গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি #পর্ব৩৫ #Raiha_Zubair_Ripti

0
57

#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব৩৫
#Raiha_Zubair_Ripti

তপ্ত দুপুর,রুয়াত মেজেন্টা কালারের শাড়ি পড়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে শেষ বার দেখে নিলো। শাফায়াত বিছানায় পা তুলে বসে রুয়াত কে দেখে চলছে। হাতে থাকা হাত ঘড়িটার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে হতাশ হয়ে বলল-
-“ আর কতক্ষণ রুয়াত?
রুয়াত পাশে ফিরে তাকালো। বলল-
-“ কেমন লাগছে আমাকে আগে বলুন। তারপর বলছি কতক্ষণ লাগবে।
শাফায়াত চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল-
-“ ভালো লাগছে।
রুয়াত এগিয়ে আসলো। শাফায়াত এর মুখ টা নিজের দিকে ফিরিয়ে এনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল-
-“ আমার দিকে তাকিয়ে বলেন। কেমন লাগছে? বিশাল বড় একটা কমপ্লিমেন্ট চাই।
শাফায়াত রুয়াতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ সো বিউটিফুল সো এলিগেন্ট,জাস্ট লুকিং লাইক অ্যা ওয়াও। জাস্ট লুকিং লাইক অ্যা ওয়াও।
রুয়াত শাফায়াত এর গাল থেকে হাত সরিয়ে ফের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ সত্যি.. আমি জানতাম আমাকে সুন্দর লাগবে।
শাফায়াত গা ঝেড়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ এতো সময় নিয়ে সাজলে যে কাউকেই সুন্দর লাগবে।
রুয়াত ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কই এতো সময় নিয়ে সাজলাম? মাত্র তো দু ঘন্টা লেগেছে।
-“ এখন বের হওয়া যাক? আমার ভাই টার কথা একটু ভাবো। বেচারা সকাল থেকে অপেক্ষা করছে।
-“ হু চলুন।

শাফায়াত রুয়াতের হাত ধরে বসার ঘরে আসলো। সাদমান পায়চারি করছে। শাফায়াত রুয়াত কে দেখামাত্রই এগিয়ে গিয়ে অস্থির কন্ঠে বলল-
-“ কখন বের হবা ব্রো? কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি।

শাফায়াত খালা,আর খালুর দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ মনি তোমরা গাড়িতে গিয়ে বসো।
উনারা চলে গেলেন। সাদমান ও পেছন পেছন যেতে চাইলে শাফায়াত ডেকে বলে-
-“ তুই কোথায় যাচ্ছিস? তোকে কি যেতে বলেছি?
-“ আমি যাব না তে কে যাবে? ব্রো তুমি আর রুয়াত অনেক দেরি করাচ্ছো। দ্যিস ইজ নট ফেয়ার।
-“ আমি মানিব্যাগ টা রুমে রেখে এসেছি এনে দে।
সাদমান রাগতে রাগতে মানিব্যাগ আনতে চলে গেলো। রুয়াত শাফায়াত এর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলে-
-“ আপনি বারবার সাদমান ভাইয়ার পেছন লাগছেন কেনো?
-“ আমার ভাই আমি লাগবোই।
সাদমান মানিব্যাগ টা এনে শাফায়াত এর হাতে ঠেসে ধরিয়ে দিয়ে বলে-
-“ এবার তো চলো।
শাফায়াত রুয়াত এর হাত ধরে হাঁটা ধরে বলে-
-“ হুম চল।

