তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖 #মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖 #পর্বসংখ্যা-(১১)

0
119

#তবু_আমারে_দেবোনা_ভুলিতে 💖
#মেহেরিন_আনজারা_নিশা 💖
#পর্বসংখ্যা-(১১)
________________________

দু-ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো টুপ করে।

“বেশ মানলাম! কিন্তু আপনি তো আমাকে মাতৃত্বের স্বাদ দিতে পারবেন না। পৃথিবীর প্রতিটি নারী চায় মা হতে। সেখান থেকেও আমি কি বঞ্চিত হবো! সব অভিযোগ বাদ দিলাম। সব মেনে নিলাম। কিন্তু এটা কিভাবে মানবো?”

“মানুষ কী বেবি এডপ্ট করে না?”

“যার ইচ্ছে সে করুক! আমি কারো বাচ্চা পালন করতে পারবো না।”

“সমস্যাটা আমার না হলে তো ঠিকই বেবি এডপ্ট করতে চাইতে! তখন নিজেকে আর দোষ দিতে না। এখন আমার সমস্যা বলে এতো কাহিনী করছো? আসলে নারীরা খুব স্বার্থপর এই দুইটা জায়গায়।”

“হ্যাঁ,স্বামী আর সন্তানের প্রতি।”

“শোনো,জীবনে কি পেলাম আর কি পেলাম না সে হিসেব করে জীবন চলে না। জীবনে সবসময় পাওয়ার হিসেবটা করতে হয় তাহলে না পাওয়ার আক্ষেপ মুছে যায়। এই যে আমাদের একটা আশ্রয় আছে,থাকার মতো একটা জায়গা আছে,মাথা গোঁজার ঠাঁই আছে,ফ্রিজ ভর্তি খাবার আছে,তিন বেলা মাছ-মাংস,ডাল কিংবা সবজি খেতে পারছি,গায়ে পোষাক আছে,আমরা সুস্থ-সবলভাবে বেঁচে আছি,তার জন্যই সবসময় সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। এটা নেই,সেটা নেই,এটা পাইনি,ওটা পাইনি আরও কত অভিযোগ! কত আফসোস! অথচ একবার পাওয়ার হিসেবটা করে দেখো,দেখবে তুমি না চাইতেও সৃষ্টিকর্তা তোমাকে কত কিছু দিয়েছে,অন্যদের চেয়ে তোমাকে কত ভালো অবস্থানে রেখেছে। বিলাসবহুল লাইফ লিড করেছো! অর্থাৎ নিজের যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে শিখো। না পাওয়ার আক্ষেপ ছেড়ে দিয়ে যা পেয়েছো তা নিয়েই আনন্দ করে বাঁচতে শিখো। জীবনটা তো খুব ছোট মিঠি,তাই এতো কিছু না ভেবে এতো চিন্তা না করে জীবনটাকে উপভোগ করো। জীবনের ছোট ছোট খুশির মুহূর্তগুলোকে মূল্য দাও। সময়গুলোকে গুরুত্ব দাও। দেখবে জীবন আসলেই সুন্দর! মনোরম! আর শোনো,জীবন মানুষকে কখনো কখনো এমন জায়গায় নিয়েই দাঁড় করাবে আর বুঝাবে তুমি এইটাও সহ্য করতে পারবে। পরিস্থিতিতে পড়লে মানুষ সবই পারে। পারতেই হয়। তোমার পরিবার আমাকে সেদিন এতো অপমান,অপদস্ত,অসম্মান,অবহেলা,শুধু তাই নয় তোমার জন্য আমাকে চারিত্রিক মিথ্যে অপবাদ দিয়েছে,এতোকিছু করার পরেও আমি তোমার মতো এগ্রেসিভ হয়ে উঠিনি! তোমার সাথে খারাপ আচরণ করিনি। কিন্তু তুমি আমায় এই পর্যন্ত কি করেছো না করেছো সব জানো! আমার শরীরের এমন কোনো অঙ্গ বাকি নেই তুমি দাগ না লাগিয়েছো! অসম্মান তো তোমার মামা থেকে শুরু করে তুমি পর্যন্ত করেছো,ইভেন করছোও। অভিযোগ অনুযোগ ছাড়াই নীরবে সব মাথা পেতে নিয়েছি! জোর করে ত্রিশ লাখ টাকা দেনমোহর করিয়েছে। যেটা আমার সাধ্যের বাইরে,তাও মেনে নিয়েছি! তারপরেও তোমার সাথে কোনো ব্যপারে রাগ দেখাচ্ছি না। অথচ এখানে আমার রাগ দেখনোর কথা,কারণ তোমার পরিবার আমার সম্মানহানি করেছো। আর তুমি মানসিক এবং শারিরীক টর্চার করছো। শোনো,রাগ-অভিমান সেটা সবারই হয়,অশ্রু সবারই ঝরে,কান্না পেলে সবাই কাঁদে! হৃদয়ে ক্ষত সবার হয়! বিশ্বাসে আঘাত সবারই লাগে। মানুষ তো আর পাথর নয়! সে বললে তো অনেক কথা। তাই বলবো আমি যেমন তোমার এবং তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে সব হজম করেছি,তেমনি তুমিও সব হজম করে মানিয়ে নাও। মেনে নিতে কষ্ট হলেও মেনে নাও এবং নিতে হবে তোমায়,ঠিক আমার মতো। আর কিছু করার নেই।”

