#প্রহর_শেষে_তুমি_আমার
#পর্ব ৯
#মেঘকন্যা
(প্রাপ্ত বয়স্ক ও মুক্ত মনাদের জন্য উন্মুক্ত )
একটা কাপড় নেয়ার জন্য আলমারি খুললো মিরা
।কিন্তু স্পষ্ট বুঝতে পারলো তার পিছনে কেউ দাড়িয়ে আছে।কারো নিঃশ্বাস মিরার কাধে পড়ছে।কেমন অনুভূতি হচ্ছে।হাত পা কাপছে।পিছন দিকে ফিরে দেখতে পায় তাশফীক একদম তার কাছে গা ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে। তাশফীকের দৃষ্টি তার দিকে নিবদ্ধ। মিরা পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলে ধুপ করে এক হাত আলমারির উপর রাখে তাশফীক। মিরার দিকে তাকিয়ে থেকে অন্য হাত দিয়ে আবার সেই কাজ করে।
এবার মিরার দম যেনো বন্ধ হয়ে আসছে।কেমন হাস ফাঁস লাগছে।ভীষণ অসস্তি হচ্ছে।মিরা কাপা কাপা কণ্ঠে বললো
-“আমাকে যেতে দিন।”
তাশফীকের কোনো ভাবান্তর হলো না।সে আগের মতো মিরার দিকে তাকিয়ে আছে।কিছু সময় পর মিরার কোমর ধরে কাছে টেনে নিল।কোমর এতো বাজে ভাবে চেপে ধরেছে যে মিরা ব্যাথায় কুকরিয়ে উঠলো।
-“ছাড়েন আমাকে।ব্যাথা লাগছে।”
তাশফীক কিছু বলল না।মিরার দিকে তাকিয়ে রইলো।মিরা নিজেকে তাশফীকের বাঁধন দেখে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করলো।বলল,,
-“ছাড়ুন। ভীষণ ব্যাথা পাচ্ছি।”
তাশফীক রাগী কণ্ঠে বলল,,
-“কেনো আমি ছুঁয়ে দিলেই ব্যাথা লাগে!।মানুষজন যখন
দৃষ্টি দিয়েই ছুঁয়ে দেয় তখন বুঝি ভালো লাগে?’
-“কি সব বলছেন আপনি। ছাড়ুন আমাকে। লাগছে আমার!
তাশফীক মিরার কোমড় আরো একটু চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
-“বলিনি আমি শাড়ি চেঞ্জ করে ড্রেস পড়তে? বলি নি আমি?আনসার মি ডেম ইট!”
মিরা কেপে উঠলো।ব্যাথা যেনো সহ্য হচ্ছে না।রাগ লাগছে খুব। শাড়ি তো কোনো খারাপ পোশাক না।না পড়েছে নায়িকাদের মত স্টাইলিশ ড্রেস।আর মিরার যা ইচ্ছা তাই পড়বে এতে এতো রিয়েক্ট করার কি আছে? শুধু শুধু রিয়েক্ট করছে। আজব মানুষ।।কেনো মিরা তার কথা মানবে?।তবুও নিজেকে সংযত রেখে মিরা বলল,,
-“আমার মন চায় নি তাই চেঞ্জ করি নি।কেন আমি আপনার কথা শুনবো?”
তাশফীকের রাগ বেড়ে গেলো। তর তর করে মাথায় যেনো আগুন ধরলো।
-” তুমি আমার কথা কেনো শুনবে তার কারণ কি তুমি জানো না?”
-“না জানি না।জানতে চাই না।আমাকে যেতে দিন।”
বলেই মিরা তাশফীককে ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে চাপিয়ে দিল।দু কদম এগিয়ে যেতেই মিরার হাতে তান পড়লো। তাশফীক ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,,
-“বেশি কথা বলা আমার একদম পছন্দ নয়।তুমি ভুল করেছ।আমার কথা অমান্য করেছ। ইউ হ্যাভ টু পে ফর ইট।
বলেই টেবিলে থাকা পানি ভর্তি গ্লাস নিয়ে ছুঁড়ে মারলো মিরার দিকে।পানি গুলো আঁচড়ে পড়লো মিরার শরীরে।মিরা অবাক হলো।পুরো মুখ ও শরীরের উপরের অংশ ভিজে গেলো।মিরার রাগ লাগলো ভীষণ। মিরা রাগি কণ্ঠে বলল,,
-“আপনি কি করলেন এটা?
