#প্রেমসুধা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৫
আকাশ-পাতাল ধ্যান ধরে ভাবছে পৌষ। মাথায় ওর যে কিড়া উঠেছে তা এত সহজে শান্ত হবার নয়। তৌসিফ মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভিং করছে। মাঝে মধ্যে ফাঁকফোকর দিয়ে পৌষ’কেও দেখে নিচ্ছে। মেয়েটা এত উতলা হয়ে থাকে যা বলার বাইরে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সোহা শুধু তৌসিফ’কে লোফার বের করে দিয়েছিলো। ব্যাস এই মেয়ে কান্ড ঘটিয়ে এলো। অগত্যা পৌষ’র দেয়া ভেলভেটের লোফার পরলো তৌসিফ। এতে অবশ্য পৌষ শান্ত আছে কিছুটা। আচমকা পৌষ সিটি বাজাতেই তৌসিফ ওর দিকে তাকালো। ভ্রুঁ উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো,
— কি?
— গাড়ি থামান।
— হানি লেট হচ্ছে।
— তাতে আমার কি?
ফোঁস করে শ্বাস ফেললো তৌসিফ। গাড়িটা থামাতেই জানালা খুললো পৌষ। পাশে পুড়া ভুট্টা বিক্রি করছে। পৌষ জোরে হাঁক ছেড়ে ডাকলো,
— ওয় ভুট্টা ওয়ালা মামা। একটা ভুট্টা দিন।
লোকটা ভুট্টা এনে দিতেই পৌষ বিশ টাকা দিলো। যদিও তৌসিফ দিতে চাইলো টাকা কিন্তু পৌষ মুখ ঝামটা দিয়ে নিজেই টাকা দিলো। লোকটা বিশ টাকা দেখেই বললো,
— ভুট্টা ত্রিশ টাকা খালাম্মা।
পৌষ মুখ ভেটকিমাছের মতো করে বললো,
— ত্রিশ টাকা? এই ভুট্টা বিশ টাকা খেয়ে এলাম আজীবন। আপনার ভুট্টা কি মহাসাগরের নিচে জন্মায় যে ত্রিশ টাকা?
লোকটা কিছু বলতে চেয়ে ও যেন মিনমিন করলো। পৌষ ব্যাগ হাতড়ে দেখলো ভাঙতি নেই তাই বলে উঠলো,
— আপনার খালুজানের কাছে চান। উনি দিবে দশ টাকা।
তৌসিফ আহত চোখে তাকালো। দশ টাকা দিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে শুকনো মুখে বললো,
— আমাকে তোমার খালুজান মনে হয় পৌষরাত?
পৌষ জহুরী চোখে তাকালো। পলক ফেললো পিটপিট করে অতঃপর ভুট্টায় কামড় দিয়ে বললো,
— উহ। টক বেশি।
তৌসিফ আশাহত হলো। এই মেয়ে কি দিয়ে তৈরী? কোন মাটি? মাটির জাত কি? তৌসিফের জানতে মন চাইলো। পৌষ হঠাৎ ওর মুখের সামনে ভুট্টা ধরে বললো,
— নিন কামড় দিন৷ পরে আমার পেট ব্যাথা করবে।
— করবে না৷ নজর দেই নি।
— বিশ্বাস করি না।
— সত্যি বলছি।
— ঋণ রাখে না পৌষ। দশটাকা আপনার ছিলো তাই চার পাঁচ কামড় খাবেন৷
তৌসিফ কথা বাড়ালো না। ড্রাইভিং করতে করতে ভুট্টা কামড়ে খেলো। খেতে খেতে সে পুরোটাই খেলো। পৌষ অবশ্য কিছু বলে নি তাতে। শেষে চার পাঁচটা দানা অবশিষ্ট ছিলো যা পৌষ খেলো। তৌসিফের এসব খাওয়া হয় না৷ সর্বোচ্চ বয়েল কর্ণ খায় ও। এভাবে পুড়া টা খাওয়া হয় নি কখনো।
পৌষ হয়তো বুঝলো তাই কিছু বললো না ওকে।
ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে ই তৌসিফ বললো,
— আমি নিতে আসব আজ।
— কোন দুঃখে?
