হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই
পর্বঃ- ১৪
_______
” আন্টি বুঝি এতক্ষণ এসব আনার জন্য আসতে পারেননি ?? ”
মিলির কথা শুনে আনিসা বেগম হেসে বললেন—-
” আরে সেটা নয়। জাস্ট ভাবলাম তোমরা এতো দূর থেকে এসেছো তাই আর কি। এনি ওয়ে, ভালো আছো তোমরা??
” জি আন্টি! আপনি কেমন আছেন?? (মিলি)
” আমি তো বিন্দাস আছি। নাও নাস্তা করো। আয়াশ! বাবা তোর কি আর কিছু লাগবে?? ”
অয়ন আর মিলিকে নাস্তা দিতে দিতে কথাটা বললেন আনিসা বেগম। আয়াশ কিছু বলবে তার আগেই ইশা বললো—-
” আম্মু! তুমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলে কিছু লাগবে কিনা। কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করলে না যে কিছু লাগবে কিনা?? ”
আনিসা বেগম কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুকসানা বেগম ইশার পাশে এসে বললেন—-
” আমার মেয়েকে কেউ জিজ্ঞেস করতে হবে কেন?? আমার মেয়ের জন্য আমি আছি না?? কি খাবি বড় আম্মুকে বল। বড় আম্মু দিবো।
” না বড় আম্মু কিছু লাগবেনা। আমি জাস্ট এমনিই বলছিলাম। ”
ইশার কথা শুনে অয়ন মিলি দুজনেই হাসলো। নাস্তা করার ফাঁকে অয়ন বললো—-
” ফুফি! আঙ্কেল ফুফা উনারা কোথায়?? উনাদের দুজনকে দেখছিনা যে?? আজ তো শুক্রবার, উনাদের তো বাড়িতেই থাকার কথা। কিন্তু আসার পর থেকে দেখছিনা যে??
” ওদের কথা আর বলিস না। শুক্রবারেও ওদের কাজের অভাব থাকেনা। কি একটা কাজ আছে বলে দুই ভাই-ই সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে। ”
সবাই এভাবে টুকটাক কথা বলতে বলতে নাস্তা করে নিলো। অয়ন আর মিলি আসায় পুরো বাড়িটা যেন একদম ভরা ভরা হয়ে গেলো। ওদের উপস্থিতিতে আজ দিনটা বেশ হাসি খুশিতেই কেটে গেলো।
রাতে সবাই ডিনার করতে বসেছে। শুধু রুকসানা বেগম আর আনিসা বেগম ছাড়া। কারণ উনারা দুজনেই এখনও টেবিলে খাবার সাজাচ্ছেন। টেবিলে খাবার সাজাতে সাজাতে হঠাৎ আনিসা বেগম বললেন—-
” অয়ন! মিলি! খাওয়া শুরু করো। তোমরা বসে আছো কেন??
অয়ন হেসে বললো—-
” না আন্টি! প্রবলেম নেই। আপনারা বসুন। তারপর সবাই একসাথে খাবো।
” আর আমার বসে থাকার কারণ হচ্ছে আমি আজ ফুফির হাতেই খাবো। কি ফুফি! খাইয়ে দিবে আমায়??
