ভাড়াটিয়া-৮
এখন দুপুর দুইটা বাজে। এ সময় আসলাম সাহেবের অফিসে থাকার কথা। উনি বসে আছেন রমনা পার্কের একটা বেঞ্চে। এমন না উনি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন। ওনার কোনো অফিসই নেই! একটা অফিসের সাথে যোগাযোগ আছে। এখন কিছুদিন যেতে হবে। কারণ ছেলে পক্ষ খবর টবর নিতে পারে। এই জন্যই প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার একটা অভিনয় করতে হয়। সারাদিন ঘুরে-ফিরে বাসায় যাওয়া।
আসলাম সাহেবের জীবনে ইচ্ছে ছিলো অভিনেতা হওয়ার। কিছুদিন মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছিলেন। সেখানে ভালো কিছু হয়নি!
মানুষ মন থেকে কিছু চাইলে আল্লাহ সে ইচ্ছে পূরণ করে। আসলামের এক বন্ধু সামছুর ইচ্ছে ছিলো। সারাদিন ঘুরবে আর খাবে। কোনো কাজ করতে হবে না। সামছুর এমন ইচ্ছাও পূরণ হয়েছে। সমাছু এখন সারাদিন ঘুরে আর খায়। শুধু মাথাটা নষ্ট!
আসলামের ইচ্ছাও পূরন হয়েছে! উনি এখন অভিনয় করেন। অন্য অভিনেতার কিছু নির্দিষ্ট সময় অভিনয় করে। বাকি সময় নরমাল জীবন-যাপন করে। উনাকে সব সময় অভিনয়ের মধ্যেই থাকতে হয়!
এখন চাকরির অভিনয় করছেন। বাসায় গেলে স্বামী এবং বাবার অভিনয় করতে হবে। বাবার অভিনয়টা আসলামের খুব ভালো লাগে! সুইটির মতো এমন একটা মেয়ের বাবা হওয়াটা খারাপ না।
সুইটও অভিনয় দারুন পারে। কাঁচা হলো রাশিদা। একাবারে মূর্খঅভিনয়! গতবার তো ধরাই খেয়ে গেছিল্। সুইটির বুদ্ধির জোরে বাঁচা গেছে।
এখানে কাজ প্রায়ই শেষেরদিকে। বাড়িওয়ালী খুব দ্রুত এগিয়ে এসেছেন। এত তাড়াতাড়ি হবে ভাবনায় ছিলো না। যাক এটাই হবে শেষ কাজ। অবশ্য এর আগেও অনেকবার ভেবেছিলেন এ কাজ আর করবেন না।
কিছুদিন গেলেই নতুন কাজে নামতে হয়। মনে হচ্ছে এবার ভালোই আয় হবে।
এদের টাকা পয়সা কম না। তারউপর একমাত্র ছেলে বলে কথা। দেখা যাক কত হয়।
এখন সময়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় কোনো ধরনের ভুল করা যাবে না। এরা কিছু খোঁজ টোজ তো অবশ্যই করবে। সেখানে ধরা পড়া যাবে না।
এ সব করা আসলামের জন্য কোনো ব্যাপার না৷ এটা তো আর প্রথম কাজ না। গতবারের কাজটাতে আয় বেশি ভালো হয়নি! লোকটাছিলো কৃপণ। মাত্র পাঁচ ভরি স্বর্ন পাওয়া গেছিল সাথে লাখ দুয়েক টাকা।
সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফিরলেন আসলাম সাহেব। আসার সময় বাজার থেকে কিছু বাজার করেছেন। ব্যাগটা হাতে। দুপুরে ঠিক মতো খাওয়া হয়নি। হোটেলের খাবার উনি খেতে পারেন না। মেয়েটা ভালোই রান্না পারে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়। এ সব ছেড়ে মেয়েটা কে নিয়ে সংসার পাতলে হয়। ছোটো একটা ঘর নিয়ে থাকল। টুকটাক কিছু কাজ করে আয় করল। কষ্ট হবে হয়ত চলতে। কিন্তু মনে হয় ভালো থাকবেন। এ সব চিন্তা হুট করে আসে আবার চলে যায়!
বাসায় ঢুকার সময় শাহিন সাহেবের সাথে দেখা হলো। মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, “কেমন আছেন ভাই?”
“আলহামদুলিল্লাহ। অফিস থেকে ফিরলেন বুঝি? ”
“হ্যাঁ, ভাই।”
দুইজন বাড়ির ভিতরে ঢুকলেন। আসলাম সাহেব বললেন, “বাসায় আসেন ভাই এক সাথে চা খাওয়া যাবে।”
শাহিন সাহেবের যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। আসলাম সাহেব একটু জোর করায় না করতে পারলেন না।
বাসায় তেমন আসবাবপত্র নেই। তবুও খুব সুন্দর করে গোছান। বেতের একটা সোফাসেট। বাসার ভিতরে ঢুকে আসলাম সাহেব সুইটি কে ডাকলেন, “কই রে মা।”
“ভাই বসেন।”
শাহিন সাহেব সোফায় বসলেন।
আসলাম সাহেবের ডাক শুনে সুইটি আসল। শাহিন সাহেব কে দেখে হালকা হাসি দিয়ে সালাম দিলো।
“কেমন আছেন আংকেল?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছ?”
“জি, ভালো আছি।”
আসলাম সাহেব সুইটির দিকে তাকিয়ে বললেন,” আমাদের চা দে তো মা। তোর মা কোথায়?”
“মা একটু বাইরে গেছে বাবা।”
শাহিন সাহেব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে সুইটির দিকে। কী সুন্দর মেয়েটা! কত সুন্দর করে কথা বলে।
সুইটি গরম পানি বসাল চুলায়। বাসায় কোনো ফ্রিজ নাই। গুড়া দুধ দিয়েই চা বানাতে হবে। আর কি দেয়া যায় ভাবছে। সকালের কিছু পিঠা আছে তা দেয়া যায়।
সুইটি চা আর পিঠা এনে টি-টেবিলে রাখল। আসলাম সাহেব বললেন,” নেন ভাইজান পিঠা খান। আমার মেয়ের বানান পিঠা। মেয়েটা আমার ভালো রান্না পারে। এ যুগের মেয়েরা তো রান্না ঘরে যেতেই চায় না। সুইটি কেমন অন্যরকম হয়েছে! ”
সুইটি লাজুক হাসি দেয়।
শাহিন সাহেব। একটা পিঠা তুলে নিয়ে আলত কামড় দেন। সত্যিই পিঠা খেতে ভালো হয়েছে! তিনি আরেকবার মুগ্ধ দৃষ্টিতে সুইটির দিকে তাকান। আঃ! মেয়েটা সত্যিই লক্ষী। আনোয়ারা খুব ভালো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে!
চলবে–