আঁধারে_প্রণয়কাব্য #পর্ব____৯ #নিশাত_জাহান_নিশি

0
224

#আঁধারে_প্রণয়কাব্য
#পর্ব____৯
#নিশাত_জাহান_নিশি

“সমস্যা কি? আমিতো তোর বাবার মতই!”

সিফরা ক্ষেপে গেল। চরম ঘৃণা হতে লাগল তার লোকটির প্রতি। পিতৃতুল্য চাচার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই নোংরা ও জঘন্য মুখটিকে তার এই মুহূর্তে খু*ন করে ফেলতে ইচ্ছে করছিল। ক্ষোভে নিয়ন্ত্রাধীন হয়ে সিফরা চিৎকার করে তার মাকে ডেকে বলল,

“মা? জা*নো*য়ারটাকে তুমি এখান থেকে নিয়ে যাও। তাকে এই বাড়িতে ঢুকতে দিলে কেন?”

রায়হান ততক্ষণে হুড়োহুড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমও পাড় হয়ে গেল। সোফার ওপর থাকা টাকার পুটলিটি নিয়ে সে বাড়ি থেকেও পগারপার হয়ে গেল। সিফরা দাঁত কিড়মিড়িয়ে উচ্চ স্বরে বলল,

“কু*ত্তার বাচ্চা দাড়া। কোথায় যাচ্ছিস তুই?”

বস্ত্রহীন অবস্থায় থাকায় রুম থেকে বের হতে পারছিলনা সিফরা। হাত চালিয়ে সে দ্রত গতিতে কুর্তীটি গাঁয়ে পরে নিলো রায়হানকে ধরার আশায়। সিফরার চিৎকারের আওয়াজে আফিয়া শিকদার তাঁর রুম থেকে বের হয়ে এলেন। সিফরার রুমে প্রবেশ করে তিনি পেরেশানি গলায় বললেন,

“কি হয়েছে?”

সিফরা তার জেদ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ধপ করে বিছানার ওপর বসে দুমড়ে মুচড়ে কেঁদে দিলো। বিছানার চাদর টেনে ধরে সে তার মাকে চোখ রাঙিয়ে বলল,

“এটা তুমি কি করলে মা? কেন ঐ জা*নোয়ারটাকে আবার এই বাড়িতে ঢুকতে দিলে? মনে নেই জা*নোয়ারটা আপুর সাথে পূর্বে কি করেছিল?”

আফিয়া শিকদার বুঝতে পেরে গেলেন রায়হান সিফরার সাথেও কিছু উল্টোপাল্টা কিছু করার চেষ্টা করেছিল। মুহূর্তেই তেতে ওঠে তিনি ক্ষিপ্ত গলায় বললেন,

“আমি ঐ জা*নোয়ারটাকে এই বাড়িতে ঢুকিয়েছি নাকি তোর বেহায়া বাপ? আজ আসুক তোর বাপ। আজ আমার একদিন কি তার একদিন। ভাই ভাই করতে হলে, ভাইকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতে হলে বাড়ির বাহিরে গিয়ে করুক বাড়ির ভেতরে নয়। তোর বাপ এখনও নিজের মেয়েদের ভালোটাও বুঝলনা। সারাটা জীবন ভাই ভাই করে গেল। আমাকে আর আমার মেয়েদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খেল তার ভাই ও ভাইয়ের বউ। আগের বারও লু*চ্চাটাকে ছেড়ে দিয়েছিল এবারও যদি এই কাজ রিপিট করে তবে আমি তাকেও ছাড়বনা আর!”

আফিয়া শিকদার উদ্বিগ্ন হয়ে সিফরার পাশে এসে বসলেন। কাঁদতে থাকা সিফরার মাথায় তিনি হাত বুলিয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন,

“রায়হান কি তোর গাঁয়ে হাত দিয়েছিল?”
“উঁহু। জামা পাল্টানো অবস্থায় রুমে ঢুকে পরেছিল। আমার দিকে কুনজরে তাকিয়ে ছিল মা। আমার খুব ঘৃণা লাগছে।”

