এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা [২য় পরিচ্ছেদ ] ৩৪.

0
107

#এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা
[২য় পরিচ্ছেদ ]

৩৪.
–“শুনলাম সারিফার সাথে যেই মেয়েটা ছিলো সে নাকি পালিয়েছে? তুই কী কিছু জানিস?”

মায়ের এরূপ উক্তিতে ইরা’দ ক্ষণিকের জন্যে আনমনে হয়ে গেলো। অতঃপর ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
–“আমার কানে তো এসব আসেনি। তোমাকে এসব আবোল-তাবোল বললো কে শুনি?”

মৌসুমি মুখশ্রী গম্ভীর করলেন। ছেলেকে পর্যবেক্ষণ করে থমথমে সুরে বললেন,
–“আবোল-তাবোল বলছি? তুই জানিস ভেতরের খবর? মেয়েটাকে তো তোর নানুর মোটেই পছন্দ না। আমারও কেমন যেন লাগে। আর…”
মৌসুমির কথায় ব্যঘাত ঘটিয়ে ইরা’দ বলে ওঠে,
–“অন্যের মেয়েকে নিয়ে এত চিন্তা করে লাভ কী মা? ছেলের বউ তো বানাবা না। তাই চুপ করে নিজের কাজে যাও। আমার কানের সামনে ওকে নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করিও না!”

মৌসুমি তেঁতে ওঠলেন ছেলের এরূপ পতিক্রিয়ায়। ক্ষিপ্ত স্বরে বলে ওঠে,
–“বউয়ের কথা মাথাতেও আনিস নে। আমি তোর বড়ো ঘরে বিয়ে দিবো। অনেক ভালো আর সুন্দরী বউ এনে দিবো তোকে। দেখবি সে আমার ঘর আলো করে রাখবে। ভালো কথা…”

ইরা’দ এবার বিরক্তিতে মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ বের করলো। মৌসুমি ইরা’দকে তোয়াক্কা না করে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
–“গতকাল একটা ভালো সম্বন্ধ এসেছে। মেয়ে নাকি অনেক ভালো ঘরের। দেখতেও চাঁদ সুন্দরী। কাল দেখতে যাবো! তুই আমার সাথে যাবি ব্যাস!”

বলেই ইরা’দকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মৌসুমি গুণগুণিয়ে গান গাইতে গাইতে ভেতরে চলে গেলো। ইরা’দ মায়ের যাওয়ার পানে চেয়ে হেসে বললো,
–“তোমার ছেলে তো বিয়ে করেই ফেলেছে মা। আর কত বিয়ে দিবে।”
———————
–“ফটকি বেগম তুমি কই?”

লতিফা থতমত খেয়ে ড্রইংরুমের দিকে তাকালো। মন বললো নিদ্র তাকেই যেন এই নামে ডাকলো। হাতে পেঁয়াজ এবং ছুঁ! রি। গোল গোল চোখে নিদ্রের অবস্থান বুঝতে পেরে ভাবলো মনের ভুল। আবার কাজে মনোযোগ দিতে গেলে নিদ্র রান্নাঘরে চলে আসলো। দেয়ালের সাথে দেহ হেলিয়ে সুঁচ নজরে লতিফার দিকে চেয়ে বললো,
–“ফটকি বেগম, আমার ডাক কী শুনতে পাওনি?”

পিচ্চি ছেলের মুখে এমন ব্যক্ত শুনে লতিফা ঘাড় কাত করে চাইলো নিদ্র’র দিকে। আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
–“বি!য়াদ!ব! বড়োগো এমনে নাম ধইরা ডাকে? সম্মানবোধ নাই?”
–“তুমি নৌরি ফুলের সামনে কোন রেকর্ড ছড়িয়েছো সত্যি করে বলো!”

