তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖 #মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖 #পর্বসংখ্যা-(০৩)

0
42

#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(০৩)
_________________________

সারা রুম অগোছালো হয়ে রয়েছে,কিছুক্ষণ পর হয়তো মিঠির মামীরা এসে জড়ো হবে। নানান আজেবাজে কটু মন্তব্য ছাড়তে কার্পণ্য করবে না ভদ্রমহিলারা। অধিকারবোধ থেকেই শেহজাদ মিঠিকে পাঁজাকোলে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো। যা হওয়ার হয়ে গেছে,অবৈধ কিছু তো হয়নি। এক ঘরে স্বামী-স্ত্রী থাকলে এসব হবেই। যদিও তাদের সম্পর্কটা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। হবেও কি-না সেটাও সন্দেহ। কিন্তু কিছু করার নেই। ওয়াশরুমে দাঁড় করালো মিঠিকে। মাথায় হাত বুলিয়ে চোখের জল মুছে দিয়ে মলিন গলায় খুব আস্তে করে বলল,”স্যরি মিঠি! ভেরি স্যরি! শাওয়ার নাও।”

জিদ চেপে দাঁড়িয়ে রইলো মিঠি।

“আমি সাহায্য করবো? তুমি মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারো!”

ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলো শেহজাদকে। হতভম্ব হলো সে। ডোর আঁটকে শাওয়ার নিতে লাগলো মিঠি। শেহজাদ চিন্তা করতে লাগলো মেয়েটার সাংঘাতিক জিদ। রাগের বশবর্তী হয়ে না জানি কি করে ফেলে। মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো। বিছানার দিকে চোখ পড়তেই দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। মিঠির রক্তে ভেসে গেছে পুরো বেডটা। দ্রুত নতুন চাদর বিছিয়ে রুমটা পরিপাটি করে গুছিয়ে ফেললো। কিন্তু অনেকক্ষণ হলেও ওয়াশরুম থেকে মিঠি বের হলো না এবং কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না। অস্থির হলো শেহজাদ। মিঠি ঠিক আছে তো! নাকি কিছু করছে উল্টাপাল্টা। ভয় হানা দিলো মস্তিষ্কে। নিজেকে ধাতস্থ করে ডোরে টোকা দিয়ে হাত গুটিয়ে নিলো। মিঠির সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না। শেহজাদ ঘাবড়ে গেলো। উৎকন্ঠা হয়ে ফের টোকা দিলো। কোনো রেসপন্স নেই। শেহজাদের বুকটা ধড়ফড় করতে লাগলো। মিঠি ঠিক আছে তো! ওয়াশরুমে ব্লেড,রেজার সব আছে। মেয়েটা সু’ই’সা’ই’ড করে বসেনি তো! কাঁপতে লাগলো শেহজাদ।

শেহজাদকে অবাক করে দিয়ে কিছুক্ষণ পর ঠাস করে ডোর খুললো মিঠি। বুক থেকে হাঁটু অব্ধি টাওয়াল পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকিয়ে দেখলো কি সুন্দর পুতুলের মতো দেখতে মেয়েটা! পিঠ অব্ধি ছড়ানো কালো রেশমের মতো ভেজা চুলগুলো! ফর্সা গাল,নাক টুকটুকে লাল হয়ে রয়েছে! ঠিক সাজিয়ে রাখা ডামি পুতুলের মতো মেয়েটা! ফকফকে ফর্সা হাঁটুগুলো আবেদনময়ী দেখাচ্ছে! ফর্সা ভেজা পা চকচক করছে হীরের মতো। পায়ের নখে কি মেহেদী দিয়েছে নাকি নেইলপলিশ? হবে হয়তো কিছু একটা! চোখ নামিয়ে ফেললো শেহজাদ। এতো সুন্দর,অসম্ভব সুন্দরী,রূপসী,অপূর্ব,নজরকাঁড়া,চোখ ঝলসানো রূপবতী মেয়েটাকে কি করে ফেললো সে! আমতা আমতা করে বলল,”ভয় পাচ্ছিলাম,তুমি ঠিক আছো কি-না!”