মিলির কথা শুনে রায়হান মাহমুদ হেসে বললেন—-
” আরে কেন দিবেনা?? রুকসানা! ওকে খাইয়ে দাও। ”
” সে তুমি না বললেও আমি দিতাম। আমার মেয়েটা আমার হাতে খেতে চেয়েছে, আর আমি দিবোনা সেটা কি হয়?? আয়, এদিকে আমার পাশে এসে বস। ”
রুকসানা বেগমের কথা শুনে সাথে সাথে মিলি উঠে দৌড়ে গিয়ে ফুফির পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। মিলির কান্ড দেখে সবাই হেসে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। তবে সবাই খাওয়া শুরু করলেও একজন কিন্তু তখনও না খেয়ে বসে আছে। আর সেটা অন্য কেউ নয়; ইশা। সবাই খাওয়া শুরু করেছে ঠিকই কিন্তু ইশা এখনও না খেয়ে শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে প্লেটের ভাত গুলো নড়াচড়া করছে। ইশার না খেয়ে বসে থাকাটা কারো চোখে না পড়লেও আয়াশের চোখ এড়ায়নি। ইশাকে না খেয়ে বসে থাকতে আয়াশ ধমকে উঠলো—
” কি রে ইশা না খেয়ে বসে আছিস কেন?? খাওয়া শুরু কর।
” সে কি রে, ইশা মা তুই খাচ্ছিস না কেন?? খাওয়া শুরু কর। ”
ইশা এতক্ষণ ধরে অভিমানটা ভিতরে পুষে রাখলেও এখন বড় আম্মুর কণ্ঠ শুনে আর দমিয়ে রাখতে পারলোনা। বড় আম্মুর দিকে তাকিয়ে ছলছল নয়নে অভিমানী কণ্ঠে বললো —
” তোমার আমার কথা মনে আছে বড় আম্মু?? আমি তো মনে করেছি ভুলেই গিয়েছো আমার কথা।
” ইশা! এসব কোন ধরনের কথা?? বেয়াদবির একটা লিমিট……..
আনিসা বেগমকে ধমক দিতে দেখে সাথে সাথে রুকসানা বেগম শাসালেন—-
” আহ আনিসা! তুমি ওকে বকছো কেন?? আমি কথা বলছি ওর সাথে। ইশা মা! আচ্ছা মা কি কখনো মেয়ের কথা ভুলতে পারে??
” তাহলে এখন যে ভুলে গেলে, নিজের ভাইজিকে তো কত্তো সুন্দর করে খাইয়ে দিচ্ছো। একবারও বলেছো ইশা আয় তেকেও খাইয়ে দিবো। ভাইজিকে পেয়ে আমার কথা তো ভুলেই গিয়েছো।
” ইশা! তোর কি বিবেক বুদ্ধি দিন দিন লোপ পাচ্ছে?? মিলি এতোদিন পর আমাদের বাড়িতে এসছে। আর ও চাইছে মা ওকে খাইয়ে দিক; তাই মা ওকে খাইয়ে দিচ্ছে। এতে তুই রাগ করে না খেয়ে বসে আছিস কেন?? তোকে তো মা প্রায়ই খাইয়ে দেয়। আর আজ মিলিকে খাইয়ে দিচ্ছে সেটা তোর সহ্য হচ্ছে না?? নেকামির একটা লিমিট থাকা দরকার। নে তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু কর। ফাউল কোথাকার। ”
আয়াশের কথা শুনে সাথে সাথে রায়হান মাহমুদ ধমকে উঠলেন —-
” আয়াশ! তোর সাহস কি করে হয় আমার সামনে ইশাকে ধমক দেওয়ার?? ওর আর তোর মায়ের মধ্যে কথা হচ্ছে। এখানে তোকে কথা বলতে কে বলেছে হ্যাঁ? ফারদার যেন এমন দুঃসাহস আর না দেখি। মাইন্ড ইট। (রেগে)
” আরে ভাইজান! তুমি আয়াশকে কেন বকছো?? ও তো ঠিকই বলেছে। ইশা শুধু শুধু বাড়াবাড়ি করছে।
” আবার তুই ও….??