৩৮.
একসময় ঘুমিয়ে পড়লো মিঠি। বেশ কিছুক্ষণ বুকে রেখে ঠিক করে শুইয়ে উঠে গেলো শেহজাদ। দ্রুত শাওয়ার নিলো। তার সারা শরীর জ্বলে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে। কি ডাকাত মেয়ে! একটুও বুক কাঁপলো না এমন জঘন্য কাজ করতে! কখন না জানি খু’ন করে দেয়! এই মেয়ের বিশ্বাস নেই। এর দ্বারা সব সম্ভব। দ্রুত নামায সেরে মিঠির মঙ্গল কামনা করে দোয়া করলো। যাতে মেয়েটার সুমতি হয়। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। মিঠির কাঁচা ঘুম ভেঙে গেলো। দেখলো শেহজাদ দাঁড়িয়ে আছে। কিছু না বলে উঠে নিজেই ডোর খুলতেই বুয়া এসে ঢুকলো। ঘড় ঝাড়ু দিয়ে নাস্তা বানাতে বলে মিঠি শাওয়ার নিতে চলে গেলো। মিঠির রূম ঝাড়ু দিতে এসেই শেহজাদকে দেখলো বুয়া। তবে কেমন যেনো লাগলো। দ্রুত কাজ সেরে কিচেনে চলে গেলো। ততক্ষণে শাওয়ার নিয়ে মিঠি বেরুয়। ভেজা চুলগুলো না মুছে হাত-পায়ে ক্রিম-লোশন মাখতে লাগলো।

“ভেজা চুলগুলো মুছো। ঠাণ্ডা লাগবে।”

গুরুত্ব দিলো না মিঠি। টাওয়াল নিয়ে শেহজাদ নিজেই চুলগুলো মুছতে লাগলো। বারণ করলো না মিঠি,সরিয়েও দিলো না। হঠাৎ বাসায় ঢুকলো অনন্যা। ডোর ভেড়ানোই ছিলো। মিঠির রুমে উঁকি দিতেই দেখলো শেহজাদ চুল মুছে দিচ্ছে। অনন্যা হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। অনন্যাকে দেখতেই বিব্রতবোধ করলো শেহজাদ। রুম থেকে বেরিয়ে যায় মিঠি। শেহজাদ ওয়াশরুমে হাত ধুতে গিয়ে দেখলো ফ্লোরে জামাকাপড় ফেলে রেখেছে মিঠি,ধোয়নি। সে নিজেই সাবান মেখে জামাকাপড়গুলো ধুতে লাগলো। মিঠি এদিকে আসতেই দেখলো শেহজাদ ওয়াশরুমে তার জামাকাপড় ধুচ্ছে।

“আপনি ধুচ্ছেন কেনো?”

“ফেলে রেখেছো কেনো?”

“রহিমা খালা ধুয়ে দিবে। রাখুন।”

“নিজেরটা নিজেরই ধোয়া উচিত।”

কথা বাড়ালো না মিঠি। অনন্যা এদিকে আসতেই দেখলো শেহজাদ ব্যালকনির দড়িতে মিঠির জামাকাপড় মেলে দিচ্ছে। মিঠির অন্তর্বাস নিজের টি-শার্টের নিচে শুকাতে দিয়েছে। মনে মনে বলেই ফেললো,”কী ভালোবাসা!”

