প্রহর_শেষে_তুমি_আমার #পর্ব ১১ #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

0
148

#প্রহর_শেষে_তুমি_আমার
#পর্ব ১১
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

মিরা বেডে বসে কাদতে কাদতে কখন ঘুমিয়ে গেছে জানা নেই। ঘড়ির কাটা তখন দুইটা বেজে বিশ মিনিট।মিরা উঠে বসলো।মাথা টা ঝিম ঝিম করছে। কান্নার ফলে চোখ দুটো ফুলে গিয়েছে।মিরা আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেল।বেশ কিছুক্ষণ পর বের হলেই ফোন বেজে উঠলো।মিরা বেগ থেকে ফোন বের করেই দেখতে পেল মা লিখা। মিরার এবার যেনো আরো কান্না আসছে।মিরা নিজেকে সামলে নিয়ে ফোন রিসিভ করলো,,

-“হ্যালো মা!”

-“কি করছিস তুই?কখন থেকে তোকে কল করছি?তুই ঠিক আছিস তো?তখন ভার্সিটি থেকে কল এলো কেন?তোর কিছ হয় নি তো?”

মিরা কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু ভার্সিটি থেকে কি আগে মাকে কল করা হয়েছিল? অবশ্য মা তো তার গার্ডিয়ান ।তবে তাশফীক ভাই সেখানে গেল কি করে?মিরা বলল,,

-“মা আমি ঠিক আছি। ওয়াশরুমে ছিলাম বলে কল রিসিভ করতে সময় লেগেছে।”

-“তুই ঠিক থাকলে ভার্সিটি থেকে কল এলো কি করে?”

মিরা কি বলবে ভেবে পেলো না।বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,,

-“মা প্রেশার একটু লো হয়ে গিয়েছিল তাই একটু অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম।বেশি কিছু না।”

-“খবর ঠিক মত খাস না নাকি? জানিস আমি কতো ভয় পেয়েছিলাম।আমার কাছে যখন কল আসে তখন আমি স্কুলে।বের হওয়ার কোনো কায়দা নেই।শেষ মেষ তাশফীক কে কল করলাম। ছেলেটা তার কাজ ফেলে তোর ভার্সিটিতে গেল।”

মিরা চুপ রইলো। ওপাশ থেকে শুনতে পেল,,

-“মিরা তুই কি কিছু লুকাচ্ছিস আমার থেকে?একদম মিথ্যা বলবি না। সত্যি সত্যি বল কি হয়েছে তোর।”

মিরার চোখ দিয়ে এবার জল গড়িয়ে পড়ল।মায়ের কোলে মাথা রাখতে মন চাচ্ছে খুব।কান্না গুলো গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।মিরা এক হাতের চোখের জল মুছে কন্ঠ স্বাভাবিক করে বলল,,

-“মা তুমি শুধু শুধু টেনশন করছো।আমার কিছু হয় নি।আমি একদম ঠিক আছি।তখন একটু প্রেসার ফল করেছিল এ ছাড়া আর কিছুই না।আচ্ছা মা আমি রাখি পড়ে কথা হবে।”

বলেই মিরা কল কেটে দিল।নূপুর বেগম ওপাশ থেকে সস্তির নিশ্বাস নিলেন।মিরা চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে গায়ে ওড়না নিয়ে নিচে চলে গেল।একটু কিছু খাওয়ার প্রয়োজন।

।সায়মা বেগম সোফায় বসে চা খাচ্ছিলেন।এই এক অভ্যাস সময় অসময়ে চা তার লাগবেই।মিরাকে দেখে তিনি ঠোঁট এলিয়ে দেন।।মিরা কাঁদো কাঁদো চোখে মামনির দিকে হাটা ধরে।একদম শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।এক মা পাশে নেই তো কি হয়েছে আরেক মা তো আছে।সায়মা বেগম অবাক হন।কি হলো মেয়ে টার?

-“কি হয়েছে তোর? কাদছিস কেনো? তখন তাশফীক আর তুই হুড়মুড় করে এলি।একটু পর আবার তাশফীক হুড়মুড় করে চলে গেল।”

মিরা কেঁদে উঠলো।সায়মা বেগম বিচলিত হয়ে বললেন,,

-“কি হয়েছে মা তোর? ভার্সিটিতে কিছু হয়েছে?আমি তোর রুমে ও তখন গিয়েছিলাম কিন্তু তুই ঘুমিয়ে ছিলি। বল না মা কি হয়েছে তোর?”