রায়হান মাহমুদ আর হাসান মাহমুদকে তর্কে জড়িয়ে যেতে দেখে রুকসানা বেগম কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললেন—
” আরে তোমরা থামবে?? তোমরা এসবে কান না দিয়ে খাবার খাও। ইশা মা! আমার মেয়েটা বুঝি আমার সাথে রাগ করেছে?? আচ্ছা ঠিক আছে আমার ভুল হয়ে গেছে। আর হবেনা। এবারের মতো বড় আম্মু সরি। প্লিজ রাগ করে থাকিস না। আয় এদিকে বড় আম্মুর পাশে এসে বস। বড় আম্মু খাইয়ে দিবো। ”
যদিও অন্য সময় হলে ইশা রুকসানা বেগমের কথা শুনে সাথে সাথে বসা থেকে লাফিয়ে উঠে বড় আম্মুর পাশে চলে যেতো। কিন্তু এখন উঠলোনা। ইনফ্যাক্ট রুকসানা বেগমের হাতে খাওয়ার জন্য কোনো আগ্রহও দেখালোনা। আর তার একটাই কারণ, কারণটা হলো ইশার এতক্ষণ বড় আম্মুর উপর অভিমান থাকলেও; এখন বড় আম্মুর কাছ থেকে সব অভিমান গিয়ে পড়েছে আয়াশের উপর। অর্থাৎ আয়াশ যে ওকে একটু ধমক দিয়ে কথা বলেছে সেটাই এখন ইশার মনে গেঁথে গিয়েছে। এখন আর বড় আম্মু যতই রাগ ভাঙ্গাক এতে কাজ হবেনা। যতক্ষণ না আয়াশ ওর রাগ ভাঙ্গায়। এরই মধ্যে রুকসানা বেগম আবারও বললেন—–
” কি রে মা আয়। বড় আম্মু বলেছি তো খাইয়ে দিবো। রাগ করে থাকিস না প্লিজ।
” আরে মা! তুমি শুধু শুধু ওকে ডাকছো। আমার মনে হয় ইশার আজ ক্ষুধা লাগেনি; তাই ও খেতে চাইছেনা। আর ছোট মা বকবে বলে তাল বাহানা করছে এটা সেটা বলে। ”
আয়াশের কথা শুনে রুকসানা বেগম আবারও ধমকে উঠলেন —-
” তুই চুপ কর। তোর খাওয়া তুই খা। তোকে কে কথা বলতে বলেছে?? ইশা মা! আয় না। বড় আম্মু কতক্ষণ না খেয়ে বসে থাকবো??
” না বড় আম্মু! আমি খাবোনা।
” খাবিনা মানে?? এতো বড় একটা রাত না খেয়ে থাকবি নাকি?? পাগলামো করিস না মা, আয় বড় আম্মু খাইয়ে দিবো।
” বললাম তো আমি আজ খাবোনা। প্লিজ তোমরা জোর করোনা। আর তাছাড়া আয়াশ ভাইয়া ঠিকই বলেছে আমার ক্ষুধা নেই। তোমরা সবাই খেয়ে নাও। আমি রুমে যাচ্ছি।
বলেই ইশা চেয়ার ছেড়ে উঠে হাঁটা ধরলো।
” ইশা মা! না খেয়ে যাস না প্লিজ। ইশা! ইশা প্লিজ আমার কথাটা শোন। এতো বড় একটা রাত না খেয়ে থাকতে পারবিনা। ইশা! ”
কে শুনে কার কথা। ইশা কারও কথা কানে না নিয়ে সোজা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। এমনকি রুকসানা বেগমের এতো গুলো ডাকও কানে নেয়নি সে। আয়াশ এক নজর ইশার দিকে তাকিয়ে আবারও খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। ইশা যে না খেয়ে চলে গিয়েছে এতে যেন ওর বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই।
” ফুফি! ইশা তো না খেয়ে চলে গেলো। ধুর, সব আমার জন্যই হয়েছে। আমি যদি…..
মিলির কথা শুনে আনিসা বেগম বললেন—
” আরে মিলি! তুমি শুধু শুধু নিজেকে দোষারোপ করছো। ইশা তোমার জন্য না খেয়ে চলে যায়নি। আয়াশ ঠিকই বলেছে, ওর ক্ষুধা নেই তাই না খাওয়ার জন্য জাস্ট বাহানা খুঁজেছে। এখন টেনশন না করে খেয়ে নাও তো।
” আনিসা! তুমি যত যাই বলো। মেয়েটা না খেয়ে চলে গিয়েছে। এতো বড় একটা রাত না খেয়ে থাকবে কি করে?? আমি জানি, ও আমার উপর অভিমান করে না খেয়ে চলে গিয়েছে। আমি যে কেন বললাম না ওকে…….
