বেসামাল_প্রেম #লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা #পর্ব_৭

0
184

#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৭
সূচনা মাহেরের বাসরঘর বান্ধবীদের সহায়তায় নিজহাতে সাজিয়েছে হৈমী। কথা ছিল বরকে বাসরঘরে ঢুকতে হলে আগে তার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে৷ প্রস্তুত ছিল মাহের৷ প্রস্তুত ছিল সকলেই। কিন্তু হৈমী বাসরঘরের ধারেকাছেও এলো না। নয়নকে দিয়ে খবর পাঠাল তার শরীর ভালো নেই, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা তাই স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। সবাই নতুন বউ নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিল যে হৈমীর কাছে কেউ যাওয়ার সুযোগ পেল না৷

নতুন পরিবেশে এসে সূচনার খুবই হাঁসফাঁস লাগছিল। সারাদিনের ধকল শেষে তাকে মাহেরের ঘরে দেয়া হলো। গোলাপ এবং বেলি ফুলের কড়া ঘ্রাণে মাথা ধরে গেল কেমন। বুকের ভিতর অদ্ভুত এক শূন্যতা অনুভব করল। অচেনা বাড়ি, অচেনা ঘরের এই চমকপ্রদ আয়োজনটি নিয়েই একদিন সে স্বপ্ন দেখেছিল। একটি মিষ্টি স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পর তিতকুটে অনুভূতির স্পর্শ এমন ধারালো হতে পারে জানা ছিল না তার। ধীরপায়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল সূচনা। নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে আকস্মাৎ দু-হাতে মুখ চেপে ডুকরে ওঠল৷ রুমে ঢুকতেই এই দৃশ্যের মুখোমুখি হলো মাহের৷ ক্ষণকাল থমকে দাঁড়িয়ে রইল সে। এরপর মৃদু কেশে নিজের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিল। ধাতস্থ হয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল সূচনা। কাঁপা হাতে হাতের চুড়ি, কানের দুল খুলে ড্রেসিং টেবিলে রাখল। মাহের আগেই বরের পোশাক ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে টিশার্টের সঙ্গে ট্রাউজার পরেছে। আয়নাতে এক নজর দেখে নিল সূচনা। বুকচিরে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। কাভার্ডের পাল্লা খুলে লাল এবং বাসন্তী রঙের মিশ্রণে একটি শাড়ি বের করল মাহের। সাধারণত বাঙালিরা গায়ে হলুদে যে শাড়িগুলো পরে ঠিক সে ধরনের শাড়ি। শাড়িটি নিয়ে সূচনার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল সে। সূচনা তখন গলায় পরিহিত সীতাহার খুলার চেষ্টা করছে। মাহের সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে তার চেষ্টাটুকু দেখল। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে হাতের শাড়িটি সূচনার সামনে ধরে বলল,
– ” ম্যাডাম এটা ধরুন আমি হেল্প করছি৷ ”

সূচনা বা’দিকে কিঞ্চিৎ সরে গেল। আমতা আমতা করে বলল,
-” আমি পারব, আমি পারব। ”

মাহের শাড়ি ধরতে ইশারা করল। বলল,
-” আমার কাজিন বড়ো আপু এটা পরতে বলেছে। আপত্তি না থাকলে এটা পরবেন। ”

চট করে শাড়িটা নিয়ে সূচনা বলল,
-” আচ্ছা পরব৷ ”

মৃদু হেসে মাহের বলল,
-” এবার ঘুরে দাঁড়ান আমি হেল্প করছি। ”

-” না না লাগবে না। ”

অদ্ভুত করে হাসল মাহের। মাথা চুলকে বলল,
– ” অকে তাহলে নিজে আরেকটু ট্রাই করুন। ”

গা থেকে সকল জুয়েলারি, শাড়ির পিন খুলতে খুলতে রাত দু’টো বাজিয়ে ফেলল সূচনা। এরপর শাড়ি নিয়ে বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে বের হলো। মাহের মোবাইল ঘাটাঘাটি করছিল সূচনা বের হতেই মুচকি হেসে বলল,
-” হলো? ”

কিছুটা লজ্জা পেল সূচনা। ধীরপায়ে এগিয়ে এসে বোকার মতো প্রশ্ন করল,
-” আপনি এখনো জেগে আছেন? ”

-” আমার ঘুমিয়ে পড়ার অপেক্ষাতে ছিলেন বুঝি? আপনি তো বেশ চালাক। কিন্তু আমি তো আজ ঘুমাব না। ”

চমকে তাকাল সূচনা। মাহের স্বাভবসুলভ মুচকি হেসে বলল,
-” ভয় নেই অনুমতি ব্যাতীত আপনাকে স্পর্শও করব না। ”