আধঘন্টার মধ্যেই রুয়াত রা চলে আসে এ বাড়ি। রুয়াত এসেই মা কে হেল্প করছে। বসার ঘরে বসে আছে কবির শিকদার, শাফায়াত এর মা,সাদমান এর বাবা মা আর সাদমান। সাদমান বারবার সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে। আশ্চর্য রজনী কে দেখার জন্য তার চোখ দুটো মরিয়া হয়ে যাচ্ছে। হৃৎস্পন্দন টা দ্রুততর করে বেড়ে চলছে অথচ কেউ রজনী কে আনছে না। রুয়াত প্লেটে মিষ্টি আর পানি নিয়ে এসে সেন্টার টেবিলে রাখলো। শাফায়াত এর পাশে বসে বলল-
-“ মা খালাম্মা, খালু মিষ্টি খান।
সাদমান এর বাবা মিষ্টি করে হেসে বলল-
-“ আগে তোমার আপু কে আনো রুয়াত৷ শুভ কাজ টা সেরে তারপর মিষ্টি মুখ করি সবাই।
সাদমান খুশি হলো বাবার এহেন কথায়। রুয়াত মাথা নেড়ে চলে গেলো উপরে।
রজনী রুমে পায়চারি৷ শরীরে তার লেমন কালারের শাড়ি। হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি। চুল গুলো খোপা করে মাথায় বেলি ফুলের গাজরা। মুখে হাল্কা প্রসাধনী ব্যবহার। রুয়াত এগিয়ে এসে বোন কে জড়িয়ে ধরলো। কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিয়ে বলল-
-“ পৃথিবীর সব সুখ আমার আপুর তরে হোক। জীবন টা খুশিতে পূর্ণ হয়ে থাকুক।
রজনী স্মিত হাসলো। তার বুকটা ধড়ফড় করছে। সাদমান কে জিজ্ঞেস করেছিলো তার বাবা মা কে সব বলেছে কি না। সাদমান বলল বলেছিল। রজনী অবাক হয়েছে। সব জেনেও কি করে ছেলের বউ বানাতে চায়?
রুয়াত রজনী কে নিয়ে নিচে নামলো। সাদমানের নজরে আসতেই সাদমান সেই থেকেই চেয়ে আছে। চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে। রুয়াত রজনী কে সাদমানের পাশে বসালো। সাদমান এর বাবা মার পছন্দ হলো রজনী কে। দেখতে বেশ সুন্দর। রজনীর বাবার সাথে কথা বলে বিয়ের ডেট টা এই মাসের ৩০ তারিখে ঠিক করলো। এটাও জানালো বিয়ের শেষে রজনী কে তারা তাদের সাথে নিয়ে যাবে। যেহেতু তারা আমেরিকা থাকছে পার্মানেন্ট। সাদমান সবার অগোচরে রজনীর হাত ধরলো। রজনী ছাড়াতে চাইলে আরো চেপে ধরলো। মুখের সামনে হাত এনে ফিসফিস করে বলল-
-“ আপনাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে রজনী।
রজনী কিছু বললো না প্রতিত্তোরে। সকলে মিষ্টি মুখ করলো। তারপর দুপুরের লাঞ্চ টা করে বিকেল হতেই চলে গেলো সবাই। রুয়াত কে থাকতে বলেছিলো রুয়াতের শাশুড়ী কিন্তু রুয়াত থাকে নি। বাড়িতে এতো মানুষ তার শাশুড়ী একা হাতে রান্না বান্না বাড়ির কাজ করবে! তাই চলে আসলো। শাফায়াত সবাই কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে রুয়াত কে নিয়ে বের হলো সন্ধ্যার আগ দিয়ে বাড়ি থেকে অল্প একটু দূরে থাকা ঝিলের পাড়ে। শীতল বাতাস চারিদিকে। লোকজনের কিছুটা সমাগম। ঝিলের পানিতে পা ভিজিয়ে বসে আছে কিছু যুগলবন্দী প্রেমিক প্রেমিকা। শাফায়াত রুয়াত কে নিয়ে ঝিলের পাশে থাকা বেঞ্চে বসলো। পাশ থেকে চলে যাওয়া ছোলা, বাদাম বিক্রি করা লোক কে ডেকে ছোলা আর বাদাম কিনলো শাফায়াত।
রুয়াতের হাতে এক প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল-
-“ খেতে খেতে চারিপাশ দেখো। ভালো লাগবে।
রুয়াত বাদাম ছুলে খেতে লাগলো। আশেপাশে তাকাতেই হঠাৎ চোখ গিয়ে আটকালো কিছুটা দূরে গাছের নিচে বসে থাকা রোহানের দিকে। রোহানের সাথে রয়েছে একটা মেয়ে। যে মনের সুকে আইসক্রিম খাচ্ছে। আর রোহান তাকিয়ে দেখছে। রুয়াতের মনে হলো হয়তো মেয়েটা রোহানের গার্লফ্রেন্ড। রুয়াত চোখ সরিয়ে নিলো। শাফায়াত এর বাহু জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো।

