হৃদয়হরণী #পর্ব:২৬ #তানিশা সুলতানা

0
388

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২৬
#তানিশা সুলতানা

অভিমানী ছোঁয়ার অভিমান গলবে কি করে?
সাদি ইরা এবং রিমিকে এনেছে ছোঁয়ার সাথে কথা বলানোর জন্য। ছোঁয়ার মনের ভাব জানার জন্য। ছোঁয়া সমস্যা কি সেটা বোঝার জন্য।
কিন্তু ওরা কি করছে? ছোঁয়াকে নিয়ে মুভি দেখতে বসে গেছে। ফানি মুভি।
তিনজন মুভি দেখছে আর খিলখিল করে হাসছে। এতোদিন পরে ছোঁয়াকে হাসতে দেখে সাদির যেমন ভালো লাগছে তেমন খারাপও লাগছে। ওদের সাথে ভালো ভাবে কথা বলছে কিন্তু সাদির সাথে বলছে না।

নাজমা বেগম মেয়ের হাসি দেখছে। এতোদিনে তার কলিজা ঠান্ডা হলো। মা তার সন্তানের ওপর যতই রেগে থাকুক না কেনো সন্তানের মন খারাপে মায়েরাই বেশি ভেঙে পড়ে।
মমতা বেগমও ওদের সাথে মুভি দেখতে বসে গেছে। সাবিনা বেগম আর সিমি পকোড়া বানাচ্ছে।এটা ছোঁয়ার প্রিয়।
সাদি এসে ওদের পাশে বসে। দৃষ্টি তার ছোঁয়ার দিকে। পায়ের ব্যান্ডেজ এখনো খোলা হয় নি। পা টানটান করে মেলে দিয়ে বসেছে ছোঁয়া। সাদি ঠিক ছোঁয়ার পায়ের কাছে বসেছে। ব্যান্ডেজের ওপর দিয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ছোঁয়া খেয়াল করছে কিন্তু কিছু বলছে না। মুখে হাসি বজায় রেখে মুভি দেখে চলেছে।

পাক্কা দুই ঘন্টায় একটা মুভি শেষ করে ওরা ওঠে। সকলেই ভীষণ মজা পেয়েছে মুভি দেখে৷ মমতা বেগমের কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে তাই তিনি একটু হাঁটতে চলে গেছে। সিমি পকোড়া চা দিয়ে গেছে ওদের। ছোঁয়া চা খেতে পারে না। তারপর ঠোঁট আর জিব্বা পুরে যায়। তাই সে শুধু পকোড়া খাচ্ছে।
রিমি সাদির মুখে একটা পকোড়া ঢুকিয়ে দেয়। সাদি রাগী দৃষ্টিতে রিমির দিকে তাকাতেই রিমি দাঁত কেলিয়ে হাসে।
ইরা চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে বলে
“ছোঁয়া তোমার জন্য ছেলে দেখেছি আমি। দারুণ দেখতে এবং প্রচন্ড রোমান্টিক।

সাদি চোয়াল শক্ত করে ফেলে। এদের নিয়ে এসেছে সমাধান করতে আর এরা ঝামেলা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ছোঁয়া ভ্রু কুচকে বলে
” রোমান্টিক তুমি জানলে কি করে?
“আমি জানবো না? আমারই তো এক্স।
রিমি ইরার মাথায় গাট্টা মেরে বলে
“তোর এক্স কোন লেভেলের পাগল হবে ছোঁয়ার জানা আছে। চুপ চাপ থাক।
ইরা ভেংচি কাটে। ছোঁয়া ইরার দিকে একটু চেপে বসে
” ব্রেকআপ কেনো করলে? আই মিন রোমান্টিক ছিলো হ্যান্ডসামও ছিলো আই নো
তাহলে?
ইরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“মেয়েবাজ ছিলো একটা। দুনিয়ায় যত মেয়ে ছিলো সব তার চেনা
ছোঁয়া খিলখিল করে হেসে ওঠে। তার সাথে তাল মেলায় রিমি
সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে। এদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না জানা তার।
তাই ফোনটা হাতে নিয়ে রিমিকে টেক্সট করে
” আমাদের প্রাইভেসি লাগবে। বের হ”

রিমি মেসেজটা পড়ে সাদির দিকে সরু চোখে তাকায়। সাদি ইশারায় বেরতে বলে। রিমি হাই তুলে দাঁড়িয়ে যায়।
“ইরা ইমন শিপন আশিক আসছে। চল এগিয়ে আনি। দুই হাত ভর্তি গিফট আনছে ছোঁয়ার জন্য। চল হেল্প করে আসি।

বলতে বলতে ইরার চুল ধরে টেনে নিয়ে যায়। দরজাটাও বন্ধ করে দিয়ে যায়
ছোঁয়া লাস্ট পকোরাটা মুখে পুরে হাত ঝাড়ে। হাতের তেল মোছার জন্য আশেপাশে তাকায়। তেমন কিছু না পেয়ে বিছানার চাদরের সাথে মুছে ফেলে। এটা দেখে সাদির হাসি পায়। আজকে হাসি আটকায় না। ঠোঁট মেলে একটুখানি হাসে। শব্দহীন হাসি।
এতোখনে ছোঁয়া তাকায় সাদির দিকে। এক পলক তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলে। বিছানা থেকে নামার জন্য ভাঙা পা টা নিচে নামাতে যায়। সাদি এগিয়ে আসে। দুই হাতে ছোঁয়াকে জাপ্টে ধরে।
ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
সাদি ছোঁয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“কারণ না বললে খেয়ে ফেলবো তোমায়।

