#একটি_অপ্রেমের_গল্প
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২৩।
অন্বিতার বাসার সামনে গাড়ি থামল। সে নামার জন্য উদ্যত হতেই মাহির বলল,
‘কাল ছুটি তোমার, বাসায় থেকে রেস্ট নিও।’
‘আজও তো ছুটিতেই কাটালাম।’
‘সমস্যা নেই।’
‘আচ্ছা, তুমিও রেস্ট নিও। ঠান্ডা লাগবে নিশ্চিত।’
‘চিন্তা করো না, তুমি ব্যতিত আমাকে অন্যকিছু কাবু করতে পারবে না।’
অন্বিতা কিঞ্চিৎ হেসে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। বলল,
‘আল্লাহ হাফেজ, বাসায় গিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিও।’
‘আল্লাহ হাফেজ।’
মাহির গাড়ি ঘুরিয়ে নিল।
অন্বিতা বাসায় আসে। তাকে ভেজা অবস্থায় দেখে আসিয়া বেগম চিন্তিত সুরে বললেন,
‘বৃষ্টিতে ভিজেছিস? এবার যদি ঠান্ডা লাগে?’
অন্বিতা পারছে না বলতে, “আমি কি আর সাধে ভিজেছি, ঐ অভদ্র লোকটার জন্যই তো ভিজতে হয়েছে।” তবে মা’কে তো আর এই কথা বলা যায় না, তাই অল্প হেসে বলল,
‘আসলে হুট করে চলে এসেছে তো, তাই ভিজে গিয়েছি।’
‘জলদি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। ঠান্ডা লেগে যাবে নয়তো।’
অন্বিতা গোসলে চলে গেল।
_____
কফির কাপ হাতে নিয়ে বারান্দায় অন্বিতা। মুঠোফোন হাতে আভার নাম্বারে কল দেয়। কল রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে শোনা যায় অভিমানী সুর,
‘অবশেষে মনে পড়ল তবে?’
‘সবসময়ই পড়ে, কেবল সময়ের অভাবে যোগাযোগ করতে পারি না।’
‘হ্যাঁ তো ম্যাডাম, আপনি ভীষণ ব্যস্ত। হাসপাতাল, রোগী, ডাক্তার সব’ই তো আপনাকে সামলাতে হয়।’
অন্বিতা মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,
‘আভা, বেশি বকছিস কিন্তু।’
‘তা প্রেম কেমন চলছে? রাগ অভিমান কমেছে কিছু, নাকি এখনো আগের মতোই?’
‘না রে, আর পারিনি। মাহিরের চোখের পানি আমার মনের কঠিন খোলসকে ভেঙে দিয়েছে। আমি আর শক্ত থাকতে পারিনি।’
আভা খুশি হলো। বলল,
‘তাই নাকি! যাক, শান্তি পেলাম। অবশেষে তোদের মিল হলো আবার।’
অন্বিতা গাঢ় নিশ্বাস ফেলল। উদ্বিগ্ন সুরে বলল,
‘তাও ভয় হয়, যদি আরো একবার মানুষটা একই ভুল করে, তখন কী করব?’
‘করবে না। তুই নিশ্চিন্ত থাক। ভাইয়াও তো কম কষ্ট পাননি, এতকিছুর পর দ্বিতীয়বার একই ভুল তিনি করবেন না।’
‘তোর কথাই যেন সত্যি হয়।’
‘হ্যাঁ, তাই হবে। আচ্ছা, তোদের পাশের বিল্ডিং এর বারান্দায় যে কে গান গাইতো, সেকি এখনো গান গায়?’
‘আজকাল আর গায় না।’
‘কেন?’
‘হয়তো আমি বারণ করাতে?’
আভা উৎসুক হয়ে শুধাল,
‘তুই উনার সাথে কথা বলেছিস? উনি তোর সামনে এসেছেন?’
‘না, সরাসরি সামনে আসেনি। বারান্দায় কেবল উনার ছায়া দেখা যাচ্ছিল।’
‘বাহ, ছায়ামানব এখনো ধরা দেয়নি?’
‘না, অদ্ভুত ব্যাপার তাই না?’
‘হ্যাঁ, সেটাই তো।’
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখল অন্বিতা। বারান্দায় কারোর ছায়া দেখা যাচ্ছে। অন্বিতা ভেতরে চলে আসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাসে সে। নিজে নিজেই বলে উঠে,
‘আজকাল সবাই নিজেকে খুব চালাক ভাবে।’
______
বৃষ্টিতে ভেজার দরুন রাতে গা কাঁপানো জ্বল হলো মাহিরের। বাড়িতে সে ব্যতিত কেউ নেই। দাদা তার বেশিরভাগ সময় গ্রামেই থাকেন। একা বাড়িতে অসুস্থ হয়ে কাতরালেও কেউ দেখার নেই।
জ্বরের চোটে চোখে ঝাপসা দেখছে মাহির। ঘুম আসছে না কিছুতেই। তাই কোনোরকমে অন্বিতার নাম্বারে কলটা লাগাল। এত রাতে মাহিরের কল দেখে অন্বিতা চিন্তায় পড়ে। কল রিসিভ করে জিজ্ঞেস করে,
‘কোনো সমস্যা, মাহির?’
ওপাশ থেকে জবাব এল না। তবে এই নীরবতার মাঝেও মাহিরের ভারী নিশ্বাস সে ঠিকই ঠাহর করতে পারছে। অন্বিতা উদ্বিগ্ন সুরে বলল,
‘জ্বর হয়েছে তোমার?’
ওপাশ থেকে ক্ষীণ আওয়াজে জবাব এল,
‘হু।’
‘বলেছিলাম আমি, তখন তো শুনোনি। ঔষধ খেয়েছ?’
‘হু।’
‘বাড়িতে কেউ নেই?’
‘না।’
‘তোমার সহকারীকে কল দিয়ে ডেকে নাও।’
‘কেন?’
‘এই অবস্থায় একা থাকতে পারবে তুমি?’
‘পারব।’
‘তোমার গলার স্বর কাঁপছে। জ্বর মেপেছ?’
‘না।’
‘নির্ঘাত একশো তিন চার হবে। আমার কথা কেন শুনো না বলো তো?’
‘শুনলে কি আর আজ এত দারুণ সময় কাটাতে পারতাম।’
‘তোমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। থাক আর কথা না বলে ঘুমানোর চেষ্টা করো।’
‘আসছে না ঘুম। চোখ জ্বলছে আমার।’
‘কিছু একটা ভিজিয়ে এনে মুখের উপর দিয়ে রাখো।’
‘পারব না।’
‘কেন? আরাম পাবে তো।’
‘এইজন্যই বলেছিলাম, বিয়েটা করো তাড়াতাড়ি। আজ তুমি এখানে থাকলে আমার কি কোনো কষ্ট হতো, বলো?’
‘আচ্ছা, এই নিয়ে আর আফসোস না করে যেটা বলেছি সেটা করো।’
‘আমি উঠতে পারব না এখন। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।’
‘খুব তো বলছিলে, আমি ব্যতিত তোমাকে অন্যকিছু কাবু করতে পারে না।’
‘পারেনি তো। এই যে আমি এখনো কত সুন্দর তোমার সাথে কথা বলতে পারছি।’
‘হু, খুব পারছো। এবার তুমি আমার কথা শুনো, সুন্দর করে উঠে একটা কাপড় ভিজিয়ে এনে মুখের উপর দিয়ে তারপর ঘুমানোর চেষ্টা করো। দেখবে, চোখ আর জ্বলবে না।’
‘বুকও তো জ্বলছে।’
অন্বিতা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘মনে হয় গ্যাস্ট্রিক হয়েছে।’
মাহির বালিশে মুখ চেপে শু’লো। নিশ্বাসের মাত্রা ঘন তার। গলার স্বর ক্ষীণ। বলল,
‘একটা মানুষ এত মামুলি কেন? আমার উপর একটুও মায়া হয় না বুঝি? তোমার সান্নিধ্য পেতে একটা মানুষ মরে যাচ্ছে, আর তুমি তাকে এভাবে অবহেলা করছো? এত নির্দয়, এত নিষ্ঠুর কেউ কী করে হতে পারে?’
অন্বিতা ঠোঁট চেপে হাসি আটকে বলল,
‘তাহলে এমন নিষ্ঠুর, নির্দয় মেয়েকে বিয়ে না করাই ভালো। তোমার জন্য শশী’ই ঠিক আছে?’
‘শশী কে?’
‘ওমা, ভুলে গেলে? তোমার ডিয়ারেস্ট কাজিন।’
‘উফ, কই থেকে কই যাও। ধ্যাত, তোমার সাথে কথা বলে জ্বর আমার কমার বদলে উল্টো বেড়েছে।’
‘তাই তো, আমার সাথে কথা বললে জ্বর তো তোমার বাড়বেই। তোমার তো শশী, তমা আরো অনেকে আছো। তাদের সাথেই কথা বলো গিয়ে।’
জ্বরের ঘোরে ফোঁস ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলছে মাহির। বিরক্তির সুরে জিজ্ঞেস করল,
‘এই তমা’টা আবার কে?’
‘আমি কী জানি? তুমি জানো, তোমার কে হয়?’
‘জ্বর আমার না তোমার? উল্টা পাল্টা বকছো শুধু।’
অন্বিতা হাসল। মনটা আজ হাওয়ায় মিঠাইয়ের ন্যায় হালকা যেন। অনেকগুলো দিন পর আজ মাহিরের সাথে সে প্রেমিকার মতো কথা বলতে পারছে, মজা করতে পারছে, রাগাতে পারছে। সে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,
‘অনেক কথা হয়েছে, ঘুমাও এখন।’
মাহির চোখ বুজল। বলল,
‘আজ তোমায় চমৎকার লাগছিল, অন্বি। তোমাকে বিয়ে না করার আফসোস আজ একটু বেশিই হচ্ছিল যেন। বৃষ্টিতে ভেজার পর নিজেকে কত কষ্ট করে সংযত রেখেছি, তুমি জানো?’
অন্বিতার খেই হারাল। হঠাৎ কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।
‘আমার এত এত অপেক্ষা কবে শেষ হবে, বলো? আমি যে বড্ড ক্লান্ত।’
‘আর কিছু দিন। ধৈর্য্য ধরো।’
‘ঠিক আছে, আর কিছু দিন। তারপরেই তুমি আমার, কেবল আমার।’
‘হু, ঘুমিয়ে পড়ো এবার। শুভ রাত্রি।’
‘শুভ রাত্রি।’
ফোনটা রেখে পাশ ফিরে শু’লো অন্বিতা। আজ নিজেকে সুখী লাগছে। এতদিনের কষ্টের লাঘব হয়েছে। এবার একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবে সে।
চলবে….
(নায়ক নিয়ে দুই পক্ষ ভাগ হয়েছে। এক পক্ষ মাহিরকে চায়, অন্য পক্ষ চায় না। এখন দুই পক্ষকে একসাথে আমি কোনোভাবেই খুশি করতে পারব না। যেকোনো এক পক্ষকে নারাজ হতেই হবে 🥲। আর সেটা কোন পক্ষ সেটা আপাতত না জানাই থাক। আগামী পর্বগুলো পড়লেই বুঝতে পারবেন। আসসালামু আলাইকুম)
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/