#প্রহর_শেষে_তুমি_আমার
#পর্ব ৩
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাস্তা শেষ করে রুমে বসে রেডি হচ্ছে মিরা। আজ মিরা ভার্সিটি যাবে।তাশফীকের রেডি হওয়া শেষ। তাশফীক রুম থেকে বের হওয়ার সময় গম্ভীর কন্ঠে বলল,,
-”দুই মিনিটের মধ্যে নিচে আসো । লেট করা আমার একদম পছন্দ না।”
মিরা মাথা দুলিয়ে বলল,,
– “জ্বী।”
ইস্ এই লোকটার সাথে ভার্সিটি যেতে হচ্ছে ,কি এক অবস্থা ,না জানি রাস্তায় কতো গুলো বকা খেতে হয় ,এই গোমড়া মুখোর তো আবার অভ্যাস কথায় কথায় ঝারাঝরী করার।মিরা নিজের আইডি কার্ড খুজতে লাগলো।এই আইডি কার্ড না থাকলে আরেক ঝামেলা। উফ বিরক্তিকর!মিরার আইডি কার্ড খুজতে খুজতে বেশ সময় পার হলো।মুহূর্তেই ফোনে রিং বেজে উঠলো।মিরা জিবে কামড় বসালো।না জানি কত লেকচার শুনতে হয় তার। ফোন রিসিভ করতে শুনতে পেলো,,
-”কি হলো ভার্সিটি না যেতে চাইলে বলো? এভাবে আমার সময় নষ্ট করছো কেনো?গাড়িতে না আসতে চাইলে বলো , আমি চলে যাচ্ছি ।”
-”না আমি যাবো আপনার সাথে।একটু ওয়েট করুন।”
তাশফীক কল কেটে দিলো।মিরা ব্যাগ নিয়ে বের হলো।দ্রুত নিচে নেমে সায়মা বেগম থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির কাছে গেলো।
গাড়িতে বসতেই ঘটলো আরেক বিপত্তি।মিরা সিট বেল্ট লাগানোর চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছে না।এমনি সময় তো ঠাস করে বেল্ট লেগে যায়।আজ কেনো লাগছে না।এবার আরেক দফা ঝাড়ি খেতে হবে। উফ ভালো লাগে না। প্রতিবার তো ঠিক মতো লেগে যায় সিট বেল্ট।আজ কেনো লাগছে না আল্লাহ জানে!।তাশফীক মিরার দিকে তাকালো।চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।মিরা মুখ কাঁদো কাঁদো করে বলল,,
– “আসলে আমি পারছি না।”
তাশফীক দাঁতে দাঁতচেপে বলল
– “পারো টা কি? শুধু চরখীর মতো ঘুরে বেড়াতে ? ইডিয়েট একটা!
বলেই মিরার কাছে এগিয়ে আসলো তাশফীক। সাথে সাথে মিরা চোখ বন্ধ করে নিলো এই প্রথম কোনো ছেলে মিরার এত টা কাছে এসেছে ,হাত পা যেনো সব অবশ হবে যাচ্ছে ,শ্বাস প্রশ্বাস ঘন হয়ে আসছে।বুকের হার্ট বিট দ্রুত লাফাচ্ছে ।
তবে মিরার ভালো লাগলো। অনুভূতি গুলো নেচে উঠলো। তাশফীক নিজের অবস্থানে বসে মিরার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,,
-”এতো রিয়েক্ট করার কী আছে?এতো লজ্জা পাচ্ছো কেনো?আমি কি তোমাকে চু”মু খেতে এগিয়েছি নাকি?নাকি তুমি ভেবেছিলে আমি তোমায় চু”মু খাবো?”
মিরা লজ্জায় বাইরের দিকে তাকালো।সারাটা পথ চুপ চাও থাকলো।কিভাবে তাশফীক ভাই তাকে লজ্জা দিলো। ভাবা যায়?
