#আঁধারে_প্রণয়কাব্য
#পর্ব____১২
#নিশাত_জাহান_নিশি
“সন্নাসী হওয়ার শখ তাই! সেই যে আঠারো বছরের প্রেমে ধোঁকা খেলাম তারপর থেকে আর ইচ্ছে হয়নি কাউকে ভালোবাসার।”
“তোর সেই প্রেমিক পুরুষটা কে আজও অবধি কিন্তু জানতে পারলাম না।”
ভাবশূণ্য গলায় কথাটি বলে সাদিদ নদীর উত্তাল ঢেউয়ে চোখ বুলালো। ততক্ষণ অবধি সিগারেটে টান বহাল থাকায় তার নাক-মুখ থেকে ক্রমান্বয়ে সিগারেটের ধোঁয়া নির্গত হচ্ছিল। মায়া আচ্ছন্ন দৃষ্টিতে পাশ ফিরে নিমগ্ন ও নিশ্চল সাদিদের পানে একাধারে তাকিয়েই রইল। তার তাকানোর তরিকাই যেন ছিল সাদিদের কৌতূহলের প্রত্যুত্তর! ভুল করে হলেও যদি সাদিদ এই মুহূর্তে মায়ার দিকে এক পলক ফেলে তাকাতো তবে তার যাবতীয় সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেত। ফিচেল হেসে মায়া বলল,
“থাক না কিছু অজানা সত্য। তোর কথা বল? আমি খালামনি হচ্ছি কবে?”
মুহূর্তেই অশান্ত হয়ে ওঠল সাদিদ। নীরব চাহনি তার বেদনা বিধুর হয়ে ওঠল। চোখেমুখে প্রবল ক্ষোভ ও আক্ষেপ ফুটে ওঠল। সব মিলিয়ে তার ভীষণ অস্বস্তি হতে লাগল। মুখে থাকা সিগারেটটি সে নিমিষেই পা দ্বারা পিষে ফেলল। চুলগুলো শক্ত হাতে টেনে ধরে মায়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“আচ্ছা ধর তোর সেই পুরোনো প্রেমিকের সাথেই তোর বিয়ে হলো। পারিবারিকভাবেই বিয়েটা হলো। বিয়ের একবছর ভালোই কাটছিল তোদের। এরপর তুই হটাৎ লক্ষ্য করলি তোর হাসবেন্ড কেমন পাল্টে যাচ্ছে! তোর অগোচরে কারো সাথে সে সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছে। আই মিন পরকীয়া করছে! তোকে গুরুত্ব দিচ্ছেনা, তোকে অবহেলা করছে, তোর থেকে মুক্তি চাইছে তখন তুই কি করবি? মানে কি করা উচিত তোর?”
কোনোদিকে কালক্ষেপণ না করে মায়া বিষয়টিকে বেশ তৎপর ভাবে নিয়ে সোজাসাপ্টা গলায় বলল,
“আমি অবশ্যই তাকে মুক্তি দিতাম। তবে শুধু আমার জীবন থেকে নয়, এই পৃথিবী থেকেই তাকে চিরতরে মুক্ত করে দিতাম!”
মায়ার চোখেমুখে হিংস্রতা বিরাজমান। এই সেনসেটিভ বিষয়ে কোনো ছাড় নয় তারই যেন ইঙ্গিত বহন করছে মায়ার বিষাক্ত চাহনি। সাদিদ শুকনো ঢোঁক গিলল। রাইকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া তো দূর রাইয়ের দিকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলতেও কুণ্ঠাবোধ হয় তার। নিঃসন্দেহে মায়ার এই আইডিয়া তার কাছে ফ্লপ! স্বাভাবিক হলো মায়া। গলা ঝেড়ে সাদিদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“হঠাৎ এই প্রশ্ন করলি কেন?”
“এমনিই। আচ্ছা ছাড়, বাড়ি ফিরতে হবে আমার।”
“সবেই তো এলি। এখনি চলে যাবি?”