— এত ঝগড়া পারো তুমি। এই দিক দিয়ে ই বাসায় যাব তাই বললাম।
— আচ্ছা। আমি গেলাম তাহলে।
বলে অপেক্ষা করলো না পৌষ। গেইট পেরিয়ে ভেতরে চলে গেল।
__________________
দীর্ঘ এক মাস পর শশুর বাড়ী এসেছে হেমন্ত। এতদিকের ঝামেলা পোহাতে পোহাতে এদিকে পা রাখার সময় ই হয় নি। শ্রেয়া অবশ্য বুঝদার মেয়ে। সহসা রাগ করে না। তবে আজ রেগে আছে কি না হেমন্ত বুঝতে পারছে না। সাথে ওর কোলে, কাঁধে, হাত ধরে আর পিছু পিছু কাজিন গুলো ও এসেছে। তাদের একমাত্র ভাবী শ্রেয়া। ভাবী’কে দেখে না আজ মাস খানিক হলো। ইনি,মিনি দরজা খুলেই হেমন্তের কোল থেকে নেমে শ্রেয়ার রুমে দৌড় দিলো৷ পিহা ও ঢুকলো পিছু পিছু। হেমন্ত’কে দেখেই ওর শশুর শাশুড়ী তড়িঘড়ি শুরু করলো। হেমন্ত তাদের ব্যাস্ত হতে না বললো। পিছনে দুই ভাত ভর্তি সদাই নিয়ে ঢুকলো চৈত্র আর জৈষ্ঠ্য। শ্রেয়ার বাবা এগিয়ে আসতেই দু’জন বিনয়ের সহিত সালাম জানিয়ে বললো,
— আমরা ভেতরে রাখছি আঙ্কেল।
একদম কিচেনে গিয়ে রাখলো সব। হেমন্ত শুধু শাশুড়ী’কে বললো,
— মা ঐ ব্যাগটাতে কাঁচা মাছ। ওগুলো ফ্রীজে রেখে দিন। কাটিয়ে এনেছি।
ভদ্র মহিলা খুবই সন্তুষ্ট মেয়ের জামাইয়ের উপর। ছেলে টা অনেক বুঝদার। এমন সংসারী, ভদ্র, নম্র ছেলে আজকাল মেলা মুশকিল। এই যে সে মেয়ের জামাই তার কি দায় মাছগুলো কাটিয়ে আনার? তবুও সে এই কাজ করবে। বাড়ীতে ছেলে না থাকায় যেই কাজ গুলো করা ঝামেলার তা সব হেমন্ত করে দিবে। ভদ্রলোকের বয়স হয়েছে। যথাযথ সব কাজ সামাল দিতে সমস্যা হয় কিন্তু হেমন্তের মতো মেয়ে জামাই থাকাতে সেই কষ্ট লাঘব ঘটেছে। গত সপ্তাহে নিজে আসতে পারে নি তাই মানুষ দিয়ে বাজার পাঠিয়ে দিয়েছে। কোন দায় ছাড়াই সে এই কাজগুলো করছে।
হেমন্তের শাশুড়ী ঠান্ডা শরবত বানিয়ে দিতেই জৈষ্ঠ্য আর চৈত্র এক চুমুকে শেষ করে সোজা হেটে ভাবীর রুমে চলে গেল। অসহায়, লাচার ভাবে বসে রইলো হেমন্ত। বউটাকে সরাসরি দেখে না মাস হলো। ছুঁয়ে দেখা হয় না। ভাগ্য ক্রমে একটা দুটো চুমু ও খাওয়া হচ্ছে না।
শশুর শাশুড়ী’র সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনা চললো। মেইন মুদ্দা অবশ্য পৌষরাত। ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রলোক যথেষ্ট বুঝদার। সবটা শুনে শুধু বললেন,
— ওর কপালে সুখ খুবই কম ছিলো হেমন্ত। যার মা, বাবা নেই আসলে তারা কোনদিন ই প্রকৃত সুখ পায় না৷ আমাদের পৌষ হয়তো এখন সুখ পাবে।
— ও মানিয়ে নিতে পারছে না। অভিমান ধরে বসে আছে। প্রথম দিন যখন দেখলো আমাকে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল। আমার অনেক আদরের এই বোনটা৷ ফাস্ট কাজিন। মায়া বা টান যেটাই বলুন একটু বেশি।
