#অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (৩)
#লেখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী
৩. (Edited)
বেলা ঘনিয়ে এসেছে প্রায়, পশ্চিমে হেলে পড়া সূর্যের চারপাশে লাল আভা দেখা যাচ্ছে। হ্রদের টলটলে পানিতে পড়ন্ত সূর্যের প্রতিবিম্বের উপর কয়েকটা রাজহাঁস ভেসে গেলো, পাখিরা ফিরছে নীড়ে। থানার পাশে টঙ্গ এর দোকানে গুনগুনিয়ে গান গেয়ে ছোটন টেবিল থেকে চায়ের খালি গ্লাস গুলো তুলে এনে বোলের পানিতে ভিজিয়ে রাখে। গ্লাসগুলো ভিজানোর সময় অনেক জোরে গাড়ি থামার শব্দ শুনতে পায়। পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে দুটো কুচকুচে কালো মার্সিডিজ থানার সামনে এসে থেমেছে।
সামনের গাড়ী থেকে সম্পূর্ন কালো এটায়ারে(attire) থাকা দেহরোক্ষীরা ধুপধাপ নেমে পরে দ্বিতীয় গাড়িকে ঘিরে দাড়ায়। তাদের একজন গাড়ির দরজা খোলার সাথে সাথেই হুড়মুড়িয়ে বের হয়ে আসে কৌশিক মির্জা এবং তার পিছন পিছন অন্য দরজা খুলে বের হয়ে আসে লেভিন। কৌশিক ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে থানায় ঢুকে পড়ল। অস্থির চক্ষুদ্বয় খুঁজে চলেছে লাল জামদানিতে তার বিবাহিত অপরূপা স্ত্রীকে। পা জোড়া এসআইয়ের টেবিলের সামনে আসতেই থমকে দাঁড়ায়। টেবিলের সাথে একটা চেয়ারে অগোছালো শাড়ীতে চেয়ারে হেলান দিয়ে বেশ শান্তির নিদ্রায় আচ্ছন্ন তার ম্যাডাম। সাজ সজ্জা খুব একটা নষ্ট হয়নি তবে মুখে অজস্র অশ্রুর দাগ লেপ্টে। লাগাতার পাঁচ ঘণ্টা পর বউয়ের দেখা পেয়ে যেন তার চোখজোড়া শিথিল হলো।
কৌশিক ঠোঁট বাকা করে হেসে অতি যত্নে আলতো হাতে কপালের চুল সরিয়ে দেয়, তারপর অস্ফুট স্বরে ‘মাশাল্লাহ’ বলে কপালে গাঢ় চুম্বন আঁকে। তারা দুই মেরুর দুইজন। একজন অনুভূতিহীন অন্যজন কল্পনায় থাকতে ভালোবাসে। তন্মধ্যে একজন জীর্ণ শীর্ণ দেহের কনস্টেবল এসে কৌশিক মির্জাকে চেয়ার এগিয়ে দেয়। কাশফির গালে হাত বুলিয়ে কৌশিক এসআই আশরাফের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। এবার ইউনিফর্মে তার নাম এর দিকে চেয়ে বলে,
“এসআই আশরাফ মাহমুদ। ”
গলা পরিষ্কার করে আশরাফ বিব্রত হেসে বলল— “জ্বি স্যার?”
কৌশিক ভ্রু খানিকটা উচুঁ করে বলে,
“আমি কি আমার ওয়াইফকে টাচ করার অনুমতি দিয়েছি আপনাকে?”
“না কিন্তু উনি—”
কৌশিক আশরাফের সাফাই না শুনে বাজ খাই কণ্ঠে বলল— “আমি দিই নি, তাই তো?”
আশরাফ মাথা নিচু করে বলে— “আমি দুঃখিত।”
পরক্ষণে শোনালো কৌশিকের ক্রোধান্বিত কণ্ঠ,
“আপনার দুঃখ দিয়ে না আমার ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়বে আর না আমার ওয়াইফ উঠবে। ইউর আপলজি(apology) মিনস শিট টু মি!”