গম্ভীর ও অসহায় দৃষ্টি মায়ার।এই দৃষ্টিকে কিছুতেই উপেক্ষা করা যায়না। এমনিতেও বাড়ি ফিরলে শুধু অশান্তি আর অশান্তি। রাইয়ের সাথে ঝগড়া ও কথা কাটাকাটি। সাদিদ তার মত পাল্টে নিলো। পূর্বের জায়গায় সে চেয়ার টেনে বসল। মায়া ভীষণ খুশি হলো। সেও উল্টো দিকে চেয়ারটি টেনে বসল। মায়া সাদিদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“তুই আমার সাথে আছিস জানলে রাই রাগ করবে না তো?”
সাদিদ অট্ট হাসল। অভিমানী গলায় বলল,
“আমাকে নিয়ে তার কোনো হেলদোল নেই।”
“মানে?”
“মানে ঐ আর কি। সে তো জানেই আমি তাকে ছাড়া আর কারো প্রতি দুর্বল হবনা।”
মায়া জোরপূর্বক হাসল। রাই সত্যিই জিতে গেল। এত ভালোবাসার পরেও মায়া সাদিদকে পেলনা! উড়ে এসে রাই সাদিদের মনে ঠিক জায়গা করে নিলো। ইশ, যদি সাদিদ কখনও জানতে পারত মায়া তাকে কতটা ভালোবাসে তবে হয়ত সাদিদ কখনও মায়াকে ছেড়ে রাইকে বিয়ে করতনা। সত্যিই মায়া তার ভালোবাসার কথা সাদিদকে বলতে অনেকটাই দেরি করে ফেলেছিল তাই এমন পরিণতি হলো তার!
___________________________
তাওহীদ এখন পুলিশ হেফাজতে! ঘটনার পরের দিনই তাকে নিজ বাড়ি থেকে সহীহ সালামতে আটক করা হয়েছিল। তার থেকে জবানবন্দি নেয়ার পর জানা যায় শ্রেতা ও তাওহীদের মধ্যে প্রায় একবছরের মতো প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরমধ্যে একাধিকার তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও হয়েছিল! লাস্ট তিনদিন আগে যখন তারা রিসোর্টে গিয়েছিল সময় কাটাতে তখন শ্রেতা তাকে জোর করছিল বিয়ে করার জন্য। শ্রেতা তার ধর্ম পাল্টাতেও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু তাওহীদ কখনই শ্রেতার প্রতি সিরিয়াস ছিলনা। তাকে শুধু ব্যাবহার করতে চেয়েছিল। তাই শ্রেতাকে অস্বীকার করে সে সেদিন রাগারাগি করে রিসোর্ট থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। আর তখনই শ্রেতা এসব মানতে না পেরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্ন*হ*ত্যা করেছিল! প্রত্যক্ষভাবে তাওহীদ শ্রেতাকে খু*ন না করলেও পরোক্ষভাবে এই খু*নে সে জড়িত ছিল। মূলত শ্রেতাকে আত্ন*হ*ত্যা করতে সে-ই বাধ্য করেছিল।
লা*শ পোস্ট মর্টে*মের পর শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। শ্রেতার মায়ের কান্না ও আহাজারিতে পুরো শ্মশান যেন কেঁপে ওঠছিল। সানাম ও ফায়েয মিলে তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু কিছুতেই কিছু লাভ হচ্ছিলনা। ফায়েয বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠল। শান্তনা দিয়ে শ্রেতার মাকে বলল,
“আন্টি আপনি কাঁদবেন না। শ্রেতার আত্না কষ্ট পাবে। সাহস রাখুন আপনি। শ্রেতার খু*নিকে কিভাবে শাস্তি দেয়া যায় তার জন্য প্রস্তুত হন।”
“রাস্তার ভিখেরি হয়ে গেলেও আমি এই কেস লড়ে যাব বাবা। আমার মেয়ের খু*নের শাস্তি ঐ ছেলে নিশ্চয়ই পাবে। প্রয়োজনে আমি হাই কোর্টে যাব।”
সানাম পাশ থেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলল,
“আপনি একা নন আন্টি। আমরাও আপনার পাশে থাকব। ঐ ছেলে এবং তার পরিবার মিলে আমার বোনের জীবনটাও নষ্ট করতে চেয়েছিল। তাদের আমরাও ক্ষমা করবনা।”
_______________________
সিফরা আজ মহাখুশি। খুশিতে একপ্রকার নাচতে ইচ্ছে করছিল তার। কারণ জোরপূর্বক তার অপছন্দের মানুষটিকে আর বিয়ে করতে হবেনা তাকে! চেহারা দেখলেই বুঝা যায় কে কেমন প্রকৃতির। সিফরার প্রথম থেকেই তাওহীদকে বেশ অপছন্দ ছিল। এবং সন্দেহজনকও ঠেকছিল। কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে পারছিলনা। ছোটো মুখে যদি বড়ো কথা বলা হয়ে যায় তাই। তার মা-বাবার সিদ্ধান্তকেও সে অগ্রাহ্য করতে চাইছিলনা। আফিয়া শিকদার মাথায় হাত দিয়ে চিন্তিত ভঙিতে বসে রইলেন। সিফরা ডাইনিং টেবিলে তার মায়ের পাশের চেয়ারটি টেনে বসল। গলা ঝেরে বলল,
“কি ব্যাপার মা? কোনোকিছু নিয়ে আফসোস করছ মনে হচ্ছে?”