— চিন্তা করো না বাবা৷ সময় মানুষ কে মানাতে শিখিয়ে দেয়। পৌষ নাদান। শিখে যাবে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হেমন্ত এদিক ওদিক তাকালো। ওর শাশুড়ী একটু হেসে বললো,
— রেগে লাল হয়ে আছে। দেখো মানে কি না।
— কেন যে কথা বুঝে না।
— এসেছো না তুমি। তোমাকে দেখলেই রাগ পরে যাবে।
শশুরের মুখে এহেন কথা শুনে কিঞ্চিত লজ্জা পেলো হেমন্ত। পুরুষের এই লাজ বড়ই সুন্দর। হেমন্ত উঠে দাঁড়ালো। পা বাড়ালো তার প্রেয়সীর রুমে। ঢুকতেই দেখা মিললো খাটে গোল হয়ে বসা শ্রেয়ার দিকে। ঢোলা একটা ফ্রক পরে মাথায় ওরনা দিয়ে আছে মেয়েটা। গালটা ফুলেছে একটু। মোটা হয়েছে অল্পস্বল্প। হেমন্তর খারাপ লাগলো। বউটাকে দেখে না আজ ঠিক গুনে গুনে সাতাস দিন। মুখের কথা বুঝি এটা? ভিডিও কলে কি মন মানে? ইনি,মিনি একদম লেগে ঘেঁষে আছে শ্রেয়ার কাছে। এদের কথার ও জের সেই পৌষ’কে ঘিরে। মন খারাপ করে কথা বলছে শ্রেয়া।
হেমন্ত গলা খেঁকালো। শুধালো,
— বের হ সবগুলো।
সবগুলো দাঁত বের করে হাসলো। এরা জানে হুরুমতারুম করা হেমন্ত ভাই এখন ম্যাউ ম্যাউ করবে। যদিও তাদের ভাবী অতি নরম মানুষ তবে কেন জানি হেমন্ত ভাই তাকে আরো নরম মনে করে আগলে রাখে। কিছু পুরুষ ই থাকে এমন। এরা হয় অতি যত্নশীল। দায়িত্ববান। নিষ্ঠা পক্ষপাতমুক্ত। একদম হাসবেন্ড ম্যাটারিয়াল। একে একে সবগুলো হেমন্ত ভাইকে দেখে দাঁত কেলাতে কেলাতে বের হতেই ঝড়ের বেগে দরজা লাগালো হেমন্ত৷ তার অবশ্য দেড়ী হলো না জানালা লাগিয়ে একহাতে পর্দা ও টেনে দিলো।
শ্রেয়া তখন ও বসা খাটে। টলমলে চোখে তাকিয়ে সে। হেমন্তর বুকে ঝর উঠে গেলো মুহুর্তে ই৷ এক লাফে খাটে উঠে শ্রেয়ার কাছে চলে এলো সে। চোখের পানিটুকু পরার সুযোগ না দিয়েই দুই চোখ ভরে চুমু খেলো। পরণে থাকা শার্টটা খুলে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো শ্রেয়া’কে। শ্রেয়া ফুঁপিয়ে উঠলো। হেমন্ত অস্থির হলো। তার বুক চিনচিন করছে। রোজ কথা হতো তবুও আজ মনে হচ্ছে জনম বুঝি পেরিয়ে গেলো। শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
— শ্রেয়ু কাঁদে না। বাবু প্লিজ কাঁদে না।
নরমমনা শ্রেয়া বড়ই স্বামী সোহাগী। এতগুলো দিন পর তার আগমনে রাগ পুষে রাখতে পারলো না সে। দুই হাত মেলে তার পিঠ আঁকড়ে ধরলো। হেমন্ত আলগোছে ওর ফ্রকটা খুলে দিলো। অতি যত্নে বিছানায় শুয়ে দিয়ে চোখ দুটো মুছে দিয়ে বললো,
— কাঁদলে ও কষ্ট ওতো কাঁদে শ্রেয়ু।
বলেই চার মাসের পেটটা’র দিকে তাকালো হেমন্ত। হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
— কেমন আছেন আপনি আব্বু?
— ও রাগ করেছে। আমাকে বলেছে কথা বলবে না।
— তাই?
বলেই পেট ভর্তি চুমু খেতে লাগলো হেমন্ত। এই সাতাশটা দিন যতগুলো আদর ছিলো সবগুলো পুষিয়ে দিয়ে হেমন্ত উপরে উঠে এলো। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো শ্রেয়া’কে। নীরবে তাদের প্রেম চললো। সবটা চললো একদম নীবিড় ভাবে।
.
বুকের মধ্যে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে শ্রেয়া। ওর চুলে হাত চালাচ্ছে হেমন্ত। শ্রেয়া গাঢ় গলায় বললো,
— পৌষ টা রেগে আছে।
— হু।
— আপনি যান নি আর?
— গেলাম গতকাল। ঘুরিয়ে আবার বাসায় দিয়ে এলাম৷ জানো শ্রেয়ু মনে হলো আমার কলিজাটা কেটে রেখে এলাম।
শ্রেয়া’র চোখ গলিয়ে পানি পরলো। হেমন্তের বুক ভিজলো৷ শ্রেয়ার কপালে চুমু দিয়ে বললো,
— মন খারাপ করো না তুমি পাখি। জানো ই তো রাগ পুষে রাখতে পারে না ও। বড্ড জেদী কি না৷ মনে জমিয়ে রাখে না কিছু।
— আমি যদি বুঝতাম এমন কিছু হবে তাহলে এখানে আসতাম ই না।
— তোমাকে আসার অনুমতি দেয়া হয়েছিলো ই এরজন্য যাতে এসবে তুমি স্ট্রেস না নাও।
— পৌষ’কে দেখতে যাব।
— এখন না।
— ওকে সত্যি টা বলেছেন?
— অর্ধেক।
হেমন্তের বুকে মাথা এলিয়ে রাখলো শ্রেয়া। তার আফসোস হয়। এক প্রকার জোর করে ই বাবার বাসায় এসেছিলো ও৷ শশুর থেকে অনুমতি নিয়েছিলো এক মাসের। আজ সাতাশ তম দিনেই হাজির তার জামাই। অনেক ভালোবাসে কি না৷ তাদের সেই ভালোবাসার অস্তিত্ব আসবে অতি শিঘ্রই। শ্রেয়া এতে খুব বেশি খুশি অথচ এই বাবুকে ঘিরে সবচাইতে বেশি পা*গল তো পৌষ। নামটা ও নাকি সে রাখবে।
___________________
তৌসিফ পৌষ’কে বাসায় নামাতেই হঠাৎ কল পেয়ে বেরিয়ে গেলো৷ খেয়ে দেয়ে এক ঘুম দিয়ে উঠলো পৌষ৷ রান্না ঘরে ঢুকে এক প্যাকেট চিপস নিয়ে বিশাল বড় ড্রয়িং রুমে আরামদায়ক কাউচে হাত পা উঠিয়ে বসলো। টিভিতে একটা কার্টুন চ্যানেল দেখতে দেখতে মুখে যতটা পারলো চিপস ঠুসতে লাগলো পৌষ। এভাবে মুখ ভরে চিপস না খেলে ওর শান্তি লাগে না।
আচমকা মিনু পাশ দিয়ে যেতে যেতে বললো,
— এটা আমার টিভি দেখার সময়।
— দলিল দেখা।
মিনু নাক ফুলালো। সোহার রুমে গিয়ে বিচার দিলো,
— আপা টিভি দেখতে দিচ্ছে না।
সোহা হাতে লোশন লাগাতে লাগাতে বললো,
— এই আপদ যে কবে বিদায় হবে।
— আপদ আসতে দিলে কেন আপা?
— তুই বুঝবি না। চল।
সোহা ঘরে ও যথেষ্ট পরিপাটি হয়ে থাকে। আজও তাই। দামি পোশাক তার পরনে। সোহা একদম পৌষের সামনে দাঁড়ালো। আচমকা টিভির সামনে দাঁড়াতেই পৌষ চমকালো। মুখে চিপস থাকার কারণে কোন মতে বললো,
— কিইই?
— এই সময় মিনু টিভি দেখে।
মুখের টুকু শেষ করে পৌষ বললো,
— আমি কি ওর চোখ ধরে রেখেছি?
— এসব বাচ্চাদের জিনিস অফ করে ওকে দেখতে দাও।
— আমি এই বাড়ীর কে?
সোহা হকচাকালো এহেন প্রশ্নে। পৌষ নিজেই বললো,
— বউ আমি। তৌসিফ তালুকদারের বউ। চোখের সামনে থেকে গুনে গুনে দশ হাত দূরে যান।
সোহা দাঁত কটমটিয়ে উঠতেই হাতে থাকা রিমোট টা ছুঁড়ে পাশের কাউচে ফেলে পৌষ। উঠে চলে যায় অন্য দিকে। মিনু এসেই বাংলা সিরিয়াল চলালো। সোহা বসলো ওর পাশে।
পৌষ এদিক ওদিক হেটে সোহা’র রুমে নজর দিলো। এত ঝাকানাকা রুম দেখে ভেতরে ঢুকে ও। ঢুকা মাত্র ই অবাকের শেষ প্রান্তে পৌছালো ও। কোন কাজের মেয়ের রুম এতটা বিলাসিতা পূর্ণ কেন হবে? আলমারি খুলেও আরেকদফা চমকালো ও।
শক্ত চোয়াল করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। কিচেনে পুণরায় ঢুকতেই বুয়া এসে বললো,
— কিছু বানিয়ে দিব ছোট ভাবী? সন্ধ্যায় কি খান আপনি?
— চলো চা খাই।
বুয়া এক কাপ বসাতেই পৌষ বললো,
— আমরা তো টোটাল পাঁচজন আছি। চাচা সহ ছয়জন৷ ছয়কাপ বসাও।
বুয়া আশ্চর্য হলেও তা ই করলো। পৌষ মিনি টেবিলে চা নিয়ে বসতেই সোহা কোথা থেকে এসে বুয়ার সাথে ধমকে উঠলো,
— কখন পাসতা করতে বলেছি বুয়া? আমার গ্রীণ টি কোথায়? মিনু’র ক্ষুধা পেয়েছে।
পৌষ ই বুয়াদের বলেছে ওর সাথে চা খেতে। একা মজা লাগে না চা খেতে। সোহার আচরণে উঠে দাঁড়ালো পৌষ। উঁচু গলায় বললো,
— কোন সাহসে তাকে কাজের বুয়া ডাকো? নিজে কি খেয়াল আছে? বয়সে তোমার থেকে বড় উনি। উনি কেন তোমাদের কাজ করবে?
সোহা দাঁত চেপে বললো,
— তোমার সাথে কথা বলছি না আমি মেয়ে। চুপ থাকবে একদম।
পৌষ ওর হাতে থাকা চা ছুঁড়ে মা’রলো সোহা’র দিকে। ভাগ্য ক্রমে শরীরে লাগে নি। সোহা’র সাদা পোশাকে চায়ের দাগ বসে গেলো। এহেন অপমানে সোহা রাগে কটমট করে বলে উঠলো,
— বেজন্মা কীট কোথাকার। আজ বাসায় ফিরুক….
আর কিছু বলার আগেই গ্লাস ভর্তি পানি ওর মুখে মা’রলো পৌষ। সোহা’কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওর হাত ধরে টেনে দরজা খুলে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে বললো,
— তোর কাজ আজ থেকে এই বাড়ীতে নিষিদ্ধ। যা ভাগ *****।
একদম সেই মুহুর্তে ই তৌসিফ এলো। সিঁড়ি বেয়ে তারাতাড়ি এসে আশ্চর্য গলায় শুধালো,
— কি হয়েছে?
— বা*ল হয়েছে। এই *** ভাগান এখান থেকে নাহলে আজ একে….
বলতে বলতে রান্না ঘড়ে ঢুকে কিছু না পেয়ে ডাল ঘুঁটনি নিয়ে এলো পৌষ। এসেই তা ছুঁড়ে মা’রলো সোহা’র দিকে। তৌসিফ হতভম্ব হয়ে গেলো মুহুর্তে ই। সোহা এতক্ষণ না কাঁদলেও তৌসিফ’কে দেখে কান্নার সুর তুললো। তৌসিফ বিরক্ত হয়ে বললো,
— চুপ করো সোহা।
বলেই উদ্দীগ্ন গলায় পৌষ’কে বললো,
— হানি, কুল ডাউন। আমাকে বলো কি হয়েছে।
বলতে বলতে ভেতরে ঢুকলো তৌসিফ। পৌষ রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো,
— একে এক্ষুনি বের করুন৷
বলেই তাকালো মিনু’র দিকে। মিনু ভয়ে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। পৌষ দাঁত খামটি মে-রে বললো,
— এটাকেও বিদায় দিন। কত টাকা পায় দিয়ে এখনই বিদায় করবেন নাহলে আমি চলে যাব।
তৌসিফ বুঝলো পরিস্থিতি বড়ই এলোমেলো। পৌষ’কে টেনে ওখান থেকে রুমে নিয়ে দরজা আটকালো বাইরে থেকে। সোহা তখনও বাইরে দাঁড়িয়ে। বুয়া’কে ইশারা করতেই পটপট করে সবটা বললেন উনি। তৌসিফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
— যে যার রুমে যাও।
সোহা বাইরে থেকে দৌড়ে এসে রুমে ঢুকলো। মিনু ও গেলো আপা’র কাছে। তৌসিফ বুয়াকে বললো,
— পৌষ’র জন্য রাতে আজ খাসি রেঁধো তো বুয়া। সাথে নাকি ঘন ডাল পছন্দ করে।
— ছোট ভাবী আজকে নিজের হাতে আপনার জন্য পায়া দিয়ে বিরিয়ানি রেঁধেছে মামা। সারাদিন বাসায় এসে এসবই করেছে। বললো আপনাকে নাকি সারাদিন জ্বালিয়েছে তার রিটার্ন দিবে। অনেক সখ করে রেঁধেছে মামা। আজ যদি ওটা খেতেন।
বুয়া সঙ্কোচ নিয়ে বললো অথচ তৌসিফের মুুখে ভর করলো এক রাশ মায়া। মেয়েটার মন একদম ই পরিষ্কার। কোন ঝামেলা নেই। যা আছে ওর মুখে। আজ কিভাবে জানি হাত ও চালিয়ে দিলো।
সমান তালে দরজায় ধাক্কাছে পৌষ। তৌসিফ বুকে ফুঁ দিয়ে ঢুকলো ভেতরে। ঢুকা মাত্র ওর বুকে ধাক্কা দিলো পৌষ। তৌসিফ দরজা লাগিয়ে পৌষ’কে শান্ত করতে চাইলো। তবে আজ পানি যে মাথার উপর উঠে গিয়েছে তা বুঝে গেলো তৌসিফ। পৌষ সোজা গিয়ে নিজের ভার্সিটি ব্যাগ হাতে তুলে ফোন বের করলো। তৌসিফ এগিয়ে এসে ফোনটা কেড়ে নিতেই পৌষ চোখ রাঙিয়ে তাকালো। তেঁজী গলায় বললো,
— আমার দ্বারা আর সম্ভব না। এমন রং তামাশা দেখা অন্তত আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনার ভুল ছিলো আমাকে বিয়ে করা। চোখের সামনে নোংরামি সহ্য করা সম্ভব না আমার দ্বারা।
তৌসিফ চোখ বুজে শ্বাস নিয়ে বললো,
— আমি তোমাকে বললাম ই তো।
— বিশ্বাস করি না।
— কি করতে পারি আর আমি?
— কাজের বুয়ার এমন বিলাসিতা! জাস্ট ওয়াও। এত দামী দামী কাপড়। আমাকে অন্ধ ভাবেন আপনি? আমি বুঝি না? আমি যা তা স্বীকার করি। স্বীকার করি আমি বেজন্মা….
তৌসিফ বাধ্য হয়ে ওর মুখ চেপে ধরে। লাল চোখে তাকিয়ে বলে,
— শান্ত থাকো।
ধাক্কা দিলো ওকে পৌষ। চিৎকার করে বললো,
— ডিভোর্স চাই আমার। আজ ই দিবেন৷ কাজের মেয়ে নিয়ে সুখে থাকুন আপনি।
“ডিভোর্স” শব্দ টা কানে বিঁধলো ওর। মনের কোণে বিঁধলো যেন। তীব্র বেদনায় ওর বুকে চাপ সৃষ্টি হলো৷ মুখে বললো,
— সংসার বাঁচাতে মিথ্যা বলা ও জায়েজ আমি নাহয় ওয়াদা ভঙ্গ করলাম।
পৌষ শুনতে চাইলো না। তৌসিফ’কে ঠেলে বের হতে নিলেই তৌসিফ বললো,
— সোহা আমার সৎ বোন হয় পৌষরাত।
#চলবে…..
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/