কৌশিককে সামাল দেওয়ার চেষ্টায় ওসি আবদুস সামাদ সৌজন্য মূলক হেসে তার সামনে দাঁড়ায়,
“মিস্টার কৌশিক মির্জা, ম্যাডাম দুই ঘন্টা পরই উঠে যাবেন তখন পর্যন্ত না হয় অপেক্ষা করুন, প্লিজ হ্যাভ এ সিট।”
কৌশিক চোখ জোড়া ছোট কিঞ্চিৎ ছোট করে মাথা কাত করে তাকালো,
“আর আপনি?”
মুখে হাঁসি বজায় রেখেই তিনি উওর দিলেন,
“আমি এই থানার ওসি আব্দুস সামাদ। আপনি চা, কফি, হালকা নাস্তা, কিছু নিবেন?”
কৌশিক উন্মাদের মতো এগিয়ে ওসির সামনে এসে ঝাঁজালো কণ্ঠে শুধলো—
” রিডিকিউলাস! আপনি উপস্থিত থাকাকালীন আমার ওয়াইফকে অন্য কেউ ছোঁয়ার সাহস কিভাবে পেলো?”
কৌশিক কপালে তর্জনী ঠেকালো। রাগে তার কপালের, ঘাড়ের রগ ফুলে গেছে।
“মিস্টার কৌশিক—”
ওসি আরো কিছু বলতে চাইলে কৌশিক হাত উপরে তুলে তাকে থামিয়ে বলে — “আই হ্যাড এনাফ!”
এরপর উচু গলায় লেভিন কে ডেকে ক্ষিপ্র মেজাজে বলে,
“আমার ওয়াইফকে এসআই আশরাফ যে ডোজ দিয়েছে, তাকে অনডিউটি সেই ডোজ দিয়ে কাজে থাকতে বলবে। স্বেচ্ছায় না নিতে চাইলে দুটো ডোজ জোর করে দেবে আর ডোজ নেওয়ার পর জাগ্রত থাকতে না পারলে, তার চাকরীর আজকেই শেষ দিন।”
এহেন কথা শুনে এসআই আশরাফ যেন ভয়ে জমে গেলেন। শুধু মাত্র একটা মাইল্ড ডোজ দিয়েছে দেখে এমন করছে? অবস্থা আরো বেগতিক হতে দেখে ওসি এবার কিছুটা রেগে উচ্চস্বরে বলে উঠেন,
“মিস ঈশিতা ট্রমার শিকার; তার আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছিল। ডোজ না নিলে নিজের ক্ষতি করে ফেলতেও পিছুপা হতেন না, মিস্টার কৌশিক। এমতাবস্থায় তাকে অজ্ঞান করার খুবই প্রয়োজন ছিল।”
তৎক্ষণাৎ কৌশিক চোয়াল শক্ত করে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে নেয়। তার নির্জীব চোখের সামনে অদ্ভুত আকস্মিক দমক যত দ্রুত এসেছিল তত দ্রুতই যেন সরে যায়। কালো অতীত কি ঘুরে ফিরে দোর গোড়ায় কড়া নেড়ে গেলো?
কৌশিক নিজেকে মুহূর্তেই ধাতস্থ করে কড়া গলায় বললেন — “মিসেস মির্জা।”
আব্দুস সামাদ কিঞ্চিৎ হেসে নির্ভীক কণ্ঠে জবাব দিলেন—
“মিস ঈশিতা ইমরোজ কাশফির কমপ্লেইন এলরেডি খাতায় তোলা হয়েছে, মিস্টার মির্জা।”
***
একটা নির্জন বিশাল লেকের ধারে বসে বুকে হাঁটু গুঁজে একটা ছোট ছেলে কেঁদে যাচ্ছে। পাশে তিন বছরের পোলকা ডটের ফ্রক পড়া একটা মেয়ে ছেলেটার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে রইল
কিছুক্ষন, অনেকক্ষণ।
ছেলেটার কান্না আরো বাড়লে মেয়েটা ডুকরে কেঁদে উঠে, এবার ছেলেটা হতবম্ব হয়ে তার ক্রন্দনরত মুখশ্রীর দিকে চেয়ে আছে। মেয়েটা কান্না করতে করতে জামার গলা খানিকটা ভিজিয়ে ফেলে। বেশ খানিকক্ষণ পর মেয়েটা একেবারে চুপ হয়ে হাতের উল্টো পিঠে ফোলা ফোলা চোখ মুছে বললো — “তোমার না করা বাকি খান্নাতুকু (কা’ন্নাটুকু) আমি খেদে (কেঁ’দে) তেষ(শেষ) করে ফেলেছি এখন বাসায় চলো জুন ভাইয়া।”
“আমার নাম জুনায়েদ, গ’র্দভ একটা!”