চোখ-মুখ শক্ত রাখলো মিঠি। হাত ধরে রুমে নিয়ে এলো। একটা শাড়ি বের করে মিঠির সামনে ধরলো।

“আপাতত এটা পরে নাও।”

“শবনমের তাই না?”

শক্ত গলায় বললো মিঠি। চমকে উঠলো শেহজাদ। শবনমের নাম তো মিঠির জানার কথা নয়।

“আসলেই..”

“ওর নাম কিভাবে জানি তাই না?”

কনফিউজড চোখে তাকিয়ে রইলো শেহজাদ।

“মিঠি না,শবনম মনে করে রাতে রেপ করলেন আমাকে। আপনি রেপ করেছেন আমাকে,শুনতে পেয়েছেন?”

শেষের কথাটি চিৎকার করে বললো। অপরাধবোধে মাথা নুয়ে ফেললো শেহজাদ। হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো,চোয়াল শক্ত করলো। নিজের প্রতি নিজেরই রাগ হচ্ছে! আর সত্যি বলতে সে,শবনমকে এখনও ভুলতে পারেনি! সপ্তাহখানেক হলো ডিভোর্সের। এতো দ্রুত ভুলে যাওয়া কি সম্ভব?একটা মানুষকে একজীবনেও ভোলা সম্ভব হয় না,আর সে যদি হয় খুব কাছের কিংবা প্রিয় কোনো মানুষ! তপ্তশ্বাস ফেললো শেহজাদ। সত্যি বলতে মন থেকে সে অনুতপ্ত! মিঠির সাথে জড়ানোর কথা সে ভাবেইনি! কিন্তু কি থেকে হঠাৎ কি হয়ে গেলো একের পর এক। কাছে এগিয়ে এলো। দু-হাতের আঁজলায় মিঠির মিষ্টি মুখটা তুলে বলল,”স্যরি মিঠি!”

শেহজাদ অনুতপ্ত তা তার চোখ-মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু মিঠি তো মানতে পারছে না!

“স্যরি বললেই সব সমাধান হয়ে যায়?”

“এই ছাড়া আর কিইবা করতে পারবো?”

“বিয়ে করলেন কেনো আমাকে?”

চেঁচিয়ে উঠলো মিঠি।

“আমরা একে অপরের তকদীরে ছিলাম। তাই নাটকীয়ভাবে আমাদের সঙ্গে এমনটা হয়েছে।”

“তকদীর এতো জঘন্য কেনো? কী পাপ করেছিলাম?”

অসহায় নেত্রে তাকালো শেহজাদ। নিজেকে খুব ছোট লাগছে! জীবনে কাল আর আজ ব্যতীত এমন কোনো পরিস্থিতিতে পড়েনি সে।

“আমার ভুলের জন্য আমি অনুতপ্ত মিঠি! ফরগিভ মি প্লিজ!”

আচমকা দু-পা উঁচু করে দু-হাতে গলা চেপে ধরলো শেহজাদের। ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না শেহজাদ। চোখ বুজে রইলো। সব দোষ তার।

“শবনম নয়,যদি মিঠি মনে করে আমাকে ভোগ করতেন,তাহলে একটুও কষ্ট হতো না আমার। দুঃখ পেতাম না! আপনি একটা নারী লোভী পুরুষ! আপনি একটা নারীর দেহলোভী। আপনি একটা রেপিস্ট। আই হেট ইউ।”

কান ঝা ঝা করতে লাগলো শেহজাদের। দোষ তো তারই,তাই নীরবে কথাগুলো সয়ে নিলো। তার হাঁটুর বয়সী একটা মেয়েকে ঠকানো হলো। সবদিক দিয়ে অন্যায়,অনাচার হলো। মেয়েটার তো কোনো দোষই নেই। তার ভুলের জন্য ফুলের মতো পবিত্র,সুন্দর মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে!

