#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫২
#তানিশা সুলতানা
“তুমি কি বড়ো হবা না ছোঁয়া?
সাদি কর্কশ গলায় বলে ওঠে। ছোঁয়া গোমড়া মুখে তাকায় সাদির দিকে। লোকটাকে দেখে অভিমানে বুক ভেসে যাচ্ছে। কম দামি ঔষধ খাওয়ালো? একটা ঔষধের দাম কি কোটি কোটি টাকা? এই কিপ্টা লোকের সংসার করবে কি করে ছোঁয়া? সারাজীবন অনাহারে মারবে।
সিমি উসখুস করতে থাকে। এখান থেকে বেরুতেই পারলেই এখন বাঁচে সে। ছোট বোনকে সে ভালো করেই চিনে। যখন তখন বেফাঁস কথা বলে ফেলবে। আর সিমি পড়বে লজ্জায়।
ছোঁয়া বিছানা থেকে নামে। দাঁড়াতে যেতেও একটু ব্যাথা অনুভব করে। ব্যাথাকে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে যায় সাদির দিকে।
” এগিয়ে আসছেন আমি বড় হয়েছি কি না জানতে? চোখ নেই সাথে? না কি চোখের মাথা খেয়েছেন? বড় না হলে এই ছোট মেয়ের সাথে কাল ওমন বিহেভিয়ার করলেন কি করে? করলেন ঠিক আছে তাই বলে কম দামি ঔষধ খাওয়াবেন? টাকা ছিলো না আমায় বলতেন। কিপ্টা বেডা।
সাদি চোয়াল শক্ত করে তাকায় ছোঁয়ার মুখ পানে। সিমি উপস্থিত বলে কিছু বলতে পারছে না। নাহলে একটা আছাড় মেরে ফুটিয়ে ফেলতো। বেয়াদব মেয়ে একটা।
সিমি শুকনো ঢোক গিলে নিঃশব্দে বেরিয়ে যায়। সাদিকে চুপ থাকতে দেখে ছোঁয়া আবারও বলে ওঠে
“কি?
কম দামি ঔষধ এটা ধরে ফেলেছি বলে চুপসে গেলেন? পঁচা বেডা।
সাদি ফট করে ছোঁয়া গাল চেপে ধরে। খানিকটা শক্ত করেই ধরে। ছোঁয়া ব্যাথা পায়। চোখে পানিও চলে আসে
“আমাকে খোঁচানোর সময় মনে থাকতে না? ইডিয়েট। মিনিমাম কমনসেন্স নেই৷ পুটি মাছের শরীর নিয়ে আমায় বিয়ে করার সাহস করেছিলে কি করে?
ছোঁয়া নিজের গাল ছাড়ানোর জন্য সাদির হাত টানতে থাকে। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। চুনোপুঁটির মতো দুটো হাত দিয়েও সাদির একটা হাত ছাড়াতে সক্ষম হয় না ছোঁয়া। দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে ছোঁয়ার।
” ব্যাথার ঔষধ দেই নি তোমায়। পিল দিয়েছিলাম৷ গাঁধা।
নেক্সট টাইম আমার আশেপাশে আসলে তাজা গিলে ফেলবো একদম
আগে বড় হবি। কোথায় কি বলতে হয় শিখবি। তারপর আমার কাছে থাকতে আসবি।
বলেই সাদি গাল ছেড়ে দেয়। ছোঁয়া নিজের গালে হাত বুলিয়ে শব্দ করে কেঁদে ওঠে। সাদি ভ্রু কুচকে তাকায়। এখন নতুন ড্রামা শুরু করবে এটা জানা সাদির।
“আপনি আমার বাচ্চাকে খু ন করে ফেললেন? আমার কুদ্দুস কে আসতে দিলেন না? খারাপ বাবা আপনি। আই হেইট ইউ।
সাদি বিরক্তর নিঃশ্বাস ফেলে।
“তোর বাচ্চা খু ন করেছি। এবার আর একটা কথা বললে তোকে খু ন করবো। ইডিয়েট।
আমার আশেপাশে একদম আসবি না।
বলেই সাদি হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। ছোঁয়া ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। পিল কেনো খাওয়ালো সে? বাজে লোক। ছোঁয়া একদম ওই লোকটার আশেপাশে যাবে না। একদম কথা বলবে না।
__
সুন্দর করে কেক সাজানো হয়েছে৷ প্রতি বছর ছোঁয়া এক্সাইটেড থাকে তার জন্মদিনে। গিফট কুড়ানো সাজুগুজু একাই করতে থাকে।কিন্তু এই বার মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
সামির চলে এসেছে৷ অবশ্য তাকে কেউ দাওয়াত দেয় নি৷ বন্ধুর বউয়ের বার্থডে একটা হক আছে তো? দাওয়াতের প্রয়োজন পড়ে না কি আবার?
