হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ৩
__________
আজ বিয়ে,,, তাই সকাল থেকেই আয়াশ প্রচুর পরিমাণে দৌড়াদৌড়ি করছে। কারণ আর একটু পরেই বরযাত্রী এসে যাবে। সবকিছু দেখে নেওয়া তো উচিত। আফটার অল একমাত্র ফুফাতো বোনের বিয়ে বলে কথা। তাই একটু আধটু দৌড়াদৌড়ি না করলে কি হয়?? ইশা সকাল থেকে আয়াশকে একবারও দেখতে না পেয়ে অলরেডি আম্মু আর বড় আম্মুর কাছে কয়েক বার জিজ্ঞেস করে ফেলেছে। দুজনেরই একই কথা। আয়াশকে ওরা সকাল থেকে দেখেনি। ইশার যেন এবার মন খারাপ হতে লাগলো। আসলে ইশা এমনই। যতই আয়াশের পিছনে লাগুক; আর যতই আয়াশের সাথে ঝগড়া করুক। কিন্তু আয়াশকে না দেখে যেন এক মুহূর্তও থাকতে পারেনা সে। এখনও তার ব্যতিক্রম হলোনা। আম্মু আর বড় আম্মুর কাছে কয়েকবার আয়াশের খোঁজ নিয়ে যখন পজিটিভ উত্তর পেলোনা। তখন নিজেই আয়াশকে পুরো বিয়ে বাড়ি খোঁজে আসলো। কিন্তু আফসোস, কোথাও আয়াশকে খোঁজে পেলোনা। ইশা যখনই মন খারাপ করে বাড়ির ভিতরে ঢুকছিলো; তখনই পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো।
” এক্সকিউজ মি মিস। ”
একটা পুরুষালী কণ্ঠ কানে আসতেই ইশা চমকে পিছন ফিরে তাকালো। কারণ ইশা বুঝতে পেরেছে, সম্বোধনটা ওকেই করা হয়েছে।
” জি, আমাকে বলছেন??
” হ্যাঁ,, আচ্ছা তুমি ইশা না?? আয়াশের ছোট বোন।
” জি, কেন বলুন তো??
এবার ছেলেটা ইশার একদম সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর আবারও হেসে বললো—
” আরে তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেন?? আমি সুমন। আমাকে চিনতে পারোনি তুমি??? ”
ইশা কয়েক সেকেন্ড কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করে হঠাৎই হেসে বললো— ” সুমন….? মানে নিশি আপুর ফ্রেন্ড সুমন?? ”
” যাক চিনতে পেরেছো তাহলে??
” আরে কি যে বলো না ভাইয়া…! তোমাকে চিনবোনা কেন?? তোমাকে নিশি আপুর সাথে কতো দেখেছি। না চেনার কি আছে??
” দিস ইস নট ফেয়ার ইশা। তুমি আমাকে এখনো ভাইয়া বলছো?? তুমি আমায় নাম ধরে ডাকলে আমি কিন্তু মাইন্ড করবোনা ইশা।
” সরি ভাইয়া! এটা আমার দ্বারা হবেনা। কেননা তুমি নিশি আপুর ফ্রেন্ড। আর নিশি আপু যেহেতু আমার বড়। তাই তুমিও আমার বড়। এন্ড দেটস হোয়াই আমার তোমাকে ভাইয়া ডাকাই উচিত। বুঝলে কিছু…?? (হেসে)
” তুমিও না ইশা…? তাই বলে ভাইয়া ডাকতে হবে?? আমি তো তোমাকে পারমিশন দিয়েছি নাম ধরে ডাকার। তারপরেও কিসের এতো প্রনলেম?? আচ্ছা ফরগেট ইট। এখন বলো, তোমার স্টাডি কেমন চলছে???
” হ্যাঁ,, ভালোই চলছে।
” তো কোন ক্লাসে পড়ছো এখন??