রুকসানা বেগম আক্ষেপ করে কথাগুলো বললেন। রুকসানা বেগমকে আফসোস করতে দেখে আনিসা বেগম সরশ গলায় বললেন—-
” ভাবি! তুমি আবার শুরু করলে?? তোমরা কেন নিজেদের উপর দোষ নিচ্ছো কেন বলো তো?? তোমরা যানোনা ও কেমন?? যখনই খাবার খেতে ইচ্ছা হবেনা, হাজারো বাহানা খুঁজবে না খাওয়ার জন্য। এখনও তাই হয়েছে। তোমরা ওর জন্য টেনশন করে টাইম ওয়েস্ট করো না তো! সবাই খাওয়া শুরু করো। ”
আনিসা বেগমের কথায় আর কেউ কিছু বললোনা। সবাই আবারও নিজেদের মতো করে খাওয়া শুরু করলো। এরপর খাওয়া শেষ করে যে যার মতো রুমে চলে গেলো। রায়হান মাহমুদ আর হাসান মাহমুদ আগেই চলে গিয়েছেন। মিলিও চলে গিয়েছে। অয়ন চলে যেতে নিয়েও থেমে গিয়ে ফিছন ফিরে তাকালো। আয়াশকে বসে থাকতে দেখে অবাক কণ্ঠে বললো—-
” কি রে আয়াশ রুমে যাবিনা?? তর তো আমাদের সবার আগেই খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। চল……
আয়াশ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বসে মোবাইল টিপছিলো। অয়নের কথা শুনে এক নজর অয়নের দিকে তাকিয়ে আবারও মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখে বললো —-
” তুই যা। আমি পরে আসবো। ”
অয়ন আর কিছু বললোনা। সোজা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। রুকসানা বেগম আর আনিসা বেগম তখনও কিচেনে খাবারের জিনিস গুলো ধুয়ে মুছে রাখছিলেন। কিছু সময় পর তাদের কাজ শেষ হয়ে গেলে তারা-ও রুমে যাওয়ার জন্য কিচেন থেকে বেরিয়ে আসলো। আয়াশ তখনও ডাইনিংয়ে বসে ছিলো। আয়াশকে এখনও এখানে বসে থাকতে দেখে রুকসানা বেগম অবাক হয়ে বললেন—-
” কি রে আয়াশ! রুমে না গিয়ে এখানে বসে আছিস কেন?? যা রুমে যা। ”
বলতে বলতে রুকসানা বেগম ডাইনিংয়ের উপরে রাখা জগ থেকে ঢেলে এক গ্লাস পানি নিয়ে রুমের দিকে হাঁটা ধরলেন। রুকসানা বেগম চলে গেলেও আনিসা বেগম কিন্তু তখনও ডাইনিংয়ের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। রুকসানা বেগমকে নিজের রুমে ঢুকে যেতে দেখে উনি এবার আয়াশের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন।
” আয়াশ এনি প্রবলেম?? রুমে না গিয়ে এখানে বসে আছিস যে?? ”
আয়াশ এক নজর চারপাশে তাকিয়ে যখন দেখলো সবাই রুমে চলে গিয়েছে; এইবার ও মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে ছোট মা’র দিকে তাকালো।
” আমার জন্য একটা কষ্ট করতে পারবে??
” ধুর পাগল! তোর জন্য কিছু করতে কষ্ট হবে কেন আবার?? বল কি করতে হবে??
” এক প্লেট ভাত বেড়ে দিতে পারবে আমায়??”
আয়াশের কথায় আনিসা বেগম কিছুটা অবাক হলেন। আয়াশ তো ভাত খেয়েছে। তাহলে আবার ভাত বেড়ে দিতে বলছে কেন??
” সে কি, কেন?? তোর পেট ভরেনি?? আজ কি রান্নাটা মজা হয়নি?? আর তার জন্যই কি তুই পেট ভরে খেতে পারিসনি??
” আরে সেটা নয়। আমার পেট ভরেছে।
” তাহলে কার জন্য??
