#প্রহর_শেষে_তুমি_আমার
#পর্ব ১২
#মেঘকন্যা
-“আজ সকালে এতো বড় কাণ্ড ঘটিয়ে এখন রিল্যাক্স এ মুভি দেখছিলে?”
ঝাঁঝালো কণ্ঠ তাশফীকের। তাশফীক মাত্র রুমে এসেছে। টাই খুলছে সে। দরজার পাশে মিরা দাড়িয়ে আছে।মিরা তো রুমে আসতেই চাচ্ছিল না।কিন্তু তাশফীকের ডাক শুনে গুটি গুটি পায়ে রুমের কাছে চলে আসে।কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করার সাহস পায় না।ঠিক তখন তাশফীকের কণ্ঠ শুনে ভড়কে যায়।মিরা ওড়না আঙ্গুল পেচাতে পেচাতে রুমে চলে আসে। তাশফীক মিরার দিকে তাকায়।দুজনের চোখা চোখি হয়।মিরা আমতা আমতা করে বলে,,,
-“আসলে।”
তাশফীক রূঢ় কণ্ঠে বলে,,
-“কি আসলে?তোমার কি একটুও খারাপ লাগে না?।এতো এতো টিচার এর সামনে এমন সাসপেন্ড হলে।এতো বড় একটা বাজে কাজ করলে তাও কোনো অনুতপ্ত বোধ তোমার নেই।কেমন মানুষ তুমি মিরা?”
-“দেখুন,,আমি সত্যি বলছি আমি কিছু করি নি।আপনি একটা বার আমায় বিশ্বাস করুন।”
-*মিরা আমি সত্যি জানি না,, না জানি তুমি করেছো কি করো নি।শুধু জানি সব কিছু তোমার বিরোধে।”
-“শুনুন চোখে দেখা সব সময় সব কিছু সত্য হয় না।আমি তো বলছি আমি কিছুই করি নি।শুধু জানি আমি এর আগে পিছে কোথাও নেই।”
-“তো আমি করেছি?আচ্ছা মানছি তুমি করো নি তবে তুমি যে সাসপেন্ড হলে তার জন্য কি একটু খারাপ লাগে নি? অবশ্য খারাপ লাগলে এমন চিল মুডে মুভি দেখতে না।”
-“সাসপেন্ড নিজের দোষে হই নি।আর যা হয়ে গেছে তা ভেবে কষ্ট কেনো পাবো?তাই মন চাইছে মুভি দেখেছি।আপনার থেকে কি এখন পারমিশন নিতে হবে নাকি?
-“মিরা প্লিজ আমাকে রাগিয়ে দিও না।আমার চোখের সামনে থেকে দূরে যাও। জস্ট গো ফ্রম হেয়ার l”
-“আপনার সামনে আমি আসি নি।আপনি ডেকেছিলেন বলেই এসেছি।আর আমারও এতো শখ নেই আপনার সামনে দাড়িয়ে আপনার তেতো কথা শোনার।আর শুনুন আমি যাবো কেনো? রুম তা তো আমারও।তাই আপনার ভালো না লাগলে আপনি চলে যান।আপনাকে তো আর আমি ধরে রাখি নি।”
মিরা এক বিন্দু ও নরে না। তা দেখে ফুসে ঊঠে তাশফীক।হাতে ফোন ও ওয়ালেট নিয়ে নিজেই হন হন করে বেরিয়ে যায়।
_________
চায়ের দোকানে বসে আছে তাশফীক। পাশেই বসে আছে পিয়াস।চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে দুজনেই। তাশফীক কোনো কথা বলছে না। পিয়াস ও চুপ চাপ বসে আছে।এই চায়ের দোকানে বসে আছে বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ।কিন্তু তাশফীক কিছুই বলছে না। আর এই দিকে মশা কানের সামনে ভিন ভিন করছে। পিয়াস এবার বিরক্তি কর কন্ঠ নিয়ে বলে,,
-‘ভাই কতক্ষন যাবৎ বসে আছি কিন্তু তুই কিছুই বলছিস না উল্টো মশা মামা কানের কাছে ভিন ভিন করছে।”
-“হুম হুম।যা যা তুই ও চলে যা।বসে আছিস কেনো?সব দোষ তো আমার।আমি তো খারাপ চাই।”
পিয়াস ভড়কে যায়।আর কিছু বলে না।মনে হয় তাশফীকের মেজাজ গরম হয়ে আছে।বেশ কিছুক্ষণ পর তাশফীক বলে,,
-“সরি।”
পিয়াস তাশফীকের কাধে হাত রাখে।বলে,,
-“আমি জানি তুই কোনো বিষয় নিয়ে ডিস্টার্ব। চাইলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারিস।”
তাশফীক মিরার সাথে হওয়া ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে পিয়াস বলে,,
-“তোর কি মনে হয় মিরা এমন কাজ করবে?”