লতিফা অপ্রস্তুত হয়ে ঢোঁক গিললো। আমতা আমতা করে বললো,
–“মা..মানে?”
–“মানে বুঝো না? কচি খুঁকি নাকি?”
–“এমনে কিছু কইলে আমি আপার কাছে বিচার দিমু!”
–“দাও। আমিও বলবো তুমি নৌরি ফুলের নামে কী কী বলে বেরিয়েছো!”
–“এখান দিকে ভাগ! আসছে কামে ফোড়ন কাটতে!”

নিদ্র নাক ফুলিয়ে চেয়ে রইলো লতিফার দিকে। পরে কী মনে করে নিদ্র চলে গেলো। নিদ্রকে চলে যেতে দেখে লতিফা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বিড়বিড়িয়ে বললো,
–“ভাগ্যিস চইলা গেছে।”

লতিফা পেঁয়াজ কে!টে গেলো ময়দার বড়ো ডিব্বাটা কেবিনেট থেকে নিতে। দুর্ভাগ্যবশত সেই ময়দার মুখটা খোলা ছিলো। এটা নিদ্র খেয়াল করেছে এবং এখনো করছে। ফ্রিজের পেছনে লুকিয়ে লতিফার কার্য নজরে রাখছে সে। কোলে আছে ফ্রিশা। সেও চোখ বড়ো বড়ো করে সবটা লক্ষ্য করছে। লতিফার দিকে তাকিয়ে নিদ্র ফ্রিশাকে কোল থেকে নিচে নামিয়ে দিয়ে বললো,
–“ফ্রিশা যা। লতিফার শাড়ির কুচিতে গিয়ে লুকোচুরি খেলে আয়। খেলতে পারলে তোকে আমার ভাগের চকলেট দিয়ে দিবো। যাহ!”

ফ্রিশা তাই করলো। লতিফার পা ঘেঁষে বেড়ালো। লতিফা অত্যাধিক সুঁড়সুঁড়ি পেলে টাল সামলাতে না পেরে ময়দার পুরোটা লতিফার মাথা বরাবর পরলো। যার ফলে লতিফা শুভ্র ভূতে পরিণত হলো। বেসিনে ভাতের পাতিলে কল থেকে পানি পরছিলো। ভেতরে চাল। এরূপ ঘটনায় লতিফা চিৎকার দিয়ে হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করতেই সেই পাতিলে হাত লেগে বিকট শব্দে মেঝেতে পরে গেলো। ফ্রিশা আগেই পালিয়েছে সাথে নিদ্রও। হাসিটা খুব কষ্টে চেপে পালিয়েছে। নয়তো কেলেঙ্কারি বেঁধে যেত। রান্নাঘরে ঘনঘন এটা ওটা পরার শব্দে একদম বিধ্বস্ত হয়ে গেলো। লতিফা আর্তনাদ করে উঠলো।

———
–“আসসালামু আলাইকুম আন্টি। ভালো আছেন?”
–“ওয়া আলাইকুম আসসালাম। হ্যাঁ ভালো। কিন্তু তুমি কে?”
–“তা আপনি চিনবেন না আন্টি। আমি আসলে…”

নিখিল ইরা’দের দিকে তাকালো। ইরা’দ নিখিলের গাল টেনে আশ্বাস দেয়।
–“হ্যাঁ, বলো..”
–“আমি আসলে পুঞ্জির বয়ফ্রেন্ড!”
মৌসুমি যেন আকাশ থেকে পরলেন! অবাক হয়ে বললো,
–“সে কী! তুমি আমাকে কল করেছো কেন?”
–“সাবধান করতে।”
–“সাবধান?”
–“হ্যাঁ আন্টি। পুঞ্জি আর আমি একে অপরকে খুব ভালোবাসি। আপনি প্লিজ তাকে পছন্দ করবেন না।”

মৌসুমি অবাক হয়ে গেলো। পরমুহূর্তে ক্ষিপ্ত স্বরে বলে,
–“মজা নিচ্ছো আমার সাথে? কে তুমি? সত্যি করে বলো, কে তুমি? পুঞ্জি মোটেও এমন মেয়ে নয়!”
–“কী যে বলেন না আন্টি। আমি মজাও নিচ্ছি না, মিথ্যেও বলছি না। কতগুলো বছর ধরে একসাথে আছি। পুঞ্জির নিঃশ্বাসের সাথে আমার নিঃশ্বাস মিশে গেলো। কী করে ভুল বলবো বলেন!”