“তোর জামাকাপড় ধুয়েছে?”

“হ্যাঁ।”

“কী কপাল রে তোর মিঠি।”

“চল টেবিলে যাই।”

“শোন,আমি বুয়ার সাহায্যে বাসা থেকে সেমাই,পায়েস,জর্দা,কেক আর পুডিং করে এনেছি।”

“কেনো?”

“নতুন দুলাভাইয়ের জন্য।”

“ওহ।”

হঠাৎ মুখটা মলিন হয়ে গেলো মিঠির। অনন্যা কত কিছু করে এনেছে! আর সে কি করেছে? কিছুই না! বরং সারা রাতভর মানুষটার সাথে মা’র’পি’ট করেছে! ঠোঁট কামড়ে ধরলো। রহিমা খালা নাস্তা বানিয়ে সব টেবিলে সাজিয়ে দিলেন। শেহজাদ একটা টি-শার্ট পরে রেডি হলো।

“কোথায় যাচ্ছেন?”

“যুদ্ধ করতে।”

“যান। কিন্তু কোনো মেয়ের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। যুদ্ধ শেষ হলে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন।”

বেরিয়ে গেলো শেহজাদ। ফার্মেসীতে গিয়ে ঔষধ কিনলো।

৪০.
কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো।

“দুলাভাই কোথায় গেলেন?”

“একটু বাইরে প্রয়োজন ছিলো।”

আচমকা শেহজাদের হাত ধরে বলল,”ওহ! আসুন ব্রেকফাস্ট করবেন। আপনার জন্য ওয়েট করছি।”

অনন্যা এইভাবে হাত ধরায় শেহজাদের কেমন অস্বস্তি হলো। ব্যপারটা মিঠির চোখে পড়লো। শেহজাদ বসতেই চট করে অনন্যা শেহজাদের পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। গম্ভীর হলো শেহজাদ। বিচক্ষণ মানুষ সে। অনন্যার মতিগতি ঠিক সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না। স্থির রইলো। অনন্যা বাসা থেকে আনা পায়েস,সেমাই,জর্দা,পুডিং এক করে সব শেহজাদকে সার্ভ করতে লাগলো। মিঠির কেমন লেগে উঠলো। তার থেকেও শেহজাদের প্রতি অনন্যার আগ্রহ বেশি বলে মনে হচ্ছে। কিছু বলতে নিয়েও মিঠি চুপ হয়ে যায়। অনন্যা তার বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু অনন্যার একটু বেশিই আধিপত্যতা মিঠির ভালো লাগলো না।

“দুলাভাই প্লিজ ট্রাই করুন।”

“সকাল বেলায় এইসব কেনো?”

হাত কচলে লাজুক মুখে অনন্যা বলল,”আমি এই ফাস্ট করেছি দুলাভাই। প্লিজ ট্রাই করে দেখুন।”

অনন্যার এই লাজুক হাসিটা ভালো লাগলো না মিঠির। ঠোঁট চেপে রাখলো। মিঠিকে লক্ষ্য করলো শেহজাদ। এই মেয়েটা সাংঘাতিক হিংসুক! কালরাতে কি যে করেছে শবনমের জন্য। আজ অনন্যার জন্য কি হয় আল্লাহ জানে। আজ আবার কোন টর্নেডো শুরু হয়।

“কী ভাবছেন দুলাভাই? আরে ট্রাই করুন না প্লিজ।”

“মাইন্ড করো না অনন্যা। আমি সকালে ফ্রুটস সালাদ না হয় ভেজিটেবল সালাদ আর একটা রুটি খাই। এরবেশি কিছু না। কারণ আমার হেলথ বেড়ে গেছে। তাই ডায়েট-কন্ট্রোল করছি।”

“একদিন খেলে কিছু হবে না দুলাভাই। না খেলে সত্যিই মন খারাপ করবো।”

মিঠি বলল,”বসে আছেন কেনো? খান। আপনার শ্যালিকা কতো কষ্ট করে করেছে এইসব। বেচারি বোধহয় রাতে ঘুমাতে পারেনি এইসব করার টেনশনে।”

শেহজাদের বলতে ইচ্ছে করলো,”অনন্যার টেনশনে ঘুম হয়নি আর তোমার ঘুম হয়নি আমাকে খু’ন করার জন্য। বিচিত্র মানুষ।”

