#চৈত্র_শেষে
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব ৬
আদিত্য ধৈর্য্য ধরতে পারলো না। সে মায়ের উপর অধৈর্য কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“অনু কী হয়েছে মা?”
আছিয়া বেগম অতি খুশিতে যেন উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি খুশিতে কথা বলতে ভুলে গেছেন। আপদ নিজে থেকে বিদায় হয়েছে বলে কথা।
“অনু নেই।”
“কী???” আদিত্যর বিস্মিত কণ্ঠে আছিয়া বেগম খুশিমনে উত্তর দিলেন,
“হ্যাঁ, অনু নেই। আপদ নিজে থেকে বিদায় হয়েছে বাবা। সব কাজ শেষ আমাদের। এতদিনের ইচ্ছে।” আছিয়া বেগমের কণ্ঠে যেন খুশি উপচে পড়ছে।
কিন্তু আদিত্যর মুখভঙ্গিমা দেখে কিছু বোঝা গেল না। সে মায়ের কথা বিশ্বাস করতে পারলো না। আদিত্য উদভ্রান্তের মতো গেস্ট রুমের দিকে দৌড়ে গেল।
রুমে ঢোকার আগেও আদিত্যর মনে হলো মা মিথ্যে বলছে। অনু আছে। ও এতো সহজে চলে যাওয়ার পাত্রী নয়।
কিন্তু রুমে ঢুকে দেখে সত্যিই কেউ নেই। রুমের কোথাও অনুর ছিটেফোঁটাও নেই। আদিত্যর বিশ্বাস হলো না। সে মানতে চাইলো না। অনু তাকে এভাবে রেখে চলে যাবে সে এটা ভাবতে পারছে না।
সে হন্য হয়ে ওয়াশরুম আর সম্পূর্ণ ঘর একে একে দেখতে থাকে। আদিত্যর মুহূর্তের মধ্যে মনে পড়লো, অনুর মন খারাপের সময় সে ছাদে থাকে। আদিত্য দৌড়ে ছাদের দিকে এগিয়ে গেল। সে ছাদের এপাশ ওপাশ হন্য হয়ে খুঁজলো। কোথাও অনু নেই। আদিত্য মাথা চেপে ছাদের কিনারায় এসে দাঁড়ালো। যে কিনারাতে অনুর গাছগুলো রয়েছে। গোলাপ গাছে একটা লাল টকটকে গোলাপ ফুটে আছে। যেন গোলাপটা আদিত্যর দিকে তাকিয়ে টিটকারির সহিত হাসছে।
আদিত্য বেশ কিছুক্ষন নীরব দৃষ্টিতে ওটার দিকে তাকিয়ে রইল। মুহূর্তের মধ্যে সে আবারো দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে গেল।
আদিত্য এক পা দু পা করে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল। রান্নাঘরে পুরোপুরি পা রাখতেই সে হতাশ হলো। না অনু নেই। সে ভেবেছিল, অনু রান্নাঘরে থাকবে। আর আদিত্যর এভাবে খোঁজাখুঁজি দেখে অনু চুলায় বসানো তরকারিতে খুন্তি নাড়তে নাড়তে জিজ্ঞেস করবে,
“কী! ভয় পেয়ে গেলে না কি?”
আদিত্য নিজেকে সাহসী ভাব করে বুকে দুহাত গুঁজে জানাবে,
“না, ভয় কেন পাবো?”
“এইযে আমাকে হারানোর জন্য।”
“একদম না।”
“তাতো দেখলামই। কীভাবে হন্য হয়ে খুঁজছো।” বলেই অনু নিজের ধ্যান তরকারিতে দিবে। আর আদিত্য দেয়ালে হেলান দিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে থাকবে।
আদিত্য বসে পড়লো। তার আশা ছিল অনুকে সে রান্নাঘরে পাবে। কিন্তু না। তার মায়ের কথায় সঠিক। অনু নেই।
আদিত্য রান্নাঘরে গিয়েই বসে পড়ে। সে ভেবেছিল, রান্নাঘরে অন্তত অনু থাকবে। কিন্তু না, সম্পূর্ণ রান্নাঘর খালি। চুলার ধারের জায়গাটা খালি পড়ে আছে। আদিত্যর মনে হলো, ওখানে অদৃশ্য অনু তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সে মেঝেতে বসে পড়ে।
মিনিটের মধ্যে আছিয়া বেগম দ্বিগুন খুশি হয়ে ফিরে আসে। হাতে একটা কাগজ।
“আদিত্য ”
আদিত্য ফিরে তাকালো।
আছিয়া বেগম ছেলেকে দেখে চমকে গেলেন। ছেলের এমন কষ্টের মুখ দেখে তিনি চমকানোর সাথে সাথে বিস্মিত হলেন।তাহলে কী তিনি ভুল ছিলেন! আদিত্যর দুর্বলতা এখনো রয়ে গেল!
আদিত্য মায়ের হাতের কাগজের দিকে তাকালো।
ঐটা কী! আদিত্য কেড়ে নিল কাগজ টা। ডিভোর্স পেপার! সে ভেবেছিল, অনু কোনো চিঠি লিখেছে কিন্তু না। আদিত্য উল্টেপাল্টে দেখলো। এটা তো সত্যিকারের ডিভোর্স পেপার। এইতো হ্যাঁ, অনুর সাইন জ্বলজ্বল করছে।
আদিত্য মাথা চেপে আবারো বসে পড়লো। তার মানে অনু কালকে রাতে সব শুনে নিয়েছে! আদিত্য মাথা ধরে ফেলল। সে ভুল করে ফেলেছে। সকালের স্বপ্নটাতে সে অনুকে অনুভব করেছে। অনু তাকে ছাড়া চলে গেলে থাকবে কীভাবে! কিন্তু তার তো খুশি হওয়ার কথা! তবুও কোথাও জানি এতো খারাপ লাগা কেন কাজ করছে!
——–
অনু জানালার ধারে বসে আছে। দেয়াল ঘড়িটার দিকে চোখ পড়তেই দেখল বেলা এগারোটা বাজে। অনুর চোখ গড়িয়ে জল পড়লো।
আদিত্যর কথা মনে পড়ছে। আচ্ছা, এখন আদিত্য কী করছে! আদিত্যর কী অনুকে মনে পড়ছে! আদিত্য অনুর সাইন করা ডিভোর্স পেপারটা পেয়েছে তো?
অনু চোখের জল মুছে নিল। সে আপনমনেই তার কথার উত্তর খুঁজে নিল। পেপার পাবে না কেন! হয়ত এই মুহূর্তে আদিত্য আর তার মায়ের সবচেয়ে খুশির সময়। বিনা কসরতে তাদের বোঝা বিদায় নিলো যে!
“এসে গেছে এসে গেছে। শরবত এসে গেছে।” বলেই আনিস মিয়াকে রুমে ঢুকতে দেখেই অনু তড়িঘড়ি করে চোখের পানি মুছে নিল।
আনিস মিয়া খেয়াল করলেন বিষয়টা। তিনি শরবতটা মেয়ের দিকে বাড়িয়ে ধরলেন।
“ঐখানে রাখো বাবা। আমি পরে খেয়ে নিবো।”
“উহুম। ওখানে রাখার জন্য তো আমি এটা আনিনি। তুই এখনই খাবি আমার সামনে।”
আনিস মিয়া নাছোড়বান্দা। অনু বাধ্য হয়ে শরবতটা মুখে তুলল।
“কারোর জন্য নিজের শরীর কেন দুর্বল করবি?”
অনু তাকালো। আনিস মিয়া চোখ দিয়ে মেয়েকে ভরসা দিতেই অনু বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।
আনিস মিয়া মেয়েকে পরম আদরে বুকের মাঝে আগলে নিলেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আদুরে ভঙ্গিতে শুধালেন,
“বাবাকে বল।”
“বাবা…” বলেই অনু ডুকরে কেঁদে উঠল।
মেয়ের কান্নার মাঝে আনিস মিয়া কোনো শব্দ ব্যয় করলো না। সে সময় দিল। মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
অনু বেশ কিছুক্ষন ফুঁপিয়ে নাক টেনে বলা শুরু করলো,
“বাবা? আমি তোমাকে ছাড়া জীবনের বড়ো সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম যে আদিত্যকে বিয়ে করবো। তোমাকে না বলে সেটা হয়ত আমার ভুল ছিল।”
আনিস মিয়া মেয়ের গালে হাত দিয়ে আদুরে ভঙ্গিতে শুধালো,
“যেটা হয়ে গেছে সেটার জন্য একদম আফসোস করবে না। আর নিজেকে অপরাধীও ভাববে না। যেটা কপালে ছিল সেটাই হয়েছে।”
অনু জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজালো। তারপর নিজেকে প্রস্তুত করলো,
“বাবা আমি সেই একই আরেকটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সেটা করেও ফেলছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করবে তো?”
“তুই আমার মেয়ে। আমি ক্ষমা করবো না তো কে করবে? এভাবে আমাকে ছোট করিস না মা।”
“তোমার আর ওই অপছন্দের বাড়িতে যেতে হবে না বাবা। আমি সব ছেড়ে এসেছি।”
আনিস মিয়া চমকালেন না। তিনি কালকের রাতে অনুর ফোনে কিছুটা হলেও আন্ডাজ করেছিলেন এবং আজ অনুকে বাড়িতে দেখে পুরোপুরি আন্ডাজ করে নিয়েছেন।
আনিস মিয়ার নীরবতায় অনু আবারো বলল,
“আমি আদিত্যকে ডিভোর্স দিয়ে একেবারের জন্য চলে এসেছি।”
এইবার আনিস মিয়া খানিকটা চমকালেন। তিনি এতক্ষন যাবৎ ভেবেছেন, অনু হয়ত আদিত্যর সাথে ঝগড়া করে এই বাড়িতে এসেছে। হয়ত রাগের বশে চলে এসেছে। তিনি ভাবতেও পারেনি যে কাহিনী এতো বড়ো। তার মেয়ে তাকে ছাড়া এতবড়ো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তা ভাবতেই একটু খারাপ লাগা কাজ করছে আনিস মিয়ার।
“দিয়ে ফেললি ডিভোর্স?”
অনু মাথা নিচু করে ফেলল।
“হ্যাঁ বাবা।”
“তাহলে তুই কালকে এটার কথায় বলতে চেয়েছিলি?”
আনিস মিয়াকে এতো প্রশ্ন করতে দেখে অনু ভয় পেয়ে গেল। সে জানালো, “প্লিজ বাবা আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার আর কোনো উপায় ছিল না। ”
আনিস মিয়া বেশ কিছুক্ষন নীরব রইলেন। তিনি মাথা ঠান্ডা করে ভাবলেন। এই মুহূর্তে তার খারাপ লাগা থেকেও বেশি কষ্ট তার মেয়ের। নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছে সে। যার জন্য বাবার বিরুদ্ধে গিয়েছে তাকে চিরতরে মুক্তি দিয়ে ফেলা। এটা কোনো সহজ বিষয় নয়। নিশ্চই এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে কাহিনী রয়েছে। আর সেই কাহিনী যে অতি সাধারণ নয় তা তিনি ভালোমতোই বুঝেছেন। মেয়ের কষ্টের কথা চিন্তা করে তিনি আর কিছু বলতে পারলেন না।
অনু বাবার দিকে তাকালো, “বাবা, তুমি অন্তত আমার কাছ থেকে দূরে চলে যেও না প্লিজ। কথা দিচ্ছি, পরেরবার থেকে তোমার একটা কথাও আমি অমান্য করবো না।”
আনিস মিয়া মেয়ের দিকে তাকালেন। অনুর চোখে তিনি একরাশ ভয় দেখতে পেলেন। মেয়ের মুখভঙ্গিমা সহজ করার লক্ষ্যে তিনি কঠোর হয়ে জানালেন,
“ক্ষমা করবো এক শর্তে।”
অনু ভয় পেল। সে প্রশ্নবোধক চাহনীতে বাবার দিকে তাকালো।
মেয়ের জিজ্ঞাসু দৃষ্টির প্রেক্ষিতে আনিস মিয়া সোজা হয়ে বসে জানালো,
“এভাবে তো জীবন চলবে না। তোকে আবার সব নতুন করে শুরু করতে হবে।”
অনুর মনে মুহূর্তের মধ্যে বিরূপ চিন্তাভাবনা চলে এলো। সে উত্তেজিত হতে গিয়েও হলো না কারণ এমনিতে বাবাকে অনেক আঘাত দিয়েছে সে। আর দিতে পারবে না। তবু কোনোরকম নিজেকে সামলে উত্তর দিল,
“বাবা তুমিও?”
“দেখ মা, জীবনটা তোর। তোর তো নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে।”
অনু অকপটে জবাব দিল, “আমার সময় প্রয়োজন।”
তা শুনেই আনিস মিয়া একটা মলিন শ্বাস ফেললেন।
#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। অগোছালো হওয়ার জন্য দুঃখিত। ভুলভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।পেজের রিচ কমে যাচ্ছে, তাই যাদের নিউজফীডে গল্প যাচ্ছে তারা কষ্ট করে একটা কমেন্ট হলেও করার অনুরোধ রইল। প্লিজ রেসপন্স করবেন।)
যারা আর্ট পছন্দ করেন তারা চাইলে এই পেজটি ঘুরে আসতে পারেন :https://www.facebook.com/profile.php?id=61564168227793