#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব৫
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
“রোদের বাচ্চা! পে*ত্নী তুই কোথায়? আজকে তোকে আমি হাতের কাছে পাই একবার তারপর মজা দেখাচ্ছি”
রুদ্র ভাইয়ার রুম থেকে আওয়াজ আসছে। আমি নিচে সোফায় বসে হাসতে হাসতে রীতিমতো গড়াগড়ি খাচ্ছি। ভাইয়া রুম থেকে চেঁচামেচি করেই যাচ্ছে। এক সময় চি*ল্লাতে চি*ল্লাতে নিচে এলো। আম্মু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে রুদ্র কি হয়েছে? এভাবে চেচাচ্ছিস কোনো?”
আম্মু মুখের কথা শেষ করেই উচ্চস্বরে হেসে দিলো। রান্না ঘর থেকে ততক্ষনে বড় আম্মু, ছোটো আম্মু বের হয়ে এসেছে তারাও হাসছে। ভাইয়া মুখে একগাদা পাউডার, চোখের আশপাশ কাজল দিয়ে কালো করা, ঠোঁটে লিপস্টিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া। দেখতে একদম জোকারের মতো লাগছে । ভাইয়ার চেঁচামেচিতে ইভা,রোশনি, আরু, ঈশিতা আপু সবাই যার যার রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। ভাইয়ার অবস্থা দেখে সবাই হাসছে। ভাইয়া রেগে গিয়ে বললাম,
“আমার এই অবস্থা আর তোমরা হাসছো?”
রোশনি কোনো রকমে হাসি থামিয়ে বলল,
“ভাইয়া তোমকে একদম জোকার জোকার লাগছে”
“তোর এমন অবস্থা কে করলো?”
ভাইয়া আমার দিকে তেড়ে এসে বলল,
“কে আর করবে? তোমাদের আদরের দুলালী করেছে”
আমি বড় আম্মুর পিছনে লুকিয়ে গেলাম।
“ও কেন করবে?”
“আমি নিশ্চিত ওই করেছে। আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন”
রুদ্র ভাইয়া তাড়া করলো আমায়। আমি বড় আম্মুর পিছন থেকে সরে দৌড় লাগলাম। পুরো ড্রয়িং রুম জুড়ে ছুটো ছুটি করছি। আমি সামনে ভাইয়া আমার পিছনে। পিছনে তাকিয়ে ভাইয়াকে দেখতে গিয়ে ধাক্কা খেলাম এক খাম্বার সাথে। থুক্কু খাম্বা তো না শক্তপোক্ত কারো বলিষ্ঠ বুঁকের সাথে। তাকিয়ে দেখি ইভান ভাই। ইভান ভাইকে দেখে কালকে রাতের ঘটনা মনে পরে গেল। লজ্জায় গাল গুলো লাল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন যে লজ্জা পেলে হবে না। এখন পালাতে হবে। ইভান ভাইয়ের পিছনে লুকিয়ে বললাম,
“ইভান ভাই রুদ্র নামক রা*ক্ষসটার হাত থেকে বাঁচান আমায়”
ইভান ভাই আমার কথা মানে বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। অতঃপর সামনে তাকিয়ে উচ্চ স্বরে হেসে দিলেন।
“কিরে ভাই রুদ্র এমন জোকারের মতো সেজে কোথায় সার্কাস দেখাতে যাচ্ছিস?”
