হৃদয়হরণী #পর্ব:২১ #তানিশা সুলতানা

0
391

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২১
#তানিশা সুলতানা

সাদির বাসায় হাজির হয়েছে তার বন্ধুরা। রিমি যখনই জানতে পেরেছে ছোঁয়া এখানে এসেছে তখনই সে ইরাকে কল করেছে। আজকে সাদির বাসায় পার্টি করবে। আশিক সামির শিপন ওরা এদেছে মূলত সাদির সাথে আড্ডা দিতে৷ ওরা জানতো না ছোঁয়া এখানে আছে এবং রিমিরাও এখানে আসছে।
কলিং বেল বাজিয়ে রিমি আর ইরা অপেক্ষা করছে তখনই আশিক সামির এবং শিপন এসে দাঁড়ায়।
“তোরা এখানে কেনো?
রিমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে।
সামির রিমির মাথায় গাট্টা মেরে বলে
” জামাই রাইখা তুই এখানে কেনো?
রিমিও কম যায় না। সামিরের চুল টেনে দিয়ে বলে
“তুই জানিস না আমার জামাই বিদেশ।
” ওহহ হ্যাঁ তুই তো আবার বিদেশি সাহেবা।

“চুপচাপ থাক সামিরের বাচ্চা।

তখনই খট করে দরজা খুলে দেয় সাদি। ওদের দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে। সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করে
” তোরা এখানে কেনো?

ইরা সাদিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে জবাব দেয়
“তোর রোমাঞ্চের বারোটা বাজাতে আসলাম।

রিমি ভেংচি কেটে বলে
” সাদি আর রোমাঞ্চ। আকাশ কুসুম ভাবনা। অকালে ছোঁয়ার কপাল পুরলো।

এবার শিপন বিরোধিতা করে বলে
“আমার বন্ধুরে একদম অপমান্স করবি না কইয়া দিলাম। করলা খেতে খেতে অনুভূতিতে একটু মরিচিকা ধরেছে এই যাহহ। একটু ঝালাই পালাই করলেই ঠিক হয়ে যাবে।

সাদি এদের কথা শুনতে শুনতে দরজা বন্ধ করে ফেলে। সাদির এসবে অভ্যাস আছে। এরা সব সময়ই এমন।
সামির সোফায় আরাম করে বসে বলে
” ঝালাই পালাই করার মেডিসিন আছে আমার কাছে। বন্ধু যেহেতু আমার। তার ভবিষ্যত প্রজন্মকে আনার ব্যবস্থা করার দায়িত্বও আমার। তাই আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।

সকলে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় সামিরের দিকে। কি সিদ্ধান্ত নিলো এটাই জানতে চায় সকলে?
সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরে সাদি একটু ভাব নেয়। শার্টের কলার টেনে বলে
“বিষে বিষে বিষক্ষয় হয়। কথাটা তোরা মানিষ?
সকলেই মাথা নারায়। মানে সবাই মানে। সাদি ফোঁস করে শ্বাস টেনে টিভি চালু করে। এদের ড্রামা দেখার এতোটুকুও ইচ্ছে তার নেই। একেকটা ড্রামাবাজ।

” মাই ফ্লট মুভিটা সাদিকে দেখাতে চাচ্ছি।

সামিরের এবারের কথা শুনে সকলে হতাশ। মুভি দেখাবে এটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে? আর ওরা কি না কি ভাবলো।
রিমি ঠাসস করে একটা কিল বসিয়ে দেয় সামিরের পিঠে
“হারামি শুধু শুধু সময় নষ্ট করলি।

সামির পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে
” আরেহহ বা*ল। মারলি কেন? কথা তো শেষ করতে দিবি?
মুভিটা সেই লেভেলের রোমান্টিক। আমাদের সাদু বাবাজি একবার দেখতে তার অনুভূতি কানতে কানতে বাইরা যাইবো। আর আমরা খুব তাড়াতাড়ি চাচ্চু ডাক শুনতে পারমু। আহহহা রোমান্টিক মুভি।

তখনই ছোঁয়া বেরিয়ে আসে রুম থেকে। সে এতোখন তার বাবার সাথে কথা বলছি। কথা বলছিলো বললে ভুল হবে বকা খাচ্ছিলো। মনটা একটু খারাপ হয়ে গেছে ছোঁয়া। আরেহহ বাবা বিয়েই তো করেছে কাউকে তো আর খুন করে নি তাহলে কেনো এতো বকবে? বরের কাছে আসবে না?