শেহজাদ সব আইটেম থেকে এক চামচ করে ট্রাই করলো। অনন্যা খুশি হয়ে গেলো। অনন্যার খুশিতে মিঠির কেমন বুকটা ধুকপুক করতে লাগলো।

“দুলাভাই আপনি খান। আমি আপনার জন্য ফ্রুট সালাদ করে নিয়ে আসছি।”

কিচেনে চলে গেলো অনন্যা। এই বাড়াবাড়ি সহ্য হলো না মিঠির। শেহজাদ বুঝতে পারলো ভেতরে ভেতরে মিঠি ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু প্রকাশ করছে না। তবে বোমটা যখন-তখন ফাটার সম্ভবনা প্রবল।

“খাচ্ছো না যে,বসে রইলে কেন?”

“খাচ্ছি।”

“কী চিন্তা করছো?”

“কিছু না।”

কোনরকম ফ্রুটস সালাদ করে আনলো অনন্যা।

“নিন দুলাভাই। ট্রাই করুন।”

ভণিতা করলো না শেহজাদ। সে বেশ স্বাভাবিক হয়েই ফ্রুটস সালাদ খেতে লাগলো। তার ছোট্ট বউটাও একটু জ্বলুক! বেশি বাড় বেড়েছিলো রাতে।

“কেমন হয়েছে দুলাভাই?”

“দারুণ। লেবু আর বিট লবণ দিয়েছো?”

“হ্যাঁ! দুটোই দিয়েছি।”

“দাঁড়িয়ে কেনো? বসো।”

অনন্যা নিজেই পরোটা ছিঁড়ে ডিম,মিক্সড সবজি ভাজি,আর মাঝে মাঝে সুজির হালুয়া দিয়ে খেতে লাগলো। একটু খেয়ে শেহজাদ আর খেলো না।

“রেখে দিলেন কেনো? প্লিজ আরেকটু খান।”

“আমি উদরপূর্তি করে খাই না অনন্যা। বললাম তো ডায়েট কন্ট্রোল করছি!”

“একদিন খেলে কী এমন হবে?”

মিঠি ঠিক বুঝতে পারছে না স্বামীটা কার! তার নাকি অনন্যার?এই অনন্যা তো তার না হওয়া সংসার ভেঙে ছাড়বে দেখছে! অনন্যা উঠে গিয়ে কফি করে আনলো।

“নিন দুলাভাই। কফিটা আমি খুব দারুণ বানাতে পারি।”

“থাংকস।”

কফিতে চুমুক দিতেই বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকালো অনন্যা।

“কেমন হয়েছে দুলাভাই?”

“বেশ দারুণ। এগেইন থাংকস।”

অনন্যা ভীষণ খুশি হলো! শেহজাদ বুঝতে পারলো যে অনন্যা মিঠির মতো এখনও ম্যাচিউরড হয়নি। অল্প বয়সের আবেগ। তাই এমন করছে! অনুভূতি জন্মাবার পূর্বেই তাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে। শেহজাদ চায় না অনন্যার আবেগীয় ভুলের কারণে তাদের সদ্য সম্পর্কটায় চিঁড় ধরুক! কিংবা ওদের দু’জনের বন্ধুত্ব নষ্ট হোক! অথবা ভুল বুঝাবুঝিতে মিঠি-অনন্যা কষ্ট পাক! তপ্তশ্বাস ফেললো।

“মিঠি তোর মন খারাপ?”

“না।”

“তো মুখ ভার কোনো?”

“কই না-তো।”

“মিথ্যা বলিস না!”

“তোদের শালী-দুলাভাইয়ের তামাশা দেখছি। দারুণ আন্ডারস্ট্যান্ডিং।”

“ওহ আচ্ছা।”

“খুব ভাগ্য করে এমন দুলাভাই পেয়েছিস অনন্যা।”

“ঠিক বলেছিস মিঠি। কিন্তু তোর চোখ-মুখ ফোলা কেনো?কেঁদেছিস?”

“আরে না! রাতে ঘুমাতে পারিনি।”

“কেনো?”

“তোর জানে জিগার দুলাভাই এক ফোঁটা ও ঘুমাতে দেয়নি।”

“কেনো!?”

“তুই বুঝিস না?”

আচমকা কফি নাকে-মুখে উঠলো শেহজাদের। কাশতে লাগলো সমানে। মিঠি উঠে এসে পিঠ চাপড়ে বলল,”আস্তে ধীরে খান। মন কোথায় রেখেছেন?”

