ে দিতাম।যদি না আমার সম্পত্তির দিকে নজর দিতো।সাহসের তারিফ করতে হয়।আমার জিনিসের দিকে নজর দেয়।ওদের সাহস দেখে সত্যি অবাক হয়েছি।আমরা বসে আছি। তারপরেও টিজ করে সহস দেখিয়েছে।এবার বুঝুক মজা।

আমি কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
—আপনার সম্পত্তি,জিনিস মানে?

এনাজ আমার কথার উত্তর না দিয়ে আমতা আমতা করে তায়াং ভাইয়াকে বললো,
—তায়াং জলদী বাসায় যেতে হবে। অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে। সবাই জলদী পা চালাও।

আমার কিছুটা রাগ হলো।এনজিও সংস্থা আমার প্রশ্ন এড়িয়ে গেলো।কিন্তু কেন তা তো জানি না। সম্পত্তি বলতে কি বুঝালো সে?এসব ভাবতে ভাবতে আমি কিছুটা পেছনে পরে গেলাম।এতটাই ভাবনায় বিভোর ছিলাম যে চারিদিকে কোন খেয়াল ছিলো না। হঠাৎ রাস্তার পাশে রাখা একটা ইটের সাথে বেজে পরে যেতে নিলেই পেছন থেকে কেউ আমাকে ধরে ফেললো।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি এনাজ।সে দ্রুত আমাকে ধরে দাঁড় করালো।তারপর কানের সামনে ফিসফিস করে বললো,

—আশেপাশে খেয়াল করে হাঁটবে। সবসময় তো আমি থাকবো না যে এভাবে পরে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাবো। নিজেকেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে।অবশ্য যখন আমি থাকবো তখন আমিই সব বাঁধা-বিপদ থেকে রক্ষা করবো। কিন্তু আমি না থাকলে কি হবে তখন? আর এতকিছু ভেবে নিজের ছোট্ট মাথাটাকে প্রেশার দিয়ো না তো।যা হচ্ছে তা হতে দাও।

উনি কথাগুলো একদমে বলে দ্রুত সামনে এগিয়ে গেলো।আমি এখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছি।এদের রহস্যময় কথার আগাগোড়া কিছুই আমি বুঝি না। আকাশে আজ বিশাল থালার মতো চাঁদ উঠেছে। সেই আলোতে দেখলাম এনাজ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছু সময় পর পেছনে তাকিয়ে দেখলো আমি এখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছি। তাই সে আবার ফিরে এলো।তারপর হাত টেনে সামনে নিয়ে যেতে লাগলো।উনি আমার হাত ধরতেই আমার শরীরে ৪৪০ ভোল্টেজে শক লাগলো।যদিও এটা প্রথম নয়।আমি একবার হাতের দিকে তাকিয়ে আরেকবার এনাজের দিকে তাকালাম।তারপর ঝাড়া মেরে আমার হাতটাকে ছাড়িয়ে দ্রুত পায়ে তাকে ক্রস করে সামনে এগিয়ে গেলাম।এনাজ সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।কিন্তু আমি পেছনে তাকালাম না।কারণ নতুন করে কারো মায়ায় পরতে চাইনা আমি।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here