সিফরার মাঝেই যেন সানামের সেই দিনের সেই করুণ, আর্ত ও অসহায় মুখটি ভেসে ওঠল আফিয়া শিকদারের অশ্রুসিক্ত দু’চোখে। আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগে যখন রায়হান সানামের সাথে অন্যায়ভাবে জোর জবরদস্তি করতে চেয়েছিল! সানামের গাঁয়ে হাত দিয়েছিল। সানামে বাবা রওজান শিকদার সেদিন তার ভাইকে জন্মের মা*রা মে*রেছিলেন। আধমরা করে ফেলেছিলেন প্রায়। নাক থেকে শুধু নিঃশ্বাস পরছিল। বাকি দেহ অবশ হয়ে গিয়েছিল। টানা তিনমাস শোয়া থেকে ওঠতে পারেনি। রায়হানের বউয়ের রিকুয়েস্টেই সেদিন সানামের বাবা রায়হানকে পুলিশে দেননি! দয়া করেছিলেন ভাই ও তার ভাইয়ের বউয়ের ওপর। তাদের বাড়িছাড়া করে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আর সেদিন থেকেই সানামের প্যানিক অ্যাটাকের রোগটির উৎপত্তি হয়! তখন সানামের বয়স ছিল মাত্র পনেরো বছর। আর এখন পঁচিশ বছরে পা রেখেছে সে। তবুও সেই দিনটি আজও ভুলতে পারেনা সানাম।

মুহূর্তেই ডুকরে কেঁদে ওঠলেন আফিয়া শিকদার। সানামের কথা ভীষণ মনে পরে গেল তাঁর। কত বছর মেয়েকে দেখেননা তিনি। মেয়ের কণ্ঠস্বরটাও অবধি শুনতে পাননা। সিফরা তার মায়ের কষ্ট অনুভব করতে পারল। ভগ্ন গলায় তার মাকে বলল,

“চলোনা মা আমরা একদিন আপুকে দেখে আসি। বাবা এই বিষয়ে কিছু জানতে পারবেনা। সামনেই তো আমার বিয়ে,আমার বিয়েতে আপু থাকবেনা বলো?”

“তোর বোনকে চিনিসনা তুই? বাপের মতো জিদ্দি হয়েছে। নিজ থেকে রাগ না ভাঙা অবধি সে আমার সাথে ফোনে কথাও বলবেনা আর আমার সাথে দেখা করতে চাওয়া তো দূর।”

“রাগ তো নিজে নিজে ভাঙবেনা মা। রাগ ভাঙাতে হবে। একপক্ষ না একপক্ষকে তো সামনে বাড়তেই হবে।”

আফিয়া শিকদার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

“তোর বিয়ের আগেই একদিন যাব না হয় ওর কাছে! দেখি তোর বাবাকেও ম্যানেজ করতে পারি কি-না। আচ্ছা তুই রেডি হয়ে নে। তাওহীদ হয়ত তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”

চোখের জল মুছতে মুছতে আফিয়া শিকদার রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। ছেলে-মেয়েরা অন্যায় করলে বাবারা ছেলে-মেয়েদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে রাখলেও মা-রা পারেন না। তাদের ভেতর জ্বলে যায়। বেহায়া হতে হয়। সানামকে একপলক দেখার জন্য তিনি ততটাই ছটফট করেন যতটা ছটফট মৃত্যু কালীন সময়ে একটা মানুষ ছটফট করে!

সিফরা রেডি হতে লাগল। তাওহীদের অসংখ্য কল ও ম্যাসেজে সিফরা বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। কল তুলতে কিংবা ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতেও বিন্দুমাত্র ইচ্ছে করছিলনা তার। কোনো রকমে রেডি হয়ে সিফরা তাওহীদের দেওয়া রেস্টুরেন্টে চলে গেল।

সকাল টাইম বলেই হয়ত রেস্টুরেন্টটি পুরো ফাঁকা। যদিও রেস্টুরেন্টটি তেমন আহামরি বড়ো নয়৷ সাত থেকে আটজন কাপলরা এখানে অনায়াসে বসে সময় কাটাতে পারবে। নিম্ন গতিতে গান বাজছিল। পরিবেশ নীরব হওয়ায় গানের সুরে চারিপাশ মধুর হয়ে ওঠেছিল। প্রেমিকাকে মনে করে চোখ বুজে তাকে অনুভব করার মতো পরিবেশ! রেস্টুরেন্টের শেষ কর্ণারের একদম শেষের টেবিলটিতে তাওহীদ অপেক্ষারত সিফরার জন্য। কালো শার্টের সাথে চোখে কালো চশমা ও সেট করা চুলে তাকে টিপটপ লাগছিল। গাঁয়ের রঙ ফর্সা হলেও চেহারায় তেমন মাধূর্য নেই তার! সিফরা দূর থেকে তাকে দেখে হতাশ হলো। এই ছেলেকে তার মোটেও পছন্দ নয়!

