অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (১৩) #প্রোপীতা_নিউমী ১৩. (Edited)

0
63

#অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (১৩)
#প্রোপীতা_নিউমী

১৩. (Edited)
সময়কাল: ২৫ অক্টোবর, ২০১৯
অতীত:

“শা লী গ র্দ ভের বাচ্চা এভাবে কেউ পিছন থেকে মুখ চেপে ধরে? আগাছার মতো তরতর করে কেবল বড় হয়েছিস কিন্তু বুদ্ধি এখনো হাঁটুর নিচে।”
থমথমে পরিবেশে কাশফির বাজ খাই কন্ঠ শোনা গেলো। তার শক্ত হাতের এলোপাথাড়ি কিল, ঝাটি আর চাপড় খেয়ে ফারাবী আড়মোড়া ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে পরে। কাশফি আর ফারাবীকে সম্পূর্ন উপেক্ষা করে তরী নিরুদ্বেগ হয়ে কাশফির বিছানায় উঠে বসে।

মার খেয়ে খেয়ে ফারাবীর মুখে আষাঢ়ের মেঘ জমেছে যেন, দুঃখ এমন মুখ ফুটে না কিন্তু বুক ফেটে চৌচির। দুঃখী দুঃখী স্বরে ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
“এত অপমান করার কি আছে? আমি তো দিগন্ত ভাই বাসায় দেখে এখানে এসেছি!”

কাশফিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তরী চোখ পাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
“দিগন্ত ভাই কি? ভাইয়া কাবিন করিয়ে রেখেছেন অথচ তোর এখনো ঢং যায় না, নাহ?”

বিপরীতে ফারাবী গাল বাঁকিয়ে আঙুল তুলে তীব্র প্রতিবাদে জানায়,
“এত পক্ষপাতিত্ব করবি না, ফালতুটা আমায় চু’মু খেয়েছে।”

তরীর বিরক্তির মাত্রা ছাড়িয়ে গেলো যেন, দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ফারাবীর বাচ্চা, এখন এসব ন্যাকামি শুরু করলে কিন্তু লা’থি মেরে তোকে পঁচা ডোবায় ফেলবো।”

ফারাবী ন্যাকা কান্নার সুর তুলে,
“আমার ফার্স্ট কিস ছিল তরী, তুই কি বুঝিস না?”

“না, এসব আজাইরা কথা আমি বুঝিনা। বিয়ের আগে হোক পরে হোক চুমু ছাড়া অনেক বিরাট কাহিনী হতো, তবে দিগন্ত ভাইয়া ভালো দেখে এসব কিছুই করেন নি এখনো।”

“ছিঃ! তুই একটা খবিশ, তরী।”

কাশফি এই নিয়ে তিনবার হাই তুলে ফেললো, সে মহা বিরক্ত। অবশ্যই একদিক দিয়ে ভালো। ঘুমের ঔষুধটা হয়ত আজ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। সে কপালে আঙ্গুল ঠেকিয়ে বলে,

“এই তোরা কি আমার ঘরে ঝগড়া করতে এসেছিস?”

ফারাবী ফট করে উওর দিলো,
“না, আজ রাত বাসায় দিগন্ত ভাই থাকবেন।”

“ভাইয়া কি তোর রূমে তোর খাটেই থাকবেন?”

“ছিঃ, অবশ্যই না!”

“তো?”

“আসলে আমি ভয় পাচ্ছিলাম।”

“ঝেড়ে কাশ ফারাবী!”

“আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তরীর সাথে ঘুমাবো কিন্তু এই মেয়ে যা কেউ আমাকে তুলে নিয়ে গেলে সে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে বলবে— ‘আজাইরা আপদ নিজের ঘাড়ে নিয়ে আমাকে উদ্ধার করার জন্য আমি চির কৃতজ্ঞ’।”

“নিঃসন্দেহে তুই ঠিক ধরেছিস, ফারাবী!”
তরী বসা থেকেই উওর দিয়ে ফেললো। এতে ফারাবী ভেংচি কেটে কপট রাগ দেখিয়ে বলে — “দেখলি?”