কিছু বলতে পারলো না শেহজাদ। পূর্বের কথা দ্বারা মিঠি ঠিক কী বুঝাতে চাইলো? মানে সে সারারাত রোমান্স করেছে তাই ঘুমাতে পারেনি! লজ্জায় কৃষ্ণ বর্ণের মুখটা কিছুটা লাল হয়ে গেলো। অথচ কে বলবে এই শীতল মেজাজে থাকা মেয়েটা কাল সারারাত মা’র’পি’ট,খু’ন-খারাপি করার চেষ্টা করোছিলো! শেহজাদ তো জীবনেও ভুলবে না দুর্ধর্ষ এই ভয়ংঙ্কর রাতের কথা।

“আমার খাওয়া হয়েছে। আমি উঠি কেমন। তোমরা গল্প করো।”

“আরে না বসুন দুলাভাই। আমাদের সাথে গল্প করুন।”

বাধ্য হয়ে শেহজাদ বসলো।

“মিঠি,তোর লাক খুব ভালো। দুলাভাইয়ের মতো এমন রোমান্টিক একটা মানুষ পেয়েছিস।”

“আসলেই! এই কালাচাঁদ,কালা মানিক,ব্ল্যাক ডায়মন্ড ভীষণ রোমান্টিক! সিরিয়াস মোমেন্টও উনার খুব প্রেম প্রেম পায়,আদর করতে মন চায়। পড়তে বসলেও দেখিস না উনার ভালোবাসা উতলে উঠে সমুদ্রের ফেনিলের মতো।”

“সারাজীবনের ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছে তো তাই একদিনেই সব দেওয়ার চেষ্টা করছে।”

কান গরম হয়ে গেলো শেহজাদের। এইসব কথা বলা কি খুব জরুরী? তবে যাইহোক মিঠি বোধহয় অনন্যাকে জেলাশফিল করানোর জন্য এমন করছে। কিন্তু তাকে যে অপমান করছে না এটাই অনেক। আচমকা অনন্যার চোখ পড়লো শেহজাদের হাতে,গলায়।

“দুলাভাই আপনার হাতে গলায় কি হয়েছে? কাটা গেছে মনে হচ্ছে? রাতে তো দেখিনি।”

বিব্রতবোধ করলো শেহজাদ।

“আর বলিস না অনন্যা,কাল বাসায় ফল কাটতে গিয়ে নাকি আমাকে মিস করেছিলো। আর তখনই অসতর্কতাবশত হাত কেটে ফেলেছে! ভাবা যায় এগুলো! মানে ঠিক কতোটা রোমান্টিক হলে একজন মানুষ তার সদ্য বিয়ে হওয়া বউকে মিস করে হাত কেটে ফেলে!”

“ঠিক বলেছিস।”

“এজন্যই রাতে চলে এসেছে আমার কাছে।”

“কিন্তু গলায় কী হয়েছে?”

“সারা রাত ঘুমাতে দেয়নি তাই রিভেঞ্জ হিসেবে বুকে আর গলায় লাভ ব্রাইট দিয়েছি।”

কান দিয়ে ধোঁয়া বেরুতে লাগলো শেহজাদের। ভীষণ সাংঘাতিক এই মেয়ে। কে বলবে রাতে এই মেয়েটাই অগ্নিমূর্তির রূপ ধারণ করে তাকে খু’ন করতে নিয়েছিলো দু-দুইবার! এখন কতোটা শীতল মেজাজে স্বাভাবিক রয়েছে,তাকে দেখে মনেই হয় না এমন কিছু হয়েছে।

“মিঠি তুই কবে থেকে ঠোঁটকাটা হয়েছিস বলতো?”

“উনার সাথে বিয়ের পর থেকে।”

“ওহ।”

“জানিস,উনি আমাকে খুব সুন্দর একটা নাম দিয়েছেন।”

আগ্রহী হলো অনন্যা।

“কী নাম?”

“সুনেত্রা।”

“ওয়াও! ভেরী ফ্যান্টাস্টিক।”

“হুম। আমার চোখগুলো নাকি খুব সুন্দর! আমি নাকি উত্তম নেত্রের অধিকারী! আমার চোখগুলো নাকি জীবন্ত! কথা বলে! আর এই সুনেত্রা নামটাই নাকি যায় আমার সাথে! তোর দুলাভাই বললো। আরো বললো,আমার চোখ দেখে নাকি উনার সর্বনাশ হয়ে গেছে! আমাকে জিজ্ঞেস করলো,আমি আয়না দেখি কিভাবে!”