মাথা নুইয়ে বসল সিফরা। বিরক্তিতে তার শরীর রি রি করছিল। হাত-পা কচলাচ্ছিল কেবল। চোখ থেকে চশমা খুলে তাওহীদ নোংরা দৃষ্টিতে আগা গোঁড়া সিফরাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখল। আচমকা ঠোঁট কামড়ে সে বিড়বিড় করে বলল,

“এই মালটাই তবে আমার বৌ হবে!”

_______________________

টেবিলের ওপর দু’হাত উঁচিয়ে ধরে অনামিকা সেই হাতের ওপর তার থুতনী ঠেঁকিয়ে মুগ্ধিত দৃষ্টিতে ফায়েযের দিকে তাকিয়ে রইল! যেন কত যুগ, কত শতাব্দী পর ফায়েযকে দেখছে সে! ফায়েয এই মুহূর্তে তার কাছে অতি সাধনার ফল। যাকে সে অন্তরে ধারণ করছে। অন্যদিকে ফায়েয ব্যাস্ত কাঁটা চামচ দ্বারা চিকেন থেকে মাংস আলাদা করে মুখে ঠুসতে। অনামিকার দিকেও অবশ্যই নজর আছে তার। পাশে রাখা চশমায় রিফ্লেকশন হচ্ছিল অনামিকার মুখ! ব্যগ্র হাসল ফায়েয। বিড়বিড় করে বলল,

“ছেলেরাও যে তার রূপ দেখিয়ে মেয়েদের বশে আনতে পারে তা গোটা বিশ্বের ছেলেদের আমার কাছ থেকে শেখা উচিত!”

ক্যাশ কাউন্টারের পাশ ঘেঁষে একটি ডেকোরেট করা দোলনায় বসে আছে সানাম। উদাসীন হয়ে নিজেই নিজেকে ঠেলে দোল দিচ্ছে তো দোল খাচ্ছে! দোলনার পাশের টেবিলটিতেই একটি পিজ্জা ও কোল্ড ড্রিংকস রাখা আছে তার জন্য। যা ফায়েয সানামের জন্য আলাদাভাবে অর্ডার করে দিয়ে গিয়েছিল। সানামের উপস্থিতি অনামিকা এখনও টের পায়নি। টের পেলে সকল প্ল্যান ভেস্তে যাবে।

ফায়েয খাওয়া বন্ধ করে টিস্যু দ্বারা মুখ মুছতেই অনামিকা ঘোর জড়ানো গলায় বলল,

“খাওয়া বন্ধ করলে কেন? ভালোই তো লাগছিল!”

ফায়েয আলতো হাসল। মুখ মুছে অনামিকার দিকে কিঞ্চিৎ এগিয়ে এলো। ডানপিটে গলায় বলল,

“ইউ আর সো নটি গার্ল।”

অনামিক ফিক করে হেসে দিলো। টেবিলে থুতনী ঠেকিয়ে পলকহীন দৃষ্টিতে ফায়েযের দিকে তাকিয়ে বলল,

“তুমি কি ব্ল্যাক ম্যাজিকে বিশ্বাস করো?”
“কেন? তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক করেছি?”
“হুম! যদি না করো তবে তোমার প্রতি আমি এত আকর্ষিত হই কেন?”
“আমি মায়ায় বিশ্বাস করি ব্ল্যাক ম্যাজিকে নয়।”
“তার মানে তুমি বলতে চাইছ আমি তোমার মায়ায় পরেছি?”