তাশফীক বাকা হেসে বলল ,,
-“তুমি বন্ধ?দেখতে পাও নি আমি কি করেছি?নাকি আবার করে দেখাবো?”
-“আপনি কিন্তু এবার অতিরিক্ত করলেন।”
-“আমি চাইলে এর চেয়েও বেশি করতে পারি।”
-“আপনাকে আমি ছাড়বো না।”
-“তাহলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।”
মিরা ফুঁসে উঠলো। পাশে তাকাতেই দেখতে পেলো টেবিলের উপরে পানির জগ।মিরা পানির জগ হয়ে নিয়ে পানি ছুঁড়ে মারলো তাশফীকের দিকে।মিরা এতো দ্রুত পানি ছুড়লো যে তাশফীক হতবম্ব হলো।মুহূর্তেই তাশফীক ভিজে গেলো।পুরো ঘর জুড়ে পানি পানি হয়ে গেলো। তাশফীক এগিয়ে যেয়ে মিরার হাত টেনে ধরলো।মিরা দু হাত গিয়ে ঠেকলো তাশফীকের বুকে।মিরা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছট ফট করলো।
তাশফীক মিরাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। মিরার দিকে তাকিয়ে রইলো।বুকের দিকে শাড়ির অংশ টুকু ভিজে গেছে।শরীরের সাথে লেপ্টে আছে সেই অংশ টুকু।।সামনে দিকে কিছু চুল বের হয়ে কপালে পড়ে ছিল যা এখন পানি পেয়ে ভিজে গেছে।গলায় বিউটি বোনের দিকটায় পানির বিন্দু গুলো দেখতে অন্যরকম লাগছে। তাশফীকের কেমন যেনো অনুভূতি হচ্ছে। চোখ ফেরাতে মন চাইছে না।কেমন যেনো ঘোর লেগে যাচ্ছে।
মিরা যেনো জমে গেলো।বার কয়েক চোখের পলক ফেললো।বুকের ভেতর ড্রিম ড্রিম শব্দ হলো।মিরা কাপা কাপা কন্ঠে বলল,,
-“ছাড়ুন!”
তাশফীক মিরার কোমড় আরো একটু চেপে ধরে নিবিড় হলো।দুজনের মধ্যকার দুরত্ব ঘুচিয়ে,,, মিরার দিকে ঝুঁকে মিরার কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে লো ভোএসে বলল,,
-“হুসসস।”
মিরা কেঁপে উঠলো।বার কয়েক ঢোক গিললো। মিরা নিজের গলায় তাশফীকের উষ্ণ নিঃশ্বাস অনুভব করলো।মিরা চোখ খিচে বন্ধ করলো।কয়েক সেকেন্ড পর নিজের গলায় ঠোঁটের স্পর্শ পেলো।মিরা তাশফীকের বুকের দিকের অংশ খামচে ধরলো।মনে হলো শরীরে জুড়ে বিদ্যুৎ খেলে গেলো। অদ্ভুত রকমের শিহরণ হলো। মিরার হাত পা যেনো কাপতে লাগলো।
তাশফীক গভীর ভাবে মিরার গলায় ঠোঁট ছোঁয়ালো।মিরার গলায় নাক ঘষলো। মিরার শরীর জুরে ঝাঁকুনি দিল।মিরা নিজের দু ঠোঁট চেপে ধরলো। তাশফীক মিরার কানের লতিতে চুমু খেয়ে ঠান্ডা কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল,,,
-“আই লাইক ইউর অ্যাটিটিউড।বাট কিপ ইট ইন ইউর সেলফ।আদর ওয়াইস ইউ হ্যাভ টু সি ডেভিল ফেস অফ মাইন। হুইচ্ ইউ ক্যান্ট টেক ইট।”