” ক্লাস নয় ইয়ারে। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছি এখন।
” ও তাই নাকি?? তাহলে তো অনেক বড় হয়ে গেছো। তোমাকে সেই ক্লাস সিক্সে থাকতে দেখেছিলাম। মনে আছে…? তুমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়তে; তখন আমাদের স্কুলে গিয়েছিলে নিশির সাথে।
” হুমমমম, মনে আছে। আর থাকবে নাই বা কেন?? তুমি সেদিন আমাকে কতোগুলো ফোস্কা কিনে দিয়েছিলে?? পুরো ৫০০ টাকার।
” তোমার দেখছি সব মনে আছে।
” অবশ্যই।
এভাবে ইশা আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সুমনের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলো। ইশা আর সুমনের কথার মাঝে হঠাৎই আয়াশ ওদের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। যেন ইশাকে সে দেখলোই না। তবে ইশা ঠিকই দেখেছে আয়াশকে। ইশা আয়াশকে দেখে সুমনকে সেভাবে রেখেই আয়াশের পিছন পিছন দৌড় দিলো।
” ভাইয়া! ভাইয়া! এই ভাইয়া শোন না….! ”
আয়াশকে ডাকতে ডাকতে ইশা আয়াশের সামনে গিয়ে আয়াশের পথ আগলে দাঁড়ালো। আয়াশ যেন এতে প্রচুর বিরক্তই হলো। বিরক্তিকর কণ্ঠে বললো—-
” কি হয়েছে?? পথ আগলে দাঁড়িয়েছিস কেন??
” যাব্বাবা, এমনভাবে কথা বলছিস কেন??
” কিভাবে কথা বলছি??
” এই যে, মনে হচ্ছে অনেক কাজ করে এসেছিস। আর তাই এখন দেমাগে তোর সাথে কথায় বলা যাবে না এমন।
” কাজ করে আসিনি তো তোর মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করে এসেছি?? তাও আবার হেসে হেসে। সর সামনে থেকে আমার কাজ আছে।
” এ মা এতো রাগ করছিস কেন?? আমি তো আর ইচ্ছে করে কথা বলিনি। ও নিজে এসে আমার সাথে কথা বলছিলো। আমি কি করে চলে আসতাম বল। আর তাছাড়া আমি ওর সাথে কথা বলছি বলে তুই এতো রাগ করছিস কেন??
” হ্যাঁ, সেটাই তো। ওর সাথে কথা বলছিস বলে আমি রাগ করবো কেন?? আমি রাগ করার কে?? আমার কি সেই অধিকারটা আছে??
” ভাইয়া! এমন করে কথা বলছিস কেন?? আমি কিন্তু এবার কান্না করে দিবো। তুই জানিস না তুই আমার সাথে ভালো করে কথা না বললে আমার ভালো লাগে না?? প্লিজ ভালো করে কথা বল না…!
” শেষ হয়েছে তোর বকবক?? তাহলে এবার সামনে থেকে সর। তোর বকবক শোনার মতো টাইম আমার নেই। আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।
” ভাইয়া! এমন করিস না প্লিজ। আচ্ছা আমার ভুলটা কি বল। আমি শুধরে নিবো। বাট তবুও তুই এমন রাগী রাগী ভাব নিয়ে থাকিস না। আমি নিতে পারছিনা।
” সত্যিই কি তুই বুঝতে পারছিস না তুই কি ভুল করেছিস??
” নাহ।
” ওকে, আর বুঝতেও হবেনা।
এই বলে আয়াশ ইশাকে সরিয়ে হনহনিয়ে ভিতরে চলে গেলো। ইশা কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলোনা। কারণ আয়াশ ওকে কিছু বলার সুযোগই দেয়নি। আয়াশের এমন গা ছাড়া ব্যবহারটা ইশা কিছুতেই নিতে পারছেনা। কেন যেন আয়াশের ব্যবহারে ওর কান্না পাচ্ছে। আসলে ইশা এমনই। যখনই আয়াশ কোনো কারণে ওর সাথে রাগ করে কথা না বলে থাকে; তখনই ইশার এমন খারাপ লাগে। ইশা নিজেও জানেনা, কেন আয়াশের একটু অবহেলা সে সহ্য করতে পারেনা। আয়াশ তো সবসময় ওকে ধমকায়। সবসময় ওকে কড়া শাসনের মধ্যে রাখে। তাহলে কেন তারপরেও আয়াশের একটু অবহেলা সে সহ্য করতে পারেনা?? ইশা টলমল চোখ নিয়ে সোজা উপরে রুমে চলে আসলো। তবে সবার আড়ালে। কেউ যেন টের না পায় তার জন্য মুখে কৃত্রিম হাসিটা ঝুলিয়ে রেখেছে। সারাদিন এভাবে হৈ-হুল্লোড় আর ব্যস্ততায়ই কেটে গেলো।