” কার জন্য আবার। আমাদের ড্রামা কুইনের জন্য।
” ওওও, ইশার জন্য বলছিস??
” হুমমম।
” আরে ধুর, তুই ওর জন্য খাবার নিয়ে যাওয়ার জন্য এতক্ষণ বসে আছিস?? পাগল ছেলে। ওর জন্য হলে নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। ওর হয়তো ক্ষুধা নেই আজ, তাই খায়নি। শুধু শুধু খাবার গুলো বেড়ে পরে নষ্ট করে ফেলে দিতে হবে। তুই বরং ওর খাবারের কথা না ভেবে যা গিয়ে শুয়ে পড়। ও একবার যখন বলেছে খাবেনা, তাহলে আর খাবেনা। যা রুমে যা।
” ছোট মা! আচ্ছা তুমি কি আমাকে বিয়ে করার আগেই বিপত্নীক করতে চাইছো??
” মানে?? (হেসে)
” তোমার কি মনে হয়? তোমার মেয়ে মায়ের উপর রাগ করে না খেয়ে চলে গিয়েছে?? আচ্ছা তুমি কখনো ওকে মায়ের উপর রাগ করতে দেখেছো?? বড় আম্মু তো ওর জান পরাণ। ওর সব রাগ আমার উপর। তাই ম্যাডাম যেহেতু আমার উপর রাগ করেছে; রাগটা তো আমাকেই ভাঙ্গাতে হবে, তাই না?? প্লিজ তুমি একটু কষ্ট করে ভাত গুলো বেড়ে দাও।
” আয়াশ তুইও না! আমরা না বুঝলেও তুই ঠিকই বুঝে যাস ইশার সবকিছু। তোর থেকে ভালো বোধহয় ওকে আর কেউ বুঝতে পারবেনা।
” থ্যাংকস ফর ইউর কমপ্লিমেন্ট। এখন কাইন্ডলি গিয়ে ভাত গুলো বেড় আনো। নয়তো আমাদের ড্রামা কুইন ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যাবে।
” আচ্ছা আচ্ছা আনছি। তুই বস। ” (হেসে)
বলেই আনিসা বেগম কিচেনে চলে গেলেন। আয়াশ ততক্ষণ বসে থেকে কি করবে। তাই আবারও মোবাইলটা বের করে টিপতে লাগলো। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আনিসা বেগম একটা প্লেটে করে ভাত বেড়ে নিয়ে আসলেন।
” আয়াশ! এই নে। ভাত বেড়ে নিয়ে আসছি। সাথে ইশা যা যা খাবে সব দিয়ে দিয়েছি। ”
আয়াশ মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর আনিসা বেগমের হাত থেকে ভাতের প্লেট নিতে নিতে বললো—
” থ্যাংকস।
” থ্যাংকস দিতে হবেনা। তুই জাস্ট ও খেয়েছে কিনা আমাকে সেটা একটু জানাস। ”
আয়াশ দুষ্টু হেসে বললো —– ” আমি তোমাকে বলতে গেলে তোমাদের রোমান্সের বেঘাত ঘঠবেনা?? ”
” আয়াশ! তুই কিন্তু ভারি দুষ্টু হয়েছিস। ফাজিল ছেলে। আল্লাহয় জানে, আমার মেয়েটার কপালে কি আছে। (হেসে)
” তাহলে তোমার মেয়ের জন্য একটা ভালো ছেলে খুঁজে দিবো?? (হেসে)
” না বাবা থাক। আমার মেয়ের জন্য খারাপ ছেলেই যথেষ্ট।
” আচ্ছা আমি তাহলে গেলাম। ”
বলেই আয়াশ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। আনিসা বেগমও হেসে নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরলেন। উপরে উঠে আয়াশ ইশার রুমের দিকেই যাচ্ছিলো। হঠাৎ কয়েক কদম যেতেই কিছু একটা ভেবে থেমে গেলো।
” নাহ। খাবারটা ইশার রুমে নিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবেনা। ওর রুমে তো মিলি থাকবে। আর মিলির সামনে থাকলে ম্যাডামের রাগ বাড়বে বৈ কমবেনা। সো, খাবারটা আমার রুমে নিয়ে গেলেই বেটার হবে। ”