ছোঁয়া চোখ খুলে। পেটের ওপর শক্ত করে ধরে থাকা সাদির হাত ছাড়াতে চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। পুরুষালি শক্ত পোক্ত হাতের কাছে ছোঁয়ার এই পুচকে হাতটা যেনো চুনোপুঁটি।
ছোঁয়ার প্রচেষ্টা দেখে সাদি বিরক্ত হয়। এবার দুই হাতে ধরে ছোঁয়াকে। ব্যাথাও পাচ্ছে ছোঁয়া একটু আতটু।
“ছাড়ুন আমায়।
সাদি আরও একটু শক্ত করে চেপে ধরে। অধৈর্য্য করে দিচ্ছে মেয়েটা। সাদির রাগ বেড়ে যাচ্ছে। এবার ছোঁয়া ভীষণ ব্যাথা পাচ্ছে। সাদি ধমকে বলে।
” বলবা কি না?

ছোঁয়া জবাব দেয় না। একদম বলবে না সে। কেনো বলবে? এমন একটা ভাব করছে যেনো সে জানেই না।
ছোঁয়ার চোখে পানি চলে এসেছে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে রেখেছে।

বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে সাদি। রাগ দেখিয়ে এর মুখ থেকে কথা বের করা যাবে নস বুঝে গেছে। তাই এবার হাতটা নরম করে ফেলে। ছোঁয়াকে মুখোমুখি বসিয়ে দেয়। দুই হাত ছোঁয়ার দুই গালে রেখে শান্ত গলায় বলে
“জান বলো প্লিজ। কেনো ইগনোর করছো? ভালো লাগা শেষ?

ছোঁয়া কঠিন দৃষ্টিতে তাকায় সাদির দিকে। নাক ফুলছে জোরে জোরে শ্বাস টানছে। এমনটা হয় ছোঁয়া ভীষণ রেগে গেলে। এখন ছোঁয়া ভীষণ রেগে আছে বুজতে পেরেছে সাদি। কিন্তু কি নিয়ে এতো রাগ? সবই তো ঠিকঠাক ছিলো। তাহলে? তাছাড়া ছোঁয়া এতো সহজে ভেঙে পড়ার মেয়ে নয়। খুব বেশি আঘাত না পেলে ছোঁয়া কাঁদে না।
” আমার কাছে কেনো এসেছেন? আমি তো আপনাকে ডিস্টার্ব করি। আমাকে তো আপনার পছন্দ না। আপনার এক্সগার্লফ্রেন্ডের কাছ যান গিয়ে।
আমি আর আপনাকে ডিস্টার্ব করবো না। ডিভোর্স

বাকিটা শেষ করার আগে সাদি তার পুরুষালি ওষ্ঠদ্বয় ছোঁয়া গোলাপি টকটকে ওষ্ঠদ্বয়ের ভাজে ঢুকিয়ে দেয়। স্তব্ধ হয়ে যায় ছোঁয়া। হাত দুটো আপনাআপনি চলে যায় সাদির চুলে।
আস্তে আস্তে দুই ওষ্ঠদ্বয়ের গভীরতা বাড়তে থাকে। চুপ করানো উদ্দেশ্য থাকলেও সাদি অজানা সুখের সন্ধান পেয়ে যায়। পুরুষালি হাতের বেহায়া স্পর্শ এবং পুরু ওষ্ঠের গভীর চুম্বন দুটোই দিশেহারা করে তুলছে ছোঁয়াকে। সয্য করতে পারছে না সে। ভালো লাগা খারাপ লাগা সবটা মিলেমিশে এক আজানা সুখে ভাসছে সে। দম নিতে পারছে না।
ছটফট করতে থাকা ছোঁয়া দুই হাতে সাদিকে দূরে ঠেলতে চাচ্ছে। বিরক্ত হয় সাদি। চুম্বন থামিয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
আকুতিভরা গলায় বলে ওঠে
“পাঁচ মিনিট চুপচাপ থাকো না জান। জাস্ট পাঁচ মিনিট। নাক দিয়ে শ্বাস টানো।

এরপর আর ছটফট করার সাহস হয়ে ওঠে না ছোঁয়ার। চোখ দুটো বন্ধ করে সাদির গভীর স্পর্শ অনুভব করতে থাকে। গম্ভীর পুরুষের ঘন নিঃশ্বাস গুনতে থাকে। নিজেও সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করে সখের পুরুষের গভীর আদরে।

তখনই দরজায় কড়া নারে। ধুপধাপ শব্দ বেড়েই চলেছে। ইমন শিপন ইরা রিমা আশিক ওদের গলা শোনা হচ্ছে।

ছোঁয়া সাদিকে সরানোর জন্য আবারও ছটফট করতে থাকে। সাদি ছোঁয়ার ঠোঁটে শব্দ করে চুমু খেয়ে ছেড়ে দেয়। ছোঁয়া মাথা নিচু করে হাঁপাচ্ছে। নিঃশ্বাস যেনো তার আটকে ছিলো।
সাদি বা হাতেট বৃদ্ধা আঙুলে নিজের ঠোঁট মুছে বলে
” নাইস টেস্টট।
বলেই সে আয়নার সামনে চলে যায়। ছোঁয়া লজ্জায় কোম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে।

আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয় সাদি।

“কাম ইন

বলতে দেরি সকলের হুরমুরিয়ে ঢুকতে দেরি নেই।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here