সন্ধার আগে আগে নিশিকেও বের করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ কনে বিদায় যাকে বলে আর কি। কনে বিদায়ের কিছু সময় পরেই আয়াশ সবাইকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো। যদিও ফুফি অনেক বলেছে থেকে যেতে। কিন্তু আয়াশের নাকি কাল একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে। তাই সবাই চেয়েও আর থাকতে পারলোনা। মূলত যেই মিটিংটার জন্য আয়াশ বিয়েতে এটেন্ট করতে পারবেনা বলেছিলো। সেটাই কাল ফিক্সড করেছে আয়াশ। কারণ আয়াশ চায়নি ওর কারণে ফুফিরা কেউ কষ্ট পাক। আর সে জানতো, যদি সে বিয়েতে না আসতো তাহলে ফ্যামিলির কেউই আসতোনা। ফলে ফুফি, ফুফা, আর নিশি কষ্ট পেতো। যেটা আয়াশ কিছুতেই চায়নি। তাই তো নিজের কোটি টাকার ডিলটা একদিন ডিলে করে ফুফাতো বোনের বিয়েতে এটেন্ট করেছে।
☘️☘️
আয়াশরা বিয়ে থেকে এসেছে আজ ৩ দিন। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো এই ৩ দিনে আয়াশ ইশার সাথে কোনো কথা বলেনি। আগে তো সবসময় ইশাকে এটা ওটা বলে জালাতো। আর ইশার কোনো ভুল দেখলেই ইশাকে শাসন করতো, বকতো। কিন্তু বিয়ে থেকে আসার পর থেকে কেন যেন আয়াশ এসবের কিছুই করছেনা। শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। বাকি সবার সাথে নর্মাল বিহেভ করলেও,, ইশার সাথে কোনো রকম কথাই বলছেনা সে। ইশা নামের কোনো মানুষ যে এই বাড়িতে আছে সেটা যেন আয়াশের মনেই নেই। রোজকার মতো আজও আয়াশ অফিস থেকে এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। আয়াশ যখন বাসায় ঢুকলো, ইশা তখন ড্রয়িং রুমের সোফাতেই বসা ছিলো। কিন্তু ইশার দিকে একবার তাকালোনা পর্যন্ত। এমন নয় যে আয়াশ ইশাকে দেখতে পায়নি। কারণ মেইন দরজা থেকে সিড়ির দিকে যাওয়ার পথে ড্রয়িং রুমের সোফা গুলোতে কেউ বসে থাকলে সেটা স্পষ্ট দেখা যাবে। ইনফ্যাক্ট সোফা গুলোর পাশ দিয়েই যেতে হয় ভিতরে। আয়াশকে এমনভাবে না দেখার ভান করে চলে যেতে দেখে ইশার প্রচুর রাগ হলো। এমনভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না।
” ভাইয়া এমন করছে কেন?? বিয়ে থেকে আসার পর থেকে দেখছি আমার সাথে কথা বলছেনা। কই? অন্য সবার সাথে তো ঠিকই কথা বলছে। তাহলে আমার দোষ কি?? আমি কি এমন করেছি যে আমার সাথে কথা বলা যায়না? আজ এর একটা বিহিত করতেই হবে। ”
কথাগুলো ভেবে ইশা উঠে কিচেনের দিকে গেলো। কিচেনে তখন রুকসানা বেগম আর আনিসা বেগম রাতের জন্য রান্না করছিলেন। ইশাকে এমন সময় হঠাৎ কিচেনে দেখে দুই জা অবাক হয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকালো। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে তাকিয়ে থেকে রুকসানা বেগম নিজেই বলে উঠলেন।
” কি ব্যাপার! আমার মেয়েটা আজ রান্না ঘরে কেন?? কিছু কি লাগবে??
” হ্যাঁ, বড় আম্মু।
” তো কি লাগবে শুনি??
” আরে ভাবি! তুমি ওর কথায় কান দিয়োনা তো। ওর তো বসে বসে আর কোনো কাজ নেই। তাই শুধু শুধু আঝাইরা কথা বলবে। এটা খেতে ইচ্ছে করছে ওটা খেতে ইচ্ছে করছে এসবই বলবে আমি জানি। ”
মায়ের কথা ইশা কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো—-
” আম্মু! তুমি চুপ থাকো তো। ননস্টপ বকবক করেই যাচ্ছো তো করেই যাচ্ছো। বড় আম্মু!
