#প্রহর_শেষে_তুমি_আমার
#পর্ব ২
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
রাতের খাবারের টেবিলে বসে আছে মিরার মা, মামা,মামী ও মামাতো বোন তুষি।নূপুর বেগম খাবার খেতে খেতে বললেন,,,
-”আমি জানি রিমা,, আমার উপর রাগ তুমি।তাই বলে এভাবে এমন কাজ করা ঠিক হয় নি তোমার।”
মিরার মামী বিষ্ময় নিয়ে চোখ তুলে তাকায়।আমতা আমতা করে। নূপুর বেগম বলেন,,
-”তুমি তোমার ভাতিজার জন্য মিরার কথা বলেছিলে।এবং আমি না করে দেয়াতে তুমি এমন করলে তাই না?তোমার নেশা*খোর অকর্মা ভাই পো কে না বলার এই প্রতিশোধ তুমি নিলে।তাই তো?তবে বলো তো তোমার মেয়ের যদি এমন বিয়ের আসর থেকে বিয়ে ভেঙে যেতো তখন তোমার কেমন লাগতো?তুমি কি তা মেনে নিতে পাড়তে?আজ আল্লাহ সহায় ছিল বলে,,আমার মিরার এক গতি হলো।নাহলে ভেবে দেখেছো কতো কিছুর সম্মুখিন হতে হতো আমার মেয়ের।”
মিরার মামা এতো ক্ষন বোনের কথা শুনে অবাক হলেন।তার বউ এমন কাজ করবে তা তিনি কখনো কল্পনাও করেন নি।কিভাবে পারলো এমন কাজ করতে?তিনি নিজের বউ এর দিকে চোখ গরম করে তাকান। রূঢ় কণ্ঠে বলেন,,
-’আমি কি শুনছি তুষির মা? তুমি এমন কাজ কি করে করলে?”
মিরার মামী চোখ জোড়া মাটিতে নিবদ্ধ করলেন।নিজের ভুল বুঝতে পারলেন।আসলেই রাগে মাথায় কি করেছেন,, তা সে এখন বুঝতে পারলেন।আসলেই খুব খারাপ কাজ করেছেন তিনি।নিজের ভুল বুঝতে পেরে বললেন,,
-”মাফ করে দিন আপা।আমার ভুল হয়েছে।”
নূপুর বেগম কিছু বললেন না।খাবার টুকু শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলেন।নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করলেন। চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিন। দক্ষিণ পাশে জানলার সামনে রকিং চেয়ারে বসে বাইরে আকাশের দিকে তাকালেন।কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চোখ বন্ধ করলেন । বড্ডো একা লাগছে আজ।এতো বছর যে একাকিত্ব অনুভব হতো আজ যেনো তা ভয়ংকর ভাবে রূপ নিয়েছে। একাকিত্ব যেনো তাকে গ্রাস করে দিচ্ছে।একাকিত্ব যেনো তাকে গাভীর ভাবে ঘায়েল করছে।ক্ষণে ক্ষণে মন বিষিয়ে যাচ্ছে।চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।অবশ্য একাকিত্ব তিনি নিজের মধ্যে মিশিয়ে নিয়েছেন।যেনো একাকীত্বের সাথে তার গাভীর সম্পর্ক।
রুমে কারো উপস্থিতি পেয়ে চোখ খুলে তাকান।নিজের ভাইকে দেখে অতিযত্নে চোখের জল মুছে নিলেন।মিরার মামা সানিম হোসেন এগিয়ে এলেন। বোনের কাধে হাত রাখলেন।
-”তুষির মার হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি বোন।”
-”আরে ভাই,,তুমি কি বলছো?যা হয়েছে ভূলে যাও।আমিও ভুলে গিয়েছি।শুধু দোয়া করো যেনো আমার মিরা সুখী হয়।”
সানিম হোসেন বোনের মাথায় হাত রেখে বললেন,,
-”তুই ঠিক আছিস তো? তুষির স্কুল আছে তো তাই যেতে হবে।তুই একা থাকতে পারবি?
-” একাকীত্ব যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে তার কাছে এই প্রশ্নে করা একদম বেমানান। জানো তো,, একাকীত্ব ভয়ংকর।যদি টা উপভোগ করা যায় তা আরো ভয়ংকর। আর আমি এই ভয়ংকর জিনিসে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।আর যে জীবনের এতো টা সময় একা পথ পাড়ি দিয়েছে সে নিশ্চয়ই একাকীত্ব বা একা থাকতে ভয় পাবে না।”
সানিম হোসেন চলে গেলেন।বোনের মুখে লেপ্টে আছে বিষাদের ছাপ। সানিম হোসেন চলে যেতেই নূপুর বেগম বললেন,,
-”””এক ভাঙ্গা নৌকা আমি,
আছি ভেসে কোন রকম নদীর স্রোতের তালে!
নাই কোনো কুল,নাই কোনো কিনারা
কখন যেনো ডুবে যাই গভীর অতলে!”””
___________
মিরাকে কিছু বলতে না দিয়ে তাশফীক বেডের এক পাশে শুয়ে পড়লো।এখন একটু আরাম প্রয়োজন।এতো ঝামেলায় যেনো শরীর এবং মন দুটোই বেশ ক্লান্ত।
মিরা বেশ কিছু ক্ষন নিজের জায়গায় থম মেরে বসে থাকতে পুরুষালি ভরাট কণ্ঠে তার মস্তিষ্ক নড়ে উঠলো
-”এভাবে বসে না থেকে ড্রেস চেঞ্জ করে এসো।আর হুম আমি প্রচুর টায়ার্ড,,রেস্ট করতে হবে। তাই লাইট টা অফ করে দাও।”
মিরা তাশফীকের দিকে তাকিয়ে রইলো।কেমন মানুষ রে বাবা! কোথায় বউ এর সাথে একটু কথা বলবে,,দু চার শব্দ বিনিময় করবে তা না।হুম মানছি,, যে বিয়ে হুট করে হয়েছে যায় তাই বলে এমন হয়ে থাকতে হবে? তাশফীক এবার ইকরার দিকে তাকালো।দুজনের চোখা চোখি হলো। কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলল,,,
-”তুমি কি শুনতে পাও নি আমি কি বলেছি?”
মিরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই বেড থেকে উঠে রুমের লেট অফ করে দিলো তাশফীক। বিরক্তিকর কণ্ঠে বলল,,
-”বয়রা!”
মিরা ফুসে উঠলো।কিন্তু কিছু বলার সাহস হলো না।কিন্তু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো এর প্রতিশোধ তো মিরা নিবেই ।এই লোক ও মিরাকে চিনে না, হুহ।কথা গুলো ভেবে ওয়াশরুমে চলে গেলো মিরা ।
দূর মসজিদ থেকে আযানের আওয়াজ আসছে । আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো মিরা । ওয়াশরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে একবার ভাবলো তাশফীককে ডাক দিবে , পরক্ষনেই রাতের কথা ভেবে চুপ থাকলো মিরা,না বাবা ডাক দিলে যদি আবার ঝাড়ি খেতে হয় ।নামাজ শেষ করে বেডে তাকিয়ে দেখলো তাশফীক নেই ,তখন ওয়াশরুম থেকে বের হলো তাশফীক। মিরাকে উপেক্ষা করেই নামাজ আদায় করতে বের হয়ে গেল রূম থেকে ।নামাজ পড়ার পর কোরআন পড়ার অভ্যাস,আজও সেই কাজ করে বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে নিচে চলে এলো।
সায়মা বেগম বসার ঘরে বসে চা খাচ্ছেন।চা ছাড়া যেনো তার চলেই না। মিরাকে দেখে তিনি একটা হাসি দেন। মিরা এগিয়ে যায় তার দিকে।
-”এতো সকালে উঠেছিস কেনো মিরা?”
-”মামনি ঘুম ছুটে গিয়েছে।”
-“চা খাবি?”
-“তুমি জানো না মামনি আমি চা খাই না।”
-“যা বাবা ভুলে গিয়েছি।বয়স হয়েছে তো তাই।”
মিরা মামনির কথায় হেসে দিল।দুজনে গল্প করতে শুরু করলো।তাদের মাঝে উপস্থিত হলো তাদের বাসার হেলপিং হ্যান্ড রুবি।রুবি মিরার দিকে তাকায় বলল,,
-”মিরা আপু কখন আইলো?এতো সকাল আইলো যে?” কই খালাম্মা লগে নাই?”
-”নাহ।মিরা কাল রাতে এসেছে।”
-”ভালো হইসে মিরা আপু কয়দিন থাইকা জান।আমার হাতের ইসপেশাল ভর্তা ভাত খাওয়ামু আপনারে।”
-”মিরা এখন থেকে এই বাসায় থাকবে।তাই যখন মন চায় তখন বানিয়ে দিস।”।”
-”ওমা!কি কোন আপনি খালাম্মা।”
-”শোন তোর তাশফীক ভায়ের বউ সে।বিয়ে দিয়েছি দুজনের।সে জন্য মিরা এই বাসায় থাকবে।তাই আজ থেকে মিরাকে ভাবি বলবি।”
-“হায় হায় কোন কি খালাম্মা? ভাইজান বিয়া করলো কবে?।ভাই না এত দিন বিয়া করবো না কইয়া অবরোধ করতো তাইলে বিয়া করলো কেমনে? ভাইজান মনে হয় ভাবির ফ্রেমে ফরসে ।কথাটা বলেই লাজুক ভাবে হেসে উঠলো রুবি ।
ইস্ আবার লজ্জা পড়তে হলো মিরার ,তাও আবার শাশুড়ির সামনে ।
-“রুবি তোমাকে বেশি কথা বলতে বারণ করেছি ।আমার জন্য ব্ল্যাক কফি নিয়ে আসো । কুইক!”