ভেংচি কেটে মেয়েটা রেগে তার বাচ্চা সুলভ অস্পষ্ট কন্ঠে বলে—
“আমি এখন আমার নাম লিখতে পালি, আমাকে গর্দভ ডাকবে না!”
জুনায়েদ চোখ উল্টিয়ে তার নাক টেনে ধরে,
“বল কার্টুন!”
“খাতুন!”
এবার জুনায়েদ মাথা এদিক ওদিক নেড়ে কপাল চাপড়ে বলে— “তুই আসলেই গর্দভ, এটা খাতুন না কার্টুন, কার্-টু-ন!”
“খাতুন,খাতুন, খাতুন!”
ছোট সাইজের খেপা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে জুনায়েদ খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠে বলে— “তোর মুন্ডু।”
মেয়েটা ঠোঁট ফুলিয়ে অন্যদিকে ফিরতেই দেখে একটা কালো ছায়া লেকের থেকে উঠে আসছে। জুনায়েদ বড় বড় চোখে তাঁকিয়ে মেয়েটার হাত আঁকড়ে ধরে। ততক্ষনে ছায়াটা তাদের গ্রাস করতে শুরু করেছে। জুনায়েদ টানার সাথে সাথেই মেয়েটার ছোট শরীর আকষ্মিক ঝাঁকি দিয়ে উঠলো, টাল সামলাতে না পেরে পরতে গেলেই জুনায়েদ ধরে ফেলে। সে মেয়েটাকে টেনে নিয়ে তড়িৎ বেগে দৌঁড়াতে থাকে, তার পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে মেয়েটা। অনেক্ষন দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে তারা তাদের বাড়ীর বড় গেইট ঠেলে ভিতরে ঢুকে হাঁপাতে থাকে। ছোট মেয়েটার হাঁটু ছুলে রক্ত পড়ছে, চোঁখে পানি চিক চিক করছে, মুখে স্পষ্ট আতঙ্কের ছাপ দেখে জুনায়েদ দুই হাতে মেয়েটার গাল আলতো করে ধরে বলে — “আমি আছিতো।”
হঠাৎ জুনায়েদ আর ফ্রক পরা ছোট্ট মেয়েটা হওয়ায় মিলে যায়। কাশফি নেড়েচেড়ে উঠে অনেক দেখার চেষ্টা করেও শুধু অন্ধকার দেখতে পেল। আকষ্মিক মুখে কারো উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে সে হকচকিয়ে উঠে গেল। ভেবেছিল জুনায়েদকে দেখতে পাবে কিন্তু কৌশিককে দেখা মাত্রই মনে হলো কেউ যেন তার আশায় এক বালতি এ সি ড ঢেলে দিয়েছে। চোখ পিটপিট করে আবার তাকিয়ে দেখে কাশফি ভুত দেখার মতো ফ্যাকাশে হয়ে গেল,
“আমার ঘুম উড়িয়ে দেখি তুমি বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছো?”
#চলবে…
(আগেই বলে রাখছি প্রথম কয়েকটা পর্ব পড়ে আপনার সব মাথার উপর দিয়ে যাবে কারণ অদৃষ্টের মৃগতৃষ্ণা একটা সাসপেন্স থ্রিলার গল্প। শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারবেন না। তাই অনুরোধ রইলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, পড়তে পড়তে কোনো কোনো লাইনে হিডেন ম্যাসেজ পাবেন, তলাশ করুন। প্রাপ্ত বয়স্ক এবং উন্মুমুক্তমনাদের জন্য প্রযোজ্য। গল্পটা ক্রাইম, থ্রিলার এবং রোম্যান্স জেনরার।)
আমি কোনো পারফেকশনিস্ট কিংবা বাংলা ব্যাকরণ বানান নিয়ে বিজ্ঞ নই তাই গল্পে বানান ভুল থাকতে পারে। কোনো সাহিত্য উপস্থাপন আমার লক্ষ্য নয়, ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।