ভাড়াটিয়া-১৭
শাহিন সাহেব বসে আছেন বারান্দায়। বারান্দায় একটা ইজি চেয়ার আছে। তার মন খুব ভালো। ওনার পুলিশের আইজি বন্ধু মিলন খন্দকার কিছুক্ষণ আগে কল দিয়েছে। রাশেদা বেগম নামের মহিলাটি ধরা পড়েছে।
সুইটি নামের মেয়েটির খোঁজ বের করা হয়েছে। সব খবর শুনে ওনার একটু খারাপও লাগছে! সুইটির আসল পরিচয় জানা গেছে।
শাহিন সাহেব অবশ্য সুইটি কে গেরেফতার করতে মানা করেছেন। উনি নিজে সুইটির মুখোমুখি হতে চান। সুইটির ওপরে নজর রাখা হচ্ছে। ও মনে হয় এখনো আঁচ করতে পারেনি। নিজের মতো ছদ্মবেশ নিয়ে চলাফেরা করছে।
আনোয়ারা কে এখন এ সব বিষয়ে জানান হয়নি। দেখা যাক কী হয়? পরে সবাইকে জানান যাবে।
আনোয়ারা বেগম এক কাপ চা নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। শাহিন সাহেব আনোয়ার দিকে তাকালেন। আনোয়ারা অনেকটা শুকিয়ে গেছে! চেহারায় কেমন একটা চিন্তার ছাপ পড়েছে! মনে হয় এ কয়দিনে বয়সটা বেড়ে গেছে!
শাহিন সাহেবের খুব মায়া লাগছে! সুইটি মেয়েটার কথা বলে দিতে ইচ্ছে করছে। না থাক আনোয়ারা কে এখন বলাটা ঠিক হবে না।
আনোয়ার মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, ” কী ব্যাপার বলো তো?”
শাহিন সাহেব নিজেকে সামলালেন। এ এক সমস্যা! আনোয়ারা কী করে যেন শাহিন সাহেবের মনের কথা বুঝে ফেলে! কী করে বুঝে কে জানে?
“কোনো ব্যাপার নাই তো!”
আনোয়ারা ইজি চেয়ারের হাতলের ওপরে বসল। “আজ তোমাকে বেশ খুশি খুশি লাগছে? ”
“না তেমন কিছু না।”
“তা আজ অফিসে যাবে না? দশটা বেজে গেছে এখনো তুমি রিলাক্স মুডে বসে আছ!”
“না আজ আর অফিসে যাব না। অবশ্য একটু পরে বের হতে হবে। অন্য একটা কাজ আছে।”
“অফিস কামাই দিয়ে অন্য কাজ করার মানুষ তো তুমি না!”
“অন্য কাজ বলতে মিলনের সাথে একটু দেখা করতে যাব আরকি।”
“ও তাই বলো।”
“রায়হান কই?”
ফোস করে একটা শ্বাস ছাড়ল আনোয়ারা! “আছে ঘরে। ছেলেটা আমার কেমন হয়ে গেছে!”
ছোটো একটা গভীর শ্বাস শাহিন সাহেবও ছাড়লেন। একটা কষ্ট ওনার বুকেও বিঁধল!
সুইটি সাতদিনে ঘর থেকে বের হয়নি। এ কয়দিন ঘরেইছিল। এক সপ্তাহের বাজার করে ঘরে ঢুকে পড়েছে। মায়ের একবার দেখা করে এসেছে। ভেবেছিল এ কাজটা করে পুরো টাকাটা হয়ে যাবে। কিন্তু হয়নি! অবশ্য গয়নাগুলো বিক্রি করলে হয়ে যাবে।
এখন গয়না বিক্রি করা যাবে না। তাই আপাতত কিছুই করার নাই। ঘর থেকে বের হলে ধরা পড়ার একটা সম্ভব থাকে।
মায়ের সাথে দেখ করতে ইচ্ছে করছে। আজ একবার মায়ের কাছে যেতে হবে। একটু অন্যরকম সাজে বের হতে হবে। এমন সাজ দেখলে মা প্রশ্ন করতে পারে।
মা কে বুঝানটা খুব কষ্টের! মা মনে হয় কিছু সন্দেহ করছে! কাছে গেলেই কেমন করে তাকায় কিছু অবশ্য বলে না! না-কি বলতে পারে না?
সুইটি এ সব কার জন্য করছে? ও পারত আট দশটা মেয়ের মতো সাধারণ একটা জীবন বেছে নিতে। ইচ্ছে যে করে না তা না। রায়হান ছেলেটা কে ওর ভালোই লেগেছিল!
আসলাম সাথে কথা হয় না। বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। গতকাল সুইটি কল দিয়েছিল নাম্বারটা বন্ধ দেখাচ্ছে। নতুন নাম্বার নিলো কি? নাম্বার চেঞ্জ করলে তো সুইটি জানিয়ে দেয়। এবার দিতে ভুলে গেছে মনে হয়। কয়দিন পরে ঠিকই কল দিবে।
সুইটি রাশিদার নাম্বারে কল দিলো। নাম্বারটা খুলা কিন্তু কেউ কল ধরল না। ব্যস্ত আছে মনে হয়। ফ্রি হলে কল ব্যাক করবে। বোনের বাড়িতে ভালোই সময় কাটাচ্ছে!
একটা সাদা শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পরে সুইটি বের হলো। চুল ছোটো করে ছাঁটা। দেখলে মনে হয় খুব সুন্দর একটা ছেলে।
সুইটি বাসা থেকে বের হয়ে বড়ো রাস্তার দিকে হাঁটতে শুরু করল। কেমন জানি লাগছে! মনে হচ্ছে কেউ পিছন থেকে তাকিয়ে আছে। সুইটি মনের অস্বস্তিটা কে দূর করার চেষ্টা করছে কিন্তু যাচ্ছে না।
সুইটি ভাবল দূর কে আমাকে চিনবে? মা ও হুট করে দেখলে চিনতে পারবে না। এটা সুইটি। আর তো দূরের মানুষ। হাঁটতে হাঁটতে বড়ো রাস্তায় চলে আসল সুইটি।
এখন সকাল এগোরটা বাজে। এ সময় রিকশা পাওয়াটা একটু কঠিন হয়ে যায়। অফিস সময় সবাই অফিসে ছুটছে। পাঠাও কে কল দিলে হয়। অনেকগুলো টাকা বেরিয়ে যাবে। পাঠাও থাক। একটা রিকশা নিলেই হবে। একটু অপেক্ষা করলেই হয়ত রিকশা পাওয়া যাবে।
একটা রিকশা আসতে দেখা যাচ্ছে। সুইটি রিকশাটাকে ইশারায় থামতে বলল।
রিকশাওয়ালা কিছুটা সময় ধরে সুইটির দিকে তাকিয়ে রইল। এমন সুন্দর ছেলে আগে কখনো দেখেনি মনে হয়।
“কই যাবেন ভাই?”
সুইটির ভালো লাগল! যাক মানুষজন ওকে ছেলে ভাবছে। আলগা হেসে বলল, “ঢাকা মেডিকেল যাবেন।”
“হুঁ, যামু।”
ভাড়ার কথা সুইটি কিছুই জিজ্ঞেস করল না। রিকশাওয়ালা কে ওর খুব ভালো লেগেছে! মালিবাগ থেকে ঢাকা মেডিকেল কত আর ভাড়া নিবে? একশো টাকা দিলে কি রিকশাওয়ালা খুশি হবে না?
সুইটি রিকশায় চড়ে বসল। রিকশা চলছে অনেকটা দ্রুত গতিতে।
চলবে–