মেইন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে করতে বলল তাশফীক। বসার ঘর হয়ে সোজা সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।এর মাঝে মিরার সাথে চোখ চোখি হলো।
রুবি দ্রুত কফি তৈরি করে নিয়ে এলো।
– “মিরা , যা কফিটা তুই তাশফীককে দিয়ে আয়।”
– “আম্মু আমি!”
– “হুম তুই।”
কাপা কাপা হাতে কফির ট্রে হাতে নিয়ে দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে মিরা।লোকটার কাছে গেলেই তো ভয় আর জড়তায় সব কিছু গুলিয়ে যায় । ঘরের ভেতর প্রবেশ পড়লো মিরা ,দেখলো তাশফীক অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে ,রেড কালার শার্ট,ব্ল্যাক কালার প্যান্ট ,হাতে সিলভার কালার ঘড়ি , চুল গুলো সাজানো ,আয়নার সামনে দাড়িয়ে টাই বাঁধছে ,দেখ খুব সুন্দর আর সাজানো গোছানো লাগছে , মিরা নিজের অবস্থা বুঝতে পেরে তরী ঘড়ি করে চোখ সড়িয়ে ফেললো , ইস্ কিভাবে তাকিয়ে ছিল না জানি লোক টা কি ভাবে বসলো?টেবিলের উপর কফি মগ রাখতে নিলেই অসাবধানতায় কফি মিরার হাতে পড়লো ,গরম কফি হাতে পড়ায় মনে হচ্ছে হাত ঝলসে যাচ্ছে ,মুখ দিয়ে আর্তনাদ বেরিয়ে এলো । তাশফীক দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলো , মিরার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো ।
-“মা রুবির যদি আমার জন্য কফি দিয়ে আসতে সমস্যা হয় তাহলে বলতে পারো ,আমি নিজের কফি নিজে নিয়ে যাবো। অন্তত এতে করো হাত তো আর পুড়বে না।”
সায়মা বেগমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই
কিচেনে চলে গেলো তাশফীক।কিচেন থেকে আইস কিউবি নিয়ে রুমে গেলো। আইসি কিউব ও টুথ পেস্ট মিরার সামনে রাখলো।মিরার দিকে তাকিয়ে রূঢ় কণ্ঠে বলল,,
-“”আইস কিউব ও টুথপেস্ট লাগিয়ে নিও।”
নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে রুমের দরজার কাছে যেয়ে পিছন ফিরে তাশফীক ঠান্ডা কণ্ঠে বলল,,
-”যে কাজ পারো না সে কাজ না করাই ভালো। আর যে কোন জিনিস সময়ের উপর ছেড়ে দিতে হবে।আমরা যতই ইফোর্ট দেই না কেনো,,সময়ের উপর ছেড়ে দিলে তা নিজ দায়িত্বে সব ঠিক করে দেয়।”
বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো তাশফীক।মিরা বোকার মতো হা হয়ে থাকলো।কি বলল তাশফীক তা তার মাথায় একটুও ঢুকলো না।
_____
রাতে খাবার টেবিলে এক সাথে বসেছে সকলে। তাশফী কের বাবা তানজিম শেখ খাবার খেতে খেতে বললেন,,
-”তাশফীক পরশু থেকে তুমি অফিস যাওয়ার সময় মিরা মাকে ভার্সিটিতে দিয়ে যাবে।”
-”আমি কেনো ?ড্রাইভার আছে তাকে সুন্দর মতো পৌঁছে দেয়ার জন্য ।”
-”তোমার অফিসে যাওয়ার পথেই তার ভার্সিটি তাহলে প্রবলেম কোথায়?”
-”আমি চেষ্টা করবো।”
-”তুমি তাকে পৌঁছে দিবে কথা এখানেই শেষ ।”
,,,
প্লেট বাটি সব কিছু গুছিয়ে মিরা রুমে এসে দেখলো তাশফীক ডিভানে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে । মিরা ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুনি নিতে গেলে অসাবধানতায় তাশফীকের ফোন মাটিতে পরে গেলো । ফোন মাটি থেকে উঠাতে উঠাতে তাশফীক বলল
-”এই মেয়ে প্রবলেম কি তোমার ? নিজের মতো থাকতে পারো না ?আসছো পর থেকে একটার পর একটা ঝামেলা। আমি এবং আমার জিনিস থেকে দশ হাত দূরে থাকবে ।”
চুপ চাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল মিরা।সে কি এতই খারাপ? ,কেনো সবাই এমন করে তার সাথে ?সে কি ইচ্ছা করে ফোন ফেলেছে না কি ,কত গুলো কথা শুনলো । এর প্রতিশোধ নিবেই নিবে। বদ লোক একটা! হুহ।মিরা বেডে বসে চুল চিরুনি করে ঘুমিয়ে গেলো।
চলবে?
(আসসালালামু ওয়ালাইকুম।কেমন আছেন সবাই?গল্প কেমন লাগছে আপনাদের কাছে? সবাই নিজেদের মন্তব্য দিয়ে যাবেন।আমার ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন।পাশে থাকবেন।ভালোবাসা নিবেন ❤️❤️)