“মেজাজ খারাপ আছে, তুই আর মেজাজ খারাপ করিস নাতো ইভান”
“করলাম না মেজাজ খারাপ। কিন্তু বলবি তো তোর এই অবস্থা কে করল”
“কে আর করবে? তোর পিছনে যে পে*ত্নী লুকিয়ে আছে ও করেছে”
ইভান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“জীবনে এই প্রথম কোনো ভালো কাজ করলি রোদ এর জন্য আমার তরফ থেকে তোর জন্য একটা গিফট রইল। রুমে এসে নিয়ে যাস”
রুদ্র ভাইয়া রেগে মেগে বলল,
“ইভান”
রূদ্র ভাইয়া ইভান ভাইয়ের ওপর রাগ ঝাড়ার ফাঁকে দিয়ে আমি টুপ করে ঘরে চলে এলাম। নাহলে আমার খবর ছিলো। রুদ্র ভাইয়ার মুখের চিত্র মনে করে হাসি পাচ্ছে। হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছি। কানে ভেসে এলো নুপুরের রিনঝিন আওয়াজ। মনে পরে গেল কালকে রাতের ঘটনা। ছাদ থেকে ইভান ভাই নেমে যাওয়ার পর তাকে অনেক খুঁজেছি। কিন্তু লাট সাহেব যে কোথায় গেছে কে জানে। পুনরায় ছাদে গিয়ে সবার সাথে অনেকক্ষন আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ রুমে এসেছি। রুমে এসে বিছানায় বসে গালে হাত দিয়ে ভাবছি কোথায় যেতে পারে মানুষটা? এমন সময় কেউ রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করলো। সামনে তাকিয়ে দেখি ইভান ভাই। উনি দরজা বন্ধ করলেন কোনো? বিছানা থেকে নামতে যাবো তার আগে ইভান ভাই আটকে দিলেন। ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসলেন। পকেট হাতরে কিছু একটা বের করলেন। অতপঃর আমার পা তার হাঁটুর ওপর রেখে পা থেকে আদ্র ভাইয়ের দেওয়া নুপুর গুলো খুলে ছুড়ে ফেলে দিলেন। আমি অবাক! এই লোক কি করছে? মাথা ঠিক আছে তো ওনার? ইভান ভাই পুনরায় এক জোড়া নূপুর পায়ে পড়িয়ে দিলেন। নুপুর পড়ানোর মাঝে আড়চোখে তাকালেন আমার দিকে। চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলাম। কি তীক্ষ্ণ সেই চোখের চাহনি। ওই চোখে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকার সাহস বা শক্তি কোনোটাই আমার নেই। ওই তীক্ষ্ণ চোখে বেশিক্ষন তাকালে আমার দুর্বল হার্ট মুহূর্তেই ফেল করবে। তাই চোখ সরিয়ে নেওয়াই শ্রেয়। ওনার হাতের স্পর্শ পায়ে লাগতেই কেমন শিউরে উঠলাম। মনের মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। মনের মধ্যে শিহরণ বয়ে চলেছে। নুপুর পড়ানো শেষে আমার দিকে তাকিয়ে শাসিয়ে বললেন,
“তোর পায়ে শুধু আমার দেওয়া নুপুরের অস্তিত্ব থাকবে। অন্য কারো না। আর যদি কখনো অন্য কারো দেওয়া কিছু পায়ে দেখি তাহলে তোর খবর আছে। মনে থাকে যেন?”
“আপনার কথায় চলবে নাকি? আমি অন্য কারো দেওয়া নুপুর পড়লে আপনার কি?”
“দেখতে চাস আমার কি?”
ইভান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি তার চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে। ইভান ভাই একটু একটু করে এগিয়ে আসছে আমার দিকে।
ছোটবেলার কথা মনে পরে গেল। একবার আব্বুর এক ফ্রেন্ড এর ছেলে বাসায় এসেছিলো। আমি আর ইভা তার সাথে খেলছিলাম। হটাৎ কোথা থেকে ইভান ভাই এসে আমাকে টেনে রুমে নিয়ে এলেন। শাসিয়ে বললেন,
“ওই ছেলের আশেপাশেও ঘেসবি না। রুমে থাক”
ছোটো আমি তেজ দেখিয়ে বলেছিলাম,
“আপনার কথা আমি কোনো শুনবো? শুনবো না আপনার কথা”
“শিওর তুই?”
“হ্যাঁ”
“না শুনলে আর কি করার বল। থাক রুম বন্দি হয়ে”
সেদিন ইভান ভাই আমাকে রুমে আটকে রেখে চলে গিয়েছিলেন। সেই ছেলে যাওয়া পর দরজা খুলেছিলেন। সেই দিনের কথা ভাবলে এখনো বুক ধড়ফড় করে ওঠে।
তাই তাড়াহুড়ো করে হুড়মুড়িয়ে বলে উঠলাম,
“না! না! আমি কিছু দেখতে চাই না। আপনার কথা আমি মানবো। আপনার দেওয়া নুপুর ছাড়া অন্য কারো দেওয়া কিছুই পায়ের পড়বো না”
ইভান ভাই বাঁকা হেসে বলল,
“মনে থাকে যেন”
“হুম মনে থাকবে”
ইভান ভাই চলে যেতে নিলেন। মাঝ পথে থেমে গিয়ে ফিরে এলেন। হটাৎ কাছে এসে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলেন আমার ললাটে। মুচকি হেসে বললেন,
“গুড গার্ল”
অতঃপর হাসি মুখে চলে গেলেন। এই দিকে আমি এখনো বেকুবের মতো তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। কি হলো কিছুই বুঝলাম না। বিছানা থেকে নেমে আদ্র ভাইয়ের দেওয়া নুপুর গুলো খুঁজছি অবশেষে পেয়েও গেলাম। সত্যি বলতে ইভান ভাইয়ের দেওয়া নুপুর গুলো বেশি সুন্দর। ডিজাইন টাও অনেক ইউনিক। লাট সাহেবের দেওয়া সমস্ত কিছু তার মতোই ইউনিক এবং সুন্দর।আদ্র ভাইয়ের দেওয়া নুপুর গুলো সুন্দর করে রেখে দিলাম। বিছানায় বসে একটু আগের কথা ভাবছিলাম।আনমনে হাত চলে গেল কপালে। ইভান ভাই এখানে তার ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়েছে। ভাবতেই লজ্জা লাগছে। ক্রাশের দেওয়া প্রথম স্পর্শ। লজ্জায় গালগুলো লাল হয়ে যাচ্ছে।
“উইথআউট এনি রিজন এভাবে ব্লাশ করছিস যে? কি বেপার বনু? কারো প্রেমে ট্রেমে পড়লি নাকি?”