তারমিন বসার ঘরে উপস্থিত হয়।মায়ের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়?সায়মা বেগম ফির মিরাকে বলেন,,

-“কি হয়েছে আমার মা টার?এভাবে কেঁদেই যাচ্ছিস!আমাকে না বললে বুঝবো কি করে?”

মিরাকে মামনিকে ছেড়ে দেয়।সায়মা বেগম মিরার চোখের জল মুছে দেয়।মুখ পুরো লাল হয়ে গেছে।মিরা কাপা কাপা কণ্ঠে ভার্সিটিতে হয়ে যাওয়া সকল ঘটনা বলে।সায়মা বেগমের চেহারায় চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে।মিরা বলে,,,

-“মামনি তোমার ও কি বিশ্বাস হয় আমি এমন কাজ করেছি?তুমিও কি আমায় অবিশ্বাস করছো?”

সায়মা বেগম মিরার দু গালে আলতো করে হাত রাখেন।ঠোঁটে একটু হাসি ফুটিয়ে বলেন,,

-“আমি জানি আমার মেয়ে কেমন।আর যাই হোক এমন জঘন্য কাজ সে কখনোই করবে না।”

-“মামনি সত্যি বলছি আমি কিছুই করি না!”

সায়মা বেগম মিরার কপালে চুমু খেয়ে বলেন
-“আমি জানি মা।মামনি অলওয়েস ট্রাস্ট ইউ !”

তারমিন মিরার কাধে হাত রেখে বলে,,

-“আমরা জানি তুই কেমন মিরা আপু।।তাই আমাদের কাছে এতো এক্সপ্লেইন করতে হবে না।”

মিরার একটু ভরসা পায়।আসলেই এই মানুষ গুলো তার খুব আপন।কি সুন্দর তাকে আগলে নেয়।তাকে এতো ভালোবাসে।এই মানুষ গুলো তার খুব কাছের।কিন্তু মুহুর্তে মন টা বিষিয়ে যায়।যে মানুষ টা তার খুব বেশি কাছের সেই মানুষ তাই তো মিরাকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
সায়মা বেগম মিরার হাত দুটি নিজের হাতের মুঠোয় নেন।শান্তি কণ্ঠে বলেন,,,

-‘সর্ব প্রথম নিজের উপর ভরসা রাখতে হয়। যে নিজের উপর ভরসা রেখে তার আর কোন কিছুর ভয় থাকে না।কারণ আপন সত্য বড় সত্য।আর সত্য কখনও লুকিয়ে থাকে না।একদিন না একদিন তো বেরিয়ে আসে।আমার বিশ্বাস একদিন এই সব কিছুর মূল বেরিয়ে আসবে। তুই তত দিন ধার্য ধর।পড়ালিখা মনোযোগ দিয়ে কর।দেখবি সব ঠিক হবে। এর পিছনে যে বা যারা আছে তারা সকলেই নিজেদের শাস্তি পাবে। তুই তোর সম্মান ফিরে পাবি।মনে রাখবি আল্লাহ ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না।”

মিরা মাথা দোলায়। সায়মা বেগম ফির বলেন,,

– “আর শোন এসব বিষয়ে তোর মাকে বলতে হবে না।অযথা এসব ভেবে নিজেকে অসুস্থ করে ফেলবে।”

-“হুম মায়ের সাথে কথা হয়েছিল।কিছু বলি নি আমি।”

-“যা এখন খেয়ে নে।কোন সকালে নাস্তা করেছিস।”

-“তুমি খাইয়ে দিবে?”
মিরার সহজ সরল আবদার।

-“হুম মা তোমার হাতে খাবো”
মিরার সাথে তারমিন ও বলে উঠে।”

সায়মা বেগম একটা হাসি দিয়ে চলে গেলেন খাবার আনতে।সায়মা বেগম হাতে করে খবর নিয়ে এলেন।মিরার মুখে পুরে দেন। তারমিনবলে,,

-“মা আমি ভেবেছি আজ থেকে আমার রূম আমি নিজে গুছাবো।”

-“ওমা তাই?”(সায়মা বেগম)

-‘হুম মা তুমি আমাদের জন্য কতো কিছু করো।তাই ভাবলাম নিজের কাজ নিজে করে তোমাকে একটু আরাম দেই।”(তারমিন)

-” আসলেই?”‘(সায়মা বেগম)

-“হুম।মা আমি তো তোমার জন্য নিজের ঘর গুছাবো বলেছি তবে মিরা আপু কি করবে?”