বলেই করুণ নজরে তাকালো নিখিল। ইরা’দের তখন দূরে দাঁড়িয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পরার মতোন অবস্থা। নিখিলের বলা শেষোক্ত বাক্যে মৌসুমি যেন হুমড়ি খেয়ে পরলেন। অবাক সুরে বললেন,
–“মানে?”
–“আপনি এত বড়ো, কী করে আপনাকে খুলে বলবো। শুধু বলবো আমরা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম। ঘনিষ্ঠ বুঝেছেন? বড়োলোকের মেয়ে তো। এসব ওদের জন্যে কমন। বুঝলেন আন্টি। এখন আপনি কী চাইছেন আপনার ছেলের বউ আমার পুঞ্জিকে করতে?”
–“তুমি মিথ্যে বলছো!”
–“আপনাকে মিথ্যে বলে আমার লাভ কী?”

মৌসুমি চুপসে রইলো। নিজের জেদ অনুযায়ী আজ-ই সে পুঞ্জি নামের মেয়েটিকে দেখে এসেছেন। মেয়েটি খুব সুন্দরী এবং অভিজাত্য পরিবারের মেয়ে। ছেলে যায়নি দেখে জেদ ধরে একাই চলে গেলেন। পছন্দও করলেন মেয়েকে। সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিলেন যে পুঞ্জি-ই হবে তাঁর ছেলের বউ। তাইতো বিকালে ছেলেকে বললেন বেশ কয়েক কেজি মিষ্টি আনতে। কিন্তু রাতে এই ধরণের বক্তব্যে মৌসুমির প্রেসার হাই হওয়ার পথে। সে খট করে কল কেটে দিয়ে কপালে হাত দিয়ে বসে রইলো। অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,
–“মাবুদ, মাফ করো!”

কল কাটতেই ইরা’দের হাসির শব্দ বেড়ে গেলো। নিখিল ধাম করে ইরা’দের পিঠে কিল বসিয়ে বলে ওঠে,
–“শা!*** দুনিয়ার আইডিয়া থাকতে কমন আইডিয়া দিয়ে আমায় ফাঁসিয়ে দিলি! তোরে তো ইচ্ছা করছে এখানেই আ!ছা!ড় মা!রতে। ইয়াক! জীবনেও যা করিনি তা নিয়ে মিথ্যা বলতে হচ্ছে। এই, হাসি থামা! থামা বলছি। চুপ!”

নিখিল এত ধমকানোর পরেও ইরা’দের হাসি থামছে না। হাসি বজায় রেখে বললো,
–“বিষয়টা কমন হলেও আমার মায়ের জন্যে সেরা ডোজ। আমার মা আবার এসবে ভালো করেই পটে। এখন বাসায় যাই! মায়ের রিয়েকশন তো দেখতে হবে!”

ইরা’দ যেতে নিলো নিখিল পিছু ডাক দিলো। ইরা’দকে থামালে ইরা’দ পিছু ফিরে বলে,
–“বন্ধুদের থ্যাংকস দিলে কঠিন ব্যাধি হয়! তোর এদিকে কী? যা বাড়ি। মাসি মা ওয়েট করছে!”

বলেই হাসতে হাসতে ইরা’দ চলে গেলো। নিখিল চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
–“এত কষ্ট করলাম আর তুই আমারে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভাগছিস? উপরওয়ালা বিচার করবে ইরা’দ। শা** অকৃতজ্ঞ মা****!”

®লাবিবা ওয়াহিদ
———————
~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।

পোস্টদাতাঃ মোডারেটর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here