ব্যাস, যেই ভাবা সেই কাজ। আয়াশ খাবারের প্লেটটা নিজের রুমে রেখে এসে ইশার রুমে গেলো। অন্য দিন ইশার রুমের দরজা লক করা না থাকলেও আজ আয়াশ দরজায় হাত রাখতেই বুঝতে পারলো ইশার দরজাটা লক করা। হয়তো মিলি লক করেছে। আয়াশ দরজায় ঠুকা দিয়ে ডাকলো।
” ইশা! ইশা! ইশা দরজাটা খুল। ”
ইশা আর মিলি দুজনেই শুয়ে শুয়ে গল্প করছিলো। আসলে ইশার যত রাগই থাকুক; সব আয়াশের উপর। তাই মিলির সাথে ইশা নর্মাল ভাবেই গল্প করছে। যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু মনে মনে আয়াশের উপর ঠিকই রাগ ফুসে রেখেছে। হঠাৎ দরজায় ঠুকা পড়তে শুনে, সেই সাথে আয়াশের কণ্ঠ পেয়ে দুজনেই তাকালো দরজার দিকে।
” ইশা! আয়াশ তো ডাকছে তোমায়। বোধহয় কিছু বলবে তোমায়। যাও গিয়ে দেখো কেন ডাকছে। ”
মিলির কথা শুনে ইশা অভিমানী কণ্ঠে বললো—
” ডাকলে ডাকুক। আমি যাবোনা।”
” ইশা! দরজাটা খুলতে বলেছি। ”
” ইশা! ডাকছে তো তোমায়। যাও গিয়ে দেখো কেন ডাকছে। দরকারে ও তো হতে পারে।
” হলে হোক। আমি উঠবোনা। কয়েকবার ডেকে সাড়া না পেলে ভাববে আমরা ঘুমিয়ে পড়েছি। তখন নিজে নিজেই চলে যাবে।
” কিন্তু……..
তখনই আবারও আয়াশের ডাক ভেসে আসলো। তবে এবার ইশার নাম ধরে নয়; মিলির নাম ধরে ডাকছে।
” মিলি! মিলি! আমি জানি তোরা ঘুমাসনি। প্লিজ দরজাটা খুল। ”
আয়াশের ডাকাডাকিতে ইশা না উঠলেও মিলি না উঠে থাকতে পারলোনা। মিলি উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো। আয়াশ ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো—-
” কি হলো? তুদের দরজা খুলতে এতক্ষণ লাগলো কেন?? ”
মিলি ভালো করেই জানে, যদি আয়াশকে মিথ্যা না বলে তাহলে আয়াশ ওকে আর ইশাকে দুজনকেই বকবে। তাই মিলি তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো —–
” আ ব আসলে আমরা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তাই শুনতে পায়নি। কেন ডাকছিলি?? কিছু কি লাগবে?? ”
আয়াশ ইশার দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো—-
” হুমমম, লাগবে। ইশা! আমার রুমে চল। একটা দরকার আছে। ”
মিলি যেহেতু বলেছিলো ওরা ঘুমিয়ে পড়েছিলো; তাই ইশা ঘুম ঘুম কণ্ঠে বললো —-
” ভাইয়া! আমার না এখন কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। যা করার সকালে করবো। এখন কোনো কাজ টাজ করতে পারবোনা।
” ড্রামা বন্ধ করে উঠবি?? নাকি মার খাবি?? কোনটা?? উঠ তাড়াতাড়ি। মিলি যেই না বললো ঘুমিয়ে পড়েছে। অমনিই ঘুমের ভান ধরলি, না??? তোরা ঘুমিয়ে পড়লে তুদের রুম থেকে যে কথার আওয়াজ শোনা গেলো সেটা কি তুদের ভূতে বলেছিলো??
চলবে……
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি