ভালোবাসার_ফোড়ন লেখনিতে :#মিমি_মুসকান #পর্ব_২_৩

0
158

#ভালোবাসার_ফোড়ন
লেখনিতে :#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২_৩

আয়ানা’র কথায় আমি অবাক হয়ে গেলাম। কি বলবো বুঝতে পারছি না কিন্তু আয়ানা’র‌ বলা প্রত্যেক’টা কথা সত্যি। আসলেই আজকের ঘটনার পর কেউ’ই আমায় বিয়ে করতে চাইবে না, সমাজ আমাকে নষ্টা আর কলঙ্কিনীর উপাধি দিবেন। কিন্তু তাই বলে উনার মতো একটা লোক’কে বিয়ে করবো এটা ভাবতেও ভালো লাগছে না। দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম আমি। অসহায় মুখ করে আয়ানার দিকে তাকালাম যার অর্থ আমি বুঝতে পারছি না আমি কি করবো।

আয়ানা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে বলল…

– আমি লোকজন পাঠিয়ে দিচ্ছি তারা তোমাকে তৈরি করে দিবেন। ( আমার হাতে হাত রেখে বললেন ) বিশ্বাস করতে পারো আমায়।

– ওর কথায় ভরসা পেলাম। তাই মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নাড়লাম।
.
আয়ানা বের হয়ে সাথে সাথে আমার মামা আর মামী আসলো। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করছে আমি কি বলেছি? আমি কিছু বলতে যাবো তখন’ই কয়েকজন মেয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করল। তাদের সবার পরনে এক ধরনের পোশাক। তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল…

– আপনারা বউ কে রেখে বাইরে যান আমরা উনাকে সাজাতে এসেছি।

মামা মামী বেশ বুঝতে পারলো আমি বিয়েতে হ্যাঁ বলেছি। তারা খুশিতে গদ গদ হয়ে বের হয়ে গেলেন। মেয়ে গুলো আমাকে ধরে আয়নায়’র সামনে বসাল। তারপর আমাকে সাজাতে শুরু করল। আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে আছি। শ্যামলা গায়ের রঙ আমার, দেখতে ওতোটা সুন্দর না। শুধু চুল গুলো লম্বা এছাড়া আমার কোনো গুন নেই। না আছে পোশাকে আশাকে কোনো সৌন্দর্য। ভাবছি আহিয়ান এর দেখতে খুব সুন্দর তিনি। ভার্সিটির সবাই তাকে খুব পছন্দ করে।

আমার এখনো মনে আছে, ভার্সিটিতে প্রথম দিনের কথা। আমি দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম ইতি’র সাথে। বলা হয় নি ইতি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। বন্ধু বলতে শুধু ওই ছিলো আমার। আমার গেয়ো অবস্থার কারনে কখনো কেউ আমার বন্ধু হয় নি। যাই হোক কথা বলতে বলতে দেখি একটা গাড়ি ঢোকে ভার্সিটিতে। সবার নজর ওখানে থাকায় আমি কৌতুহল’টা মেটাতে পারিনি। কে এসেছে যে সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে। ইতি’কে জিঙ্গেস করায় বলল “একটু পর’ই বুঝতে পারবি। আমিও অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছি। গাড়ি থেকে একে একে কয়েকটা ছেলে মেয়ে বের হলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক বড় লোক। কিন্তু আমার চোখ আটকালো একটা ছেলের দিকে। ছেলেটা দেখতে খুব সুন্দর। কালো জ্যাকেট , কালো জিন্স পরা ছিলো। উনার সিল্কি চুল গুলো বাতাসে উড়ছিলো। কিন্তু আমার চোখ ছিল তার সানগ্লাস’টার দিকে। কারন এটা দেখতে চমৎকার ছিলো।

সে বের হবার পর পর’ই কয়েকটা মেয়ে তার কাছে গিয়ে প্রেম নিবেদন করল। কিন্তু উনি কাউকে কখনো পাত্তা দেয় নি। সে পাশ তাদের দিকে না তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। এমনে মেয়ে গুলো বেশ সুন্দর ছিলো। তার এই অ্যাটিটিউড দেখে আমি হা হয়ে ইতি’র দিকে তাকালাম। ইতি ভ্রু নাচিয়ে বলল,

– কেমন?

– এতো অহংকার!

– শুধু বলে অহংকার, ভার্সিটির ফার্স্ট বয়। তার রেকর্ড এখন পর্যন্ত কেউ ভাঙ্গতে পারে নি।

– ওহ্ তাই এতো অহংকার!

– হুম বলতে পারিস। এমনে তে সব মেয়ের ক্রাস তা তোর কি ক্রাস হলো নাকি?

