ভাড়াটিয়া-১১
সকালবেলা বাসা থেকে বের হয়ে গেছে সুইটি আর রাশিদা বেগম। মনে হয় বাসার কেউ টের পায়নি। অবশ্য দেখলেও তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। সবকিছু রেডি করাই ছিল।
কাজ এটা ভালোই ভালোই শেষ করা গেছে। শুরুতে রাশিদা বেগম বেশ ভয় পেয়েছিলেন। সরকারি বড়ো কর্মকর্তা কে বোকা বানানোটা এত সহজ হবে বুঝতে পারেননি। মানুষ লোভ আর মায়ায় পড়লে আন্ধা হয়ে যায়! বাড়ির একজন যখন অন্ধ হয় তার প্রভাবে বাকিরাও চোখে দেখে না।
এ বাড়ির বাড়িওয়ালী প্রথমে মায়ায় পড়েছেন। তার মায়া সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। রাশিদার ধারণা ফাতেমা মেয়েটা কিছু একটা বুঝতে পারছে। এখন অবশ্য বুঝে লাভ নাই। কাজ শেষ হয়ে গেছে।
এখন যেতে হবে আসলামের কাছে। ও আছে মালিবাগের একটা বাসায়। এ বাসাটা সুইটির নামে নেয়া। আপাতত গয়না টয়না বিক্রি করা যাবে না। কেশ টাকা দিয়ে চলতে হবে। গয়না বিক্রি হবে বছরখানেক পরে।
ভাগের ক্ষেত্রে চল্লিশ পার্সেন্ট সুইটির। ত্রিশ ত্রিশ করে রাশিদা আর আসলাম নিবে। সুইটি কে দশ পার্সেন্ট বেশি দিতে হয়। তার জন্যই কাজগুলো করা যায়।
রাশিদা আর সুইটি সোজা চলে এসেছে বাসায়। আসলাম বাসায় ছিলো।
রাশিদা বলল,” নগদ টাকা কত পাওয়া গেছে আসলাম ভাই?”
“লাখ ত্রিশের মতো হবে। গুনা হয় নি। তোমরা এসে পড়েছ এখন গুনা যাবে।”
রাশিদা একটু অবিশ্বাসের চোখে তাকাল আসলামের দিকে। তার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। হাতে টাকা পেয়ে মানুষ না গুনে বসে থাকতে পারে!
“এবারের আয় খারাপ হয়নি। আমি রংপুর চলে যাব আসলাম ভাই।”
“ঠিক আছে যাও। ঢাকা থাকাটা এখন নিরাপদ না। বড়ো পার্টি হাঙ্গামা করতে পারে।”
সুইটি বলল,” আমার তো ঢাকায় থাকতেই হবে! ”
“সেটা নিয়ে একটু চিন্তায় আছি। সমস্যা নাই। ভালো করে মেকআপ করে নিলে চিনতে পারবে না।”
রাশিদা বেগম টাকা গুনতে বসে গেছেন। ওনার টাকার প্রতি আগ্রহ বেশি। বয়স তো কম হয়নি। ছেলে মেয়ে নেই। আত্মীয় স্বজন বলতে একবোন আছ। রাজশাহীতে থাকে। সেই বোনও ওনাকে খুব একটা পছন্দ করে না।
শাহিন সাহেব বসে আছেন। ওনাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। যদিও আনোয়ারার অবস্থা এখন অনেকটা ভালো। ডাক্তার এসে দেখে গেছেন। আপাতত ঘুমিয়ে আছেন। আচানক এমন একটা ধাক্কা সহ্য করতে পারেনি।
শাহিন সাহেবের ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। এমন কিছু হতে পারে। সুইটির মতো এমন একটা কাজ করল! এতদিনে তিনি মানুষ চিনতে পারলেন না। রুবিনার মেয়ে মনে করে তিনি আবেগে পড়ে গেছিলেন। এই মেয়ে যে রাশিদা না কী যেন নাম মহিলার মেয়ে হতেই পারে না। সুইটি যদি রুবিনার মেয়ে হয়? তাহলে এ সবের সাথে জড়িত হলো কী করে! হিসাব মিলাতে কষ্ট হচ্ছে।
সকালে ফাতেমা যখন জানল মামার ব্যাগ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন নিজের করা সন্দেহটা আর গাঢ় হলো। মামা কে বলল, “মামা আমার মনে হয় সুইটি মেয়েটা ভালো না! গতকাল ওর মা কি যেন একটা নিয়ে গেছে। আমি ঠিক মতো দেখতে পাইনি।”
“এ সব কি বলিস রে মা! তুই আমাকে আগে কেন বলিসনি? কি সর্বনাস!”
