#ভালোবাসার_ফোড়ন
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৪ ( বর্ধিতাংশ )
পরদিন খুব সাবধানে ভার্সিটিতে ঘুরা ঘুরি করছি তার কারনটা হলো ইতি! আজকে ইতি পেলেই আমার বারো টা বাজাবে আমি নিশ্চিত! চুপিচুপি হেঁটে ক্লাসরুমে যাচ্ছি এমন সময় ইতি আমার সামনে এসে দাঁড়াল। ওকে দেখে থতমত খেয়ে খেলাম। ইতি আমাকে দেখে বড়ো করে একটা সালাম দিলো। অতঃপর বলতে লাগল…
– খবর কি আপনার, মাঝে মাঝে যেন মনে হচ্ছে হাওয়ায় ভাসছেন।
– হাওয়ায় ভাসা যায়!
– চুপ ছেমড়ি! তোরে নদীতে না মাইরা সাগরে ভাসামু। আছিলি কই এতোদিন তুই।
– কেন তুই জানিস না শশুর বাড়ি!
– ফাজলামি বন্ধ করবি।
– আরে সত্যি কথা।
হঠাৎ আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে..
– ফোন টা তো খুব সুন্দর! কে দিলো তোর বর!
– হ্যাঁ বার্ডডে গিফট বলতে পারিস।
– হ্যাঁ কাল তো তোর বার্ডডে ছিল। ( ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে ) এই নে চকলেট! তোর জন্য এনেছিলাম কিন্তু মনে হচ্ছে এই চেয়ে বেশি ভাইয়া দিয়েছে! ( হেসে বলল )
– হি হি হি হাসা শেষ! যেমন ভাবছিস তেমন কিছু না।
– আচ্ছা ফোনের লক কি বল!
– লক করা নেই!
– কি বলিস? লক করিস নি।
– আরে এতো কিছু করে কি হবে। ফোন দিয়ে কথা বলার দরকার কথা বলবো।
– সাথে বরের সাথে প্রেম করবো এটা বল। আচ্ছা বরের পিক দেখা।
– ছবি টবি নেই!
– কেন তুলিস নি?
– নাহ!
– আজব তো কি এমন বর তোর যে এতো লুকিয়ে রাখিস।
– লুকানোর কি আছে।
– তাহলে দেড় মাস হলো বর কে দেখলাম না আর না পিক তুললাম। এতোই কি বুড়ো তোর বর। আচ্ছা সেদিন তো তুই বললি ওই বুড়োর সাথে বিয়ে হয় নি। তাহলে দেখাতে কি?
হ্যাঁ এটা সত্যি আমি ইতি কে বলেছিলাম ওই লোকের সাথে বিয়ে হয় নি। তবে কার সাথে হয়েছে এটা বলেনি। ইতি আবারও বলতে শুরু করল…
– আমি তোর ফোনে আমার নাম্বার সেভ করে দিচ্ছি রাতে দুজনে কথা বলবো। ঠিক আছে! আর একটা ফেসবুক আইডি খুলে দেব।
– সেটা দিয়ে কি হবে।
– পিক আপ হবে,রিয়েক্ট হবে, কমেন্ট হবে, চেটিং হবে অতঃপর তুই চাইলে আর কি! তবে সেটা তোর ইচ্ছা কার সাথে করবি।
দু’জনেই জোরে হেসে দিই। আমি বলি..
– এসবের টাইম নেই। বাদ দে..
– আচ্ছা আমি খুলে রাখি মন চাইলে দেখিস, তবে আমি যা বললাম ভুলেও করিস না। শেষে তোমার বর তোমাকে রাখলেও ফোন আর রাখবে না বুঝলে।
ইতির কথায় আবারও একদফা হাসির আওয়াজ। এর মধ্যে আনিকা এসে হাজির আমাদের সামনে। তাকে দেখেই ইতি মনে মনে তার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে এটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি ইতি কে একটা খোঁচা দিলাম। আনিকা’র সাথে সাথে টিনা আর নিতি আসলো। আনিকা একটা কার্ড আমার সামনে দিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম…
– এটা কি আপু!
– আমার বিয়ের কার্ড!
কথাটা শুনে আমি একটু অবাক হলাম কিন্তু ইতি মনে ইচ্ছে আকাশ থেকে টপকে পড়ল না জানি আকাশ ভাইয়ার মন থেকে হি হি হি। আমি ফিসফিসিয়ে ইতি কে বলি…
– কি হলো তোর!
– কিছু না।
– যদি বিয়েটা আকাশ ভাইয়ার সাথে হয়!