– আমার আবার ক্রাস, না রে এতো ভাবার সময় নেই। আচ্ছা আমার লেট হচ্ছে।

– এখন’ই চলে যাবি! রান্না তো করেই না এসেছিস আরেকটু থাক।

– না রে লেট হয়ে যাবে। তারমধ্যে রাফি’র পরীক্ষা। ওর আম্মু বলেছে একটু বেশি করে পড়াতে। এখানে থাকলে ওর বাসায় যেতে দেরি হয়ে যাবে।

– আচ্ছা সাবধানে যা।

– হুম, তুই ও সাবধানে থাকিস।

বের হয়ে গেলাম ভার্সিটি থেকে। ব্যাগ এ খুঁজে ৫০ টাকা পেলাম কিন্তু এখনও মাস শেষ হয় নি। এই টাকা খরচ হলে চলবে না তাই হাঁটতে লাগলাম। হেঁটেই বাসায় যেতে হবে। ১ ঘন্টার মতো লাগবে যেতে তাই তাড়াতাড়ি হাঁটা শুরু করলাম। ৩ টা টিউশনি করি এতে আমার খুব একটা ভালো চলে না। তারমধ্যে মামী কেও টাকা দিতে হয়। কিন্তু আর টিউশনি তো পাচ্ছি না করবো কিভাবে। ভার্সিটির বেতনও দিতে হবে, তার মধ্যে নতুন বইও কেনা লাগবে। খুব টেনশনে আছি.. কি করবো বুঝতে পারছি না।

এসব ভাবতে বাসায় চলে আসলাম। এসে দেখি আমার মামী রেগে আছেন। কিন্তু রেগে যাবার কারন কি বুঝে ওঠতে পারার আগেই গালে খুব জোরে একটা চড় খেলাম। চোখ থেকে সাথে সাথে নোনা জল পরতে লাগল। মামী রুদ্রকন্ঠে বলে ওঠল…

– এতোক্ষণ সময় লাগে আসতে নবাবজাদি, সারাদিন টই টই করলে হবে। ঘরের কাজ গুলো কে করবে। কতো গুলো থালাবাসন পরে আছে, জামাকাপড় পরে আছে এগুলো কে পরিস্কার করবে। জমিদারি পেয়েছো নাকি যখন খুশি আসবে।

– হেঁটে এসেছি মামী তাই দেরি হয়ে গেছে আমি এখন’ই সব করে দিচ্ছি।

– হ্যাঁ করো তাড়াতাড়ি, সব কিছু আমার ঘাড়ের উপর এসে পরে।

রেগে চলে গেলেন মামী। ঘরের সব কাজ করতে করতে ৩ টা বেজে গেল। না খেয়েই বেরিয়ে পরলাম টিউশনি করতে। টিউশনি করে আসতে আসতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেল। সারাদিন কিছু না খাওয়াতে খুব ক্ষিদে পেল। মামী’র কাছে গিয়ে খেতে চাইলে মামী বলল আরেকটু পর তো রাত হয়ে যাবে তখন যেন খেয়ে নেই। কিছু না বলেই পেটে বালিশ নিয়ে চাপা দিয়ে পরতে বসলাম। জানি এখন যা কিছু হোক না কেন মামী খেতে দেবে না। কিন্তু ক্ষিদের কারনে পড়তেও পারলাম না। তখন আমার সামনে একটা বিস্কুট রাখল শুভ। সে আস্তে আস্তে বলল,

– আপু এটা খেয়ে নাও ক্ষিদে কমে যাবে।

চোখের কোণে জল এসে গেল। আমার এই ছোট্ট ভাইও বুঝেছে আমার অনেক ক্ষিদে লেগেছে। ওকে কোলে নিয়ে বিস্কুট টাকে দু’টুকরো করে ওকে একটা দিলাম। সে আদরে আমার গালে একটা চুমু খেল। অজান্তেই হেসে দিলাম। কানে যেন কারো কথা ভেসে আসল…

– ম্যাম সাজানো হয়ে গেছে!

ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলাম। মনে পরল আমাকে সাজানো হচ্ছিল। আয়নাতে তাকালাম। নিজেকে দেখেই অবাক হয়ে গেলাম। বলতে হবে মেকআপ এর নিজস্ব যাদু আছে তা না হলে আমার মতো খেয়ো ভুত কে কি বানিয়ে দিলো। আয়নাতে নিজেকে দেখেই হেসে দিলাম।

আয়ানা আবার আসল, এবার হাতে করে একট প্যাকেট আনল। আমি তাকে দেখে ওঠে তার কাছে গেলাম। সে আমার থিতুনি’তে হাত রেখে বলল…

– বাহ্ বেশ লাগছে তো তোমাকে!

– এটা আমার না মেকাপের যাদু আপু।

– ( হেসে দিয়ে প্যাকেট টা আমার হাতে দিয়ে ) আচ্ছা এই নাও।

– কি এটা?

