শেষ_বিকেলের_প্রণয় #হালিমা_চৌধুরী #পার্ট_০৭

0
138

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০৭

১ সপ্তাহ পর,
মেঘ কালো আকাশের ভাবমূর্তি পাল্টে যেতে দেখে কিছুটা মন খারাপ হয়ে যায় নিধির। সে বিষন্ন মুখে ছাদ থেকে রুমে ফিরে আসে। রুমে আসতেই তার ডাক পড়ে, ফারুল বেগম নিধিকে তার রুমে ডেকেছে। তাই নিধি আর দেরি না করে ফারুল বেগমের রুমের দিকে যায়। ফারুল বেগমের রুমের সামনে এসে নিধি দরজায় টোকা দেয়। ফারুল বেগম এসে রুমের দরজা খুলে দিয়ে নিধিকে ইশারায় ভিতরে প্রবেশ করতে বলে। নিধি গুটিগুটি পায়ে হেটে রুমে প্রবেশ করে, পরিবেশ টা বেশ থমথমে।

“ফারিশের সাথে তোমার সবকিছু ঠিক আছে তো?”

আচমকা এমন প্রশ্ন শুনে অবাক হয় নিধি, নিজেকে কিছুটা প্রস্তুত করে নিধি বলে,

“ঠিকই তো থাকার কথা!”

“যদি ঠিক না থাকে তাহলে?”

ফারুল বেগমের সন্দিহান কন্ঠ শুনে নিধি তটস্থ হয়ে যায়।

“আপনার নাতি কেই জিজ্ঞেস করুন না সবকিছু ঠিক আছে কি না! আমার তরফ থেকে তো সবকিছু ঠিকই আছে।”

নিধির কথা শুনে ফারুল বেগম ক্লান্ত ভঙ্গিতে নিধির দিকে তাকিয়ে বলল,

“আমি না আর পারছি না এসব নিতে, আমি কি পাপ করেছি তোমাদের বিয়ে দিয়ে? আমার ফারিশের একজন সঙ্গী হবে ভেবেই আমি তোমার সাথে ওর বিয়ে দিয়েছি। এখন তো মনে হচ্ছে আমরা তোমার সাথে অন্যায় করেছি।”

ফারুল বেগমের কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে নিধি।

“যে জায়গায় আমার পরিবার আমার সাথে শত শত অন্যায় করেও তাদের খারাপ লাগে নি, সে জায়গায় আপনাদের খারাপ লাগছে কেনো? আপনারা তো অন্যায় কিছু করেননি।”

ফারুল বেগম প্রলম্বিত শ্বাস ফেলল, নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তিনি বলেন,

“চিন্তা কোরো না, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমার ফারিশ যদি একবার তোমাকে ভালোবেসে ফেলে তাহলে তোমার জীবনটা একদম ভরপুর হয়ে যাবে সুখে। আমার ফারিশটা যাকে ভালোবাসে, তাকে মন উজাড় করে ভালো বাসে, কখনো ছেড়ে যায় না। বাকিটা আমি দেখে নিবো। তুমি বরং এখন যাও, ফারিশ আসার সময় হয়ে গেছে।”

ফারুল বেগমের সাথে সায় মিলিয়ে নিধি রুমে চলে আসে। রুমে এসে তো নিধি একদম হতভম্ব হয়ে যায়, ফারিশ অলরেডি চলে এসেছে, সে অফিসের ড্রেস চেইঞ্জ না করেই শুয়ে আছে। তা দেখে নিধি গুটিগুটি পায়ে হেটে ফারিশের পাশে গিয়ে বসে।

“কি হয়েছে আপনার?”

নিধির প্রশ্নের উত্তর দেয় না ফারিশ, সে চুপচাপ দু’হাতে মাথা চেপে শুয়ে আছে। নিধি কাঁপা কাঁপা হাতে ফারিশের কপাল স্পর্শ করে চমকে যায়। জ্বরে ফারিশের গা পুড়ে যাচ্ছে।

“লাইট টা অফ করো নিধি, চোখগুলো জ্বালা করছে প্রচুর। মাথাও ব্যথা করছে।”

ফারিশের কথা শুনে নিধির চোখ ছলছল করে উঠলো, কি কারণে সেটা সে বুঝতে পারলো না। এতো গম্ভীর কণ্ঠে কথা বলা মানুষ টা যখন নরম গলায় কথা বলে তখন তো আশ্চর্য লাগবেই! নিধি আর দেরি না করে উঠে রুমের লাইটটা অফ করে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিধি জলপট্টি দেওয়ার জন্য পানি নিয়ে আসে। নিস্তব্ধ রাতে ব্যথিত হয়ে ফারিশের শিউরে বসে মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে নিধি। জলপট্টি দেওয়া শেষ করে নিধি রুম থেকে বের হয়ে ফারিশের জন্য খাবার নিয়ে আসে। নিধি ফারিশকে ডেকে উঠতে বলে, কিন্তু ফারিশের যেনো উঠে বসার মতো শক্তিটুকুও নেই৷ নিধি অনেক কষ্ট করে ফারিশকে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বসায়। নিধি ফারিশের সামনে খাবার রেখে বলে,

“খাবারটা খেয়ে নিন, ঔষধ খেতে হবে।”

নিধির কথা শুনে ফিটফিট করে ফারিশ তার দিকে তাকায়। ফারিশ মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,

“খেতে ভালো লাগছে না আমার।”

ফারিশের কথা শুনে যেনো মহা ঝামেলায় পড়লো নিধি, সে আর সাত-পাঁচ না ভেবে নিজেই ফারিশ কে জোর করে অল্প একটু খাবার খাইয়ে দেয়। তারপর ফারিশের রুমে অনেক খুঁজাখুঁজির পরে জ্বরের ঔষধ পায় নিধি। ফারিশ কে অনেক জোরাজুরির পরেও ঔষধ খাওয়াতে ব্যর্থ হয় নিধি।

“এসিটা অফ করো নিধি, ঠান্ডা লাগছে। আর তুমি এখনো লাইট অন করে রেখেছো, বলেছি তো মাথা ব্যথা করছে!”