বলেই মিরার থেকে দূরত্ব তৈরি করলো তাশফীক।মিরা দ্রুত ওয়াশরুম চলে গেলো।আসলে মিরা শাড়ি পড়া অবস্থায় তারমিন যখন ছবি দিয়েছিল তাশফীককে তখন তাশফীক দেখেছে আগে পাশে বেশ কয়েক জন ছেলে স্টাফ মিরার দিকে তাকিয়ে ছিল। তাশফীক লক্ষ্য করেছে যে মিরার শাড়ি কিছুটা সরে গিয়ে কোমরের দিকের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে।এবং সেদিক তাকিয়ে আছে এক স্টাফ।।যেহেতু মিরর পিকচার ছিল তাই তাশফীক দেখতে পেয়েছে।।।তাইতো তখন শাড়ি চেঞ্জ করতে বলেছে সে।কিন্তু না মেয়েটা অতিরিক্ত বেড়েছে তাই একটু শিক্ষা দিলো যেনো নেক্সট টাইম সে যা বলে তাই যেনো করে।
_________
সকাল ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরে নিলো মিরা। নাক মুখ লাল হয়ে আছে।নাক দিয়ে পানি পড়ছে।একের পর এক হাঁচি আসছে।মিরা রেডি হয়ে দ্রুত নিচে চলে এলো।সায়মা বেগম বলল,,
-“মিরা নাস্তা করে যা।খালি পেটে বের হবি না।”
-“মামনি আজ সময় নেই।একটা ক্লাস টেস্ট আছে।”
-“একটু খেয়ে যা মা।”
-“না না সময় একদম নেই ।”
বলেই মিরা বের গিয়ে গেলো। মিরা ভার্সিটি তে চলে এলো।আজ কেমন সব কিছু যেনো ঠান্ডা মনে হচ্ছে।সব কোথায় গেলো। আরহানের দল কি তার জন্য অন্য কোনো ফাঁদ পেতে রেখেছে নাকি।? মিরা শ্বাস টেনে নিজের ক্লাস রূমের দিকে হাটা ধরলো।কিন্তু কোথা থেকে কিছু কাগজের টুকরা ও ময়লা তার গায়ের উপর পড়ল।মিরা উপরে দিকে তাকিয়ে দেখলো তিন তলার বারান্দায় আরহানের দল দাড়িয়ে আছে।তারাই মিরার উপর ময়লা ফেলেছে।মিরার শরীর বালি বালি হয়ে গেলো।মিরা কোনো রকম ওড়না টা একটু ঝেড়ে আবার গায়ে পেচিয়ে নিলো।আসে পাশে তাকিয়ে দেখলো তার দিকে তাকিয়ে কেউ কেউ হাসছে। কেউ কেউ এই কান্ড দেখে অবাক হয়েছে।মিরা ওয়াশ রুমে যেয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিলো।আজ টেস্ট না হলে মিরা বারি চলে যেতো।কিন্তু এখন কোনো উপায় নেই। বাড়ি যাওয়া সম্ভব নয়। মিরা হাত মুখ ধুয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করলো।তিন তলায় তাদের দেখতে পেলো। মিরাকে দেখে তারা অট্টহাসি দিলো।
-“আহা,,সকাল সকাল ময়লা হয়ে গেলো শরীর। উফফ কি বাজে গন্ধ।”(মিরা)
-“আহারে বাচ্চাটার সাথে কি হলো এটা?ধুলো বালি দিয়ে গা লেপ্টে গেলো।কিভাবে হলো এসব?”(সারিকা)
-“আজ রাগ কোথায় তোমার?এতো চুপ চাপ কেনো?সব হওয়া বের হয়ে গেলো?”(আকাশ)
-“কি মিস বোম? তেজ কোথায় আপনার?নাকি ভয় পেয়ে গেছেন?”(আরহান)
মিরার প্রচুর রাগ হলো।আগে রুমে যেতে হবে।তাই মিরা পা চালালো। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে বলল,,
-“ভয় পাই নি।আজ আমার তাড়াতাড়ি যেতে হবে। তবে মনে রাখবেন চোরের দশ দিন,, সাধুর একদিন।”
চলবে???????
(আসসালা মুআলাইকুম।কেমন আছেন সবাই? অসুস্থতার জন্য বেশি বড় পর্ব লিখতে পারি নি।আমি সরি।ভালোবাসা নিবেন সবাই ❤️❤️)