– খুলে দেখো।

– প্যাকেট খুলে দেখলাম সবুজ রঙের চমৎকার একটা লেহেঙ্গা। অনেক সুন্দর কারুকাজ। আমি আয়ানা’র দিকে তাকালাম

– পছন্দ হয়েছে!

– অনেক সুন্দর এটা, কেউ না পছন্দ করে কিভাবে থাকবে।

– তাহলে পরে নাও এটা। আমি একটু পর এসে তোমায় নিয়ে যাবো।

– আপু একটা কথা বলবো।

– হ্যাঁ বলো।

– আচ্ছা উনি কি এই বিয়েতে রাজি?

– এই উনি’টা কে আহিয়ান! ( ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে )

– মাথা নিচু করে ফেললাম।

– বেশি টেনশন করো না, সাজ নষ্ট হয়ে যাবে। পরে আমি মা’কে কি দেখাব!

– বুঝতে পারলাম কথা’টা এড়িয়ে যাচ্ছেন। আমি আর প্রশ্ন করলাম না। যা আছে ভাগ্যে দেখা যাবে।

আপু চলে গেলেন। আমি লেহেঙ্গা পরে আয়ানায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছি। মা- বাবা’র কথা খুব মনে পরছে। আজ আমাকে এভাবে দেখলে অনেক খুশি হতো। চোখের কোনে পানি জমে গেল। আয়ানা দরজা টোকা দিয়ে বলল আমি “তৈরি তুমি?

আমি চোখের পানি মুছে বললাম “হ্যাঁ!

আয়ানা এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে নিয়ে গেল। ভাবছি এখন নতুন কি দেখবো। ভয়ে আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। মেহমান’রা এখনও সবাই আছে। সবার মুখ কেমন জানি লাগছে। আমি মাথা নিচু করে হেঁটে যাচ্ছি। কারো চাহনি আমার ভালো লাগছিল না।
কাছে আসতেই মামী আমার হাত ধরলেন। আমি সামনে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান হাতে মোবাইল নিয়ে চেয়ারে বসে আছে।তার মানে কি উনি বিয়ে’টা করবেন?
আমি আয়ানা’র দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত হাসল। এর মানে বিয়েটা উনি করবেন।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি মিস নিহারিকা নিহা থেকে মিসেস নিহারিকা নিহা আহিয়ান চৌধুরী হয়ে গেলাম। উনি বিয়ে’টা করেছেন কোনোরকম প্রশ্ন ছাড়াই। খুব একটা সহজ বিষয় নাহ এটা। কেমন ঘোলাটে লাগল ব্যাপার’টা।

এখন বিদায়ের সময়। মামা আর মামী অনেক কাঁদলেন কিন্তু এটা কি সত্যি’ই আমার প্রতি তাদের মায়া নাকি সবাইকে দেখানোর জন্য বুঝলাম না। আহিয়ান আমার পাশেই দাঁড়ানো। তার চোখ এখনো মোবাইলের দিকে। সেই কাবিন এর সময়ও ফোনের দিকে তাকিয়েই কবুল বলেছেন তিনি। এখনও তাই!

মামা মামী’র এই কান্নাতে আমার ওপর কোনো প্রভাব পরল না কিন্তু যখন আমার সেই ছোট্ট কলিজার ভাই’টা আমাকে জরিয়ে ধরল আমি আর পারলাম না কেঁদে দিলাম। ওকে জরিয়ে ধরেই কাঁদলাম। কারন আমাকে বোঝার মতো একমাত্র ওই’ই ছিলো। শুভ আমার গলা জড়িয়ে বলল …

– আপু তুমি যেয়ো না, তুমি চলে গেলে আমার সাথে কে খেলবে, আমাকে কে গল্প শোনাবে।

– আমি ওকে জরিয়ে কাঁদছি, কিভাবে বলবো আমি ওকে এখানে আমি আর থাকতে পারবো না। ওর বাচ্চা মন আমি কিভাবে বোঝাবো। আমি ওর চোখ দুটো মুছিয়ে দিয়ে বললাম আমি আবার আসবো। তুমি কেঁদো না।তবুও সে কাঁদতে থাকে।

হঠাৎ’ই আহিয়ান তাকে নিজের দিকে টানে।‌পকেট থেকে চকলেট বের করে তার হাতে দিয়ে বলে…

– ছিঃ তুমি না একটা ছেলে, ছেলেরা এভাবে কাঁদে। আমি কাল এসে তোমাকে নিয়ে যাবো ঠিক আছে।

আহিয়ান’র কথায় শুভ থেমে গেল। সে চকলেট’টা দেখিয়ে বলল…
– এটা আমার!

– হ্যাঁ তোমার।

– তুমি কাল আসবে সত্যি!

– হ্যাঁ আসবো।

– প্রমিস করো! ( হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দেখিয়ে )

– ( শুভ’র আঙ্গুলে নিজের আঙ্গুল মিলিয়ে ) প্রমিস।

শুভ গলা জরিয়ে ধরল আহিয়ান’র। মামী শুভ ‘কে নিয়ে বলল..

– এমন করে না বাবা আপু এখন চলে যাবে, যেতে দাও।

আয়ানা বলে উঠলো…

– গাড়িতে বসো দেরি হচ্ছে আমাদের।
.
আমি গাড়ি’র দরজা খুলতে যাবো আহিয়ান নিজেই খুলে দিলো। আমি ভিতরে বসলাম। আহিয়ান আমার পাশে এসে বসল। গাড়ি ড্রাইভার চালাবে। আয়ানা সামনের সিটে বসল।

খুব কষ্ট হচ্ছিল ওদের ছেড়ে আসতে। গাড়িতে বসে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলাম। হঠাৎ আহিয়ান আমার সামনে রুমাল ধরল। আমি তার দিকে তাকালাম। উনি রুমাল আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো উনি আমার এখন পর্যন্ত কথা বলেন নি। অবাক লাগল খুব!
.
গাড়ি এসে থামল চৌধুরী ম্যানশন এর সামনে। গাড়ি’র দরজা এসে গার্ড খুলে গেল। আমি বের হতেই ওই মেয়ে গুলো এসে আমাকে আবার ঠিকঠাক করতে লাগল। তারা আমার মুখের মেকআপ, ড্রেস সব ঠিক করে দিলো। এবার আমি সামনে দাঁড়িয়ে চৌধুরী ম্যানশন দেখতে লাগলাম। সত্যি’ই বাড়ি’টা প্রাসাদের চেয়ে কিছু কম না। এই বাড়ি’তে বিয়ে হয়েছে আমার। কেমন জানি বিশ্বাস হচ্ছিল না।

বাড়ি’র দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর আহিয়ান। ভেতরে ঢুকতে দেয় নি তা না। আপু ভেতরে গেছে। হয়তো উনার মা – বাবা এই বিয়ে’র ব্যাপারে কিছুই জানেন না। আমি আড় চোখে আহিয়ান এর দিকে তাকালাম। তার কোনো ভাবনা নেই। এখনো তার চোখ দুটি মোবাইলে’র দিকে। তখনও পুরো রাস্তায় তার চোখ এই ফোনের স্কিন থেকে সরে নি। এখনও না। কিন্তু এখন তার কানে হেডফোনও আছে। তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না আজকে তিনি কি কি করেছেন।

আমার চোখ তার গালের দিকে গেল। সেই দিনের’র চড় এর কথা মনে পড়লো। আচ্ছা এই চড়’র শোধ নিতেই কি তিনি আমাকে বিয়ে করেছেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। চোখের সামনে ভেসে ওঠল সেই দিনের কথা।

আমাদের ভার্সিটির পেছন’টায় খুব বড় একটা বাগান ছিলো। কিন্তু কথা সেটা না কথা হলো সেই বাগানে অনেক কাঠ বাদাম এর গাছ ছিলো। আমার লোভ ছিলো সেই কাঠ বাদামের।
সেদিন ইতি আসে নি ভার্সিটিতে। তাই আমি ছুটি’র পর পর’ই চলে আসলাম সেই বাগানে। বাগান’টা সত্যি’ই অনেক বড় ছিলো। কিন্তু খুব স্নিগ্ধ পরিবেশ ছিলো। আমি বাগানের ভিতরে প্রবেশ করলাম। কাঠ বাদামের গাছের নিচে অনেক কাঠ বাদাম ছিলো আমি সব কুড়িয়ে নিতে লাগলাম। যখন দাদি’র সাথে গ্রামে ছিলাম তখন এমন বাগান আমাদের ও ছিলো। আমি সারাদিন ঘুরে বেড়াতাম, গাছে চড়তাম। ভাবতে লাগলাম দাদি’র সাথে কাটানো সেই মূহুর্ত গুলো। দাদি খুব ভালোবাসতেন আমায়। মা বাবা ও খুব ভালোবাসতেন আমায়। যারা’ই আমাকে ভালোবাসে তারাই ছেড়ে চলে যায় আমাকে ছেড়ে।

এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। মন’টা হুট করেই খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ’ই কেউ পেছন থেকে আমার কোমর ধরে তার কাছে টানলো। ভয়ে আমার শরীর শিউরে উঠলো। আমি সাথে সাথে সামনে ঘুরলাম। আর যাকে দেখলাম তাকে দেখে আমার চোখ কপালে তুলে গেল।

#চলবে….