“তো এখানে আমার করণীয় কী?”
কাশফির প্রশ্নাত্বক চাহনির প্রত্যুত্তরে ফারাবী একটা মিষ্টি হাসি হেসে কাছে এসে তার হাত আঁকড়ে ধরে বলে,

“চল আমরা একসাথে থাকি সবাই সেইফ থাকবো। হুঁ, আমি তোদের নিয়ে কত চিন্তা করি আর তোরা? আমায় কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলি।”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ, তুই রাজার রাজত্ব উদ্ধার করেছিস, তাই আমরা ধন্য।”

কাশফি ভাবতে উদ্যত হয়, এই দুইজনের সাথে রাত কাটানো মানে ফজরের আগ পর্যন্ত ঘুম নেই। ঘুমের ওষুধটা নিবে নিবে বলেও আর নেওয়া হলো না এই ভেবে কিছুটা স্বস্থি পায় আজকে রাতটুকু তার দুঃ’স্ব’প্নহীন কাটবে। কাশফি আলমারি থেকে কাঁথা আর দুটো বালিশ বের করে নেয়।

এদিকে ফারাবী ল্যাপটপ খুলে একটা হলিউড সিরিজ প্লে করে জড়োসড়ো হয়ে বসেছে। কাশফির দিকে তাঁকিয়ে ঈশারায় বলে তাড়াতাড়ি পাশে এসে বসতে। তরী মুখে বিরক্ত প্রকাশ করলেও আগ্রহী হয়ে বসেছে কাশফি মুচকি হেসে ফারাবীর পাশের বরাদ্দকৃত জায়গা গ্রহণ করে নেয়।

***

সময়কাল: ১৮ নভেম্ভর, ২০১৯

কেটে গেছে বহু দিন, সেকেন্ড ইয়ারে সময় কম পড়ার চাপ প্রচুর সামনে বোর্ড এক্সাম তবে তার মনে কৌশিক নামের একটা বিশ্রী মরিচা বেঁধেছে। কাশফি ইদানিং ভাবতে ভাবতে হারিয়ে যায়, তার কিশোরী মন কৌশিক নামক শঙ্কায় সে নাস্তানাবুদ। বার বার খেয়াল আসে যে, এই তো তার সামনে যে কোন মুহুর্তেই কৌশিক এসে দাঁড়াবে হাতে রিভলবার নিয়ে বলবে —
“Time to say goodbye.”

এই জেলার নামকরা অভিজাত শ্রেণীর রাজনীতিবিদের কাতারে মির্জাদের নাম সবার উপরে। কু’খ্যাত কৌশিকের ভয়ে সেকেন্ড ইয়ারের অনেকগুলো ক্লাস মিস হয়েছে। এতগুলো নোটস কলেক্ট করতে তেমন একটা সমস্যা হয়নি কিন্তু নিজের নোটে তুলতে গেলে তখন ঠেলা বুঝা যায়। কাশফির নাভিশ্বাস ঊঠে গেলো। এখন কৌশিক মির্জাকে গা’লি গা’লা’জ করে লাভের লাভ কচু হবে তার চেয়ে বরং আল্লাহর নাম নিয়ে হাত চালু করাই শ্রেয়।
অতঃপর বিক্ষিপ্ত মনে কলেজ শেষে বসেছে ক্যান্টিনে। দ্রুতই নোট মিলিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে। এদিকে ফারাবী আর ঈশান রীতিমত ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়েছে আর তরী চোঁখে মুখে আগ্রহ নিয়ে ঝগড়া দেখতে ব্যাস্ত, কই আগ বাড়িয়ে ঝগড়া থামাবে তা নয়!

কাশফি দ্রুত কলম চালিয়ে খাতায় তুলতে ব্যাস্ত। এমনিতেই তার হাতের লিখা থার্ড ক্লাস আর তাড়াহুড়োয় হাতের লিখা কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাংয়ের মতো দেখাচ্ছে। পরীক্ষার খাতা যে মূল্যায়ন করে তার চৌদ্দপুরুষ স্মরণ করিয়ে দেয় এই বাজে হাতের লেখা।

ফারাবী আর ঈশানের নেহাতই বাচ্চামো রকমের তুমুল কথা কা’টা’কা’টি চলছে তাদের ঝগড়ার অন্যতম বিষয় হলো ফারাবীর একটা পোষ্ট।
ফারাবী সূর্য উঠার পূর্বে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের নিচে দাড়িয়ে একটা ছবি আপলোড দিয়েছিল, সেখানে অবশ্যই তার চেহারা সুরত সব কিছুই কালো। ছবির ক্যাপশন এমন ছিল যে— “আকাশের বুকে বিষন্নতা।”

ছবির নিচে ঈশান ফা’জ’লা’মী করে কমেন্ট করে— “গত বছর সাত সকালে উঠে এমন পরিবেশ দেখে ফারাবী নামক মেন্টাল বলেছিল ‘আকাশ বিড়ি খায়’ মনে পড়ে?”

ছবি থেকেও এই কমেন্টে রিয়েক্ট বেশি উঠায় ফারাবী তেলে বেগুনে জ্ব’লছে, তার অ্যাটেনশন অন্যকেউ কেন নিবে তাও মান ইজ্জতের তেরোটা বাজিয়ে।
ঝগড়ার ফাঁকে তাদের অন্যকিছু চোখে পড়ল, মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখে একজন ছিমছিমে দেহের গড়নের ছেলেকে, এটা তো তাদের মাল্টি ট্যালেন্টেড ক্লাস মেট।
ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে দুই পাটি ঝকঝকে তকতকে নিখুঁত দাঁত দেখিয়ে কাশফির দিকে হেসে একটা সুন্দর টানা সালাম দিলো। কাশফি থতমত খেয়ে বাতাস গিলে ফেললো যেন। তার জীবনে এই প্রথম তাকে কেউ সলাম দিয়েছে বলে কথা, তাও প্রথম সারির ক্লাসমেট যাদের সাথে এই জীবনে যুদ্ধ করতে করতে সে ক্লান্ত।

ঘটনার আকস্মিকতা যেতে না যেতেই গর্দভ ফারাবী আহাম্মকের মতো কাজ করে বসলো। সে একদৃষ্টিতে চেয়ে গালে হাত দিয়ে হেঁসে বলে,
“তোমার দাঁত গুলো কি সুন্দর! এই তুমি কি কালো কালো ছাই দিয়ে দাঁত মাজো?”

ছেলেটা কোন কথা বলার বলার পূর্বেই বড়সর ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। ফারাবীর ট্যারা বাঁকা দাঁতের হাঁসির দিকে চেয়ে বিব্রত বনে যায় তবুও ভদ্রতাসূচক জিজ্ঞেস করল,
“জ্বি?”

ফারাবী কথার এদিক ওদিক না ধরে তার মুখ চালিয়ে গেলো ব্রেকফেইল গাড়ির ন্যায়। একটা সপ্নীল দীর্ঘশ্বাস নিয়ে গরগর করে বলে ফেললো,
“আমার দাঁতের কোন ঠিক ঠিকানা নাই, আম্মু ছাই দিয়ে দাঁত মেজে সোজা করতে বলেছিল কিন্তু তখন তো শুনি নি। ইশ কেনো যে শুনলাম না? দাঁত গুলোর জন্য একটা ছেলে পটাতে পারলাম না।”

এতক্ষন নিঃশব্দে থাকা তরী ওয়ানটাইম কাপের কফি টুকুতে চুমুক বসানোর আগে রাশভারী কন্ঠে বলল,
“Sorry to say but তোর মতো তারছেড়ার দ্বারা কেউ পটতো না।”

তরী নির্বিকার এমনভাবে ফারাবীর তীর্যক দৃষ্টি উপেক্ষা করল যেন কিছুই সে বুঝেনি। এদিকে কাশফি তার বন্ধুবান্ধব কে চোখ পাকিয়ে চুপ করতে বলে। এরপর সে ইতস্তত হয়ে থাকা ছেলেটার দিকে করুণ নজরে তাকিয়ে পাশের চেয়ারে বসতে বলে। ছেলেটা একটা সৌজন্যমূলক হাঁসি হেঁসে বসে পড়ল।

এতক্ষন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকা ঈশান হুট করে বলে উঠে — “তুমি অন্তু না?”