ফারিশের মৃদু কন্ঠে ধমক খেয়ে চুপসে যায় নিধি। সে বিড়বিড় করে বলে,

“অসুস্থ, তারপরেও তার রাগারাগি যাবে না, বাপ্রে!”

বলেই নিধি উঠে লাইট আর এসি অফ করে দেয়, ব্লাঙ্কেট বের করে ফারিশের গায়ে জড়িয়ে দেয় নিধি। তারপর ফারিশের পাশে বসে নিধি বলে,

“মাথা টিপে দিই? ভালো লাগবে!”

নিধির কথা শুনে চমকে চোখ মেলে তাকাল ফারিশ।

“এতো অস্থির হতে হবে না তোমাকে, কিছুক্ষণ পরেই সব রোগ হাওয়া হয়ে যাবে, এমিনতে কোনো কিছুই আমার কাছে চিরস্থায়ী থাকে না।”

ফারিশের কথা শুনলো না নিধি, সে আলতো হাতে ফারিশের মাথা টিপে দিতে থাকে।
★★
রাত প্রায় তিনটা বাজে, নিধি ফারিশের পাশে বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। হঠাৎ ফারিশের মৃদু আর্তনাদ শুনে ঘুম ভেঙে যায় নিধির। আবার জ্বর এসেছে ফারিশের, নিধি এবার বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। এতো রাতে কি ফারুল বেগম কে ডাকা ঠিক হবে? শেষে নিধি আর কোনো উপায় না পেয়ে জ্বরের ঔষধ এনে, পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় ফারিশের দিকে। কিন্তু ফারিশ চোখ খুলে না। ফারিশ নিধির হাত চেপে ধরে বলে,

“আমাকে ছেড়ে যেও না কখনো, আমার একা থাকতে খুব কষ্ট হয় জানো!”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। এই মূহুর্তে তার ঠিক কি বলা উচিত সেটাই সে খুজে পাচ্ছে না। অতঃপর নিধি ফারিশের এক হাত জড়িয়ে ধরে বলে,

“যাবো না।”

নিধির এই একটা কথা শুনেই যেনো সস্থি ফেলো ফারিশ, আবারো নিশ্চিন্তে ঘুমের জগতে পাড়ি জমালো ফারিশ।
★★
স্নিগ্ধ সকাল বেলা সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় ফারিশের। চোখ মেলে চারিপাশে ভালো করে তাকাতেই থমকে যায় ফারিশ। সে নিধিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। ফারিশ নিধি কে ছেড়ে উঠে বসতে নিতেই তার মাথাটা ভার হয়ে আসে। বাধ্য হয়ে সে আবারো শুয়ে পড়ে।
নিধি ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়ে, ফারিশের খাবার রুমে নিয়ে আসে নিধি। রুমে এসে দেখে ফারিশ এখনো ঘুমাচ্ছে। বিছানার পাশে টি-টেবিলের উপর খাবার রেখে নিধি চলে যেতে নিতেই ফারিশ তার হাত ধরে ফেলে। ফারিশের কাজে সে তো পুরো হতভম্ব হয়ে যায়। সে বিড়বিড় করে বলে,

“জ্বরের কবলে পড়ে এই লোক পাগল হয়ে গেছে নাকি?”

দুর্ভাগ্যবশত নিধির কথা টা ফারিশ শুনে ফেলে, ফারিশ শোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে বলে,

“পাগল বলেছো আমাকে? কোনদিক দিয়ে পাগল মনে হয় আমাকে?”

ফারিশের কথার জবাব দেয় না নিধি, সে ফারিশের কপালে হাত দিয়ে চেক করে জ্বর আছে কি না। এখনো পুরোপুরি জ্বর কমেনি ফারিশের। তাই নিধি ফারিশকে আদেশের সুরে বলে,

“ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করুন, ঔষধ খেতে হবে। আর হুট করে কিভাবে আপনার জ্বর এসেছে? সারাদিন কাজ কাজ করে নিজের একটু যত্নও তো নেন না।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ মিনমিন করে বলে,

“যত্ন নেওয়ার জন্য তো একজন আছেই।”

“কি বলেছেন?”

নিধির কথার জবাব না দিয়ে ফারিশ বিছানা থেকে নামতে নিতেই পড়ে যায়। নিধি ফারিশকে ধরে ফেলে,

“আপনার হম্বিতম্বি আর যাবে না কোনোদিন, আরে ভাই জ্বরের কারণে দূর্বল হয়ে আছে আপনার শরীর। সাবধানে চলবেন তো।”

নিধির কথাকে কানে না নিয়ে ফারিশ ফ্রেশ হতে যায়, কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ফিরে এসে বিছানায় আরাম করে বসে নিধিকে বলে,

“খাবার দাও।”

নিধি খাবারের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে,

“খাবার তো এনেই রেখেছি, খেয়ে নেন।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে ভ্রু কুঁচকে বলে,

“একজন অসুস্থ মানুষ কি তার নিজের হাতে খাবার খেতে পারে? এটুকু কমনসেন্সও নেই তোমার? এখন যে আমাকে খাইয়ে দেওয়া উচিত তোমার সেটাও বলে দিতে হবে?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে, এ কোন ফারিশ কে দেখছে সে!

চলবে…….

[কিছু ব্যাস্ততার কারণে কালকে গল্প দিতে পারিনি, তার জন্য দুঃখিত।]

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here