তাশফীক কপালের কাছে চুলগুলো বা হাত দিয়ে পিছনে ঠেলে দিয়ে বলল,,
-“মনে না হওয়ার কি কোনো ওয়ে আছে? মনে না হলেও তো সব প্রমাণ তার দিকে।”
-“দেখ হতে পারে সবাই যা দেখছে,যা বিশ্বাস করছে
তা মোটেও সত্য নয়।সত্য অন্য কিছু।আর তুই তো মিরার লাইফ পার্টনার ,,তুই নিজেকে একবার প্রশ্ন করে দেখ যে ,,মিরা এমন মেয়ে কি না?মিরা এমন বাজে কাজ করবে কি না?”
তাশফীক চুপ রইলো।তার মন বলছে অন্য কিছু।বার বার মনে হচ্ছে মিরা কিছু করে নি। মন বলছে মিরা চঞ্চল তবে এমন নয়।মিরা এতো নিচু কাজ করতে পারে না।কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে সব প্রমাণ তার দিকে।হয়তো দুষ্টুমির ছলে করেছে। হয়তো,,,,,,নাহ তাশফীক আর কিছু ভাবলো না।
পিয়াস তাশফীকের হাতে একটা কয়েন দিয়ে বলল,,
-“দেখ এই কয়েনের দুটো পিঠ।আমরা শুধু এই পিঠ দেখছি কিন্তু অন্য পিঠ দেখছি না।হতে পারে মিরার কেস ও সেম।সবাই শুধু এক পাশের দিক দেখছে।হতে পারে এর অন্য একটা দিক ও আছে।যা সবার কাছে লুকাইতো। শোন বড় কথা তুই ওর লাইফ পার্টনার নয় এখন তুই ওর সবচেয়ে কাছে মানুষ তাই আমার মনে হচ্ছে তোর ওকে সাপোর্ট করা দরকার।ব্যাপারটা একটু দেখা দরকার।মিরা যদি আসলেই এমন কাজ করে থাকে তবে সে তার শাস্তি পাচ্ছে।আর না করে থাকলে কেনো সে শাস্তি ভোগ করবে?।সব চেয়ে বড় কথা মিরার এই বেপারে তুই তোর মনের কথা শোন।
তাশফীক চুপ রইলো।কপালে দুটো ভাজ পড়লো বেশ কিছুক্ষণ পর বাসার দিকে হাতে ধরলো।
______
-“মিরা খাবার খেয়ে নাও।”
-“আমার খিদে নেই।”
-“লাস্ট একবার বলছি খেয়ে নাও।”
-“আমিও বলছি খাবো না।”
তাশফীক কিছু একটা ভাবলো। তাঁর পির ঠাস করে মিরাকে কোলে তুলে নিলো।মিরা এতো ক্ষণ শুয়ে ছিল।রাগে রাতের খাবার টুকু খায় নি।মিরা ধীর কণ্ঠে বলল,,
-“আমি খাবো না।আমাকে নিচে নামান।”
মিরাকে সোফার উপর বসিয়ে দিলো তাশফীক।মিরার সামনে ভাতের প্লেটে দিয়ে বলল,,
-“জাস্ট ফাইভ মিনিটের মধ্যে শেষ করবে।”
মিরা এর কথা বাড়ালো না।খাবার খেয়ে হাত ধুয়ে নিল।বেডে এসে শুয়ে পড়ল।এপাশ ওপাশ করলো কিন্তু ঘুম কিছুতেই এলো না।তাশফীক ঘুমিয়ে পড়েছে।মিরাউঠে বসলো।পা চালিয়ে বারান্দায় গেলো।এক হাত বারান্দায় রেলিং এ রেখে বলল,,
-“বাবা কেনো রেখে গেলে আমায় তুমি?দেখো আমি আজ খুব একা ফিল করছি।আমার সব চাইতে কাছের মানুষ আমাকে বিশ্বাস করতে পারছে না।বিয়ের পর মেয়েদের সব চেয়ে কাছের মানুষ তার স্বামী। অথচ দেখো আমার স্বামী নামক মানুষ টা আমায় অবিশ্বাস করছে।বাবা রা নাকি মেয়েদের হিরো।আজ আমার হিরো থাকলে হয়তো আমায় বিশ্বাস করতো ।আমি তোমার সাপোর্ট পেতাম আমার মাথায় হাত রেখে তুমি বলতে,, আম্মাজান আমি আছি আপনার সাথে।আমি আপনাকে বিশ্বাস করি।”
বাবা জানো আমি তখন কি করতাম?