সূচনা মাথা নিচু করে ফেলল। অদ্ভুত ভাবেই নিজেকে ভীষণ অপরাধী লাগল তার৷ মাহের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে পকেট থেকে একটি হলুদ গোলাপ বের করে বিছানায় রাখল। বলল,
-” এটা আপনার জন্য। ”

হাত বাড়াল সূচনা বলল,
-” হাতে দিতে মানা করিনি তো! ”

-” অনুমতিও দেননি। ”

-” আচ্ছা দিলাম। ”

মাহের ফুলটা সূচনার হাতে দিয়ে বলল,
-” স্বামী হিসেবে নয় বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করুন। ”

মাথা নিচু করে সূচনা বলল,
-” করলাম। ”

-” পাশে বসতে আপত্তি আছে? ”

না সূচকে দ্রুত মাথা নাড়াল সূচনা। মাহের শান্ত কণ্ঠে বলল,
-” তাহলে দাঁড়িয়ে কেন? বসুন। ”

বাধ্য মেয়ের মতো মাহেরের পাশে বসল সে। মাহের তার দিকে ঘুরে বসে জিজ্ঞেস করল,
-” আজ আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। শুনেছি এই রাতে প্রতিটি স্বামীই তার বউকে কিছু চাইতে বলে। আর বউ যা চায় স্বামী তাকে তাই দেয়৷ আমি আপনার স্বামী, আমারো জিজ্ঞেস করা উচিৎ আপনার কী চাই? ”

-” আপনার ইচ্ছে না হলে জিজ্ঞেস করবেন না। ”

-” ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে, তবে শুধু আজকের জন্য নয় সারাজীবনের জন্য। ”

থমথমে কণ্ঠে সূচনা বলল,
-” কীহ। ”

-” এমন একটি জিনিস চান যা সারাজীবন দিতে পারব আপনাকে। ”

মাহেরের থেকে সারাজীবনের জন্য চাওয়ার মতো কিছুই খুঁজে পেল না সূচনা। অথচ কত কিছু চাইতে পারতো। প্রতিটি মেয়েই হয়তো এ সময় স্বামীর থেকে ভালোবাসা চেয়ে নিত। কিন্তু সূচনার যে ভালোবাসার প্রতি তিক্ততা রয়েছে। একজনকে ভালোবেসে প্রতারণার স্বীকার হয়ে আরেকজনের কাছে ভালোবাসা চাওয়া ভীষণ কঠিন, যন্ত্রণাদায়ক।

মাহের বলল,
-” লম্বা লিস্ট হচ্ছে নাকি? ”

-” তেমন কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। ”

-” ভাবুন ভাবুন, সময় গেলে কিন্তু সাধন হবে না। ”

দীর্ঘক্ষণ ভাবার পর মাহেরের দিকে তাকাল সে। মাহের তার দিকেই উৎসুক নয়নে তাকিয়ে। চাপা নিঃশ্বাস ছেড়ে সূচনা বলল,
-” আপনার থেকে একটু ভরসা, একটু বিশ্বাস আর বন্ধুত্ব এর বেশি চাওয়ার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।”

মাহেরের মৃদু হাসিটা বিস্তৃত হলো। সূচনা বলল,
-” আপনার কিছু চাওয়ার আছে? ”

-” আপনি বোকা তাই সব একটু একটু চেয়েছেন। আমি ভাই অত বোকা নই আমার সব বেশি বেশি চাই। আর শেষ চাওয়াটা হচ্ছে এই বিছানার অর্ধেক ভাগ। দেখতেই পাচ্ছেন রুমে ডিভান নেই, মেঝেতেও শুতে পারি না। ”

মুখ ফিরিয়ে হাসি আঁটকে সূচনা জবাব দিল,
-” ভাগ দেওয়া হলো। ”

বাসর রাতটি আর সবার মতো করে কাটল না সূচনার৷ তবুও যেন স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন। পাশাপাশি শুয়ে সারারাত গল্প করল দু’জন। একে অপরের বিষয়ে জানতে পারল অনেক কিছুই। এর মধ্যে সূচনাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করল একটি বিষয়। তা হলো দীর্ঘসময় দুজন পাশাপাশি থাকার পরও ভুলক্রমেও মাহের স্পর্শ করেনি তাকে। মাঝে একহাত দূরত্ব অটুট রেখে কী সাবলীল ভঙ্গিমাতে শুয়ে ছিল মাহের। কী দারুণ এটিটিউড!

ফজরের আজান দেয়ার পর দু’জন একসঙ্গে নামাজ পড়ে নিল। নামাজ শেষে মাহের সূচনাকে বলল,
-” বন্ধু হিসেবে একটি হেল্প চাই। ”

-” কী হেল্প? ”

-” আপনি শাড়িটা চেঞ্জ করুন। যেটা পরেছেন এটা বালতিতে ভিজিয়ে রেখে দিন৷ ”

সূচনা লজ্জিত হলো ভীষণ। মাহের কিছুটা জড়তা নিয়ে বলল,
-” কাজিন ভাই, বোন, ভাবিরা প্রচণ্ড দুষ্ট। এসব নিয়ে তাদের কৌতুহলের শেষ নেই। আর মুরুব্বিদেরও। দেখা যাবে সকাল হলে এটা নিয়ে ছোটোরা ট্রল করবে, বড়োরা শালিশ বসাবে। আমি চাচ্ছি না এ বিষয়টা নিয়ে কথা হোক। তাছাড়া মা এমনিতেই টেনশনে আছে। সে ধারণা করবে আমি অতীত আঁকড়ে ধরে আপনার প্রতি অবহেলা করেছি। ”
___
বউভাতের অনুষ্ঠান শেষ হলো। জ্বর, ঠান্ডার অজুহাত দিয়ে হৈমী কারো সামনেই এলো না। মাহের ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ল। হঠাৎ করে কী হলো মেয়েটার? মেয়ের বাড়ির লোকজন বর বউকে ফিরাই নিয়ে যাবে। কত কী প্ল্যান ছিল হৈমীর। অথচ গত রাত থেকে সব কিছুতে অনুপস্থিত সে। সূচনা বাবার বাড়ি যাওয়ার আগে হৈমীর সঙ্গে দেখা করতে এলো, সঙ্গে মাহের। হৈমী কাঁথা গা’য়ে দিয়ে শুয়ে ছিল। ওদের দেখেও ওঠল না। মাহের গা’য়ে হাত দিয়ে দেখল তেমন জ্বর নেই। সূচনা হৈমীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-” তোমাকে ছাড়া কিন্তু যাব না আমি। ”

মাহের অনেক বোঝাল সন্দেহ করে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করল৷ উত্তর দিল না হৈমী৷ তার এক কথা সে যাবে না৷ হৈমীর এইরূপ আচরণ চাপা রইল না। একে একে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ল। সূচনাও জেদ করে বসে রইল হৈমী না গেলে সে বাবার বাড়ি যাবে না। হৈমীর মা হামিদা এসে মেয়েকে বকাঝকা করলেন। তবুও কাজ হলো না। মাহের মাকে শান্ত করে হৈমীর রুম থেকে বের করে নিয়ে গেল। সূচনাকে ইশারা করে গেল আরেকটু বোঝাতে সে আসছে। সূচনার কাজিন সোহান, রোশান যখন শুনল হৈমী তাদের বাড়ি যাবে না বলে সূচনাও যাবে না জেদ ধরেছে। তখন এই খবর বিদ্যুৎ গতিতে রুদ্রর কানে পৌঁছে দিল। ঠিক তার দশমিনিট পরই হৈমীর ফোনে আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এলো,
-” মিস. বকবকানি হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে আমার এবং আপনার দারুণ হটেড ভিডিওটি একবার দেখে আসুন। সব ঠিকঠাক আছে কিনা। ”

সূচনা মুখভার করে বসে ছিল। হৈমী হঠাৎ লাফ দিয়ে ওঠে বসল। সূচনা চমকে গিয়ে বড়ো বড়ো করে তাকাল হৈমীর দিকে। হৈমী ভয়ার্ত চোখ করে কাঁপা হাতে ফোনের সাউন্ড অফ করে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকল। অচেনা নাম্বার থেকে পাঠানো ভিডিওটা দেখে যেন তার পা’য়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। মাথায় ভেঙে পড়ল আস্ত আকাশ! বারকয়েক ঢোক গিলে কাঁপা হাতে ম্যাসেজ করল,
-” এসব কী! ”

সঙ্গে সঙ্গে রিপলাই এলো,
-” সময় মাত্র পনেরো মিনিট। এর মধ্যে তৈরি হবে এবং ভদ্র মেয়ের মতো সূচনার সঙ্গে আমার বাড়িতে আসবে। কথা অনুযায়ী কাজ না হলে এক ঘন্টার মধ্যে আমার বাড়িটা তোমার জন্য পার্মানেন্ট হয়ে যাবে। অকে ডার্লিং, আ’ম অয়েটেং! ”

চলবে..
( অনুমতি ছাড়া কপি নিষেধ)
ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। অনেকদিন গ্যাপ দেওয়াতে আজ লিখতে গিয়ে ভীষণ কষ্ট হলো। শব্দ পাচ্ছিলাম না, বাক্য গোছাতে পারছিলাম না৷ লেখার খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশা করি সকলেই বুঝবেন। দোয়া করবেন যেন সমস্যাটি কাটিয়ে ওঠতে পারি। দশ তারিখের আগে দিয়ে সকল পাঠকের রাগ, অভিমান কমিয়ে দিলাম কিন্তু। এবার ঝটপট কমেন্টে ভালোবাসা চাইইই)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here