“””””””””
ভার্সিটিতে ঢুকতেই এক ছেলের গালে চ*র বসিয়ে দিলো মিরা।
-”আপনার সাহস কি করে হয় একটা মেয়ের গায়ে এরকম ভাবে পানি ঢেলে তাকে মাঠের মাঝখানে দার করিয়ে রাখার ।নেক্সট টাইম কোনো মেয়ের সাথে এরকম করার আগে এই এই চরের কথা মনে রাখবেন “
– “এই মেয়ে ….”
মিরা যে ছেলের মুখে চ*র মেরেছে সেই ছেলে তার পাশে দাঁড়ানো ছেলেকে উদ্যেশ্য করে বলল
-“চুপ আকাশ।”
– “কিন্তু ভাই এই মেয়ে।”
– “এই মেয়ের তোমার ভারি সাহস বলতে হবে ।যেখানে এই আরহান চৌধুরীকে সবাই দেখলেই মোমের মতো গলে যায়, সেখানে তুমি আমাকে সবার সামনে চ*র মারলে মেয়ে বড্ডো বড় অপরাধ করেছি তুমি ,এর শাস্তি তোমাকে পোহাতে হবে ,এর প্রতিশোধ আমি নিবোই ।
বলেই মিরার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেনো , এখনই চোখ মিরাকে পুড়িয়ে ছার খার করে দিয়ে । চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে।মিরা সেদিকে না তাকিয়ে ক্লাস যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো ।
কিছুক্ষন পূর্বে ভার্সিটিতে ঢুকতেই দেখলো একটা মেয়েকে কিছু ছেলে মেয়ে বিরক্ত করছে ,এক পর্যায় একটি ছেলে মেয়েটির গায়ে পানি ঢেলে দিলো ,মিনিটের মধ্যে মেয়েটির গায়ের জামা পুরো শরীরে লেপ্টে গেলো।মেয়েটি কান্না করতে লাগলো । মেয়েটির ভার্সিটিতে প্রথম দিন হওয়ায় রেগিং এর শিকার হতে হয় ।ভার্সিটির সিনিয়ররা তাকে মাঠের মাঝে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে ।মেয়েটি যখন তা করতে চায় না তখন এক পর্যায় , ভার্সিটির ওয়ান অফ দা ইয়াং অ্যান্ড হ্যান্ডসাম ব্য় আরহন চৌধুরী মেয়েটির গায়ে পানি ঢেলে দিলো,ঘটনার শুরু এখান থেকেই।
“””””””””
মিরা সেই মেয়েকে প্রশ্ন করলো,,,
-”তোমার নাম কি ? ফার্স্ট ইয়ার?”
মেয়েটি বলল
-”মেহেক। জি! ফার্স্ট ইয়ার।”
– “ওহ।ভালো।”
-”তোমার নাম কি,, আপু?তুমি কোন ইয়ার?”
– “মিরা। সেকেন্ড ইয়ার।”
– “তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আপু ।আমি তখন অনেক ভয় পেয়েছিলাম ।তুমি না থাকলে আমার যে কি হতো আপু।”
বলেই মাহেক কেঁদে দিল। মেয়েটা ভালো ভয় পেয়েছে। মিরা তাকে সাহস দিয়ে বলল,
-” কিছু হতো না ,এই কথা আর বলবে না। যা হওয়ার তা হয়েছে।যাও নিজের ক্লাসে।মন দিয়ে ক্লাস করবে।
-”হুম। ধন্যবাদ আপু।”
মেহেক চলে গেলো।মিরা সিমরানের ফোন কল করলো।তার একমাত্র বান্ধবী।ফোন করতে করতে ক্লাসে চলে গেলো।গিয়ে দেখলে সিমরান ব্যাগের উপর হেড ডাউন করে আছে। উফ এই মেয়ে এতো ঘুম কাতুরে।সারা রাত জাগবে। ভার্সিটিতে এসে ঘুমোবে।মিরা সিমরানের কাছে গিয়ে পিঠে এক চা*পড় মারলো। সিমরান মুখ গোমড়া করে বলল,,
-“মা*রলি কেনো?”