#ভালোবাসার_ফোড়ন
লেখনিতে :#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩

হঠাৎ’ই কেউ পেছন থেকে আমার কোমর ধরে তার কাছে টানলো। ভয়ে আমার শরীর শিউরে উঠলো। আমি সাথে সাথে সামনে ঘুরলাম। আর যাকে দেখলাম তাকে দেখে আমার চোখ কপালে তুলে গেল। কারন এটা আহিয়ান ছিল। আমি তার খুব কাছে ছিলাম। তার চোখে একটা সানগ্লাস ছিল। তার সামনের চুল গুলো কপালে ঢেকছে। আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে কিন্তু উনি তাকিয়ে আছে কিনা বুঝতে পারছি না।

আমার বোধ হলো ওর হাত আমার কোমরে। আমি তাড়াতাড়ি করে কোমর থেকে উনার হাত সরিয়ে পেছনে যেতে নিলাম। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো উনি এখনো আবারও আমার কোমর ধরে নিজের কাছে টানলেন। এবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো আমার। আর কিছু না ‌ভেবে একটা চড় বসিয়ে দিলাম ওনার গালে। উনি সাথে সাথে ছেড়ে দিলেন আমাকে। হয়তো এটা আশা করেন নি। উনি চোখের সানগ্লাস টা খুলে রাগি চোখে আমার দিকে তাকালেন।

আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তবুও কিছু’টা সাহস জুগিয়ে বললাম…

– কি হচ্ছে টা কি, আপনি এভাবে আমাকে ধরছেন কেন? দেখুন আমি কিন্তু চিৎকার করবো। একদম আমার কাছে আসবেন না। ( একদমে বলে ফেললাম। )
.
এবার উনার দিকে তাকালাম। উনি একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। হঠাৎ উনি হাত উঠালেন, আমি ভাবলাম হয়তো আমাকে মারবেন। আমি কিছু বলতে যাবে তার আগে উনি আমার গাল ধরে পিছনে ঘোরালেন।

পিছনে ঘুরে আমার চক্ষু ছানাবড়া। কারন একটা সাপ এই দিক যাচ্ছে। হয়তো আমি ওখানে থাকলে কামড় দিতো আমাকে। সাপ’টাকে দেখে অনেক’টা ভয় পেয়ে গেলাম।‌ সাথে সাথে উনার কাছে গিয়ে উনার শার্টটা আঁকড়ে ধরলাম। কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম দুজনে দুজনের দিকে।

হুট করেই উনি আমার হাত শার্ট থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পেছনে ঢেলে দিলেন। আমি তাড়াহুড়ো করে আগে পেছনে তাকিয়ে সাপ খুঁজতে লাগলাম। নাহ্ সাপটা আর নেই। একটা হাঁফ ছেড়ে আবার পিছনে ঘুরলাম উনাকে সরি বলবো বলে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো সেখানে উনি নেই। এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলেন এখান থেকে। খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম। আসলেই উনি ছিলেন নাকি ভুত। ভুতের কথা ভাবতেই আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো। আমি এক দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেলাম।

দৌড়াতে দৌড়াতে অনেকটা পথ চলে এসেছি। পেছনে ঘুরে বাগান’টা কে দেখতে লাগলাম। হঠাৎ করেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপাশ করে পরে গেলাম। যার সাথে ধাক্কা খেলাম সে আমার দিকে ফিরল। এমা এতো দেখি আহিয়ান। আমি চেঁচিয়ে বলে ওঠলাম…

– ভুত!

– কিহ?

এতো দেখি কথা‌ বলছে, তার মানে এটা ভুত না।
– নাহ কিছু নাহ!

আমি পরে যাওয়াতে আহিয়ান আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে হাত বাড়ালো। আমি হাত ধরতে যাবো তখন’ই সে হাত সরিয়ে ফেলল। বেশ অবাক হলাম! এটা কি হলো? সে আশপাশ তাকাচ্ছে। বোঝার চেষ্টা করলাম সে কি করছে।

দূরে পরে থাকা একটা গাছের ডাল তুলে এনে আমার দিকে ধরল। আমি বড় বড় চোখ করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে ধমকের সুরে বলল…

– ধরো এটা!
উনার ধমক খেয়ে তাড়াতাড়ি করে গাছের ডাল ধরলাম। সেটা ধরেই টেনে তুললেন আমাকে। আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুরলাম উনার দিকে..

– আপনি এটা দিয়ে আমাকে তুললেন কেন?

– আর চড় খাবার শখ নেই আমার ( রেগে বললেন কথা’টা )

– সরি আসলে আমি বুঝতে পারি নি।

– এই সময় বাগানে কি করেছিলে?

– বাদাম তুলছিলা… মনে পরলো বাদামের কথা। আশপাশ তাকালাম। কুড়িয়ে নেওয়া বাদাম গুলো উড়ানায় রেখেছিলাম সে সব নিচে পরে গেলো। আমি সেগুলো তুলতে লাগলাম। হঠাৎ করেই উনি অবাক হয়ে আমাকে বলতে লাগলেন…

– এগুলো কেন তুলছো!

