#অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (১)
#লিখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী
(আগেই বলে রাখছি প্রথম কয়েকটা পর্ব পড়ে আপনার সব মাথার উপর দিয়ে যাবে কারণ অদৃষ্টের মৃগতৃষ্ণা একটা সাসপেন্স থ্রিলার গল্প। শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারবেন না। তাই অনুরোধ রইলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, পড়তে পড়তে কোনো কোনো লাইনে হিডেন ম্যাসেজ পাবেন, তলাশ করুন। প্রাপ্ত বয়স্ক এবং উন্মুক্তমনাদের জন্য প্রযোজ্য। গল্পটা ক্রাইম, থ্রিলার এবং রোম্যান্স জেনরার।)
১. (Edited)
ওসির জিপ নিয়ে থানার সামনে গাড়ি এনে থামাতেই দেখেন, জায়গাটা আজ কোলাহলপূর্ণ, মানুষে গিজগিজ করছে।
তাদের কৌতুহল ঘিরে আছে লাল জামদানী পরিহিতা ঘাপটি মেরে বসে থাকা এক সদ্য বিবাহিতা তরুণী। তার চাপা আর্তনাদ যেন তাদের সবার কানে পৌঁছালো না। মাটি আঁকড়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে করে কান্না করা দেখে মনে হতে পারে জামাই মরা কান্না জুড়েছে, আসলে কি তাই? উহু।
তরুণীর দিকে একবার চোখ বোলাতেই তিনি হতবম্ব বনে গেলেন! তরুণীর বয়স বিশ বাইশের ঘরে। এই মেয়েকে তিনি কিছুক্ষণের জন্য নিজের মেয়ে ভেবে বসেছিলেন। চেহারায় এত মিল কি করে! শাড়ি পরিহিতা তরুণীর তীব্র হাহাকার শুনে ওসির মেয়ের কথা মনে পড়ে হৃদয় কেঁপে উঠল। আহা! এভাবে কতো রাত্রি দরজা বন্ধ করে তার মেয়েটা কেঁদেছিল। সবাই যখন তন্দ্রা আচ্ছন্ন তখন তার মেয়ে ইনসোমনিয়ার পেশেন্টের মতো সজাগ। তরুনীর কাজল খানাও এখনো অক্ষত। বাহারি গয়না, মোটা সিতা হার, হাতে স্বর্ণের মোটা মোটা বালা, চমৎকার সাজে এক রুপলাবণ্য কন্যা যেন! সাজ দেখে মনে হচ্ছে কোন এক সময় সোনায় সোহাগা। তবে কি কোনো করুন পরিনতি লেপ্টে আছে ?
আর্তনাদ করে কিছুক্ষণ পর পর মায়া মায়া চোখে সেখানে উপস্থিত প্রতিটা মানুষের পায়ে পরে পরে সাহায্য চাইছিলো। অথচ কারো বিশেষ হেলদোল নেই।
“হচ্ছে টা কি এখানে?”
ওসি ধমক দিয়ে সবাইকে সরিয়ে তরুণীর সামনে আসতেই তরুণী তার পা চেপে ধরে সাহায্য চায়।
“দোহাই লাগে আপনার আমাকে সাহায্য করুন!”
নোনা জলে ছলছল করছে চোঁখ জোড়া, চোঁখের নিচে অশ্রু শুকিয়ে টানটান হয়ে আছে। ওসি মেয়ের হাত নিজের পা থেকে ছেড়ে কণ্ঠ নরম করে শুধালো—
“ আমি তোমার কথা শুনবো, তবে আগে ওঠো।”
“আমার ভাইকে মেরে ফেলবে সে প্লিজ কিছু করুন!”