শ্বাস আঁটকে রইলো শেহজাদ। মানে তাদের এইসব গোপন বিষয়গুলো বলার কী খুব প্রয়োজন? স্বামী কী তার স্ত্রীকে কোনো ভালো নাম দিতে পারে না?এদিকে অনন্যা তো আরো সিরিয়াস হয়ে পড়েছে। দুইটা মেয়েই ইমম্যাচিউরড। ভালো লাগলো না শেহজাদের। এই অনন্যা না আবার আবেগের বশবর্তী হয়ে ভুল কিছু করে ফেলে।

“মিঠি,এবার চুপ করো না!”

“চুপ করার কী আছে! আপনি তো আমায় এই নামটা দিয়েছিলেন মনে নেই?”

“হ্যাঁ দিয়েছিলাম। বাট তুমি অপব্যবহার করছো।”

শেহজাদ উঠে গেলো।

“কীরে দুলাভাই মনে হয় রেগে গেলো।”

“লজ্জা পেয়েছে কালাচাঁদটা।”

অনন্যা হেসে উঠলো। রূমের দিকে গেলো মিঠি। দেখলো শার্ট-প্যান্ট আর কোট পরে সাহেবের মতো রেডি হয়েছে শেহজাদ। দেখতে মন্দ লাগছে না! কালো হলে কি হয়েছে! স্মার্টও আছে,একটা গাম্ভীর্য,গভীর এবং ভারিক্কী ভাব আছে চোখে-মুখে চেহারায় এবং ব্যক্তিত্বে। মানুষটাকে মাঝেমধ্যে মিঠির প্রিয় সিঙ্গার অরিজিৎ সিং-এর মতো লাগে।

“হিমুর নীল জোছনায় হুমায়ূন আহমেদ,কি বলেছিলেন জানেন?”

“কী?”

“মুজিবকোট বঙ্গবন্ধুকেই মানায়। এই কোট বেঁটে এবং মোটারা পরলে তাদের লাগে পেঙ্গুইন পাখির মতো।”

“এটা মুজিবকোট না।”

“যাইহোক আপনাকে এখন পেঙ্গুইনের মতো লাগছে।”

খিলখিল করে হেসে ফেললো মিঠি। তাকে হাসতে দেখে শেহজাদও হেসে ফেললো। মিঠি কিছু জিজ্ঞেস করতে নিবে তার পূর্বেই শেহজাদ নিজেকে সামলে নিয়ে হঠাৎ বলে ফেললো,”অনন্যাকে এইসব বলার কী প্রয়োজন ছিলো?”

“ইচ্ছে হয়েছিলো তাই।”

“শোনো,সম্পর্ক এমন একটা জিনিস যা যেকোনো সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে,আজ যে তোমার আত্মার কাল সে তোমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ অনেক সময় রক্তের সম্পর্কেও ফাটল ধরে,তাই তুমি ভালো থাকো কিংবা মন্দ কোনো অবস্থার কথা যাকে তাকে বলতে যেও না,বলবে না। কারণ মানুষ তোমার ভালো থাকায় বদ নজর দিতে পারে,কিংবা দিবে। আর মন্দ থাকার সুযোগ নিয়ে ফায়দা উঠাবে। আজ যে তোমার ব্যথা নিরাময়ের মলম,কাল তা তোমার পুরাতন ঘা নতুন করে সংক্রমণের কারণ হতে পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছুই অসম্ভব নয়। মানুষ বদলাতে কতক্ষণ? মানুষ হারাতে কতক্ষণ?এই দুইটি প্রশ্নের উত্তর তুমি কখনো পাবে না। কেন জানো? কারণ তোমার সাথে চলতে চলতে হুট করে একটা মানুষ বদলাবে,হারিয়ে যাবে কিন্তু তুমি বুঝতেও পারবে না। একা আসছো পৃথিবীতে,একাই যাবে এবং এটাই চিরন্তন সত্য। তাই জীবনের প্রতিটি ধাপে সো বি কেয়ারফুলি।”

চুপ করে রইলো মিঠি। শেহজাদ অবশ্য খারাপ বলেনি।
___________

চলবে~
কপি করা নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here