” হ্যাঁ মা বল।
” আমাকে এক কাপ কঁড়া করে চা করে দাও তো। আমার জন্য না, ভাইয়ার জন্য। একটু কষ্ট করে বানিয়ে দিবে??
” আরে সেটা আবার এমন করে বলতে হয় পাগলি?? তুই দাঁড়া আমি এখনই বানিয়ে দিচ্ছি।
ইশাকে চা নিতে আসতে দেখে আনিসা বেগম সন্দিহান গলায় বললেন—-
” আয়াশ এসে গেছে?? আচ্ছা সত্যিই তুই আয়াশের জন্য চা নিতে এসছিস?? নাকি আয়াশের নাম করে তোর জন্য নিতে এসছিস? হ্যাঁ?? ”
রুকসানা বেগম প্রতিবাদ করে বললেন—-
” আহ আনিসা! তুমি শুধু শুধু বকোনা তো মেয়েটাকে। ইশা মিথ্যা বলবে কেন?? ”
খানিক বাদেই রুকসানা বেগম চা বানিয়ে ট্রাই সমেত চায়ের কাপটা ইশার হাতে দিয়ে বললেন— ” এই নে মা, যা গিয়ে আয়াশকে দিয়ে আয়। ”
ইশা ট্রাইয়ের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো— ” এ কি বড় আম্মু দুই কাপ দিয়েছো কেন চা?? ”
” বাহ রে, আয়াশের জন্য নিয়ে যাবে। আর আমার মেয়েটা খাবে না?? তাই দুই কাপ দিলাম। দুজনে বসে গল্প করতে করতে খাবি। এখন যা তো তাড়াতাড়ি। নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে। ”
রুকসানা বেগমের কথা শুনে ইশা মুচকি হেসে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলো। তারপর সোজা আয়াশের রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। ইশা চলে যেতেই রুকসানা বেগম বলে উঠলেন—
” বুঝলে আনিসা! আমার মনে হচ্ছে ওদের দুজনের মাঝে মান অভিমান হয়েছে। বিয়ে থেকে আসার পর থেকে আমি লক্ষ্য করছি,, আয়াশ আর ইশার মধ্যে একটু দূরত্ব চলছে।
” হ্যাঁ ভাবি! আমিও লক্ষ্য করেছি সেটা। কিন্তু কি বিষয়ে মান অভিমান চলছে সেটাই তো বুঝতে পারছিনা। আচ্ছা আমি কি জিজ্ঞেস করবো??
” না না, তুমি জিজ্ঞেস করোনা। আমরা বড়রা এর মধ্যে ঢুকার দরকার নেই। ওদের সমস্যা ওরা নিজেরাই ঠিক করে নিবে।
” এটাও ঠিক। তাহলে আমরা না জানার ভান করে থাকি। কি বলো??
” হুমমম। এছাড়া আর কিছু করার নেই। ছেলে মেয়ে দুটোকে নিয়ে আর পারিনা। কোথায় আমরা ভাবছি ওদের এক করবো। আর ওরা দেখছি দূরে দূরে হাঁটছে। ”
এদিকে ইশা আয়াশের রুমের দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরে ঢুকবে কি ঢুকবেনা সেটাই হয়তো ভাবছে। আগে যখন তখন হুট করে ঢুকে গেলেও এখন কেন যেন আয়াশের কাছ থেকে পারমিশন নেওয়াটা ইশার প্রয়োজন মনে হচ্ছে। তাই শেষমেশ গলা কাঁকড়ি দিয়ে বলে উঠলো।
” ভাইয়া আসবো?? ”
আয়াশ সবেমাত্র ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। গায়ে একটা টি-শার্ট আর একটা ট্রাউজার। হঠাৎ ইশার কথায় দরজার দিকে তাকালো। ইশাকে চায়ের ট্রাই নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু অবাকই হলো। কারণ অন্য সময় তো আয়াশ অফিস থেকে এসে ইশাকে বলে বলেও চায়ের জন্য পাঠানো যায় না। আর আজ কিনা না বলতেই চা নিয়ে এসেছে?? তবে বেশি সময় লাগলোনা ব্যাপারটা আয়াশের বোধগম্য হতে যে কেন ইশা চা নিয়ে এসেছে। তবে আয়াশ গলবেনা। ইশার নেকা কান্নায় আজ কিছুতেই গলে যাবেনা সে। কারণ ইশারও তো বুঝা উচিত যে আয়াশেরও একটা ইমোশনস আছে। ওর-ও একটা ফিলিংস আছে। আয়াশকে চুপ করে থাকতে দেখে ইশা আবারও সেম কথা রিপিট করলো।
” ভাইয়া আসবো?? ”
” নাহ। আমার রুমে তোর আসার কোনো দরকার নাই।
” তোর জন্য চা এনেছিলাম ভাইয়া। ভিতরে না আসলে চা দিবো কি করে??