“ঠিক আফসোস নয়। নিজের বোকামোর জন্য নিজের প্রতি ভৎসনা হচ্ছে। আর একটুর জন্য নিজের মেয়ের জীবনটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছিলাম।”
“বাদ দাও না মা। যা হয়েছে ভুলে যাও। আগে আপুর বিয়ের চিন্তা করো, এরপর আমার।”
“আচ্ছা তোর কি মনে হয়? ফায়েযের সাথে সানামের কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে?”
“উমমম.. আছে হয়ত। দেখা যাক সামনে কি হয়।”
আফিয়া শিকদার আলতো হাসলেন। স্বস্তির শ্বাস ফেলে সিফরার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“আমারও মন বলছে কিছু একটা হবে। তবে এবার সানামকে আমরা আর জোর করবনা। যা করবে নিজের ইচ্ছেতে করবে, নিজের খুশিতে করবে।”
______________________
অনামিকার সমস্ত স্বীকারোক্তি শুনে সানাম কান্নায় ভেঙে পরল। তবে সত্যিই সেদিন স্পর্শকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বচ্ছ ও নিঁখুতভাবে গাড়ি চাপা দিয়ে খু*ন করা হয়েছিল! নির্বোধ সানাম পাঁচ বছর পর তা জানতে পারল। ফায়েয পাশ থেকে রুদ্ধশ্বাস ফেলল। আশেপাশে জড়তাগ্রস্ত দৃষ্টিতে তাকালো সে। গলা ঝেরে ছোট্টো আওয়াজে বলল,
“কান্না থামান। এটা একটা রেস্টুরেন্ট। আশপাশ থেকে মানুষ আমাদের দেখছে।”
সানাম টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে অঝরে কাঁদতে ব্যাস্ত। কোনোদিকে মনোযোগ নেই তার। বিরক্ত হলো ফায়েয। চোয়াল উঁচিয়ে বলল,
“এভাবে চলতে থাকলে আমি কিন্তু আপনাকে হেল্প করতে পারবনা। শান্ত হন। না হয় আমি বাধ্য হব এখান থেকে চলে যেতে। প্লিজ আমাকে বাধ্য করবেন না।”
সানাম ঘাবড়ে গেল। কান্না থামিয়ে টেবিল থেকে মাথা ওঠালো। এলোমেলো চুলগুলোকে প্রথমে ঠিক করল। কান্নাজড়িত মুখশ্রীতে লাল আভা ফুটে ওঠছিল তার। চোখ থেকে গড়িয়ে পরা জল গুলোকে দু-হাত দ্বারা মুছল। ফায়েযের দিকে কোমল দৃষ্টিতে তাকালো। বলল,
“আর কাঁদবনা।”
“শিওর?”
“হুম।”
“কাঁদলে কি সমস্যা সমাধান হবে?”
“না।”
“আর যদি কখনও কাঁদতে দেখি তো?”
“একা রেখে চলে যাবেন।”
“শুধু তাই নয়। গাঁয়েও হাত তুলব!”
“সেই অধিকার তো আপনাকে আমি দিইনি।”
“অধিকার কেউ কাউকে দেয়না। তৈরি করে নিতে হয়।”
প্রসঙ্গ পাল্টে নিলো ফায়েয। বেশ তৎপর গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“কেসটা কি আপনি কালই করতে চাচ্ছেন?”