ফায়েয সূক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল অনামিকার আচ্ছন্ন দু’চোখে। অতঃপর নিবিড় গলায় বলল,

“বেশ ভালোভাবেই পরেছ। তোমার চোখ দেখেই বুঝতে পারছি। এই চোখে আমার প্রতি অঢেল ভালোবাসা রয়েছে, আমার নামের কোটি কোটি জায়গা-সম্পত্তি, বাড়ি, গাড়ি সব লিখা রয়েছে! সাথে আমাদের ছোট্টো একটি সাজানো সংসার, বাচ্চাদের নিয়ে একটি ফুটবল টিমও রয়েছে! সব নিঁখুতভাবে দেখতে পারছি আমি!”

অনামিকার লালসা জেগে ওঠল! ভালোবাসা এবার লোভে পরিণত হলো। ফায়েযের কাজ উদ্ধার হলো। এবার শুধু কাজ কতটুকু সফল হলো তা দেখার পালা। অনামিকা পূর্বের তুলনায় চাঙা হয়ে ওঠল। গাঁ নাড়াচাড়া দিয়ে জোর গলায় বলল,

“তাহলে চলোনা আমরা বিয়ে করে ফেলি!”

ফায়েয ভাবল। কথা আগানোর সিদ্ধান্ত নিলো। ভেবেচিন্তে শুকনো হেসে বলল,

“বিয়ে তো একার সিদ্ধান্তে হয়না সুইটি। এক্ষেত্রে দুই পরিবারেরই মতামত থাকতে হয়।”

“আমার পরিবার তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়ত মানবেনা ফায়েয! চলো না আমরা পালিয়ে বিয়ে করে ফেলি!”

ফায়েযের দৃষ্টি প্রখর হলো। কপাল কুঁচকে এলো। প্রশ্ন ছুড়ল,

“কেন মানবেনা?”

অনামিকা গোমড়ামুখো হয়ে গেল। ফায়েযের হাত ধরে অনুরোধ করে নিরুপায় গলায় বলল,

“এতসব তোমাকে বলা যাবেনা ফায়েয! প্লিজ চলো না আমরা বিয়ে করে ফেলি!”

অনামিকার হাতটি ঝেড়ে ফেলে দিলো ফায়েয! মুহূর্তেই বসা থেকে ওঠে গেল সে। বিক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলল,

“সরি অনামিকা। তারা কেন আমাকে মানতে পারবেনা তা না জানা অবধি আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবনা। কজ এটা আমার প্রেসটিজেস ইস্যু! এক্ষেত্রে কোনো ছাড় নয়।”

অনামিকাকে বিভ্রমে ফেলে দিয়ে ফায়েয প্রস্থান নিলো! বাঁকা হেসে বেশ ভাবসাব নিয়ে শার্টের কলারটা পেছনের দিকে এলিয়ে দিলো। হেয়ালি স্বরে বলল,

“আব আয়েগা মাজা। তোমার মুখ থেকে সব অতীতের কথাও টেনেহিঁচড়ে বের করব আমি।”

অনামিকা পেছন থেকে ফায়েযকে অনেকবার ডেকেও ব্যর্থ হলো। অশ্রুভেজা গলায় অনামিকা বিড়বিড় করে বলল,

“কি করে তোমায় বলি ফায়েয বাবা ও ভাইয়া তোমার বিপক্ষে। আর ভাইয়া তো অলরেডি তোমার বোনের পেছনে হাত ধুঁয়ে পড়েই গেছে! এসব জানলে তো তুমি আমাকে বিয়েই করবে না ফায়েয। আমাকে উল্টো ঘৃণা করতে শুরু করবে।”

পিজ্জাটুকু সানাম সম্পূর্ণ শেষ করতে পারলনা। ইতোমধ্যেই ফায়েয বিল পে করে সানামকে নিয়ে একপ্রকার ছুটে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল। গাড়িতে ওঠে গাড়িও ছেড়ে দিলো। দুজনই হাঁপাচ্ছিল। সানাম উৎসুক গলায় শুধালো,

“কাজ হয়ে গেছে? দেখি কোথায় রেকর্ড করেছেন?”