– ( তুলতে তুলতে ) খাবো বলে!

– এগুলো খাওয়া যায়!

– হ্যাঁ! কেন কখনো খান নি আপনি?

– না ( গম্ভীর হয়ে )

– খাবেন?

– নাহ! যাই হোক আমাকে চড় মারার ‌দাম তোমাকে দিতে হবে।
বলেই চলে গেলেন তিনি। আমি অবাক হয়ে উনার যাবার পানে তাকিয়ে রইলাম। এটা কেমন হলো? এই তো ভালো মতো কথা বলছিলো এই আবার কি হলো?

তখনও যেমন উনাকে বুঝতে পারি নি আজও পারছি না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজার দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু কেউ আসছে না। আমি বুঝে ফেললাম আমার মতো মেয়ে’কে তারা বউ হিসেবে মনে নেয় নি।‌এটা আমার আশা করাই ছিলো তাই আর বেশি দুঃখ পেলাম না।

নিচে’র দিকে তাকিয়ে রইলাম।‌ কারো পায়ের আওয়াজ শুনে সামনে তাকালাম। দেখি আয়ানা হাসি মুখে আসছে, তার পিছু পিছু আরো কতোজন মেয়ে। কিন্তু আয়ানা’র সামনে একজন ভদ্রমহিলা আসছেন। তার সাথে বরনডালা। দেখে মনে হচ্ছে ইনি আহিয়ান এর মা। উনার মুখেও কিঞ্চিত হাসি কিন্তু সেটা কি আমাকে দেখানোর জন্য।

আহিয়ান এর মা সামনে আসলেন। আহিয়ান এখনো ফোনের মধ্যে মুখ গুঁজে আছে। আহিয়ান’র মা এসে আহিয়ান এর হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিলেন। আহিয়ান রেগে সামনে তাকাতেই দেখে মা। সে innocent face করে। মা আহিয়ান কে টেনে আমার পাশে দাঁড় করায়। তারপর বলে ওঠে..

– চুপচাপ দাঁড়াও বরন করতে দাও আমায়।
.
আহিয়ান কিছু বলে না। ভালো ছেলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। এখন উনাকে দেখে আমার মনে হচ্ছে উনার মতো ভদ্র ছেলে আর একটাও নেই। মা হেসে আমাকে আর আহিয়ান কে বরন করে নিলেন। তারপর আমার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যেতে লাগলেন।

ভেতরে এসে আমি তাকিয়ে আছি। বাড়ি’টা বাইরে থেকে যত’টা না সুন্দর ভেতর থেকে আরো সুন্দর দেখতে। প্রত্যেক টা জিনিস খুব সাজানো গোছানো। আমি তাকিয়ে দেখছি। মা আমাকে নিয়ে সোফায় বসালেন। আহিয়ান সিঁড়িতে ওঠতে ওঠতে বললেন…

– মা আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, আমি ঘুমাতে গেলাম।

– খাবি না কিছু?

– আমি খেয়েছি, গুড নাইট।
বলেই চলে গেলেন তিনি। আমি চুপচাপ বসে আছি। আয়ানা আমার পাশে সোফার ওপরে বসলো।
মা থিতুনি তে হাত দিয়ে আমাকে দেখছেন। তারপর মুচকি হাসি দিয়ে আয়ানা’র দিকে তাকিয়ে বললেন…

– মাশাআল্লাহ! বলতে হবে তোদের পছন্দ আছে!

তোদের পছন্দ মানে, আহিয়ান কি পছন্দ করেছে আমাকে নাকি! কেমন জানি সব ঘোলাটে লাগল। মা”র কথায় কোথায় জানি রহস্য লুকিয়ে আছে এমন লাগছে আমার। আয়ানা হেসে বলল..

– দেখতে হবে আমি কার মেয়ে..

এমন সময় একজন ‌ভদ্রলোক আসলেন। আয়ানা আর মা তাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাদের দেখা দেখি আমিও দাঁড়ালাম। সে এসে আমার সামনে দাঁড়াল। চোখে চিকন ফেমের গোল চশমা, পরনে একটা পাঞ্জাবি, মুখটা খুব গম্ভীর করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি তার চাহনি তে মাথা নিচু করে ফেললাম। আড়চোখে আয়ানা’র দিকে তাকালাম। আয়ানা ফিসফিসিয়ে বলল…

– তোমার বাবা!

তার মানে এনি কবীর চৌধুরী। আমি তার দিকে তাকিয়ে অজান্তেই মুখ থেকে “আব্বু” বেরিয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি করে তাকে সালাম করলাম ‌ হয়তো উনি এরকম টা আমার কাছে আশা করছিলেন। উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন..

– নাম কি তোমার?

