একটি_অপ্রেমের_গল্প #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ২।

0
70

#একটি_অপ্রেমের_গল্প
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২।

“আপনি আপনার জুনিয়রকে তুমি বলে সম্বোধন করছেন, সেটা আপনার ভদ্রতায় ঠেকছে না?” মেসেজটা পাঠিয়ে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারল অন্বিতা। মেজাজটা কোনোভাবেই ঠিক করবার সুযোগ পাচ্ছে না। এই যে ছোট্ট এক মেসেজে আবার মন বিগড়ে গেল তার।

চুলের পানি নিয়ে তোয়ালেটা বারান্দায় নেড়ে এল। রুমে আসতেই ফোনে আগমন বার্তার সংকেত শুনেও না শোনার ভান করে ডাইনিং রুমে চলে গেল সে। চেয়ার টেনে বসে বলল,

‘তুমি খেয়েছ, মা?’

আসিয়া বেগম অন্বিতার প্লেটে খাবার বাড়তে বাড়তে বললেন,

‘তোকে ছাড়া খাই কখনো?’

‘মা, চারটা বাজতে চলল। কেন এমন করো সবসময়? অসুস্থ হলে কে দেখবে তোমায়? কাল থেকে আমার চাপ আরো বাড়বে।’

আসিয়া বেগম হাসলেন। মেয়ের বকুনি খেতে বেশ লাগে তাঁর। বললেন,

‘এইটুকু সময়ের দেরিতে কেউ অসুস্থ হয় না। আর ডাক্তার মেয়ে তো আছেই আমার চিকিৎসার জন্য।’

অন্বিতা মায়ের হাতটা টেনে তার গালের সাথে লাগিয়ে বলল,

‘এমন উদাসীন হইয়ো না, মা। শরীরের যত্ন নাও। তোমার কিছু হলে আমি যে নিঃস্ব হয়ে যাব।’

‘নিঃস্ব যেন না হতে হয়, সেইজন্যই মাহিরকে খুঁজে এনেছি। জানিস, ওর কথা ভাবলেই আমি তোকে নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকি।’

অন্বিতা বিস্ময় নিয়ে মা’কে দেখে। মা ঐ লোকটাকে এত বিশ্বাস করে ভাবতেই অবাক লাগে তার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘আচ্ছা, খেতে বসো এবার।’

খাবারের পর্ব চুকিয়ে রুমে এসে দেখে ফোনটা তার ক্লান্তহীন বেজে চলছে। সে বিছানার কাছটায় এসে উঁকি দিয়ে দেখে, নাম্বারটা কার। নাম্বার চেনা মাত্রই বিরক্তিতে চোখ মুখ ছেয়ে যায় তার। নিয়ত করে, ফোন তুলবে না। পরে মনে পড়ে, বেটা সাংঘাতিক, ফোন না তুলাতে একবার বাড়ি অবধি চলে এসেছিল। আজও এমন কিছু হোক অন্বিতা চায় না। তাই রিসিভ করে। সাথে সাথেই ওপাশ থেকে কেউ কঠিন রাশভারী সুরে বলে উঠে,

‘জ্ঞানের ঘাটতি থাকলে বাদাম খাও, তাও মূর্খের মতো কাজ করা বন্ধ করো।’

অন্বিতা দাঁতে দাঁত খিঁচে বলে,

‘তা মি. অত্যন্ত জ্ঞানী পুরুষ, আপনি কেন এই মূর্খকে ফোন দিয়ে আপনার মূল্যবান সময় ব্যায় করছেন?’