“কুল ডাউন সারাহ্ সানাম। এত ইজি নয় কারো মুখ থেকে কৌশলে কথা বের করা। তবে পরের বার দেখা হলে নিশ্চয়ই প্রমাণ জোগাড় হয়ে যাবে আমাদের।”

সানাম মুখটা কালো করে নিলো। ফায়েয লুকিং গ্লাসের সাহায্যে সানামের গোমড়া মুখ দেখে নাক সিটকালো। কপাল কুঁচকে বলল,

“বিশ্রী দেখাচ্ছে। হাসতে পারলে হাসুন, না হাসতে পারলে এটলিস্ট আমার সামনে মুখটাকে এমন বাংলার পাঁচ করে রাখবেন না।”

“কিন্তু স্পর্শ তো বলত রাগলে কিংবা মন খারাপ করে থাকলেও নাকি আমাকে খুব সুন্দর দেখায়!”

“ধ্যাত, মিথ্যা। প্রেমিকরা প্রেমিকাকে এসব মিথ্যে কমপ্লিমেন্ট দিয়েই থাকে! মূলত প্রেমিকাকে খুশি করার জন্য। আপনি তো আমার প্রেমিকা নন তাই আমি সত্যিটাই বললাম! প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড ওকে?”

ফায়েয চাপা হাসল। সানাম নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসল। লুকিং গ্লাসে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে দেখল সত্যিই তাকে বিশ্রী দেখাচ্ছে! বুকে হাত গুজে সানাম অন্যপাশে ফিরে গেল। নাক ফুলিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

“স্পর্শ কখনও মিথ্যা বলতে পারেনা। সে আমাকে সত্যিকারের ভালোবাসত বলেই আমার সব রূপ তার কাছে ভালো লাগত!”

মুখ মলিন হয়ে এলো ফায়েযের। ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলো সে। বিক্ষিপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,

“স্পর্শকে হাজার মিথ্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও আপনি হয়ত আমাকে বিশ্বাস করবেননা সানাম। স্পর্শ আপনার হৃদয়ে গেঁথে গেছে। শত চেষ্টায়ও আমি তাকে আপনার হৃদয় থেকে বের করতে পারবনা। আমাকে ভালোবাসলে কি এমন ক্ষতি হয় সানাম? আমিতো আপনার ভালোবাসার কাঙাল। কেন বুঝেন না আপনি? স্পর্শের চেয়েও আমি আপনাকে নিঁখাদভাবে ভালোবাসি! এর প্রমাণ আপনি নিশ্চয়ই একদিন পাবেন!”

______________________

বলা মাত্রই চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত স্বর্ণ গহনা পেয়ে রাই ভীষণ খুশি। সাদিদ সুটকেস খুলে রাইয়ের জন্য আনা সব জিনিসপত্র এক এক করে রাইকে দেখাচ্ছিল। মালিহা চৌধুরী, আকরাম ফারনাজ চৌধুরী ও ফায়েযের জন্যও বিভিন্ন নামী দামী ব্র্যান্ডের কাপড় ও শার্ট-প্যান্ট সব এনেছে সাদিদ।

মালিহা চৌধুরী ও আকরাম ফারনাজ চৌধুরী সাদিদকে মা-বাবার মতো ছাঁয়া দিলেও মা-বাবার অভাব পূরণ হবার নয়। সাদিদের যখন প্রায় পাঁচ বছর বয়স তখন তার মা পরকীয়া করে তাকে এবং তার বাবাকে ছেড়ে চলে যায়! ছেলের অবহেলা হবে তা ভেবে সাদিদের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। খুব অল্প বয়সে তিনিও স্ট্রোক করে মারা যান। তখন সাদিদের বয়স মাত্র পনেরো বছর। সাদিদের বাবা আকরাম ফারনাজ চৌধুরীর দুঃসম্পর্কের চাচাতো ভাই ছিলেন। সেই সুবাদে তারা দুজন পূর্ব পরিচিত ছিল। মৃত্যুর পূর্বে সাদিদের বাবা সাদিদকে আকরাম ফারনাজ চৌধুরীর হাতে তুলে দিয়ে যান। সেই থেকেই সাদিদ এই বাড়িতে বড়ো হয়েছে, পড়াশোনা শেষ করেছে, স্যাটেল্ডড হয়েছে এবং মানুষের মতো মানুষ হয়েছে।