– নিহারিকা নিহা!

– ( ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বললেন.. ) আহিয়ান চৌধুরী কে বলবে!

বাবা’র কথায় আমি বোকা’র মতো উনার দিকে তাকালাম। উনি আমার থেকে চোখ সরিয়ে মা’র দিকে তাকিয়ে বললেন…

– ওকে খাইয়ে দিয়ে ঘুমাতে যেতে বলো অনেক রাত হয়েছে।

বাবা’র কথা শুনে আমি বলে উঠলাম..
– কথা’টা আমাকে বললেন না কেন?

বাবা আমার দিকে তাকিয়ে মা’কে বললেন …
– তোমার ছেলে কোথায়?

আমি আবার বললাম…
– উনি ঘুমাতে চলে গেছেন!

বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন..
– তোমাকে আমি প্রশ্ন করেছি যে তুমি উওর দিচ্ছো?

আমি তাড়াতাড়ি করে বললাম..
– সেটাই তো আপনি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছেন না কেন?

আবারও মা’র দিকে তাকিয়ে…
– আমি ঘুমাতে গেলাম। বলেই চলে গেলেন।
.
আমি বাবা’র চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম। আয়ানা আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল…
– কি সাহস তোমার! তুমি বাবা’র মুখে মুখে তর্ক করলে!

– আমি তর্ক করলাম কোথায়?

মা হেসে বলে ওঠল..
– যেমন শশুড় তেমন বউ মা! শশুড় এবার জব্দ হবে।

– তা আর বলতে মা ও কিভাবে বাবা’র প্রত্যেকটা কথার উওর দিলো। আচ্ছা তোমার ভয় করলো না।

– মেয়েরা কখনো বাবা কে ভয় পায় নাকি! ভয় পেলে তো মা’কে পায়।

– কেন? তুমি আমাকে ভয় পাও? ( ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে )

– না মানে… আমি তো কথার কথা বললাম মা! ( মাথা নিচু করে )

– ঠিক আছে মা বলায় ছেড়ে দিলাম। আয়ানা খাবারের ব্যবস্থা করো। অনেক রাত হয়েছে।

– আচ্ছা মা।
.
আসলেই অনেক রাত হয়েছে, প্রায় রাতের ১ টা বাজে।‌আমি সোফায় বসে আছি। মা আমার পাশে বসে আমার সাথে বিভিন্ন ধরনের কথা বলছেন। আমার ছোটবেলার কথা, মা বাবা’র কথা সব জিঙ্গেস করলেন। আমি নিজেকে অনাথ বলেই পরিচয় দিলাম।‌মা আমার মাথায় হাত রেখে বললেন…

– আর কোনো নিজেকে অনাথ বলবে না বুঝলে, আমি আছি না তোমার মা।
.
মা’র কথাটা শুনে ‌আমার চোখের কোণে জল চলে এলো। বিয়ের প্রথম রাতে নিজের শাশুড়ি এমন আচরণ আমি আশা করি নি। বলতে হবে তারা অনেক ভালো। আমাকে অনেক ভালো ভাবেই মেনে নিয়েছে তারা। যা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া কষ্টসাধ্য ছিল। স্বপ্নের মতো লাগছিলো সবকিছু।

একটু পর’ই আয়ানা আসল। তার সাথে একটা মেয়ে আসল, তার হাতে খাবার ছিলো। মেয়েটা এসে খাবার গুলো আমার আমার সামনে রাখল। এতো ভারী পোশাক পরে কিভাবে খাবো ভাবছি। ক্ষুদাও লেগেছে অনেক সেই সকালে একটু খাবার জুটেছিলো কপালে। হঠাৎ দেখি মা আমার মুখের সামনে খাবার তুলেছে। আমি মা’র দিকে তাকালাম। মা চোখ দিয়ে ইশারা করলেন খেয়ে নিতে। আমি হেসে খেতে লাগলাম। ভালো লাগছিলো খুব, আজ এতো বছর পর মা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আমি মা’র দিকে তাকিয়ে আমার মা’র কথা মনে করতে লাগলাম। তেমন একটা মনে নেই কারন তখন আমি খুব ছোট ছিলাম। মা’র সাথে কাটানো শুধু কিছু মূহূর্ত ছাড়া আর কিছু’ই মনে নেই আমার।
.