‘তুমি কিন্তু আমার সাথে ফের বেয়াদবি করছো।’

‘আপনিও আমাকে ফের “তুমি” বলে সম্বোধন করছেন।’

‘বেশ করেছি।’

‘তবে আমিও বেশ করেছি।’

ওপাশ নীরব। হয়তো অন্বিতার কথায় উগড়ে উঠা মাত্রাধিক রাগকে প্রশমিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এক পল বাদে ওপাশ থেকে আওয়াজ এল,

‘আমার তোমার সাথে প্রয়োজন ছিল বলেই দেখা করতে গিয়েছিলাম, প্রেম করতে নয়।’

‘বলা তো যায় না, যদি প্রেম করতেই যেতেন; আমার তো আমার কলেজে একটা মান সম্মান আছে, তাই না?’

‘আমাকে রাগিও না, অন্বি।’

‘আমাকেও আপনি বিরক্ত করবেন না।’

‘এখনো তো শুরু’ই করিনি। এর মধ্যেই থেমে যেতে বলছো?’

‘ফোন রাখুন, আমার আরো কাজ আছে।’

‘বর্তমানে আমাকে সময় দেওয়া ছাড়া তোমার আর কোনো কাজ থাকতে পারে না।’

অন্বিতার রাগ হলো। বাজখাঁই সুরে বলল,

‘শুনুন, আপনার সাথে কথা বলা আমার কাছে সময়ের অপচয় ছাড়া আমার আর কিছুই মনে হয় না। আর বর্তমানে আমার এত গুরুত্বপূর্ণ সময় আমি আপনার সাথে কথা বলে অপচয় করতে চাই না।’

ওপাশ থেকে ভেসে এল হাসির শব্দ। অন্বিতা চোখ বুজল সঙ্গে সঙ্গেই। এত প্রশান্তি কেন এই শব্দের মাঝে। মাহির হাসি থামিয়ে বলল,

‘তবে তো পুরো জীবনটাই তোমার অপচয় করেই কাটিয়ে দিতে হবে।’

অন্বিতা ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেলে শান্ত করল নিজেকে। বলল,

‘কী কথা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।’

‘কাল কী পরে আসছো?’

ফের রাগটা ধপ করে মস্তিষ্কে চড়ে বসল। ক্ষিপ্ত সুরে বলল,

‘কাফনের কাপড়।’

‘ছি অন্বি, এসব বলতে হয় না।’

‘আপনি প্লিজ জরুরি কোনো কথা থাকলে বলুন, না হলে কলটা কেটে রেহাই দিন আমায়।’

‘শুনো, তোমার ঐ আকাশী রঙের শাড়িটা আছে না, সেটা পরেই এসো।’

অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত রেখে অন্বিতা জিজ্ঞেস করল,

‘আর কিছু বলতে চান আপনি?’

‘আপাতত না।’

‘তবে এবার রাখুন।’

‘ঠিক আছে, বাই।’

অন্বিতা চট করে ফোন কাটল। রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে সে। আর যেন সহ্য হচ্ছে না লোকটার এসব ব্যবহার। চোখে পানি এল তার। অতীতও খারাপ করেছে, এখন বোধহয় বর্তমান আর ভবিষ্যতও খারাপ হওয়ার পথে।

ফোন রেখে অশান্ত মনে বিছানায় গা এলাল সে। আজকাল ঘুমেরা যেন তার সাথে বিরোধে নেমেছে, কোনোমতেই ধরা দেয় না। এই যে শুয়েছে, এখন হাঁসফাঁস করবে সন্ধ্যা হওয়ার আগ অবধি, ঘুম কিন্তু আসবে না। রাতেও তাই। বড়ো জোর ঘন্টা দুয়েক কোনোভাবে ঘুমায়, তারপর আবার শুরু আরেক কর্মব্যস্ত দিন।