সামিরের শেষের কথাটা শুনে ফেলে ছোঁয়া। এক লাফে সামিরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। খুশিতে গদগদ হয়ে বলে
“ওয়াও ভাইয়া রোমান্টিক মুভি? আমার যে কি ভালো লাগে কি বলবো তোমায়।

সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে। এই পাগলের অপেক্ষায়ই ছিলো সে। এবার পারফেক্ট লাগছে ওদের। দুনিয়ায় যত পাগল ছিলো সব এক জায়গায় জড়ো হয়েছে৷

আশিক শুকনো ঢোক গিলে বলে
” তুমি রোমান্টিক মুভিও দেখো?
ছোঁয়া হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে
“আর রোমান্টিক মুভি। কপাল কি আর এতো ভালো? কলেজে একটা বান্ধবী আছে সে দেখিয়েছিলো সানাম তেরা কসম মুভিটা। বাড়িতে দেখার তো উপায় নেই। সাদুর পেছনে ঘুরতে ঘুরতেই দিন যায়। রোমান্টিক মুভি দেখবো কখন?

ইরা হেসে ছোঁয়াকে নিজের পাশে বসায়
” আহারে ছোঁয়া মন খারাপ করিও না। আমি তোমাকে কিছু রোমান্টিক মুভি ডাউনলোড করে দিয়ে যাবো। সাদুর পেছনে না ঘুরে মুভি দেখবা ফুল ভলিউম দিয়ে। আর সাদির পেছনে ঘুরতে হবে না। সাদিই তোমার পেছনে ঘুরবে।

ছোঁয়া একটু ভাবে। তখনই সাদির কর্কশ গলার ধমক কানে আসে
“তুমি এখানে কেনো? রুমে যাও দ্রুত

ছোঁয়া ভেংচি কেটে বলে
” বউ হলো ভালোবাসার জিনিস। নরম গলায় কথা বলতে হয় বউয়ের সাথে। বউকে ধমক দিতে নেই।

সাদি রিমোট ছুঁড়ে মারে ছোঁয়ার দিকে৷ ছোঁয়া সেটা ধরে ফেলে।
“সকলের বউ আর আমার বউ কি এক? সবাই মেয়ে বিয়ে করেছে আর আমার কপালে জুটেছে আস্ত একটা বাঁদর।

ছোঁয়া রিমোট টি-টেবিলে রেখে এক গাল হেসে বলে
” আপনার কথায় আমি একটুও মন খারাপ করি নি। কথায় আছে না রতনে রতন চিনে আর বাঁদরে চিনে বাঁদর।

সকলে হেসে ফেলে।
ইরা হাসতে হাসতে বলে
“ছোঁয়া উড়িয়ে দিয়েছো।
সাদি বিরবির করে বলে
” ইডিয়েট
ছোঁয়া শুনতে পায়। সাদিকে ভেংচি কাটে। তারপর ইরাকে বলে
“আপু আপু চলো আমাকে মুভি ডাউনলোড করে দিবে। ইসস আপু তুমি কি যে ভালো।
ইরাও হেসে ছোঁয়ার হাত ধরে যেতে নেয়। তারপর পেছন ঘুরে সামিরকে বলে
” তোরা ফল্ট দেখতে থাক আর আমরা ফ্লট এর জন্য রুমটা গুছিয়ে ফেলি
সাদি হেসে মাথা নারায়। রিমি ছোঁয়া আর ইরা চলে যায়।
এবার সাদি উঠে এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়
“তোরা কেনো এসেছিস?
আশিক মন খারাপের নাটক করে বলে
” এভাবে বলতে পারলি তুই আমাদের? আমরা ছুঁটে চলে এসেছি তোকে দেখতে। তোর উপকার করতে আর তুই?
ছিহহ সাদি ছিহহহ
তোর কথা শুনে আমার কান্না পাচ্ছে।
আশিকের সাথে তাল মেলায় সামির আর শিপন। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
“তোরা জাস্ট ইম্পসিবল।
আশিক হাত ধরে টেনে সাদিকে পাশে বসিয়ে দেয়। সামির ফোনে মুভি প্লে করে টিভিতে কানেক্টেড করে দেয়। শিপন নিজের ব্যাগ থেকে পপকন আর বেয়ার বের করে সামনের টি টেবিলে রাখে।
দারুণ একটা মুহুর্ত।
আশিক বলে
” ওদের কি একটা বোতল দিয়ে আসবো?
সাদি চোখ গরম করে তাকায় আশিকের দিকে। আশিক চুপসে যায়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here