“হ্যাঁ। পারলে এখনি করি!”
“এখন তো রাত প্রায় বারোটা। পসিবল নয়।”
“ওকে। তাহলে এখন আমাকে যেতে হবে।”
“কোথায় যাবেন?”
“কেন? বাড়িতে।”
“এতো রাতে?”
“হ্যাঁ। বাড়ি না ফিরলে থাকব কোথায়?”
“আন্টি বলেছে আজ আমাদের বাড়িতে থাকে যেতে!”
“কখন বলল মা?”
“এইতো ঘণ্টাখানেক আগেই।”
“কিন্তু আপনার মা, বাবা, বোন যদি কিছু মনে করে?”
“আমি বুঝে নিব। আপনি চলুন।”
সানামকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ফায়েয তার বাড়ি নিয়ে গেল। বাড়ির সদর দরোজা খুলে দিলেন মালিহা চৌধুরী নিজেই৷ ফাযেয়ের সঙ্গে সানামকে দেখে মালিহা চৌধুরী তাজ্জব বনে গেলেন। প্রশ্ন ছুড়লেন,
“সানাম?”
সানাম শুকনো ঢোঁক গিলল। কি বলবে না বলবে তা ভেবে সে মাথা নুইয়ে নিলো। ফায়েয শান্ত রইল। মাথা চুলকে বলল,
“হ্যা মা সানাম। আমি তোমাকে সব পরে খুলে বলছি।”
মালিহা চৌধুরী তাদের বাড়িতে ঢুকতে দিলেন। সানামকে ফায়েয তার গেস্টরুম দেখিয়ে দিলো। সানাম দরজা আটকে সেই রুমে ঢুকে পরল। ফায়েযের সাথে কোনোরূপ বাতচিত করলনা। সানাম সম্পর্কে ফায়েয যেইনা তার মাকে কিছু বলতে আসবে তখনই মালিহা চৌধুরী বিপর্যস্ত গলায় ফায়েযকে বললেন,
“রাই তো এখনও বাড়ি ফিরেনি ফায়েয!”
ফায়েয আঁতকে ওঠল। কপাল কুঁচকে বলল,
“হোয়াট?”
“সাদিদ বেরিয়েছে রাইকে খুঁজতে। এরমধ্যে আমি আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করেছি!”
“কি?”
“সাদিদের আনা কোনো স্বর্ণ গয়নাই লকারে নেই!”
ফায়েয মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে সোফার ওপর বসে গেল। ইতোমধ্যেই বাড়ির কলিংবেল বেজে ওঠল। ফায়েয ছুটে গিয়ে সদর দরজা খুলে দিলো। সাদিদ ও রাই দরজার বাইরে। রাইকে জোর করে ধরে এনেছে সাদিদ। বেশ ক্ষিপ্ত দেখাচ্ছে রাইকে। ফায়েযকে ধাক্কা মেরে সে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। দৌড়ে দু’তলায় ওঠে তার রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। এক পা দু-পা করে সাদিদ বাড়ির ভেতর ঢুকল। সংকুচিত,,ছন্নছড়া ও উদাস দেখাচ্ছে তাকে। সাদিদকে ঝাকিয়ে ফায়েয বলল,
“কি হয়েছে জিজু? আপুকে কোথায় পেলে?”
“আবাসিক হোটেলে!”
“মানে? কার সাথে?”
“নওশাদ।”
“কু*ত্তা*র বাচ্চাকে ছেড়ে দিলে কেন?”
“কারণ আমি নিজেই কু*ত্তা*র বাচ্চা!”