সন্ধ্যার প্রহর কেটে এখন কুচকুচে রাত। কফির গ্লাস হাতে অন্বিতা তার বারান্দায়। তাদের বাসার সাথেই আরেকটি বাসা লাগানো। সেই বাসার চার তলায় একটা ব্যাচেলর ছেলে থাকে। সন্ধ্যা পড়তেই বারান্দায় গিটার নিয়ে বসে সে। টুংটাং করে বেশ নিখুঁত সুর তুলে। অন্বিতা কফি বা চায়ের সাথে উপভোগ করে সেটা। তবে আজ সেই বারান্দাটা ফাঁকা। হয়তো ছেলেটা বাসায় নেই। প্রতিদিন সেই ছেলের গান যেন অন্বিতার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাই আজ সেই ছেলের প্রতীক্ষায় কফিটা একটু বিলম্বে পান করলেও সেই ছেলের গান শোনার সৌভাগ্য আর তার হয় না। কফিটাও বোধ হয় সেইজন্য আজ পানসা লাগছে। তার আর বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকার ইচ্ছে হয় না, ফিরে আসতে নিয়েও আবার থমকে দাঁড়ায়। একটা নিভু নিভু আলো জ্বলতে দেখে সেই বারান্দায়। অন্বিতার তীব্র আগ্রহ জন্মে, সেদিকেই চেয়ে থাকে সে। একটা বলিষ্ঠ শরীরের ছায়া, হাতে গিটার নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। এই ছেলেটাকে আজ অবধি অন্বিতা দেখেনি। প্রতিবারই কেবল ছায়া দেখেছে। আজও তাই। গিটারে সুর তুলে, পুরুষালী এক ভারী সুর এসে ধাক্কা খায় অন্বিতার কর্ণকুহুরে। অন্বিতা কফির কাপে চুমুক দেয়। এবার কফিটা বেশ স্বাদের মনে হয় তার।

প্রত্যহ দিনকার ন্যায় আজও গান শেষ করে ছেলেটা গিটার সমেত নিজের রুমে চলে যায়। অন্বিতা তাকিয়ে থাকে ছেলেটি তার রুমে যাওয়া অবধি। রুমে চলে আসে অন্বিতা অতঃপর। তার এত মন খারাপের ভিড়ে এই ছেলেটার গান তার মন ভালো করে দেয়। ফুরফুরে ভালো মনটা নিয়ে এবার পড়ার টেবিলে বসে অন্বিতা। কাল থেকে আবার নতুন করে দায়িত্বের চাপ পড়বে, তার সাথে ঐ অভদ্র লোকটার আলগা পিরিতের অত্যাচার তো আছেই, কী করে যে এতকিছু সহ্য করবে কে জানে।

রাতের খাবার শেষ করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় অন্বিতা। রাস্তার ধারে তখন দু একটা কুকুর ডাকছে। গাড়ি যাচ্ছে বেশ সময় পর পর একটা দুইটা। অন্বিতা সেসব’ই দেখছে। এর মাঝেই অকস্মাৎ তার চোখ সেই অজ্ঞাত ছেলের বারান্দার দিকে যায়। আজ এক ব্যতিক্রম সময়ে ছেলেটা বারান্দায় বসে। তার ছায়াটা স্পষ্ট। অন্বিতা সেদিকেই চেয়ে আছে। অনেকক্ষণ চেয়ে থাকার পর মনে হলো যেন, এই ছেলেটাও বুঝি তাকেই দেখছে, অথচ ছেলেটা কোনদিকে তাকিয়ে আছে সেটা অন্ধকারে বোঝা দায়। তাও কেন যে অন্বিতার এটা মনে হলো কে জানে। অদ্ভুত লাগল ব্যাপারটা, তাই রুমের ভেতর চলে আসে সে। শুয়ে পড়ে। এলার্ম দেওয়ার জন্য ফোনটা হাতে নিতেই দেখে অপছন্দের নাম্বার থেকে মেসেজ, “শুভ রাত্রি, অন্বি। কাল আমাদের শীঘ্রই দেখা হোক।”

সুন্দর বার্তাখানা চমৎকার ভাবে অবজ্ঞা করে ফোনে এলার্ম লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল অন্বিতা। মনে মনে একবার আওড়ে নিল,

‘আমাদের আর দেখা না হোক।’

চলবে….

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here