” আমার লাগবে না চা। আর তোরও আসতে হবেনা আমার রুমে।
” কিন্তু কেন ভাইয়া…??
” কারণটা হলো তোর ঐ কথায় কথায় ভাইয়া বলাটা। তোর ঐ ভাইয়া বলাটা আমার জাস্ট অসহ্য লাগে। যদি ভাইয়া ভাইয়া না করে কথা বলতে পারিস তাহলে আয়। ”
ইশা মুচকি হেসে রুমে ঢুকলো। দুষ্টু হেসে বললো—- ” জানিস ভাইয়া! আমার না তোকে ভাইয়া বলতে খুব ভালো লাগে। তুই-ই তো আমার একমাত্র ভাই। তোকে ভাইয়া না ডাকলে কাকে ভাইয়া ডাকবো?? বল ভাইয়া।
” ইশা! মাথাটা এমনিতেই গরম আছে। তুই আরও গরম করে দিস না। মাথা গরম হয়ে গেলে আমি কি বলে দিবো তার কোনো ঠিক নেই। তখন আবার আমাকেই দোষ দিবি। কেন এসেছিস সেটা বল। তারপর চলে যা। ”
ইশা চায়ের ট্রাইটা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে খাটে বসলো। তারপর পা দুলাতে দুলাতে বললো—-
” তুই কি চোখে কম দেখিস নাকি রে ভাইয়া। তোর জন্য চা নিয়ে আসলাম। আর তুই বলছিস কেন এসছি?? ”
আয়াশ এতক্ষণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথার চুল ঠিক করতে করতে কথা বলছিলো। এবার সে ইশার কথা শুনে রাগী চোখে ইশার দিকে তাকালো। ইশা আয়াশের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। তাই আয়াশের রাগী ফেসটা ওর চোখে পড়তে দেরি হলোনা।
” এ মা ভাইয়া! তুই রাগ করছিস কেন?? আমি তো ঠিক কথায় বললাম। আমি তো ঠিকই তোর জন্য চা নিয়ে এসেছি। তুই দেখছিস না?? আয় ভাইয়া! তাড়াতাড়ি বস। এন্ড চা টা পান কর। নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে।
” তোর চা তুই খা। ”
রাগী কণ্ঠে কথাটা বলেই আয়াশ ল্যাপটপ কুলে নিয়ে সোফায় বসে পড়লো। ইশা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে আয়াশকে ভালো করে লক্ষ্য করে তারপর বললো—
” ভাইয়া! সত্যিই কি চা খাবি না আজ??
” না খাবো না। (রেগে)
” ভাইয়া! এতো রেগে রেগে কথা বলছিস কেন??
” তাহলে এখানে বসে আছিস কেন?? চলে যা আমার রুম থেকে। ইনফ্যাক্ট যে সুন্দর করে কথা বলবে তার কাছে যা। আমার রুমে বসে আছিস কেন??
” সত্যিই চলে যাবো, ভাইয়া?? ”
আয়াশ এতক্ষণ ল্যাপটপ টিপতে টিপতে কথা বলছিলো। ইশার কথা শুনে এবার রাগী চোখে তাকালো ইশার দিকে।
“আচ্ছা আচ্ছা চলে যাচ্ছি আমি। তবে চা টা খেয়ে নিস। অনেক কষ্ট করে বানিয়েছি তো তাই।”
এই বলে ইশা বসা থেকে উঠে হাঁটা ধরলো। আয়াশ তাচ্ছিল্য হেসে আবারও ল্যাপটপে মনোযোগ দিলো। তবে দরজা অব্দি গিয়েও কেন যেন আবার পিছন ফিরে তাকালো ইশা।
চলবে…….
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি