#আশিয়ানা
#পর্ব_২১
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_____________
ভোর সকাল। তূর্ণ আজ সকালে সে তার বাবার সঙ্গে গ্রামের জনপ্রিয় চায়ের দোকানে এসেছে। তূর্ণর বাবা যখন ওর সাথে ফোনে কথা বলতেন তখন থেকেই ভদ্রলোক এই চাওয়ালা এবং তার হাতের চায়ের ভীষণ প্রসংশা করেন। গতকাল সে গ্রামে এসেছে। ইতোমধ্যে একশোবার এই চায়ের নাম সে শুনে ফেলছে। সকাল ১০টা নাগাদ তূর্ণ সাদাফের কাছে যাবে। চলে যাওয়ার আগেই বাবার সামান্য শখ, ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চা খাবেন সেটা পূরণ করতে চান। তূর্ণ তার এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। ছোট্ট বাচ্চাদের থেকে শুরু করে যুবক যুবতী এবং বৃদ্ধরাও তার ভক্ত। তূর্ণকে দেখে প্রায় দোকানে ভিড় জমে গেল। কয়েকজন সাংবাদিক ভিড় ঠেলে সামনে এলেন। তূর্ণর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। তূর্ণর ম্যানেজার নাসের ওনাদের বারণ করলেন। এরপর তূর্ণর প্রোটেকশনে দাঁড়িয়ে যান। চায়ের দোকান থেকে বাবা জহির আহমেদের সঙ্গে বাড়ির দিকে রওনা হলো। বাড়ির ভেতর পা রাখতে সায়েদা বলে উঠলেন,
‘ আজ তো তুই চলে যাবি। তোর পছন্দের সব খাবার রান্না করছি। চটজলদি হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিল এসে বোস।’
তূর্ণ হাসিমুখে এগিয়ে গেল। সে গ্রামে যতক্ষণ আছে ততক্ষণ তাদের আদর ইচ্ছে মতো খেয়ে নিক। তূর্ণ খেতে বসল। সায়েদা তূর্ণর ডান পাশে দাঁড়িয়ে প্লেটে গরুর গোশতের টুকরো বেড়ে দিলেন। সবচেয়ে নামি-দামি খাবার হোটেলে সে খাবার খেয়েছে। কিন্তু সেখানে মায়ের হাতের খাবারের মতো স্বাদ পায়নি। তূর্ণ তৃপ্তি করে খেতে লাগল। সায়েদা হঠাৎই তার শাড়ির আঁচলে তূর্ণর গলা, কপালদ্বয় মুছে দিতে লাগল। অথচ দেয়ালে দুটো এসি ঠিকঠাক মতো চলছে।
তূর্ণ বলল,
‘ মা। তুমিও খেতে বসো। আর এসব কেন করছো? আমি ঘামছি না তো।’
সায়েদা আহ্লাদী গলায় বললেন,
‘ তুই খা বাবা। আমি তোকে খেতে দেখে প্রাণ জুড়োই। আবার কবে আসবি? ঠিক নাই।’
জহির আহমেদ প্রলম্বিত শ্বাস ফেলল।
‘ সব আদর ভালোবাসা কী শুধু ছেলের জন্য? আমার প্লেটেও কিছু দাও। সেই কখন থেকে খালি প্লেট নিয়ে বসে রয়েছি।’
১০টা বাজতেই বেরিয়ে পরে তূর্ণ। সময় একটু এদিকওদিক হলো না। সায়েদা কান্না জুড়ে দিলেন। জহির আহমেদ স্ত্রী কে নিয়ে বাড়ির ভেতর চলে যান।
সকাল শুরু হতেই লোকজন নিত্য দিনের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন শহুরে কিংবা গ্রাম সকাল হতেই লোকজন তার নিজনিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। গ্রামের বিশাল মাঠে কৃষকেরা কাজ করছেন। এবং রাস্তার পাশে লোকজন নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে ছুটে যাচ্ছেন। কিয়ৎকাল পরপর ব্যস্ত নগরীর টুংটাং রিক্সার বেল, গাড়ির হর্ন বেজে উঠার শব্দ কানে আসামাত্র তীক্ষ্ণ চাহনিতে জানালা ভেদ করে বাইরে তাকাল তূর্ণ।
গলা উঁচু করে বলল,
‘ এখানে এত ভিড় কেন?’
ড্রাইভার অবিজ্ঞ চোখে চারপাশ দেখে নিল। কিছু বুঝতে পারলো না। জানালার গ্লাস নামিয়ে একজন লোককে ডেকে দাঁড় করালো। এবং জানতে চাইল এখানে কি হচ্ছে? লোকটা ভিড়ের দক্ষিণ দিকটা দেখিয়ে বললেন,
‘ ওই খানে মেলা হইতাছে ভাই তাই মানুষের এত ভিড়।’
ড্রাইভার ফ্যাঁকাশে গলায় বলল,
‘ স্যার, এইদিক দিয়ে যাওয়া হবে না। লোকজনের যা ভিড় দেখছি গাড়ি একটুও সামনে নেওয়া যাচ্ছে না। আমরা অন্য রাস্তা দিয়ে যাই?’
‘ অন্য রাস্তা কেন? এখানে কি সমস্যা?’ সহসা তূর্ণ ফোন স্ক্রোল করতে করতে জবাব দিল।
ড্রাইভার বলল,
‘ এখানে মেলা হচ্ছে স্যার। ভিড় সহজে কমবে বলে মনে হচ্ছে না।’
তূর্ণ ফোনের স্কিন থেকে দৃষ্টি সরালো। এরপর তাকাল লোকজনের ভিড় জমা জায়গাটিতে। তূর্ণ তার ম্যানেজার এবং গার্ডদের চমকে দিয়ে গাড়ি থেকে নিচে নামল।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছিল ঠিক তখনী গাড়ির হর্ন বেজে উঠল । … সকাল সকাল কে এমন বিশ্রি … ক’দিন হল কলকাতায় বেশ জাঁকিয়ে ঠাণ্ডা পড়েছে। শীতের সকালের নরম রোদে উষ্ণতা নেই বরং হাওয়ার দাপটে হাড়ে হাড়ে কাঁপুনি ধরায়। শীতের অলস …
মরমী মনের মানুষ. কোনো এক মার্চের সকাল। গ্রামে গেছি বেড়াতে। সকালে, বেলা বাড়ার আগেই, হাঁটতে বেরিয়েছি। শহরের পার্কে কেডস পরে হাঁটার চেয়ে … আজ সকালেও সে নিত্য দিনের মতো তার বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নাসের গাড়ি থেকে নামলেন। তূর্ণর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন,
‘ এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন স্যার। লোকজন দেখতে পেলে এলাহী কাণ্ড হয়ে যাবে। আপনার ফ্যানস ও এখানে রয়েছে।’
তূর্ণ রাশভারী গলায় বলল,
‘ মি. নাসের! লোকজনকে আমার কাছাকাছি আসা থেকে আটকানোর দায়িত্ব কার? আপনার।’
তূর্ণ সাধারণ মানুষের মতো মেলায় পা রাখল। মূহুর্তে বড়সড় ঝড় বয়ে গেল। পুরো ফ্যানডম একসাথে চিৎকার দিয়ে ওঠে।কতজন তূর্ণর নাম ধরে ডেকে ভালোবাসি বলল। কয়েক চিৎকার থামিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ সামনে থেকে আরও বেশি হ্যান্ডসাম আমার তূর্ণ।’
অন্য একজন মেয়ে প্রতিবাদ করে বলল,
‘ তূর্ণ তোমার কবে থেকে হলো? তূর্ণ শুধু আমার।’
দু’জনের ভেতর কথা কাটাকাটি তুমুলভাবে বাড়ছে। ফ্যানদের আটকানোর চেষ্টায় গার্ডদের কষ্ট হচ্ছে। ঘাম ছুটে যাচ্ছে তাদের। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছিল ঠিক তখনী গাড়ির হর্ন বেজে উঠল । … সকাল সকাল কে এমন বিশ্রি … ক’দিন হল কলকাতায় বেশ জাঁকিয়ে ঠাণ্ডা পড়েছে। শীতের সকালের নরম রোদে উষ্ণতা নেই বরং হাওয়ার দাপটে হাড়ে হাড়ে কাঁপুনি ধরায়। শীতের অলস …
মরমী মনের মানুষ. কোনো এক মার্চের সকাল। গ্রামে গেছি বেড়াতে। সকালে, বেলা বাড়ার আগেই, হাঁটতে বেরিয়েছি। শহরের পার্কে কেডস পরে হাঁটার চেয়ে … আজ সকালেও সে নিত্য দিনের মতো তার বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
মেলা সাধারণত কোনো বৃহৎ স্থানে,যেখানে মানুষের চলাচল রয়েছে, তেমন স্থানে মেলা অনুষ্ঠিত হয়।মেলা অনেক ধরনের হয়।
বৃহৎ স্থান জুড়ে বিশেষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তূর্ণ দেখেশুনে একটা চুড়ির টংয়ের দোকানে দাঁড়াল। তাকে একনজর দেখার জন্য লোকজন উৎসুক ভাবে তাকিয়ে রয়েছে। মানুষের পূর্বেই সাংবাদিক এসে হাজির হয়ে যান। তূর্ণ ভেবে পায় না তারা কি ক্যামেরা হাতে উৎপেতে থাকে? হুট করেই কোথা থেকে উদয় হন? জুবিয়ার হাত সে বার কয়েক লক্ষ্য করেছে। চোখের আন্দাজে যতগুলি চুড়ি পছন্দ হলো একবারে কিনে নিল। আশেপাশের দোকানে সাহায্যের জন্য কিছু টাকা তাদের দিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। বুড়োলোকগুলো তার এই স্বভাবে বেশ খুশি হলো। তূর্ণ যে দোকন গুলি থেকে চুড়ি কিনেছে, সেখানে এখন লোকজন উপচে পরছে।
এক টেবিলে খাবার সার্ভ করে দ্বিতীয় টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল জুবিয়া। সহসা টিভির দিকে নজর পড়ল তার। নিউজ চ্যানেলে লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছে, তূর্ণর মেলায় প্রবেশ করা নিয়ে হৈচৈ পরে গেছে। অনেকে আশংকা করছেন এআই গ্রুপের সদস্য মাহাবুব তূর্ণ গোপনে প্রেম করছেন। এবং তার প্রেমিকার খুশির জন্য গাড়ি থেকে নেমে অতোশত চুড়ি কিনে গাড়িতে উঠলেন। সাংবাদিকদের প্রায় উপেক্ষা করে গাড়িতে উঠে বসল তূর্ণ। টিভির পর্দায় তূর্ণকে দেখামাত্র জুবিয়ার পা থমকে যায়। সে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। পলকহীন চোখে তূর্ণকে দেখে নিল। সহসা টেবিলে বসা দুজন লোকের ফিসফিসানি শুনতে পেয়ে নিজ হুঁশে ফিরে এলো জুবিয়া। অবাক চোখে ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি ফেলল।
জুবিয়া বিড়বিড় করে আওড়াল,
‘ তাকে দেখার পর আমার কি হয়েছিল? আমি অমন করে দাঁড়িয়ে পরেছিলাম কেন? আমার কেন শুধু তাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল? এমন কেন মনে হলো, আমি তাকে কয়েক হাজার বছর পর দেখছি? আমার এখনো দেখা শেষ হয়নি?’
জুবিয়া আনমনে হাঁটছে। মাথা ভর্তি শুধু তূর্ণর চিন্তা। এখুনি প্রায় একজন ওয়েটারের সঙ্গে ধাক্কা লাগতে লাগতে বেঁচে গেল জুবিয়া। ভুলবশত যদি ধাক্কা লেগে যেত, তাহলে হাতের ট্রে ধপ করে ফ্লোরে পরে চারিদিক বিশ্রী ভাবে অপরিষ্কার হত। রোদেলা জুবিয়ার সামনে এসে দাঁড়াল।
চনমনে গলায় শুধাল,
‘ জুবি, কি হয়েছে তোর? কোন চিন্তার ঘোরে কোথায় হারিয়ে গেছিস?’
জুবিয়া ভারী নিঃশ্বাস ফেলল। জুবিয়া তার হাত থেকে ট্রে’টা একটা টেবিলের ওপর রাখল। এরপর রোদেলার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রথমের রোদেলার একহাত ধরে ফেলল। রোদেলার হাতের উল্টোেপিঠ জুবিয়া তার কপালে ছুঁয়ে উদ্বিগ্ন গলায় শুধাল,
‘ রোদু দেখ। আমার কি জ্বর আসছে?’
রোদেলা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জ্বর মাপলো। তারপর বলল,
‘ না। তোর শরীরের তাপমাত্রা ঠিকই আছে।’
জুবিয়া চিন্তাগ্রস্ত গলায় হুট করে বলে ওঠল,
‘ তাহলে আমার এমন অস্থির লাগছে কেন? কেন এত হাসফাস লাগছে? কেন কেন বুকের কম্পন থেমে থমে বেড়ে যাচ্ছে?’ বলে থামল জুবিয়া। তারপর হঠাৎই রোদেলার কাধ ঝাঁকিয়ে শীর্ণ গলায় বলল, ‘ আমার সাথে কি হচ্ছে রোদু? বল না।’
চলবে….