মিরা সিমরানের পাশে বসতে বসতে বলল,,
-“মন চাইছে।”
-“উফ। বেয়াদব একটা।এভাবে কি মা*রে?পিঠ জ্বলে গেলো।”
-“আচ্ছা সরি।”
বলেই দাঁত কেলালো মিরা।সিমরান বাকা চোখে তাকিয়ে কিছুটা স্থির হলো। সিমরান ব্যাগের থেকে পানির বোতল বের করে পানি পান করে বলল,,
-“কে দিয়ে গেলো? দুলাভাই? নাকি একা এসেছিস?”
-“তাশফীক ভাই”
-“বিয়ের পর ও ভাই বলছিস?”
-“তো কি বলবো?”
-“কেন? ওগো, শুনছো গো, উনি,জান, টিয়া, ময়না এগুলো বলবি।”
মিরা ভেঙচি কাটলো।এই মেয়ের মুখে যতসব আজিরা কথা।মিরাকে চুপ থাকতে দেখে সিমরান বলল,,
-“কিরে লজ্জা পাচ্ছিস কেনো?”
মিরা অবাক হয়।সে কোথায় লজ্জা পেলো? মিরা বিরক্তিকর কণ্ঠে বলল,,
-“কোথায় লজ্জা পাচ্ছি?আর লজ্জা পাবো না কেনো?”আমি মোটেও লজ্জা পাচ্ছি না।”
-“ঠিক ই তো দুলাভাই তো বিয়ের রাতেই তোর সব লজ্জা ভেঙে দিয়েছে ।এখন আর লজ্জা পাবি বা কি করে?
মিরা দাঁত কিডমিড় করলো।কিছু বলার আগে রুমে টিচার এলো।দুজনেই ক্লাস করতে মনোযোগী হলো।
“””””
দূর থেকেই তাশফীকের দিকে চোখ পড়ল মিরার। ক্লাস করার সময় মিরার ফোনে তাশফীক ম্যাসেজ করে যে সে তাকে নিতে আসবে। মিরা প্রথমে অবাক হয় পরে খুশিতে নেচে উঠে।হাজার হোক প্রিয় মানুষ তো। প্রিয় মানুষের একটু সঙ্গ কে বা না চাইবে?
আজ বেশি লেট করে ফেলেছে ভার্সিটি থেকে বের হতে ।লোকটার মুখ কেমন লাল হয়ে আছে আছে দেখেই বুঝো যাচ্ছে অনেক ক্ষন যাবৎ দাড়িয়ে আছে। পাশাপাশি রেগে আছে।গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে আছে। শুভ্র রঙের শার্ট শরীরে আট শাট হয়ে লেপ্টে আছে।দেখতে বেশ অন্য রকম লাগছে।
অবশ্য সেটা শুধু মিরার কাছেই কারণ প্রিয় মানুষ যেভাবেই থাকুক দেখতে কিন্তু ভীষণ লাগে।তবে মিরার ভয় হচ্ছে।মনে হচ্ছে আচ্ছা মতো কত গুলো কথা শুনিয়ে দিবে ,আজ কি আছে কপালে যে জানে?গাড়ির সামনে আসতেই তাশফীক বলে উঠলো
-”কি হলো? এতো লেট হলো কেন বের হতে ?আমি কতক্ষন যাবৎ তোমার জন্য অপেক্ষা করছি ।
আমার সাথে যেতে মন না চাইলে বলতে পারো শুধু শুধু আমাকে কষ্ট দেয়ার মনে কি ?”
