চৈত্র_শেষে #নাজমুন_বৃষ্টি #পর্ব ৩

0
98

#চৈত্র_শেষে
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব ৩

ক্ষুদায় অনুর পেট চৌ চৌ করে উঠল। এখন বাজে বেলা বারোটা। আজ সে তার পছন্দের রান্না করেছিল। তাই তো পেট পুরে খাওয়ার জন্য সকালের নাস্তাটাও করা হয়নি। অনুর একটা অভ্যাস সে ক্ষুদা পেটে থাকতে পারে না। যেকোনো মূল্যে তার ক্ষুদা নিবারণ করতে হয়। কিন্তু তবুও বিয়ের পরে সে এই অভ্যাসটাতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের শুরুতে প্রথম প্রথম আদিত্য অনেক তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরত। কিন্তু পরবর্তীতে দিন বাড়ার সাথে সাথে আদিত্যর ফেরাটাও দেরিতে হতে শুরু করে। প্রথম প্রথম অনু জিজ্ঞেস করতো কিন্তু আদিত্য কোনো সঠিক জবাব দিতে পারতো না। পরবর্তীতে অনু আর ঘাটতো না। তার মনে হয়েছিল, হয়ত বেশি ঘাটলে সন্দেহ বাড়বে। এতে সংসারে দুঃখ বয়ে আনবে। তাই সে কোনো আশার মতো উত্তর খুঁজে না পেয়ে আর জিজ্ঞেস করতো না। নিজেকে দমিয়ে নিতো। ক্ষুদা পেট সহ্য করতে না পেরেও অনু আদিত্যর জন্য অপেক্ষা করতো। শুকনো খাবার মুড়ি বা কুকিজ খেয়ে সে ক্ষুদা নিবারণ করতো তাৎক্ষণিক। যাতে আদিত্যর একা খাওয়া না লাগে। সারাদিন পরে আদিত্য অনেক রাত করে ফিরত। আর অনু রাতে আদিত্যর জন্য খাবার নিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকত। কোনো কোনো সময় অনু আর অপেক্ষা করতে না পেরে টেবিলে হাতের উপর ঐভাবেই ঘুমিয়ে পড়তো।
কথাগুলো মনে হতেই অনু একটা মলিন শ্বাস ফেলল। সাথে দুফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়লো।

অনু দুহাত দিয়ে ভালোভাবে মুখ মুছে রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলো। অনেকদিন ভালো আদর্শ বউ সাজা হয়েছে কিন্তু আর না। এমনিতেও ও কারোর মনে আর নেই, তাই আজকের দিনটি নিজের মতো করেই নাহয় কাটাক। আজ অনু নিজের পছন্দের জিনিস রান্না করেছে। সে কেন না খেয়ে থাকবে! এই মাছ তো তার বাবাই তার জন্য পাঠিয়েছে। তবে কেন সে তার শখের মাছ ওদের জন্য রেখে দিবে!
আনিস মিয়া অনুকে ফেলে কিছু খায় না। তার মন না কি কচকচ করে। গত পরশুদিন উনি এসে একটা ইলিশ মাছ দিয়ে গিয়েছে। যদিও উনি মাছটা বাসায় গিয়ে রাখতে পারতেন। কিন্তু না। উনি জানেন, বাসায় নিয়ে গিয়ে অনুর জন্য রাখতে বলা হলে উনাকে অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে আর আড়ালে অনুর উপরও এর তির্যক প্রভাব পড়বে। এতে আরো কথা বাড়বে যা উনি চাননি। তাই দুইটা নিয়ে সোজা অনুর শশুরবাড়ির বাইরে থেকে একটা মেয়েকে দিয়ে গিয়েছেন। উনি অনুর শশুরবাড়িতে ঢুকেন না কারণ উনার মনে হয় অনুর উপর তার শাশুড়ির করা কড়া ভাষাগুলো উনি দেখে ফেললে মেয়েকে এখানে আর রাখতে মন সাঁই দিবে না কিন্তু তার মেয়ে তো এখানেই সুখী। তাই উনি এদের মাঝে যাতে না পড়ে সেজন্য যা আনে মেয়েকে বাড়ির উঠান থেকেই দিয়ে চলে যেত।
অনু আজ খুব স্বাদ করে মাছটা রান্না করেছিল।
কিছুক্ষন পরে হলে আদিত্য খেতে আসবে আর এতে তার আদিত্যর ওই ঘৃ’ণার মুখটা দর্শন করা লাগবে তাই অনু আগেই নিজের জন্য নিয়ে আসতে এগিয়ে গেল। অনু নিজে রান্নাঘর থেকে মাছের পাতিল থেকে সবচেয়ে বড়ো পিসটা নিজের পাতে নিল। পিসটা নিতে গিয়ে তার খারাপ লাগা কাজ করলো। কারণ অন্যদিন হলে এই পিসটা সে আদিত্যকে দেয় কিন্তু আজ! অনু জানে আজ ভাত তার গলা দিয়ে নামবে না কিন্তু তবুও সে এমনভাবে প্লেটটা নিল যেন মনে হচ্ছে সে অনেক খাবে।
অনু রান্নাঘরে থেকে চলে আসতে নিতেই দেখল, তার শাশুড়ি আছিয়া বেগম ঢুকছে।
অনু তাকালো। এই মানুষটা সে থাকাকালীন একটা কাজেও হাত দেয় না। রান্নাঘর তো দূরে কিন্তু আজ একদম সোজা এখানে। উনার পিছু পিছু পরোক্ষনে রিহিকে দেখতেই তার টনক নড়লো। রিহি এসে বলল, “তুমি করো না ফুপি। আমি করবো। আমাকে দাও। আমি নিয়ে যাচ্ছি ভাত টেবিলে।” বলতে বলতে ঢুকতে নিতেই অনুকে দেখে চমকে গেল। আর আছিয়া বেগম তো আগে থেকেই ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। বোঝাই যাচ্ছে উনারা কেউই অনুকে এই সময়ে এখানে আশা করেনি। দুজনের এভাবে তাকানো দেখে অনুর খারাপ লাগা কাজ করলেও সে সেটা ঠেলে আড়াল করে ফেলল।
অনুর ভালো লাগলো এই ভেবে যে ওদের মনমতো সে নরম হয়নি। অনু বেশ টের পেল যে ওরা ভেবেছে অনু আজ কান্না করে সারাদিন রুমে বদ্ধ অবস্থায় থাকবে। তাই তো ওরা ওদের মনের ভাবনার উল্টোটা হতে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। বিস্ময় যেন কাটছেই না তাদের।

“তুমি আজ এতো তাড়াতাড়ি খেয়ে নিচ্ছ যে!” আছিয়া বেগমের মুখ বিকৃতি করে কথা বলার ধরণে উনি কী বোঝাতে চাইলো তা অনু বেশ বুঝতে পারলো।

সে কী বুঝে আবারো পাতিলের দিকে ফিরে যেতে যেতে জবাব দিল,
“কী করবো বলুন? আমাকে তো কেউ চায় না। তাই নিজেরটাতো নিজেরই খাওয়া লাগবে।” বলেই সে তার প্লেটে পাতিল থেকে মাছের বড়ো মাথাটা আরেকটা বাটিতে নিয়ে ফেলল।
আছিয়া বেগম ভেবেছিল, অনু তাদেরকে দেখে প্লেট রেখে দিতে ফিরেছে কিন্তু অনু তা না করে যখন পাতিল থেকে মাছের মাথাটা নেয় তখন আছিয়া বেগম দ্বিতীয়বারের মতো বিস্ময় হলেন। তার ভাবতে কষ্ট হচ্ছে, এটা অনুই তো?

অনু প্লেট আর মাছের মাথার বাটিটা নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলো। সে ইচ্ছাকৃত ভাবে আছিয়া বেগমকে জিজ্ঞেস করলো,
“তাকিয়ে রইলেন যে?”

আছিয়া বেগম অনুর প্লেটে মাছের মাথাটার দিকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি এটা খাবে?”

“হ্যাঁ, আমার বাবা এনেছে আর আমি খাবো না তা হয় না কি! আমার বাবা তার মেয়ের জন্য এনেছেন আর সেটা দিয়ে আমি না খেয়ে থেকে অন্যরা ফুর্তি করে খাবে এটা তো হয় না।”বলেই সে দুজনকে অবাক দৃষ্টিতে রেখে রুমের দিকে পা বাড়ালো। শেষ কথাটা সে রিহির উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবেই বলেছিল। এইবার তার একটু হলেও শান্তি লাগছে। মনের কথা বলে দিলে অনেক হাল্কা লাগে। মনে আর চাপ সৃষ্টি হয় না। কিছুটা হলেও নিজেকে মুক্ত মনে হয়।

আছিয়া বেগম বিস্ময়ে হা হয়ে গেলেন। যে তার ছেলেকে এক মুহূর্তের জন্য ছাড়া করে না সে আজ নিজে আগে খেয়ে নিচ্ছে। তাওবা একদম ভালো পিসটা নিয়ে! এটা তার হজম হচ্ছে না।

রুমে গিয়েই অনু মাছের বড়ো পিস আর মাথাটার দিকে তাকিয়ে রইল। বিয়ের এই দুই বছরে সে কোনোদিন মাছের বড়ো পিস আর মাথাটা নিজের প্লেটে নেয়নি। আদিত্যকে বড়ো পিস দেওয়ার পাশাপাশি শাশুড়িকে মাছের মাথাটা দিতো। যাতে সে আদর্শ বউ হতে পারে। তবুও যখন শাশুড়ির মন পেল না তখন এসব করে তো আর লাভ নেই। কতই না ভালো বউ হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিছুতেই হতে পারলো না। অনুর নিজের উপর রাগ হলো। সে ব্যর্থ হয় জেনেও বারবার একই কাজ করতো কারণ ভেবেছিল হয়ত এটাই তার স্থায়ী ঠিকানা। যত তাড়াতাড়ি আপন করে নিবে ততো তারই ভালো। সে ভেবেছিল, আদিত্যর পাশাপাশি তার শাশুড়িও একদিন তাকে কাছে টেনে নিবেন। তাই তো বারবার ওদের চোখে ভালো হওয়ার চেষ্টা করতো। বাধ্য মেয়ে হয়ে থাকতো। আর আজ যখন কাছেরটাই পর হয়ে গেল তাহলে তার তো এসব করার আর মানে হয় না। এতদিন যাবৎ এসব করার জন্য তার নিজের উপর ঘৃণা হলো। অনুর এখন নিজের জন্য তীব্র আফসোস হচ্ছে।

#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। লেখার হাত হারিয়ে গিয়েছিল তাই অগোছালো আর ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। দরকার হলে বলে দিবেন, শুধরে নিবো। করতে করতেই তো শেখা।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here