দুই হাত জড়ো করে ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠে আকুতি করল সে, ওসি সাহেব আশ্বাস দিয়ে বুঝিয়ে ভালিয়ে তাকে তুলে দাড় করেন। এরপর কনস্টেবল কে ইশারা দিতেই সে হু ম কি ধ ম ক দিয়ে থানার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের সরে যেতে নির্দেশ দেয়। তরুণীকে থানায় এনে এক বেঞ্চিতে বসিয়ে, এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয়। গড় গড় করে খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে কেঁশে উঠে, চোখ মুখ লাল করে ফেলে তরুণী।
ওসি তাকে আস্তে খেতে বলে শান্ত হতে বলেন আর এক নারী কনস্টেবল কে ইশারা করেন তাকে শান্ত করার জন্য।
ওসি সাহেব কিছুক্ষণ আগেই তার অতি আদরের মেয়ের জানাজা পড়িয়ে এসেছেন। মানসিক ভাবে তিনি কাহিল, একসপ্তাহ আগে ডিপ্রেশনের চরম পর্যায়ে উপনীত হয়ে তার একমাত্র কনিষ্ঠ কন্যা আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়। এরপর থানায় এসে এই কান্ড দেখে তিনি হতবম্ভ! তরুনী আসলেই তার মেয়ের মতো দেখতে নাকি তার চোখের ভুল? শোকে পাথর হয়ে ভুলভাল ভেবে বসেছেন হয়ত। কিন্তু এমন কিছু না। এই তরুণী তার মেয়ের লুক আ লাইক, হুবহু এক নয় তবে এক দেখায় চিহ্নিত করা দায় এমন।
ওসির কান্ড কলাপ বিরস মুখে দেখে যাচ্ছেন এসআই, এসব আজাইরা অশান্তির উদয় হয় কোত্থেকে? তার চেয়ে ঢের ভালো ছিলো যদি মেয়েটাকে কয়েকটা কটু কথা শুনিয়ে বিদায় করে দেওয়া। মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে এসআই আশরাফ ওসির কাছে এসে দাঁড়ালেন,
“স্যার, এই মেয়েকে নিয়ে আমরা বিপদে পড়ব। অভিনয় করেছে সে।”
এসআই আরো জানায় সে নাকি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আগে থানায় জিডি করতে এসেছিল। তাও প্রভাবশালী উচ্চবিত্ত পরিবারের সাবেক মন্ত্রীর রাজনীতিবিদ ছেলের নামে।
“কিসব যা তা বলছ?”
ওসি আব্দুস সামাদ হুট করে রেগে গেলেন। এটা কেমন ধরনের কথা? একটা মেয়ে এসব কান্না কাটির অভিনয় করবে! তাও এতটা রিয়ালিস্টিক হতে পারে?
মুখে আরো বিরক্ত লেপ্টে এসআই আশরাফ উত্তর দেন —
“এই মহিলা বলছে তিনি নাকি সাবেক এমপি তোফায়েল মির্জার পুত্র বধূ।”
এই কথায় যেন বিষম খেলেন আব্দুস সামাদ। একবার তরুনীর অবয়বয়ের দিকে তাকান। আশরাফ থেমে আবার বলেন—
” আবার বলছে বিয়ের পর পরই পালিয়ে এসেছেন। ফালতু রকমের মশকরা করতে থানায় এসেছে।”
এক দফা আশ্চর্য নিয়ে আব্দুস সামাদ এসআই কে জিজ্ঞেস করেন— “কৌশিক মির্জাকে জিজ্ঞেস করেছেন?”
“না”
“তবে করুন। কিসের ভিত্তিতে আপনি বিশ্বাস করে বসেছেন যে উনি কৌশিক মির্জার ওয়াইফ নন? সাংবাদিকরা গন্ধ শুঁকে শুঁকে চলে আসবে। আর এই মেয়ে মির্জা বংশের পুত্রবধূ হলে তো এক চুলও ছাড় দিবে না। আপনি বরং এক্ষুনি ফোন করুন।”
এসআই আব্দুস সামাদের কথা মতো কল করার জন্য ফোন নিয়ে অন্য পাশে যাওয়ার জন্য উদ্যত হওয়ার আগেই তরুনী চিৎকার করে ‘না’ করে উঠে। এসআই বিরস মুখে তরুণীর দিকে তাকিয়ে একটা বিশ্রী গালি দিয়ে কল করতে চলে যায়। এবার তরুণী ওসির দিকে করুন চোখে চেয়ে চিৎকার করে বলে উঠে —
“দয়া করে উনাকে ফোন করতে মানা করুন!”
আশরাফ তো বহু আগেই তার কথা অগ্রাহ্য করে কানে ফোন গুজে তাদের নাগালের দূরে চলে যায়। এতে যেন তরুণীর চিৎকার বেড়ে যায়। অতিমাত্রায় কান্নার ফলে গলা ভেঙে গেছে। অস্পষ্ট কন্ঠে তীক্ষ্ণ আর্তনাদ যেন কাঁটার মত বিধে গেল আব্দুস সামাদের অন্তরে। আবার খানিকের জন্য তার মেয়ের কথা মনে পড়ে গেল। মনে পড়ে যায়; তার মেয়ে বোধ হয় ব্যথিত মনে ঠিক এইভাবে একা একা কেঁদেছিল।
“আপনার নাম বলুন আগে আমি বিষয় টা দেখে নিব।”
একটা আশ্বস্থ হাসি দিয়ে তিনি তরুনীর হাতের পিঠে হাত রাখলেন। এক মিনিট দ্বিধায় থেকে নিজেকে ধাতস্থ করে তরুনী এবার মুখ খুলে —
“আমার নাম ঈশিতা ইমরোজ কাশফি। আমার বাবা একজন সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন আর মা গত হয়েছেন অনেক বছর। বাবা, ভাই ছাড়া আর কেউ নেই আমার।”
ওসি এবার মাথা নেড়ে বুঝালেন তিনি শুনছেন আর কাশফিকে তার কথা কন্টিনিউ করার জন্য ইশারা করেন।
“তিনি আমায় জোরপূর্বক বিয়ে করেছেন। আমাকে অপহরণ করেছেন। এই বিয়েতে আমার বাবার অমত দেখে তাকে বন্দি করে রেখেছেন। আমার চাচা চাচিকে বুঝিয়ে ভুলিয়ে আমাকে ব্লাকমেইল করে বিয়ে করেছেন!”