“তোমার শরীর ভালো নয় মিঠি,শাড়িটা পড়ে নাও।”

শাড়িটা হাতে নিয়ে শেহজাদের মুখে ছুঁড়ে মা’র’লো।

“আপনার মতো সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিসের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছি,তাই বলে এই নয় যে সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস গায়ে জড়াবো। এতোটুকুও আত্মসম্মানবোধ হলেও আমার আছে।”

ইনসাল্ট ফিল করলো শেহজাদ। মেয়েটার মারাত্মক অহংকার,সেই সাথে রাগ,জিদ,তেজ,ক্ষোভ সব তো রয়েছেই।

“এটা শবনমের নয়। সেদিন মায়ের জন্য কিনেছিলাম। আপাতত পরে নিতে। আমি তোমার জন্য ড্রেস কিনে আনবো।”

“আব্বুকে ফোন করে বলুন আমার ড্রেস পাঠিয়ে দিতে।”

“ওই বাড়ির কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। তোমাকে ড্রেস কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমার আছে।”

“একরাত না যেতেই অধিকার দেখাচ্ছেন?”

“মানো আর না মানো তুমি এখন আমার স্ত্রী এবং দায়িত্ব,কর্তব্য সবই।”

“স্ত্রী!? দায়িত্ব-কর্তব্য!?”

দাঁতে দাঁত পিষে ধাক্কা দিলো শেহজাদকে। ভারী শরীরটায় ব্যালেন্স রাখতে পারলো না শেহজাদ। বেডের কোনার সাথে পড়ে আবারও ব্যথা পেলো কপালের আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে।

“স্ত্রী মাই ফুট! দায়িত্ব মাই ফুট!”

রক্ত বেরুতে লাগলো কপাল বেয়ে। কপাল চেপে ধরলো শেহজাদ। আসার পর থেকে একের পর এক মেয়েটা তাকে অত্যাচার করেই চলছে! যাকে বলে পুরুষ নির্যাতন। ভাগ্যিস,দেশে পুরুষ নির্যাতন আইন নেই,নয়তো শেহজাদ একটা কেইস ফাইল করলে মিঠির এখন জেলে থাকা লাগতো। তপ্তশ্বাস ফেললো শেহজাদ। শবনম আর মিঠি আকাশ-পাতাল তফাৎ। শবনম এমন ছিলো না। মিঠির বিপরীত ছিলো। খুবই শান্ত,শিষ্ট। একটা কারণেই শবনম তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।

দ্রুত কপালে ব্যান্ডেজ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো শেহজাদ। হাঁটুর বয়সী ছোট মেয়েকে বিয়ের করার ফল এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে! বেডরুমের চতুর্দিকে দৃষ্টি বুলাতেই দেখলো বাঁধাই করা একটা কাপল ফটো ফ্রেম ওয়ালে টানানো। সেখানে শেহজাদের সাথে হাস্যজ্জ্বল মুখে এক তরুণী। মিঠি বুঝতে পারলো এই মহিলাটিই শবনম হবে। আচমকা টান দিয়ে ফ্লোরে ছুঁড়ে মা’র’লো ফটো ফ্রেমটি। আরো কয়টা ফটো ফ্রেম পেলো ড্রেসিং টেবিলের উপর। সেগুলোও ফ্লোরে ছুঁড়ে মা’র’লো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”তোকে শুধু একবার পাই,তারপর তোর সবগুলো চুল তুলে ফেলবো! তুই যদি এই লোকটাকে ডিভোর্স না দিতি,তা হলে আজ এমন কিছুই হতো না। আমাকেও রেপ হওয়া লাগতো না। সব তোর দোষ! তোকে আমি ছাড়বো না।”

বাসা থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় বাসার বেশ কয়েকজন লোক অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। বিব্রতবোধ করলেও শেহজাদ স্থির রইলো। রাতে যে নাটকীয় একটা অবস্থা হয়েছিলো মানুষের এইভাবে তাকানোটা অবাঞ্চকর নয়। দ্রুত একটা রিকশা নিয়ে চলে গেলো শপিংমলে।