কিন্তু বাড়িতে ঢুকতেই সামির এর হা করে মুখটা চুপসে যায়। ছোঁয়া সোফার এক কোণায় বসে আছে মন খারাপ করে। সেলিম আরেক কোণায় বসে আছে মন খারাপ করে। পরি এবং সিমি কেক সাজাচ্ছে। নাজমা বেগম কটমট চোখে স্বামী দিকে তাকাচ্ছে আর টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। সাদি অন্য সোফায় বসে ল্যাপটপ টিপছে।
” আমি এসেছি
সামির এক গাল হেসে বলে ওঠে
ছোঁয়া তাকায় সামির এর দিকে। সাদি বিরক্ত
“তোকে আসতে কে বলেছে?
সামির ভেংচি কাটে।
” বাবা এসেছিস খুব ভালো করেছিস।
নাজমা বেগম বলে। সামিরের হাসি চওড়া হয়।
“আমি আসলে সাদির হিংসা হয়।
সেলিম বলে ওঠে
” হবে না? তুমি হচ্ছো হিরার টুকরা। আর সে হচ্ছে শয়তানের নানা।
সামির বুক ফুলিয়ে ফেলে। গর্বে সে গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছে।
ছোঁয়া এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়। এক দৌড়ে সামির এর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে
” ভাইয়া এসেছো ভালোই করেছো। আমার সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। তুমি ছাড়া কেউ পারবে না এই সর্বনাশ তুলে দিতে।
সামির ভেবাচেকা খেয়ে যায়। কি সর্বনাশ হলো? আর সেই সর্বনাশ শুধু সেই তুলে দিতে পারবে?
“কি হয়েছে ছোঁয়া?
সামিরও ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে
“আমাকে কয়েকটা স্লিপিং পিল এনে দিতে পারবে?
” কেনো?
“আমি খাবো
শুকনো ঢোক গিলে সামির। ছোঁয়া সুইসাইড করতে চাচ্ছে?
” তুমি সুইসাইড কেনো করবে?
ছোঁয়া বিরক্ত হয়। আসলেই লোকটার মাথায় বুদ্ধি কম।
“সুইসাইড করবো না। তোমার বন্ধুকে ভয় দেখাবো। যাতে নেক্সট টাইম সে আমায় না বকে।
“খুলে বলো
ছোঁয়া তার প্ল্যানিং সামির এর সাথে শেয়ার করে। সব শুনে সামির সায় জানায়। মন্দ নয় ছোঁয়ার বুদ্ধি। সাদির একটা শিক্ষা হওয়াই দরকার।
সাদির নজর ল্যাপটপ এ থাকলেও মনোযোগ ছিলো ছোঁয়ার দিকে। দুই পাগল যে কিছু একটা গন্ডগোল পাকাচ্ছে চতুর সাদির বুঝতে সময় লাগে না। তবে ধরতে পারে না তাদের প্ল্যানিং।
” তাহলে ভাইয়া এখুনি যাও।
“এখুনি?
” হ্যাঁ যাও
চিন্তা করিও না। তোমার জন্য বিরিয়ানির মধ্যে থেকে দু পিছ মাংস আমি সরিয়ে রাখবো। আর তুমি না আসা ওবদি কেক ও কাটবো না।
সামির খুশি হয়ে নাচতে নাচতে চলে যায়।
চলবে
আমার ফেসবুক আইডির লিংক
https://www.facebook.com/tasfiyatanisha.tanha.3?mibextid=ZbWKwL
আমার গ্রুপের লিংক
https://www.facebook.com/groups/802201387001875/?ref=share_group_link