হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕 পর্ব:৫ [থ্রিলার+রোম্যান্টিক] #কায়ানাত_আফরিন .

0
116

#হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕
পর্ব:৫ [থ্রিলার+রোম্যান্টিক]
#কায়ানাত_আফরিন
.
৯.সকালের মধুময় এই আলোরাশিতে নিভ্রদের এই বাড়িটা অন্যরকম সুন্দর লাগছে। গতরাতের বৃষ্টির পর সকালে দেখা যাচ্ছে পরিচ্ছন্ন আকাশ। মৌনি বারান্দায় বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে নিভ্রকে। নিভ্র কিচেনে নাস্তা বানাতে ব্যস্ত। আজকাল ছেলেদের রান্না বিষয়টা কমন হয়ে গেলেও এই প্রথম কোনো ছেলেকে কিচেনে রান্না করতে দেখলো সে। প্রত্যেকটা কাজই যেন নিখুতভাবে নিভ্র করছে।সালাদ বানানো থেকে শুরু করে অমলেটের জন্য পিয়াজ কাটা , ফ্রাইপ্যানে হেলদি অলিভ অয়েল তেল ঢালা সবকিছু একেবারেই প্যাশনেটভাবে করছে যেন নিভ্র অনেক ভালো একজন শেফ। মৌনি কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে ভাবে যে….এই ছেলেটা এত গুণের কেন? আল্লাহ যেন সবদিক থেকেই একে ভরে ভরে দিয়েছে। মৌনির ভাবনার মধ্যেই নিভ্র যে কখন এসে পড়লো তা ওর বোধগম্যে এলো না।
নিভ্রর ওর চোখের সামনে চুটকি বাজাতেই মৌনির ধ্যাম ভাঙ্গে। একটা প্রশস্ত হাসি দিয়ে লে দাঁড়িয়ে আছে মৌনির সামনে। পড়নে সাদা এপ্রোন। হাতে রয়েছে একটি ট্রে। সে ট্রে টি সামনের টেবিলের মধ্যে রেখে নিভ্র মৌনির উদ্দেশ্যে বলে……..
.
—নাও। ব্রেকফাস্ট এনেছি তোমার আর আমার জন্য। দেখোতো পছন্দ হয় কি-না?
.
মৌনি তাকাতেই যেন চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। একটা অমলেট সাথে দুই পিস পাউরুটি আর বাটি ভর্তি সালাদ। মৌনি এসব কিছু কখনোই খায় না সকালে। নিভ্রকে আমতা আমতা করে বলে……
.
—নি…নিভ্র ভাই। আমি এসব খ-খেতে পারবো না।
—কেন?
—আমার এসব খাওয়ার অভ্যাস নেই।
—তো কি খাও সকালে?
—বেশিরভাগ সময়ে কিছু খাই না। তবে নাস্তা করলে পরটা, ভাজি, ডাল সাথে সুজির হালুয়া……..
.
মৌনির কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেলে নিভ্র। হাসিটা ব্যঙ্গাত্নক ধরনের হাসি। মৌনি কিছুক্ষণ সে হাসির দিকে তাকিয়ে চোখ নিচু করে ফেলে। নিভ্র কোনোরকম হাসি চাপিয়ে বললো…
—তুমি পুরান ঢাকায় থাকতে তাই না?একমাত্র এটাই ঢাকায় একমাত্র খাঁটি জায়গা যেখানে সকালে চিপচিপে তেলে ভাজা পরটার সাথে আনহাইজিনিক ডাল ভাজি আর হালুয়া থাকে। ইয়াক্……..এসব তেলের খাবার সকালে খাও কেমনে?জানো না এগুলো শরীর মোটা করে ফেলে?
—আমার অভ্যেস আছে।
মুখ বাকিয়ে বলে মৌনি। নিভ্রর কথাতে খানিকটা অপমানবোধ করছে সে। নিভ্র তারপর প্লেটটা মৌনির দিকে এগিয়ে দেয়। তার দৃষ্টিভঙ্গি স্বাভাবিক।
—সেই অভ্যাস চেন্জ করে এগুলো খাওয়ার অভ্যাস করো। সাইক্রেটিস্ট বলে হেলথের হেলফেল তো মোটেও করতে দিবোনা একজন ডক্টর হিসেবে। সো তোমার গুড হেলথের জন্য তো খেতেই হবে।
—না খেলে হবেনা নিভ্র ভাই?
মৌনি মলিন করে প্রশ্ন করে নিভ্রকে। নিভ্র এবার নিজের খাবার নিয়ে এগিয়ে দেয় মৌনির মুখের কাছে। মৌনি নিভ্রর দিকে তাকাতেই দেখে চোখে মুখে একরাশ মায়া। সেই মায়াবী চোখযুগল যেন আকুলস্বরে বলছে মৌনিকে খাবার খেয়ে নিতে।
মৌনি তাই আর কিছু না বলে খাবারটি খেয়ে নেয় নিভ্রর হাত থেকে। খাওয়ার সময় মৌনি বারবার আড়চোখে নিভ্রকে দেখছিলো। ছেলেটার ফর্সামুখ আগুনের উত্তাপে লম্বা সময় থাকার কারনে নাকের ডগায় ঘামগুলো চিকচিক করছিলো। মৌনির দৃষ্টিটা যেন সেখান থেকে সরছিলই না। মাঝে মাঝে ভাবে যে নিভ্র যদি আজীবন ওর সাথে থাকতে পারতো?
.
—লেয়ার কফি খাবে?
নিভ্রর কথায় মৌনি ভ্রু কুচকে ফেলে। মনে মনে ভাবে , কি কফি এটা আবার। ঢাকায় এত রেস্টুরেন্টে কফি খেয়েছে কিন্ত জীবনেও এ কফি খায়নি।
—কেমন কফি এটা?
—আ্যমেরিকার একটা ট্রেডিশন্যাল কফি যেটাতে হেভি ক্রীম এর একটা লেয়ার থাকে।এখন তো সব কফি বানাতে কফি মেশিন লাগে যা অনেক সহজ। কিন্ত লেয়ার কফিই একমাত্র কফি যেটা কখনোই মেশিনে বানানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশে এটার দাম প্রায় সাড়ে আটশ টাকা।
.
মৌনি ড্যাব ড্যাব ড্যাব করে তাকায় নিভ্রর দিকে। একটু উচ্চস্বরে বলে………
—কিইইইই? সাড়ে আটশ টাকা। কোনো সেন্টি পাগলা টাইপ মানুষই তবে এটা খাবে তবে এত টাকা দিয়ে।
—হুম। আর তাইতো আ্যমেরিকার সেন্ট ফ্রান্সিস্কো থেকে এই রেসিপিটা শিখে এসেছি।
.
—আপনি সেন্ট ফ্রান্সিকোতেও গিয়েছিলেন?
.
—আরে ! জাস্ট এক সপ্তাহের ট্রেনিংয়ের জন্য। এর পরই তো আমি লেকচারার হিসেবে জয়েন করি।
মৌনি বুঝতে পেরেছে যে এই ছেলের অভিজ্ঞতার পাল্লা অনেক ভারী। নাহলে এই ছেলের মধ্যে তেমন কোনো খুঁত ও দেখতে পেলো না। একজন ভালো পাত্র হিসেবে নিভ্র মোটামোটি ভালো একটা ছেলে।
.
.
কিচেনে নিভ্র কফির ওপর হেভি লেয়ারটি সাবধানতার সাথে ঢালছে। মৌনি প্রত্যেকটা বিষয়ই বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো। মোটকথা নিভ্রর ধৈর্য আছে। যেই কঠিন রেসিপি রে বাবা ! মৌনি থাকলে এর দাম তো ১০০০ টাকারও কম নিত না। কিন্ত মৌনির মনে চলছে অন্য চিন্তা। ক্রাইমের সেই পেনড্রাইভটা এখনও তার কাছে। যেকরেই হোক এই পেনড্রাভটা প্রফেসর এনায়েতউল্লাহের কাছে পাঠাতে হবে। মৌনি নিভ্রকে বললো……
.
—নিভ্র ভাই আপনার কাছে Vivo চার্জার হবে?
—কেনো?
—আমার ফোনটা দুদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে। একটা জরুরি কল দেবো। তাছাড়া আব্বু আম্মুর সাথেও কথা হচ্ছেনা।
—তোমার কি মনে হয় এখন ফোনটা তোমার ওপেন করা উচিত?
একথা বলে কফির মগটা নিভ্র এগিয়ে দেয় মৌনির কাছে। মৌনির নিভ্রর কথাটা ঠিক বুঝতেপারলো না। অস্পষ্টস্বরে জিজ্ঞেস করলো……..
—মানে?
.
নিভ্র আলতো হাসে। পিলারটির ওপর হালকা হেলান দিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় সে মৌনির দিকে।
—তুমি যাদের কথা বলছিলে আই মিন ফেক সার্টিফিকেট তৈরির একটা গ্যাং ওরা মনে হয় না এত কাচা খেলোয়াড় হবে। তোমার কাছে ওদের বিরুদ্ধে চরম একটি প্রমাণ আছে যেটা হলো পেনড্রাইভের মধ্যে। আর এই পেনড্রাইভের জন্য তোমার সূত্র ধরে ওরা যেকোনো কিছু করতে পারে তোমার সাথে । আর তোমার ধরার জন্য অবশ্যই তোমার লোকেশন জানা প্রয়োজন। তুমি ফোনটা অন করলেই তোমার জিপিএস ট্যা্রক করে ওরা সহজেই এসে পড়বে চট্টগ্রামে।ওদের যেহেতু ফেক সার্টিফিকেট বানানোর মতো ক্ষমতা আছে তবে তোমার নাম্বার ট্রাক করাও কঠিন কোনো কাজ হবে না।
.
মৌনির নিভ্রর প্রতিটা কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। আসলেই তো ! এই বিষয়টাতো ওর মাথাতেই আসেনি। ছেলেটার তীক্ষ্ণ বিচক্ষণতা দেখে মৌনি ধাপে ধাপে যেনো অবাক হচ্ছে।মলিন কন্ঠে মৌনি বললো……..
.
—নিভ্র ভাই ! ওদের যেভাবেই হোক শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। পশুর থেকেও অধম এরা। ফেক সার্টিফিকেট বানিয়ে এমন সব মানুষদের ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার বানিয়ে দেয় যাদের এ সম্পর্কে নগণ্য ধারনা। ফলে হাজার হাজার মানুষ মরে। সমাজ হয়ে ওঠে দুর্নীতির কারখানা।ব্যাংক থেকে স্টুডেন্ট লোনের নামে হস্তক্ষেপ করে লক্ষ লক্ষ টাকা। ওদেরকে কিছুতেই ছাড়া যাবে না নিভ্র ভাই । কিছুতেই না। রাত দিন ঘেটে ১ বছর ধরে এ বিষয়ে রিসার্চ চালাচ্ছি আমি । কিন্ত………..
.
মাথাটা মৌনির চিনচিন ব্যাথা শুরু হয়েছে। চোখের সামনে বারবার ভেসে ওঠছে সেই চিৎকার করা মানুষের দৃশ্য যাদের জোরপূর্বক ইনজেকশন দেয়া হচ্ছিলো। নিভ্র একটু সতর্ক হয়ে যায়। মৌনিকে প্রেশারে ফেলেই সিন ক্রিয়েট করতে পারে। তাই পরিস্থিতিটা পাল্টানোর জন্য সে বললো………
.
—তারাতারি কফি খেয়ে নাও। আমরা সবাই ঘুরতে যাবো নে।
.
মৌনি এবার নিভ্রর দিকে করহণপাত পারে। চোখের দৃষ্টিতে বিষ্ময়ের রেশ।
—কোথায় যাবো?
নিভ্র কিছু একটা ভেবে এগিয়ে আসতে থাকে মৌনির দিকে। ঠোঁটে ঝুলে আছে দুষ্টু হাসি। নিভ্রর এমন দৃষ্টি মৌনি বুঝে উঠতে না পেরে হালকা পিছিয়ে যায়। কিন্ত নিভ্র যেন থামছেই না। একপর্যায়ে মৌনি দেয়ালের সাথে মিশে যেতেনিভ্র দাঁড়ায় । নিজের ডান হাতটি দিয়ে দেয়াল ভর করে দাঁড়ায় সে।
মৌনির নিঃশ্বাস ক্রমশই যেন ভারী হয়ে আসছে। নিভ্র গহীন চোখে দেখছে মৌনির তিরতির করে কাপতে থাকা ঠোঁট। গোলাপের পাপড়ির ন্যায় সে ঠোঁটযুগল নিভ্রর কাছে অপার সুন্দর লাগছে। নিভ্র মাতাল কন্ঠে বলে………
—আমার শহরে এসেছো আর আমি তোমায় ঘুরাবো না? (মৌনির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে) আজ তোমায় নিয়ে প্রেমিকের মতো ঘুরবো……….
.
শেষের বাক্যটুকু শুনে মৌনি স্তব্ধ। নিভ্রর উত্যপ্ত নিঃশ্বাস ওর কান ছঁুয়ে দিতেই শরীরে অদভুদ এক শিহরণ জেগে ওঠেছে। এ কেমন ঝড় বইছে ওর মনে। মৌনি এবার নিভ্রর চোখের দিকে তাকায়। দুজনের চোখাচোখি হতেই মৌনির হৃদয়ের কম্পন যেন দ্রুতগতিতে বেড়ে গেলো। এ চোখদুটোতে প্রকাশ পাচ্ছে মৌনির জন্য সীমাহীন অনুভূতি। মৌনির এবার দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। কবে জানি এই মারাত্নক চাহিনী আর মাতালকরা কন্ঠ দিয়ে মৌনিকে মেরেই ফেলবে………..
.
.
.
.
~চলবে…..ইনশাল্লাহ
দুঃখিত। বাসায় নেট ছিলো না তাই পোস্ট করতে লেট হলো। রি চেক করিনি।আগামীকাল গল্প দেবো কিনা নিশ্চিত বলতে পারছিনা। তাই আগেই জানিয়ে দিলাম। চেষ্টা করবো দিতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here