মিরা একটু চুপসে গেলো। আমতা আমতা করে বলল,
-”আসলে ক্লাস শেষে সিমরানের সাথে ক্যান্টিনে বসে কথা বলছিলাম।কখন যে সময় চলে গেলো বুঝতে পারি নি।”
তাশফীক মিরার দিকে তাকালো।এইতো একটু আগেই মা ফোন করে বলল আজ যেহুতু মিরা প্রথম তাদের বাসা থেকে ভার্সিটি গিয়েছে তাই যেনো মিরাকে ছুটির পর বাসায় পৌছে দেয়।আর আজ যে ড্রাইভার এর কথা ছিল মিরাকে বাসায় পৌঁছনোর তিনি অসুস্থ তাই আসতে পারবেন না। তাই তো তাকে আসতে হলো মিরাকে নিতে। তাশফীক থম থমে কন্ঠে বলল
-“চুপ চাপ গাড়িতে বসো।”
মিরা গাড়িতে বসলো। তাশফীক গাড়ি চালানো শুরু করলো।বেশ খানিকটা রাস্তা যাওয়ার পর জ্যামে আটকে গেলো।রাস্তা মুহূর্তেই গাড়ি দিয়ে আটকে গেলো।মিরা তাশফীকের দিকে তাকালো।লোকটা ঘেমে গিয়েছে।গাড়ির এসি অফ কারণ মিরার গাড়িতে উঠলে সাফোকেশন ফিল হয়।তাই জানলা খোলা রেখে এসি অফ রেখেছে।
কিন্তু এখন মিরার খারাপ লাগছে।তার জন্য লোকটার কষ্ট হচ্ছে।মিরা কিছু একটা ভেবে নিজের ব্যাগ খুললো। ব্যাগ খুলে পানির বোতল বির করলো ।এই ঠান্ডা পানির বোতল টা তখন ক্যান্টিন থেকে কিনে নিয়েছিল। অবশ্য এখন তেমন একটা ঠান্ডা নেই পানি কিন্তু যা আছে তাই একটু খেলে হয়তো তাশফীকের ভালো লাগবে। মিরা পানির বোতল তাশফীকের দিকে এগিয়ে বলল,,
-“পানিটা খেয়ে নিন।ভালো লাগবে।”
তাশফীক মিরার দিকে তাকিয়ে কিছু বলল না।পানি নিয়ে পান করলো।এই পানি টুকুর খুব প্রয়োজন ছিল তাশফীকের। বেশ আরাম লাগছে। তাশফীক মিরার দিকে তাকিয়ে ছোট করে বলল,,
-“থ্যাংকস।”
মিরার তাশফীকের দিকে তাকালো।তার মনের মধ্যে এক সূক্ষ্ম ইচ্ছা এসে হানা দিল। ইস সে যদি অতি যত্নে নিজের ওড়না দিয়ে তাশফীকের কপাল,গালে থাকা ঘাম মুছে দিতে পারতো!আচ্ছা তাশফীক কি রাগ করবে যদি মিরা যত্ন নিয়ে তার কপালের সাথে লেপ্টে থাকা ঘাম মুছে দেয়?ভালোবাসে একটু নিজের ইচ্ছা পূরণ করে।মিরা আর কিছু না ভেবে তার ইচ্ছা পূরণ করলো।নিজের ওড়না হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো। তাশফীকের দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের ওড়না ছোয়াল তার প্রিয় মানুষের কপাল ও গালে।
তাশফীক ভড়কে গেলো।মিরার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।মেয়েটা কি সুন্দর তার দিকে তাকিয়ে আছে। অতি যত্নে তার ঘাম মুছে দিচ্ছে। তাশফীক শুকনো ঢোক গিলে নিলো।তাশফীকের কেমন যেনো অনুভূতি হলো।কিছু মুহূর্ত কেটে গেলো চোখা চোখিতে। মিরা নিজের ইচ্ছা পূরণ করে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলল। নিজের অবস্থানে গিয়ে বসলো মিরা।মিরা তো ভয়ে ছিল করে এই বুঝি তাশফীক ভাই দিবে এক ঝাড়ি।কিন্তু না কিছু বলে নি।
মিরা বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। তাশফীক বেশ কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হলো। জ্যাম ও ছেড়ে দিয়েছে। তাশফীক গাড়ি স্টার দিয়ে মনে মনে আওড়ালো,,
-“ওহাট ইজ দা নেম অফ দা ফিলিং দ্যাট আই ফিল্ট নাও!”
( আসসালা মুআলাইকুম।কেমন আছেন সবাই? ধন্যবাদ সবাইকে এতো সাপোর্ট করার জন্য।এভাবেই পাশে থাকবেন।ভালো লাগল লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করে দিবেন।আপনাদের ভালোবাসা আমার লিখার অনুপ্রেরণা।তাই নিজেদের মন্তব্য কমেন্টে করবেন।ভালোবাসা নিবেন পাঠকগণ।)
চলবে………?