ফায়েয দমে গেল। মাথা নুইয়ে লজ্জাষ্কর গলায় বলল,
“আপুকে ছেড়ে দাও তুমি।”
মালিহা চৌধুরীও কেঁদেকেটে বললেন,
“হ্যাঁ সাদিদ। আমি মা হয়ে বলছি আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও তুমি। কতো উজ্জ্বল ভবিষ্যত পরে আছে তোমার। ফ্রান্সে ফিরে যাও তুমি। নিজের মতো করে সব শুরু করো।”
নিশ্চুপ সাদিদ। মন্থর গতিতে হাঁটা ধরল। সিঁড়ি বেয়ে তার রুমের দিকে অগ্রসর হতে লাগল। তার বাবাকে সে খুব মিস করতে লাগল। এভাবেই তো একদিন তার বাবা তার মায়ের পরকীয়ার সম্পর্ক ধরে ফেলেছিল। দুজনকে হাতেনাতে ধরেছিল। সেদিন তার বাবা অনেক কেঁদেছিল। বুক ফেঁটে মরে যাওয়ার মতো কষ্ট হচ্ছিল। ছোট্টো সাদিদ সেদিন আড়ালে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল। মায়ের প্রতি দুনিয়া ধ্বংস করার মতো ক্রোধ ও ঘৃণা জন্ম নিয়েছিল তার। সেদিনের পর থেকে মায়ের মুখও দর্শন করেনি সে। অথচ তার মা এখনও জীবিত। আজ আবারও তার পুনরাবৃত্তি হলো।
সাদিদ দরজায় টোকা মারতেই রাই দরজা খুলে দিলো। সাদিদ ভেতর থেকে দরজার খিল আটকে দিলো। চোখে তার বিস্তর ক্ষোভ ও প্রতিহিংসার আগুন। রাই চিল্লিয়ে বলে ওঠল,
“আমাকে ছেড়ে দিচ্ছনা কেন তুমি? কি পেয়েছ আমার মধ্যে? এতো বেহায়া কেন তুমি?”
চোখ তুলে সাদিদ রাইয়ের দিকে তাকালো। রাইয়ের কপালে আলতো হাত ছোয়ালো। কেমন যেন অস্বাভাবিক গলায় শুধাল,
“ঐ লোকটা তোমার কোথায় কোথায় ছুঁয়েছে রাই?”
সাদিদের হাতটি এক ঝটকায় সরিয়ে দিলো রাই। দাঁত চেপে বলল,
“সব জায়গায় ছুঁয়েছে! আর আমরা খুব দ্রুতই বিয়ে করতে যাচ্ছি।”
সাদিদ কেমন যেনো শান্ত গলায় বলল,
“ঠিক আছে! এখন ঘুমিয়ে পরো!”
রাই অবাক হলো। সাদিদ সোজা হয়ে বিছানায় শুয়ে পরল। রাগে দুঃখে রাই কপাল ঘঁষল। বিড়বিড় করে বলল,
“এই লোকটা মরলেই আমি বাঁচি!”
________________________
“ফায়েয আমাকে মাফ করে দিস। আমি তোর বোনকে গ’লা টি’পে হ*ত্যা করেছি তাই! যখন রাই শেষ নিঃশ্বাস নিচ্ছিল আমার ভেতরটা ফেঁটে যাচ্ছিল। চুরমার হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কি করব এই মেয়েটা তো আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলেছে! আমার ভালোবাসার নিয়ে মজা করেছে। আমি বেঁচে থাকা অবস্থায় অন্য পুরুষ তাকে ছুঁয়েছে। সেই দৃশ্য আমার দু’চোখে বার বার ভেসে ওঠছিল। আমি পারছিলাম না সহ্য করতে। চাইলেই আমি তাকে ডিভোর্স দিয়ে সব নতুন করে শুরু করতে পারতাম। তবে আমি তাকে ছাড়া ভালো থাকতাম না। আমি আমার বাবার মতো এতো দয়ালু মানুষ হতে পারিনি। যে অনায়াসে বউয়ের পরকীয়ার সম্পর্ক মেনে নিবে! তাঁকে মারার পর আমার খুব ছটফট লাগছিল তাই আমিও দড়িতে লটকে গেলাম! কি সুন্দর সমাপ্তি আমাদের তাইনা?”
চিঠি থেকে চোখ সরিয়ে ফায়েয তীরের সঙ্গে লটকে থাকা সাদিদের নিথর দেহটির দিকে তাকালো। খাটেই চির ঘুমে তলিয়ে রয়েছে রাই! ভেঙেচুরে মাটিতে পরে গেল ফায়েয। মালিহা চৌধুরী এই শোক সামলাতে পারবে তো?
#চলবে______?
[আমি গল্প যেভাবে ভেবে রেখেছি গল্পটা সেভাবেই এগুচ্ছে। আর সাদিদ ও রাইয়ের অংশটুকু সত্য ঘটনা। আশা করি কেউ হতাশ হবেন না।🙂]