আব্দুস সামাদ এক তপ্ত নিশ্বাস ফেলে আবার তার গায়ের শাড়ী, গয়না গাটি, সাজ পরখ করেন। মেয়েটা মিথ্যে বলছে না তবে কৌশিক মির্জা এমন করতে পারে কিনা জানা নেই, হয়ত করতেও পারে।
“কৌশিক মির্জার মতো মানুষের সাথে বিয়ের অমত থাকার বিশেষ কোন কারণ?”
তার সন্দেহভাজন নজরে কাশফি মাথা তুলে তাকায়। সে কিছুক্ষণ অন্যদিকে চেয়ে থেকে একের পর এক গভীর ভাবনায় ডুবে। বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। দৃষ্টি সামনে থাকা কাশফির ক্রন্ধনরত মুখ বিষাদে ছেয়ে গেল। একরাশ ঘৃণা ভেসে উঠলো মুখ অবয়বে।
“বিষয়টা আপনিও জানেন আমিও জানি যে তারা কত নিচু, ইতর, জঘন্য লোক। আমি নিজেই তার খুনের চক্ষুসাক্ষী। কিন্তু তাদের মতো মানুষের সাথে পেরে উঠব না ভেবে নির্দয়ের মতো কোন লিগ্যাল একশন নিতে পারিনি।”
কাশফি চোঁখ কুচকে শাড়ি ধরে মুষ্টিবদ্ধ করে ভারী শ্বাস ফেলে চোখ মেলে। চোখজোড়ায় ভিড় করে আছে অশ্রু , যা কপোল বেয়ে টুপ করে গড়িয়ে পড়ল।
” এই পর্যন্ত এসেও সে থামেনি। আমার রুমে এসে আমার বিছানায় আমাকে অজ্ঞাত অবস্থায়….”
অনেক ইতস্থবোধ নিয়ে কথাটা কোন রকম ধরা গলায় বলে—
“আমার হাত পা বেধে কি করেছেন আমার অজানা। হুস ছিল না তখন আমার তাই কিছু বলতে পারছিনা।”
শাড়ী খামচে হু হু করে কেঁদে ওঠে সে। গলায় তার কথার দল পাকিয়েছে। অবাধ্য অশ্রু গুলো যেন বাঁধ ভাঙা বানের পানির মতো ছুটছে। ইশারায় পানির গ্লাস চেয়ে পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নেয়।
“তারা ঘুষ দিয়ে বাবার চাকরি গিলতে চেয়েছেন বলে বিয়ের পূর্ব মুহূর্তে আমার চাচা রাজি হয়। সন্দেহ হয়; আমার হবু বরকে তিনি মেরে ফেলেছেন। আমি তাদের কাউকে দেখতে চাইনা। প্লিজ আমাকে আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিন! সে এখনো ভীষণ ছোট। আমাকে ছাড়া থাকবে কি করে?”
একনিশ্বাসে কথা গুলো বলে দিশেহারার মত এদিক ওদিক ছুটতে নিলে, মহিলা কনস্টেবল তাকে জাপটে ধরে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করে।
এদিকে এস আই আশরাফকে ঘর্মাক্ত অবস্থায় দেখে আব্দুস সামাদ বেশ ভালো করেই বুঝেছেন যে কাশফি একটা শব্দও মিথ্যা বলেনি।
অন্যদিকে ফোঁপাতে থাকা কাশফি চায় নি যে সেই মানুষটার আসেপাশে থাকতে। কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। আর কৌশিক মির্জা তো তার জীবনের চরম অভিশাপের নাম।
#চলবে…?
আমি কোনো পারফেকশনিস্ট কিংবা বাংলা ব্যাকরণ বানান নিয়ে বিজ্ঞ নই তাই গল্পে বানান ভুল থাকতে পারে। কোনো সাহিত্য উপস্থাপন আমার লক্ষ্য নয়, ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। বেশী বেশী রেসপন্স করলে গল্প তাড়াতাড়ি পাবেন। রেসপন্সেরঅভাবে গল্প লিখি না। আপনার মতামত লিখে জানাবেন ♥️