সায়মা বেগম মিরার মুখে খাবার তুলে দিয়ে বলেন,,
-“মিরার কিছু করতে হবে না।”

-“তাহলে মিরা আপু মায়ের জন্য কিছু না করলেও আমার জন্য একটা কাজ করতে পাড়বে?”

মিরা এতক্ষণ যাবৎ তাদের কথা শুনছিল।মিরা মলিন কণ্ঠে বলল,,
-“কি কাজ?”

-“আমাকে একটা গোলুমোলু মেয়ে বাবু এনে দাও।যে ফুপু ফুপু করে আমার মাথা খাবে।”

মিরার গাল মুহূর্তেই লাল হয়ে গেলো।অবাক হলো ভীষণ কি বলবে ভেবে পেলো না।এদিক সেদিক তাকিয়ে খাওয়া হয়ে গিয়েছে বলে রূমের দিকে দৌড় দিলো।সায়মা বেগম ও তারমিন দুজনেই হেসে উঠলো।সায়মা বেগম তারমিনের কান টেনে বললেন,,

-“কেনো এমন করলি? দেখলি তো মেয়ে টা লজ্জা পেলো!”

-“ভালো করেছি।দেখো নি তার মুখ কেমন হয়ে ছিল।মুখ টা কেমন মলিন করে বসেছিল।সে যে তার ভার্সিটির ব্যাপার নিয়ে এখনো ভাবছে তা তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।।তাই তার মাইন্ড ডাইভার্ট করতে এমন বলেছি।”

-“মেয়ে দেখি আমার বড় হয়ে গিয়েছে।”

-“তাহলে বিয়ে দিয়ে দাও!”

সায়মা বেগম চোখ পাকিয়ে তাকান। তারমিন দেয় ভো এক দৌড়।সায়মা বেগম এটো থাল বাসন নিয়ে কিচেনে চলে যান।
_________

ঘড়ির কাটায় আটটা বেজে ত্রিশ মিনিট। বসার ঘরে পপ কর্ন খাচ্ছে তারমিন ও মিরা। মুভি দেখছে দুজনে।মিরা দেখতে চায় নি কিন্তু তারমিন জোর করে মিরাকে বসিয়েছে। এতে একটু হলেও মিরার মন খারাপ দুর হবে।তবে মুভি দেখতে দেখতে তারা এতো বিভোর হয়ে যায় যে ,,, পাশে যে কেউ দাড়িয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ করছে তা আর খেয়াল করে নি।

তাশফীক বেশ কিছুক্ষণ তাড়িয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ করলো।মিরার দিকে তাকিয়ে ভাবলো আসলেই কি এই মেয়ে?সকালে এতো বড় কাণ্ড ঘটলো আর এখন বসে বসে মুভি দেখছে।পড়া লিখার কোনো বালাই নেই। পড়ার মধ্যে শুধু ফাঁকি বাজি।নিজের কি কোনো সেন্স নেই?

-“তাশফীক তুই কখন এসেছিস?”

সায়মা বেগমের কন্ঠ শুনে মিরা ও তারমিন দুজনেই পাশে তাকায়।মিরার চোখ চোখি হয় তাশফীকের সাথে। তাশফীক যেনো চোখ দিয়েই তাকে ভষ্ম করে দিবে। তাশফীক বিনা বাক্যে সেখান থেকে প্রস্থান করে।মিরা ভাবতে লাগলো না জানি আবার কি আছে মিরার কপালে।

চলবে???

(আসসালা মুআলাইকুম ।কেমন আছেন সবাই?গল্প কেমন লাগছে আপনাদের?সবাই নিজেদের মন্তব্য প্রকাশ করবেন।আমার পাশে থাকবেন।গল্প ভালো লেগলে অবশ্যই লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন।ভালোবাসা নিবেন পাঠকগণ ❤️❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here