এরপর সুইটির বাসায় গিয়ে দেখা গেল। বাসায় কেউ নেই। বাসা তালা মারা। ইলিয়াস সাহেব বাসার তালা ভাঙার ব্যবস্থা করলেন। তখনও বাড়ির অন্যরা কিছু জানে না। বাসায় ঢুকে দেখলেন বাসা মোটামুটি ফাঁকা! সোফাসেট, খাট, একটা টেবিল আর গুটিকয়েক চেয়ার ছাড়া কিছুই নেই। বড়ো এ সব জিনিসপত্র নিতে পারেনি তাই হয়ত রেখে গেছে।
ইলিয়াস সাহেব বুঝতে পারছেন না কি করবেন? টাকা পয়াস গেছে এটা তেমন কোনো সমস্যা না। আজ বাড়িতে একটা বিয়ে হওয়ার কথা। আত্মীয় স্বজন সবাইকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। এখন সবাইকে কি বলবেন। ওনার খুব চিন্তা হচ্ছে। আনোয়ারার জন্য। বোনটা তার খুব ইমোশনাল! বিয়ের অনুষ্ঠান হবে কমিউনিটি সেন্টারে। আচ্ছা অনুষ্ঠান হলো সবাই খাওয়া-দাওয়া করে চলে গেল। দূরের মানুষজন কিছু জানল না। এমনটা করলে কেমন হয়? এমনিতে তো কমিউনিটি সেন্টারের বিল দিতেই হবে। মাথা ঠিক কাজ করছে না!
ফাতেমা বলল, “মামা ব্যাপারটা ভাইয়াকে জানাও। ভাইয়ার বন্ধুরা পরিস্থিতি ম্যানেজ করতে পারবে।”
“দেখি কী করা যায়। জানাতে তো হবেই! এটা লুকানো যাবে বলে মনে হয় না।”
ফাতেমার একটু খারাপ লাগছে! ওর আগেই মনে হয়েছিল সুইটি মেয়েটা ভালো না। কাউকে বলতে পারেনি। কেন যে বলল না! অবশ্য সবাই সুইটি বলতে পাগল হয়ে গেল। তখন বললেও লাভ হতো বলে মনে হয় না। সবাই ভাবত ফাতেমা সুইটি কে হিংসা করে এ সব বলছে।
খবরটা শুনে আনোয়ারা কেমন অস্থির হয়ে গেল! প্রেসার ট্রেসার বেড়ে অবস্থা খারাপ হয়ে গেল।
ইলিয়াস এ ভয়টাই পেয়েছিল। বোনটা বড্ড বেশি ইমোশনাল। খুব সহজে মানুষ কে বিশ্বাস করে ফেলে। জগৎটা খারাপ মানুষে বড়া! এখানে মানুষ কে বিশ্বাস করা মানে ধরা খাওয়া।
শাহিন বসে আছেন নিজের ঘরে। আনোয়ার অবস্থা এখন ভালো। ওকে নিয়ে আর চিন্তা নাই। খুব ভয় পেয়ে গেছিলেন। এতটা ভেঙে পড়ল আনোয়ারা!
এতক্ষণ আনোয়ারা কে নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। অন্য কিছু ভাবার সময় পাননি। অন্যদিকের একটা ব্যবস্থা করতে হবে। কয়েকজন মন্ত্রী কে পর্যন্ত দাওয়াত দেয়া হয়েছে। তাদের না করা যাবে না।
ইলিয়াস বসে আছে শাহিন সাহেবের পাশে। ইলিয়াস বলল,” দুলা ভাই, দ্রুত একটা কিছু করতে হবে। এত মানুষ কে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। ”
শাহিন সাহেব কিছু বলছেন না। চোখবুঁজে ভাবছেন কী করা যায়। এমন পরিস্থিতি কখনো পড়েননি আগে!
“দুলা ভাই, এক কাজ করি। মানুষজন কে বলার দরকার নাই। অনুষ্ঠান যেমন হওয়ার কথা তেমন হোক। সবাই খেয়ে-টেয়ে চলে যাক। কী বলেন?”
ইলিয়াসের প্রস্তাব খারাপ না। এ ছাড়া গতি আছে বলে মনে হচ্ছে না। ঘটনা দুয়েকদিন আগে ঘটলে মানুষ কে জানান যেত। আর কয়েকঘন্টা পরে বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। কমিউনিটি সেন্টার তো সব আয়োজন করে বসে আছে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন শাহিন সাহেব, “মানুষ কনে দেখতে চাইলে?”
“হঠাৎ করে কনে অসুস্থ হয়ে গেছে বলা যায়।”
“হ্যাঁ, এটা ভালো বলেছ।”
“তুমি দেখ তো রায়হানের কী অবস্থা। ওকে একটু বুঝাও।”
“আপনি চিন্তা করবেন না দুলা ভাই। আমি সব ব্যবস্থা করছি।”
ইলিয়াস সাহেব বের হয়ে গেলেন। রায়হানের কাছে। ভাগনের মনের অবস্থাটা তিনি বুঝেন।
শাহিন সাহেবের মনটা এখন একটু হালকা হয়েছে। বড়ো একটা চিন্তা মাথা থেকে সরে গেছে। ইলিয়াসের বুদ্ধিটাই ভালো।