আর তখন থেকেই রাইয়ের সাথে সাদিদের প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হয়! তা টের পেয়ে আকরাম ফারনাজ চৌধুরী ও মালিহা চৌধুরী মিলে তাদের বিয়ে দিয়ে দেন! সাদিদ কতটা নম্র ভদ্র ও ভালো ছেলে সেই বিষয়ে তাদের কোনো সন্দেহ ছিলনা। যদিও এখন রাই সাদিদকে বাইরের ছেলে হিসেবেই ট্রিট করে! প্রেম এবং বিয়ের সম্পর্কটাও যেন সে অস্বীকার করতে পারলেই বাঁচে।

সাদিদ বাড়ি ফিরেছে সেই উপলক্ষ্যে মালিহা চৌধুরী রান্নাবান্নার কোনো কমতি রাখেননি। সাদিদ যতবারই রাইয়ের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছে রাই ততবারই দূরে সরে যাচ্ছে। রাই লজ্জা পাচ্ছে তা ভেবে সাদিদ চুপ হয়ে গেলেও রাইদকে কাছে পেতে প্রচণ্ড ইচ্ছে করছিল তার। অবশেষে সাদিদ দুটো প্ল্যানের টিকেট রাইয়ের মুখের কাছে ধরে বলল,

“এই দেখো মালয়েশিয়ার টিকেট। গত পরশুই আমরা মালয়েশিয়া যাচ্ছি!”

কথাটা শুনে রাই আঁতকে ওঠল। সাদিদের পাশ থেকে ওঠে বিছানা ছেড়ে দাড়ালো। আমতা আমতা করে বলল,

“আমার পি’রি’য়ড! আগামী একসপ্তাহও আমি বাড়ি থেকে বের হতে পারবনা।”

_____________________

রাতে খাবার পাতে বসেও শান্তি পেলনা ফায়েয! চরম একটি দুঃসংবাদ এলো তার কাছে। খাবার ছেড়ে ফায়েয ওঠে যেতে গেলেই সবাই প্রশ্ন ছুড়ে দিলো ফায়েযের দিকে। কারো প্রশ্নের তোয়াক্কা না করে ফায়েয পরনের প্যান্ট শার্ট পড়েই গাড়ি নিয়ে সানামের হলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল!

হুলুস্থুল হয়ে ফায়েয হলের গেইটের ভেতর প্রবেশ করল। সানামের রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখল সানামের রুমের সামনে হলের সব মেয়েরা ভীড় জমিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে। সবার চোখেমুখে নানান প্রশ্ন, কৌতূহল ও আতঙ্ক। ফায়েযকে ফোনে খবর দেয়া মেয়েটি হঠাৎ পেরেশান হয়ে ছুটে আসা ফায়েযকে বলল,

“পুলিশ অনেকক্ষণ যাবত জেরা করছে সানামকে। ওর বাবা-মাও আসছে।”

ফায়েয ভীড় ঠেলে সানামের রুমের দরজায় পা রাখতেই মহিলা কনস্টেবল ফায়েযকে আটকে দিলেন। লাঠি ঠেকিয়ে বিক্ষিপ্ত ফায়েযকে কড়া গলায় বললেন,

“বাইরেই থাকুন। রুমের ভেতরে বাইরের কেউ প্রবেশ করতে পারবেনা। এখানে জিজ্ঞাসাবাদ হচ্ছে।”

ভয়ে সিটিয়ে থাকা ঘর্মাক্ত ও ক্রন্দনরত অবস্থায় সানাম এবার দরজার দিকে তার অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ফায়েযকে এক পলক দেখমাত্রই সানাম বসা থেকে ওঠে গেল। ভরসার মানুষ খুঁজে পেল সে। মরুভূমিতে এক ফোঁটা পানি খুঁজে পাওয়ার ন্যায়। তার সামনেই কঠোর ভঙিতে লাঠি নিয়ে বসে থাকা পুলিশ অফিসারকে উপেক্ষা করে সানাম ফায়েযের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আমি কিছু করিনি ফায়েয। আমি সত্যিই জানিনা শ্রেতা কোথায়!”

#চলবে______?

[আসসালামু আলাইকুম। দয়া করে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। গল্প পড়ে একটা লাইক দিতেও আপনারা কতটা কৃপণতা করেন! অথচ একটা লাইক দিতে এক সেকেন্ড সময়ও লাগেনা।🙂]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here