১২.
তখন সকাল বাজে প্রায় সাড়ে নয়টা। অনেকক্ষণ হলো শপিংমলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে রইলো শেহজাদ। আরো আধা ঘন্টা পর শপ খুলবে। অর্থাৎ দশটায় অথবা সাড়ে দশটাও বাজতে পারে। বার-বার হাতঘড়িতে সময় দেখতে লাগলো। মিঠির জন্য ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। একা রেখে এসেছে বাসায়। না জানি ক্রোধের বশবর্তী হয়ে কি করছে মেয়েটা! চিন্তায় বিভোর হলো শেহজাদ। মেয়েটা কিছু করে ফেলেনি তো! তাকে তো আর আস্ত রাখেনি। শরীরের প্রতিটি অংশ খামছে ছিলে দিয়েছে। মাথায় তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। শপিংমলের পাশে একটা ফার্মেসী দেখতেই ঢুকে পড়লো। ডক্টর আঘাতপ্রাপ্ত স্থান ওয়াশ করে কাঁচের ছোট টুকরো বের করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। নিজের জন্য এবং মিঠির জন্য ঔষধ নিয়ে নিলো। ততক্ষণে শপিংমল খুলতেই দ্রুত পাঁচটি স্টিচ থ্রি পিস কিনে নিলো। মিঠি বাসায় কি পরে সেটা শেহজাদ জানে না। তবে শবনম শাড়ি আর মাঝেমধ্যে থ্রি পিস পড়তো। মিঠি তো শাড়ি পরতে জানে না। আর পরবেও না। তাই মিঠির জন্য থ্রি পিস নিয়ে নিলো।

১৩.
দ্রুত বাসায় ফিরতেই দেখলো মিঠি সবগুলো ফটো ফ্রেম ভেঙে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আতঙ্কিত হলো শেহজাদ। মিঠির কিছু হয়নি তো! কেমন রুদ্রমূর্তির রূপ ধারণ করে রয়েছে। গায়ে এখনো সেই টাওয়াল পরে আছে। চোখ নামিয়ে ফেললো শেহজাদ। মেয়েটা মারাত্মক সুন্দরী! বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। চোখ ঝলসে যায়। ব্যাগগুলো নিয়ে মিঠির কাছে যেতেই অসতর্কতাবশত পায়ের মধ্যে কাঁচ ঢুকে গেলো শেহজাদের। ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো। পায়ের ভেতর থেকে কাঁচটা টেনে বের করে নিলো। চব্বিশ ঘন্টা না হতেই মেয়েটা তাকে শেষ করে দিলো। শুধু বুকের মধ্যে চু’রি ঢুকানোটাই বাকি রয়েছে। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না মিঠির মধ্যে। তবে সাংঘাতিক রেগে আছে সেটা বুঝাই যাচ্ছে। ব্যথাতুর মুখে জিজ্ঞেস করলো,”মিঠি তুমি ঠিক আছো?”

প্রতিত্তোর করার প্রয়োজন মনে করলো না মিঠি।

মিঠির দিকে শপিং ব্যাগগুলো হাত বাড়িয়ে দিলো শেহজাদ।

“তোমার জন্য ড্রেস নিয়ে এসেছি। নাও পরো।”

হাতে নিলো মিঠি। চেক করে দেখলো থ্রি পিস নিয়ে এসেছে।

“আমি থ্রি পিস পরি না।”

শক্ত গলায় বললো।

“এখন পরে নাও প্লিজ। যা যা লাগে বিকেলে নিয়ে আসবো।”

“পরবোই না কিছু।”

ছুড়ে মা’র’লো শেহজাদের মুখে। হতাশ হলো শেহজাদ।

“তো কী পরো?সেটা বলো নিয়ে আসছি।”

“সর্ট ফ্রক কিংবা স্কার্ট।”

ব্যাগগুলো কুঁড়িয়ে নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে যেতে নেয় শেহজাদ। মিঠির চোখ পড়লো। কি ভেবে বলে উঠলো,”এই শুনুন।”

পিছু ঘুরে তাকালো শেহজাদ।

“আর কিছু লাগবে?”

“একচেঞ্জ করা লাগবে না। আপাতত পরি।”

“না থাক,এতে তুমি বোধহয় কম্ফোর্টফিল করবে না। একচেঞ্জ করে নিয়ে আসি।”

“বললাম না প্রয়োজন নেই। শুনতে পান না কথা?”

ধমকে উঠলো মিঠি। এগিয়ে এসে ব্যাগগুলো টেনে নিলো। একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। বেডের উপর বসলো শেহজাদ। পা থেকে রক্ত ঝরছে। গজ দিয়ে ব্যান্ডেজ করে নিলো। মেয়েটা পুরাই অচল করে দিলো তাকে। ড্রেস পরে এলো মিঠি। না চাইতেও একপলক তাকালো শেহজাদ। ল্যাভেন্ডার কালারের পাকিস্তানি ড্রেসটায় মারাত্মক সুন্দর লাগছে! চোখ নামিয়ে ফেললো। আবারও তাকালো। চুলগুলো ঠিকমতো মুছেনি। পানি পড়ছে। জ্বর বেড়ে যেতে পারে। শেহজাদ উঠলো। টাওয়াল নিয়ে বলল,”চুল মুছোনি যে।”

কিছু বললো না মিঠি।

“চুলের পানি মুছো। ঠাণ্ডা লাগবে,জ্বরও বাড়বে।”

কিছু না বলে শুয়ে পড়লো মিঠি। তার খুব খারাপ লাগছে! হতাশ হয়ে শেহজাদ নিজেই চুলগুলো মুছে দিলো। মিঠি বারণ করলো না,সরিয়েও দিলো না। দু-চোখ বুজে চুপচাপ রইলো। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ফ্লোরের কাঁচগুলো পরিষ্কার করলো শেহজাদ। তার আর শবনমের ছবিগুলো ডাস্টবিনে ফেলতে গিয়েও কেমন মায়া হচ্ছিল। তবুও মনের কষ্ট থেকে ফেলে দিলো। যেই মানুষটা নেই তার স্মৃতি রাখাটাও পাপ। শবনম এখন তার জন্য পরনারী। তার ছবি নিজের সাথে রাখাটাও অশোভনীয়। সব পরিস্কার করে কিচেনে গেলো। আজ বুয়া আসেনি। শেহজাদকে করতে হচ্ছে সব। চিন্তা করলো অনেক বেলা হয়েছে,মিঠি এখনো কিছু খায়নি। কি খাবে সেটাও জানে না। আসার পথে নাস্তা কিংবা ব্রেড কিনতে ভুলে গেলো সে। নিজের উপর নিজে বিরক্ত হলো শেহজাদ। এছাড়াও রুটি,পরোটা বানাতে পারে না সে। তাছাড়া শবনম থাকাকালীন তাকে কখনো কিচেনের দোরগোড়ায় পা মাড়াতে হয়নি। তাই আনাড়ি হাতে নুডলস করে নিলো,আর একটা রেডিমেট স্যুপ বানিয়ে মিঠির জন্য কফি করে নিলো। সব ট্রে-তে করে বিছানায় নিয়ে এলো। কোমল গলায় ডাকলো,”মিঠি উঠো।”

মিঠির ঘুম আসেনি। চোখ বুজে রয়েছিলো।

“কী হয়েছে?”

“বলছি,রাতে কী খেয়েছো না খেয়েছো এখন হালকা কিছু খেয়ে মেডিসিন নাও। তোমার শরীরে জ্বর এসেছে।”

“খাওয়ার ইচ্ছে নেই। নিয়ে যান।”

রাগ হলো শেহজাদের। মেয়েটা তাকে ভাবেটা কি! ধমকে উঠলো,”উঠো বলছি।”

ধমক খেয়ে উঠে বসলো মিঠি।

“নাও,নুডলসটা ট্রাই করে দেখো।”

এক চামচ নুডলস মুখে দিতেই গাল বেঁকে গেলো মিঠির।

“এতো ঝাল কেনো?”