রোহান নীতির আইসক্রিম খাওয়া দেখছে। এই নিয়ে তিনটে খেলো৷ রোহানের বিরক্ত লাগছে। এতো আইসক্রিম কেউ খায়? ঠান্ডা লাগবে তো। এই ঝিলের পাড়ে এসেছিল নীতির মন টা ভালো করতে। অথচ এনেও বিপাকে পড়তে হলো। রোহান তপ্ত শ্বাস ফেলে দাঁত চেপে বলল-
-“ হয়েছে খাওয়া? নাকি আরো খাবি?
নীতি আইসক্রিম টা শেষ করে বলল-
-“ এখন লাগবে না। বাসায় যাবার সময় কিনে দিয়েন। বাসায় গিয়ে খাবো।
-“ তাহলে চল ঝিলের কাছে।
-“ আমি পানিতে পা ভিজাবো।
রোহান নীতির হাত ধরে ঝিলের পাশে আসলো। পায়ের জুতা খুলে বসে পানিতে পা ভিজালো দুজন। নীতি এগিয়ে আসলো রোহানের দিকে। রোহানের বাহু জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে পানিতে পা ঝাপটিয়ে বলল-
-“ এবার সুন্দর লাগছে।
রোহান মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে হাল্কা বাঁকা হাসলো।

সন্ধ্যা নেমে আসতেই নীতি রোহান কে টেনে বাসায় চলে আসলো। রোহান নীতি কে নীতির বাসায় পৌঁছে দিয়েছে। আসার পথে অবশ্য নেহাল আর নেহালের বাবার সাথে একটু আলাপ-সালাপ করে এসেছে। নিজের বাসায় আসতেই নীতি ফোন দিয়েছে। রোহান বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল-
-“ বিশ মিনিট ও হয় নি। এরমধ্যেই ফোন?
-“ পৌঁছে গেছেন বাসায়?
-“ হ্যাঁ।
-“ খাবার খেয়ে ঘুমান।
-“ বুয়া আজ রান্না করে যায় নি।
-“ ওমা তাহলে খাবেন কি?
-“ ঘরে বিস্কুট চানাচুর আছে,নুডলস রান্না করে খেয়ে নিব নি।
-“ আপনার রান্না করা লাগবে না। রাখছি।

নীতি ফোন টা কেটে অনলাইন থেকে ভাত,মাংস,ডাল,ভাজি অর্ডার করে রোহানের ঠিকানা দিয়ে দিলো। ঘন্টা খানের মধ্যেই রোহানের বাসার কলিং বেল বাজে। রোহান মুচকি হাসে। মনে করে নীতি এসেছে হয়তো নেহালের সাথে৷ কিন্তু দরজা খুলে দেখে ডেলিভার ম্যান। হাতে করে খাবার নিয়ে এসেছে। রোহানের ফোনে কল আসে৷ রোহান রিসিভ করলে ওপাশ থেকে নীতি বলে-
-“ খাবার টা রিসিভ করে খেয়ে নিন।
রোহান রিসিভ করলো। বিল পে করতে চাইলে ডেলিভারম্যান বলল বিল পে করা হয়েছে। রোহান দরজা আটকালো। রুমে এসে নীতি কে বলল-
-“ খাবার কেনো পাঠাতে হবে তোর?
-“ আপনি খাবেন সেজন্য। আচ্ছা আমি ভিডিও কল দিচ্ছি।
নীতি ফোন কেটে ভিডিও কল দিলো। রোহান রিসিভ করলো। নীতি দেখলো রোহান প্যাকেট থেকে এক এক করে খাবার বের করছে।
-“ আমি কি রাক্ষস? এতো খাবার!
-“ খাওয়া শুরু করেন যতটা পারেন।
রোহান খেতে লাগলো। নীতি কে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাতের লোখমা টা এগিয়ে দিয়ে বলে-
-“ তাকিয়ে আছিস পেট খারাপ করবে। হা কর।
নীতি হা করলো। রোহান নিজের মুখে নিয়ে বলল-
-“ খেয়েছিস?
নীতি হেসে বলল-
-“ হ্যাঁ ইয়াম্মি।
-“ তুই খেয়েছিস রাতে?
-“ হু খেয়েছি।
-“ আচ্ছা ঘুমিয়ে পড় তাহলে। আমারও খাওয়া শেষ।

নীতি শুভ রাত্রি বলে ফোন টা কেটে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো। লম্বা লম্বা শ্বাস টেনে বিরবির করে বলল-
-“ কোনো এক রাত আসুক। যেই রাতটায় আপনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো। আর একটা সকাল আসুক শীগ্রই, যে সকালের সূচনা হবে আপনাকে দেখে।

( আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছেন নিশ্চয়ই। এখন থেকে শুক্রবার আর মাঝে একটা দিন গল্প দিব। এক্সাম শেষ না হওয়া অব্দি। তার মানে সপ্তাহে দুটো পর্ব আসবে। দোয়া করবেন আমার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।)

#চলবে?

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here