বলার দেরি আর উজবুক ফারাবীর কানাকানি করতে দেরী হলো না। খুসুরপুসুর করে কাশফির কানে কানে বললো—
“আমাদের কোনো এক ক্লাসের বইয়ে একটা ছেলে ছিল অন্তু, সে শৌচালয় ব্যবহার করে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতো না তার মামাও করতো না তাই পরবর্তীতে অসুখ হয়। আমার প্রশ্ন সেই অন্তু কোন ক্লাসে যেন ছিল?”

ফারাবীর ভাবলেশহীন কথাবার্তায় কাশফি অন্তুর দিকে চায়। এক কথায় ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট সে, কথাবার্তাও তেমন কম বলে আর মানুষের সাথে কম মিশে। তাহলে সে কাশফির সাথে কি করতে এসেছে? কাশফি এখন ফারাবীর সংক্রমণে এসে বার বার টয়লেটের কাহিনী মাথায় আসছে। দাঁতে দাঁত চেপে ফারাবীর হাতে চিমটি কা’ট’তেই ফারাবী আঁতকে উঠে। পরক্ষনে তার রাগী বান্ধবীর তার কারণে লজ্জায় পড়ে মুখ লাল হতে দেখে আর কিছু না বলে ব্যাগ থেকে বই বের করে সামনে ধরে আড়াল হয়ে যায়। ভানখানা এমন যেন সে দিন রাত এক করে পড়ছে।

এতক্ষন কিছু না বললেও কাশফি একটা বন্ধুত্ব সুলভ হাসি দিয়ে অন্তুকে বলে,
“প্লিজ কিছু মনে করো না ফারাবী একটু অবুঝ টাইপের।”

ছেলেটা বিস্ময় প্রকাশ করে ঘোর বিরোধিতা করে
— “একটু?”

কাশফি কাঁধ ঝাঁকিয়ে হেঁসে উল্টা বই ধরে পড়ার অভিনয় করতে থাকা ফারাবীর দিকে তাকায়। মেয়েটা অভিনয় পর্যন্ত ঠিকঠাক জানে না। আবার সে অন্তুর দিকে তাঁকিয়ে ফিসফিস করে বলে— “অনেকটা।”

অন্তু ফিক করে হেসে ফেলে এরপর ফারাবীর লিখা গুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে কিছুটা লাজুক স্বরে বলে
— “এসব তোমার তোলার প্রয়োজন নেই বোধহয়।”

কাশফি ভ্রু কুঁচকে ফেলে। অন্তু ঘাড় চুলকে এবার কন্ঠের লজ্জাটা কিছুটা দমিয়ে বলে,
“আসলে আমি তোমার জন্য নোটস করে এনেছিলাম।”

কাশফি বিস্ময় কাটাতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ছেলেটা মজা করছে নাকি? ততক্ষনে অন্তু ব্যাগ নামিয়ে চেইন খুলে একটা পরিপাটি সুন্দর নোট তার দিকে ঠেলে দিলো। কাশফি দ্বিতীয় দফায় চমকপ্রদ, হতবিহ্বল! ধুম করে ফারাবীর বইটা টেবিলে পরে ফারাবীর হা করা মুখটা কারো চক্ষু আড়াল হলো না আর।

অবিশ্বাস্য চোঁখে তর্জনী নিজের দিকে ইশারা করে বললো,
“তুমি আমার জন্য করেছ?”

অন্তু মাথা দোলায়,
“আসলে তোমাকে কখনো ক্লাস মিস দিতে দেখিনি এতদিন আসো নি তাই নিজের সাথে তোমার টাও করে নিলাম।”

সে এতদিন কাশফি ছিল না সেটাও খেয়াল রেখেছে। এবার কাশফি নিজের আশ্চর্য্য দুরে ঠেলে খুশিতে গদগদ হয়ে মনে মনে বলল— ‘এমন নোটস প্রতিদিন দিলে নাম্বার কেন? টাকা সম্পত্তি সব তার নামে লিখে দিব।’
কিন্তু মুখে বলল— “কি করে যে তোমাকে শুকরিয়া দিই বুঝতেই পারছিনা। থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ অন্তু।”

অন্তু লাজুক হাসলো কিছুটা, পাঁচ মিনিটের মতো পড়ার বিষয়ে এটা সেটা প্রশ্ন করছিল কাশফি আর অন্তু সুন্দর করে উওর দেয়। তাদের কথা শেষে অন্তু আগ বাড়িয়ে খাতার একপাশে ছোট করে তার ফোন নাম্বার লিখে বলে,

“কোন সমস্যা হলে আমাকে কল করিও ঈশিতা, এখন উঠি।”

অন্তু হুট করে যেভাবে এসেছে ঠিক সেভাবেই চলে যায়। কাশফির খুশির চোটে আর কারো দিকে নজর পড়ল না। পড়লে হয়ত দেখতে পেতো কিছু উৎসুক নজর।

রাতে কাশফি কায়েসকে নিয়ে পড়তে বসেছে। তার পড়ার টেবিল বেশ বড়, এক পাশে সে বসেছে খাতা বই, কলম, ক্যালকুলেটর ছড়িয়ে ছিটিয়ে অন্য পাশে কায়েস তার খেলনা আর ছড়ার আর বর্ণমালার বই নিয়ে বসেছে। তার ভাষ্য মতে সে খেলতে খেলতে পড়ছে মানে এক ঢিলে দুই পাখি মারার কাজ, কিন্তু আদো কি সম্ভব? না। কাশফি জবাবে বলে ‘তোর আমও যাবে ছালাও যাবে’ কিন্তু কায়েস তার বুবুর কথায় ভেংচি কাটে।
কাশফির হিসাবনিকাশ মিলানোর ফাঁকে হঠাৎ করেই তার ফোন বেজে উঠলো। এক পলক চেয়ে যখন দেখলো আননোন নাম্বার তখন বিশেষ গুরুত্ব দিলো না। একসময় কল বাজতে বাজতে কেটে যায় পরক্ষণে আবার ফোনটা টেবিল কাঁপিয়ে বেজে উঠলো। এবার ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আননোন নাম্বার। আগের টা?
অন্তু কে তো সে তার নাম্বার দেয়নি তাহলে? না, অন্তু অতো ছ্যা’চ’ড়া না। ভাবতে ভাবতে কল কেটে গেলো এতে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে ফোন টেবিলে রাখতে যাবে তার আগেই আবার কল এলো। কাশফি এবার চোখ কুঁচকে ফেলে। বিরক্ত হয়ে কলটা রিসিভ করে কানে দেয়—
“জ্বি কে বলছেন?”

অপর পাশ থেকে পুরুষালী পুরু কণ্ঠের গুরুগম্ভীর জবাব এলো — “আমাদের আবার খুব শীগ্রই দেখা হচ্ছে ম্যাডাম, জানেন তো?”

কাশফি স্তম্ভিত তার মনোযোগ এর আগেও খাতার অঙ্কেই ছিল। সে কান থেকে ফোন নামিয়ে নাম্বারটা দেখে নিলো এবার কানে দিতেই অপর লাইনে থাকা একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতে শুনলো এরপর লোকটা হাস্কি কন্ঠে কিছুটা টেনে বলল,

“এবার যদি দেখা হয়ে যায় আমি আর পিছু ছাড়ছি না। হয়ত সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে এটা বিশেষ সাইন…”

কাশফি প্রথমে কিছুটা পরিচিত কন্ঠ মনে হলেও এখন বুঝে গিয়েছে ব্যাটা রাতের রোমিও হয়ে পিরিতের আলাপ বসিয়েছে। চরম বিরক্তে সে হিসহিস করে বলল,
“আপনি রং নাম্বারে কল করেছেন ভাইয়া, রাখছি।”

“কাশফি…”
তৎক্ষণাৎ এই একটা সম্মোধনে কাশফির লোম দাঁড়িয়ে গেলো। তার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল শিহরন বেয়ে গেলো পরপর সে তার মেরুদন্ড সোজা করে বসা থেকে দাড়িয়ে হনহন করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। তার শ্বাস প্রশ্বাস বেগতিক। ফোন কান থেকে আরেকবার সরিয়ে ওড়নায় কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নেয়। আবার ফোন কানে দিতেই সেই নিষিদ্ধ গম্ভির পুরুষালী কণ্ঠ বলে উঠলো,

“আপনার ভয়ার্ত মুখ ভীষন মিস করছি আর আপনি আমায় ভাইয়া ডেকে খুন করছেন? ভেরি ব্যাড সানশাইন।”

এবার ভয় আষ্টেপৃষ্ঠে জেকে ধরলো তাকে, শিট! তার নাম্বার পেলো কোত্থেকে অবশ্যই কৌশিক মির্জার জন্য এসব নাম্বার জোগাড় করা বাম হাতের খেলা। কাশফি তার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কিছুটা আয়ত্ত এনে বলে—
“ঈশিতা, আমার নাম কাশফি না। উল্টা পাল্টা পেট নেইমে (pet name) ডাকবেন না জনাব।”

কৌশিক হেসে উঠলো তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বলল,
“বললেন না যে, আমাদের দ্বিতীয় দেখা নিয়ে আপনি এক্সাইটেড না?”

কাশফি নিজের কন্ঠে ভয় আড়াল করে বেশ জোর গলায় বলে,
“এসব কিছুই হবে না।”

“যদি হয়?”

“আপনি কলকাঠি না নাড়ালে আমাদের দেখা হচ্ছে বলে মনে হয়না।”

“এতো বিশ্বাস?”
কৌশিক মির্জার হিম ধরানো ঠাণ্ডা কন্ঠে কাশফির ভিতর আগাম ভয়ের সঞ্চারণ ঘটিয়ে ফেললো যেন। আসলেই কি সে লোকটাকে আবার দেখতে চলেছে?
ফোন শক্ত হাতে ধরে সে যথা সম্ভব শক্ত গলায় স্পষ্টত হয়ে বলে,

“যেই মানুষের সাথে আশেপাশে থাকলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে তাকে দ্বিতীয়বার দেখার ইচ্ছে নেই।”
পরপর কাশফি কল কেটে সাথে সাথেই নাম্বার ব্লক করে দিলো। তার হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে। সাহস নিয়ে কথা গুলো বললেও এখন তার পা কাঁপছে, হয়ত এক কদম পা বাড়ালেই মাটিতে মুখ থুবড়ে পরবে। হাতে থাকা ফোনটা কেঁপে উঠলো মেসেজের টুং টাং শব্দে সে স্ক্রীনে তাকাতেই তার চোখ ছানবড়া।

“দ্বিতীয়বার নাম্বার ব্লক করেছেন কাশফি, মনে রাখবেন ১ আপনার লাকি নাম্বার ছিল তবে ২ আমার।
টিক টক টিক টক করে সময় ঘনিয়ে আসছে আপনার।
ফর নাও, সুইট ড্রিমস মা’লেইডি।”

কাশফি তপ্ত নিশ্বাস ফেললো, দ্বিতীয় সুযোগ কৌশিক কাউকে দেয় না কিন্তু তাকে দিয়েছে, কৌশিক থেকে আড়ালে থাকার দ্বিতীয় সুযোগ। আদো কি এটা দ্বিতীয় সুযোগ নাকি কোন মাইন্ড গেইম? কাশফি কৌশিকের ভদ্র থ্রেট গায়ে তো মাখলোই না বরং এই নাম্বারটাও ব্লকলিস্টে ফেললো।

বোকা কাশফি হয়ত জানতো না যে কৌশিক মির্জা কোন কাঁচা খেলা খেলে না আর না নিজের জিনিসে কারো নজরদারি পছন্দ করে। এটা তুখোড় বুদ্ধিদীপ্ত, Enigmatic ব্যক্তিত্বের কৌশিক মির্জার তৈরীকৃত ফাঁদ নয়, একটা প্রহেলিকা।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here