আমি ঠিক তখন তোমার হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রাখতাম।তুমি হাত বুলিয়ে দিতে।আমি চোখ বন্ধ করে সব কিছু ভোলার চেষ্টা করতাম।
বাবা আমি জানি আমি চঞ্চল।কোনো জায়গায় স্থির থাকি না।পড়া লিখা ও ওতো মনোযোগী না তাই বলে কি আমি এমন খাজ করবো?আমাকে তো মা এই শিক্ষা দেয় নি। আর আমি স্বপ্নেও এমন কাজ করতে পারব না।তবে কেনো তাশফীক ভাই আমায় আগলে নিতে পারছে না?তিনি আমাকে বউ হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না বলেই কি আমায় বিশ্বাস করতে পারছেন না?তিনি আমায় ভালোবাসেন না বলেই কি আমায় একটু বিশ্বাস করতে পারছে না?
বাবা কেনো তুমি আমায় ছেড়ে চলে গেলে?আমার যে আজ তোমায় খুব বেশি প্রয়োজন।কেনো আমার এতো খারাপ লাগছে?কেনো তুমি থেকেও আমি তোমার ভালোবাসা পেলাম না?তুমি কি আমায় একটুও মনে করো না?আমি কি এতো খারাপ যে কেউ আমাকে ভালোবাসে না,, কেউ আমাকে আগলে নে না,, আমাকে ছেড়ে চলে যায়।আমি কি এতো খারাপ বাবা?বাবা তুমি কোথায়? ?কেনো চলে গেলে আমাদের রেখে?
বাবা তুমি কেন এমন করলে?তোমার কি আমার কথা মনে হয় না?এই যে দেখো তোমায় আমি মনে করছি।তোমার সঙ্গ পেতে চাইছি। তোমারও কি আমার সাথে কথা বলতে মন চায় না?বাবা কোথায় তুমি?একবার আমার কাছে এসো না,,আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না।আজ যে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়ার খুব প্রয়োজন!
মিরা চোখের জল মুছে নিলো।মনে হলো এই চাওয়া তার পূরণ হবে না।আকাশের দিকে তাকিয়ে কাপা কাপা কণ্ঠে উচ্চারণ করলো,,
-“আমাকে একটু আগলে নিন না তাশফীক ভাই!কেনো আপনি আমাকে আগলে নিচ্ছেন না?আপনি কি বোঝেন না আপনাকে আমার ভীষণ প্রয়োজন।
একটু আগলে নিন আমায়,,একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দেন,,
আমার যে আজ আপনাকে বড্ড প্রয়োজন!”
চলবে??????
(আসসালা মুআলাইকুম।কেমন আছেন সবাই? গল্প কি বোরিং লাগছে?নাকি সাজানো ঠিক মতো হচ্ছে না? সবাই প্লিজ আমার ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন।আর হুম আমি কিন্তু ভীষণ খুশি কারণ পাঠকগণ সবাই রেসপন্স করছে।আর যারা নীরবে পড়ছেন তাদের ও বলবো একটু রেসপন্স করতে।আর হুম,,আজ গল্প একটু ছোট হয়েছে কারণ শরীরটা ভালো লাগছে না।তাই আমি খুব বেশি সরি🥹🥹 কেউ রাগ করবেন না।সবাই ভালোবাসা নিবেন ❤️)