ইতি রেগে চলে গেলো।আমি আনিকার সাথে কথা বলে ইতি’র পিছু পিছু গেলাম। ইতি মন খারাপ করে বসে ছিল। আমি ওর ঘাড়ে হাত রাখলাম। সে ছল ছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কার্ড এর দিকে তাকাল। আমি চোখ দিয়ে ওকে আশ্বাস দিয়ে বললাম…
– তোর পথের কাঁটা সরে গেছে, বিয়েটা অন্য কারো সাথে তবে আকাল ভাইয়া কতোদিন তোর থাকবে জানি না।
– জানা লাগবে না। কিন্তু তোকে ইনভাইট করল কেন?
– শুধু আমাকে না তোকেও করেছে। এই যে তোর কার্ড না নিয়ে চলে এলি।
– বেশ করেছি আমি যাবো না।
– আকাশ ভাইয়া কিন্তু যাবে!
– যাক
বলেই উঠে চলে গেল। আমি পরলাম বিপদে, কি যে করি এই মেয়েটাকে নিয়ে। এভাবে কষ্ট পাবে নাকি, আজকেই উনার সাথে ওদের বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে।
সন্ধ্যায় আকাশ তার রঙ ধারন করল। পাখিরা তাদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। উনি চুপ করে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আমি এক কাপ চা তার সামনে ধরলাম। তিনি আমার হাত থেকে চা নিয়ে চুমুক দিতে দিতে তার ছোট বাগানের কাছে গেলেন। আর বলতে শুরু করলেন..
– বাগান টা তুমি পরিষ্কার করেছো!
– হুম বিকালে দেখলাম, তাই পরিষ্কার করে রাখলাম।
– এতো দিনের ঝামেলায় এগুলোর কথা প্রায় ভুলেই গেছিলাম। মা মনে হয় রোজ সকালে পানি দিয়ে যায়।
– হুম! দিয়ে যান তো।
– আনিকার বিয়ে জানো!
– ইনভাইট করেছে আমাকে।
– তাই নাকি! ভালো আমার সাথে যেও।
– হুম কিন্তু ইতি আর ভাইয়ার কথা ভাবলেন।
– আকাশের সাথে কথা হলো। কালকেই যা করবার করবে।
– ভালোই হলো না হলে আমি’ই বলতাম কিছু করতে।
ইতি’র মন খারাপ!
– হুম দেখি যদি কাল কিছু করতে পারি।
– পারি না করবেন বুঝলেন।
বলেই চলে এলাম।আসার আগে উনার কথার শুনতে পেলাম..
– যা বাবা ঝারি দেওয়ার কি হলো।
পরদিন বিকেল বেলা,
আহিয়ান বললো ইতি কে বেরুতে। অতঃপর উনার দেওয়া ঠিকানায় চলে যেতে। আমি তার কথা মতো ইতি কে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। তবে সেটা কম খাটনির ছিল না। অনেকটা ঝামেলার কারন ইতি’র ফ্যামিলি ওকে বেরুতে দিচ্ছিল না। অনেক বুঝিয়ে বেরিয়ে এলাম। যাই হোক উনার বলা মতো জায়গায় পৌঁছে গেলাম। যেয়ে দেখি একটা রেস্টুরেন্ট। আমি আর ইতি ভিতরে প্রবেশ করি। দেখি অনেক মানুষ জন। খানিকটা অবাক হলাম এরকম জায়গায় আসতে বললেন উনি, তার মধ্যে ইতি তো একগাদা প্রশ্ন জুরে দিচ্ছে। কোনোমতে উকে সামাল দিচ্ছি।
হঠাৎ একজন ওয়েটার আমার কাছে এসে বলে…
– আপনি মিসেস নিহা!
– জ্বি আমি।
– আপনাকে ছাদে যেতে বলা হয়েছে..
সিঁড়ি’র দিকে ইশারা করে।
– আচ্ছা কি ঠিক আছে।
ইতি বলে ওঠে..
– কিসের ঠিক আছে, কোথায় যাবো আমরা এখন। কি বলছিস তুই।
– আরে চল তো আগে!
– কিন্তু!
– বিশ্বাস করিস না আমায় চল!
বলেই ওর হাত ধরে ছাদে নিয়ে গেলাম। ছাদে এসে আমি আর ও হতবাক। অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ছাদ টা। চারপাশ লাল রঙের বেলুন দিয়ে সাজানো। আর একজন দাঁড়িয়ে আছে উল্টো ঘুরে।
আমি তাকে দেখে কয়েক পা পিছিয়ে গেলাম। চোখের ইশারায় ইতি কে সামনে যেতে বললাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে আশ্বাস দিলাম। অতঃপর সে ভিতরে ঢুকলো। তখন হুট করে কেউ আমার বাহু টেনে নিয়ে গেল….
#চলবে….
( দেরি হবার জন্য দুঃখিত। তবে অনেকেই হসপিটালে’র কথা জানতে চেয়েছেন, আসলে আমার তেমন কিছু হয় নি। পারিবারিক কারনে গিয়েছিলাম। ধন্যবাদ সবাইকে)