খাওয়ার পর আয়ানা আমাকে নিয়ে রুমে আসলেন। দরজার বাইরে থেকে’ই চলে গেলো সে। দরজা খোলা’ই ছিলো। আমি তাও একবার দরজায় কড়া নাড়লাম। আহিয়ান ভিতর থেকে বলল “আসো”। উনা’র আওয়াজ পেয়ে আমি ভেতরে ঢুকলাম। ব্যাপার খুব মজার ছিলো। নরমালি ছেলেরা অনুমতি নেয় কিন্তু আমার পক্ষে তার ব্যতিক্রম ঘটল। অনুমতি আমি নিলাম। ঘরে ঢুকে দেখলাম স্যার বিছানায় শুয়ে বই পরছেন। ঘরটা খুব সুন্দর ছিলো। গোছানো, পরিপাটি। বিছানার ওপরে একটা বড় ছবি দেখা যাচ্ছিল। ছবি’টায় মুখ ভালো মতো দেখা না গেলেও আমি হলফ করে বলতি পারি ছবি টা উনার।

আমি গুটি গুটি পায়ে তার কাছে গেলাম। উনি আমাকে দেখে বই টা রাখলেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন…

– এখানে বিছানা আছে, ওখানে সোফা আছে, ঘর থেকে বের হয়ে সামনে ১০ পা হেঁটে বামে মোড় নিয়ে আরো ১০ পা হেঁটে ডানে মোড় নিলে গেস্ট রুম দেখবে। সব বলে দিলাম যেখানে ইচ্ছে শুতে পারো। আমি এখন ঘুমাবো গুড নাইট। ( একদমে সব বলে দিলো )

আমি হা করে তাকিয়ে আছি। কিছু জিজ্ঞেস করবো তার আগেই উনি উনার মতো সব বলে দিলো এটা কোনো কথা। আর বলার পর’ই চাদর টেনে শুয়ে পরল। আমি আহাম্মক’র মতো তাকিয়ে আছি। কি আর করার। জানি এখন কিছু বললেও উনি আমার কথা’র দাম দিবে না। কারন উনার ঘাড়ে কয়েকটা রগ বেঁকা সেটা আমি ভালো’ই বুঝতে পেরেছি। হঠাৎ করেই কেউ আবার দরজা নক করল। আমি গিয়ে দেখি একটা সার্ভেন্ট হাতে আমার ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একেক সময় একেক সার্ভেন্ট দের দেখছি। সে আমাকে বলল…

– আয়ানা ম্যাম বললো এটা আপনাকে দিতে।

– আচ্ছা দাও আমাকে।
ব্যাগ টা দিয়ে’ই সে চলে গেলো। আমি দরজা লক করে ব্যাগ নিয়ে সোফায় বসলাম। ব্যাগ থেকে একটা থ্রি পিস বের করে ওয়াশরুম এ গেলাম ফ্রেশ হতে।

একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে বের হলাম। চুল‌ গুলো’র অবস্থা মারাত্মক। তারা সাজানোর সময় কতো’ই না মেডিসিন দিলো আমার চুলে। পুরো চুলের সর্বনাশ করে ছাড়ল। কোনোমতে চুল গুলো আঁচড়ে নিলাম। এখন ভাবছি কোথায় শোব।‌ সোফায় আমার পক্ষে শোয়া সম্ভব না। অভ্যাস নেই, শেষে পরে গিয়ে কোমর ভেঙে লাভ নেই। আচ্ছা গেস্ট রুম’এ গেলে কেমন হয় কিন্তু যদি কোনো সার্ভেন্ট দেখে ফেলে তাহলে…
মান সম্মান সব যাবে। আচ্ছা উনার পাশে.. না বাবা এতো সাহস আমার নেই। উনার পাশে তো কোনোমতে শোয়া যাবে না।

হঠাৎ করেই মেঝেতে চোখ পরল। ভাবলাম এখানেই শুয়ে পরি। যেই ভাবা সেই কাজ। আলমারি’তে হাত দিলাম। আলমারি খোলাই ছিলো। আমি ওখান থেকে একটা চাদর আর একটা বালিশ নিয়ে নিচে বিছানা পাতলাম। শুতে যাবো তার আগে উনার দিকে একবার তাকালাম। ঘুমিয়ে পরেছে উনি। বাচ্চাদের মতো লাগছে তাকে। আসলেই বাচ্চাদের মতো কারন উনার দুই পাশে বাচ্চাদের মতো দু’টি কোল বালিশ। আমি একবার হেঁসে ঘুমিয়ে পরলাম। রুমের লাইট অফ করলাম না।

শোবার সাথে সাথেই ঘুম চলে এলো। খুব ক্লান্ত ছিলাম। সারাদিনে যেই ঝড়’টা গেলো আমার ওপর এর পরে আর পারলাম না। কিছুক্ষণ’র মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলাম।
মাঝরাতে কারো গরম নিঃশ্বাস আমার ঘাড়ে পরায় জেগে ওঠলাম আমি। অনুভূতি হচ্ছে আমি বিছানায়, আর আমার ঘাড়ে কারো মাথা। শুধু তাই নয় পেটে’র ওপর কারো হাতও আছে। চিৎকার করতে যাবো বোধ হলো রুমের লাইট অফ। কিন্তু আমি তো জ্বালিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। তাহলে…

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here