ঝালে মিঠির পুরো মুখ লাল হয়ে গেলো। পানি এগিয়ে দিলে শেহজাদ।

“আমি ঝাল খেতে পারি না।”

“স্যরি! আমি তেমন কিছু পারি না। আন্দাজ করে করলাম। আচ্ছা,স্যুপ নাও। নুডলস থাকুক। মেডিসিন নিতে হবে।”

“এক চামচ স্যুপ মুখে তুলে বলল,”এটা প্যাকেট স্যুপ?”

“হ্যাঁ।”

“প্যাকেটের স্যুপ আমি খাই না। আপনি আমার জন্য এই স্যুপ কেনো নিয়ে এলেন?”

“জানতাম না। বললাম তো আজ মানিয়ে নাও।”

“আমি বাইরের খাবার খাই না। বাসার খাবারে অভ্যস্ত।”

বলেই আরেক চামচ স্যুপ মুখে তুলতেই ফের শেহজাদ বলল,”আমি রান্নাবান্না জানি না। যা পারলাম করলাম। এতো বছর তো শবনমই করতো।”

আচমকা গরম স্যুপ ছুঁড়ে মা’র’লো শেহজাদের গায়ে। বুকের মধ্যে গিয়ে ছিটকে পড়লো। আর্তনাদ করে উঠলো শেহজাদ। রেগেমেগে শেহজাদ এবার বলেই উঠলো,”একটা অসভ্য মেয়ে তুমি। তোমার চাইতে শবনম ভালো ছিলো।”

শবনমের নাম শুনতেই এবার গরম কফি ছুঁড়ে মা’র’লো গায়ে।

“কথায় কথায় শবনম!”

শেহজাদ ওয়াশরুমে যেতে নিতেই পিঠের মধ্যে এবার জগ ছুঁড়ে মা’র’লো। প্রতিত্তোর না করে গায়ে পানি ঢালতে লাগলো শেহজাদ। ধৈর্য্যের লিমিটেশন ক্রস করে ফেলেছে মেয়েটা। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে আইসব্যাগ চেপে ধরলো। মিঠি এখনো ফণা তোলা সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছে।

“তোমার জায়গায় আজ শবনম থাকলে একটা থাপ্পড় বসাতাম। আর শবনমের এমন সাহস নেই আমার সাথে এইসব করার। যথেষ্ট ভক্তি করে চলতো আমায়।”

এবার গ্লাস ছুঁড়ে মা’র’লো শেহজাদের গায়ে। পড়লো গিয়ে বাহুতে। বাহু কেটে রক্ত বেরুতে লাগলো।

“আল্লাহ আমার এতো ধৈর্য্য কবে কখন দিয়েছে জানি না,নয়তো তোমাকে কি করতাম সেটা আল্লাহ জানে।”

এবার ট্রে ছুঁড়ে মা’র’লো। চিৎকার করে বলল,”ডোন্ট কম্পেয়ার! এক মেয়ের সাথে আরেক মেয়ের কম্পেয়ার করা উচিৎ না! আপনি যদি বিবেকবান মানুষ হতেন তাহলে করতেন না। এভরি গার্ল ইজ স্পেশ্যাল ইন হার ওন ওয়ে!”

“তোমার উগ্র আচরণে করতে বাধ্য হয়েছি।”

“কেউ আমাকে অন্যের সাথে তুলনা করলে,তাকে আমি ভয়ংকর রকমের ঘৃণা করি! আই হেট ইউ।”

চোয়াল শক্ত করে ড্রয়িংরুমে চলে গেলো শেহজাদ। যেভাবে এগ্রেসিভ হয়ে আছে মেয়েটা,না জানি কখনো তাকে হ’ত্যা করে বসে! চুপ করে বসে রইলো শেহজাদ। আজ অফিসে যেতে পারেনি। মোবাইলটা তো ভেঙে ফেলেছে তাই ল্যাপটপ অন করে মেইল করে দিলো অফিসে।
____________

চলবে~
কপি করা নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here