ইভার কথায় ধ্যান ভাঙলো। ও আমার দিকে দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে?
“মুখ বন্ধ কর নাহয় মুখে মাছি ঢুকবে”
“আমার মুখে যাই ঢুকুক তা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। তুই কাহিনী বল এভাবে ব্লাশ করছিলি কোনো?”
“আরে কিছু না এমনি”
“এমনি এমনি কেউ ব্লাশ করে? আমাকে তোর বোকা মনে হয়”
“আরে বাদ দে। কাল যে রেজাল্ট দিবে সে খেয়াল আছে?”
ইভার হাসি হাসি মুখ নিমিষেই কালো হয়ে গেল। দুজনেই চিন্তায় পরে গেলাম। দাঁত দিয়ে নখ কাটছি আর ভাবছি কাল কি হবে? পরীক্ষা তো খুব একটা ভালো হয়নি।
“কাল কি হবে বনু?”
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,
“যা হবে দেখা যাবে। এটা তো ফাইনাল না। এতো না ভেবে এখন জাস্ট চিল্ল কর”
———
আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম ড্রয়িং রুমে কেউ আছে কি না। নাহ কেউ নেই। এই সুযোগেই এক দৌড়ে রুমে যেতে হবে। ইভার দিকে তাকালাম। দুজন চোখে চোখে কথা বিনিময় করে এক দৌড়ে রুমে চলে এলাম। এ যাত্রায় তো বেঁচে গেলাম এর পর কি হবে? শাওয়ার নিয়ে হাঁটা দিলাম শুভ ভাইয়ের রুমের দিকে। উঁকি দিয়ে দেখছি ভিতরে কেউ আছে কি নেই। সারা রুম জুড়ে শুন্যতা। তার মানে ভাইয়া বাসায় নেই। ইয়াহু! কি মজা। ইভার রুমে এক দৌড়ে চলে এলাম।
“বনু শুভ ভাই বাসায় নেই। আসবে সেই রাতে তখন রেজাল্ট এর কথা মনে থাকলে তো”
দুজন মিলে এক দফা খুশি উদযাপন করছি । এর মধ্যেই নিচ থেকে ছোটো আম্মু ডাকছে খাবার জন্য। দুজন খুশি মনে নিচে নেমে টেবিলে বসে পড়লাম। এক মনে খাচ্ছি এমন সময় পাশ থেকে ইভার ধাক্কার উপরে তাকালাম। তাকিয়েই বিষম খেলাম। এক নাগারে কেশে যাচ্ছি। শুভ ভাই দ্রুত এক গ্লাস পানি ঢেলে আমার হাতে দিলেন। ঢকঢক করে পানি শেষ করলাম।
“কোন দিকে তাকিয়ের খাবার খাস? এখন ঠিক আছে?”
“হুম ঠিক আছি”
শুভ ভাই খেতে বসলেন। আমি আর ইভা ভয়ে আছি। একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি । খাওয়া থামিয়ে শুভ ভাই জিজ্ঞেস করলেন,
“আজকে না তোদের রেজাল্ট দেওয়ার কথা ছিলো? দিয়েছে রেজাল্ট? কি রকম হলো রেজাল্ট? খাওয়া পর রেজাল্ট কার্ড নিয়ে রুমে আসবি”
রেজাল্টের কথা শুনে কাশি উউঠে গেল। তবে আমার না ইভার। আমি ইভার দিকে পানি এগিয়ে দিলাম। শুভ ভাই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
“একের পর এক কাশি আর বিষম লেগেই আছে তোদের। কাহিনী কি বলতো?”
আমি ক্যাবলাকান্তের মতো তাকিয়ে বললাম,
“কিছু না ভাইয়া”
“কিছু না হলেই ভালো। আমি রুমে যাচ্ছি, রেজাল্ট নিয়ে তাড়াতাড়ি আয়”
একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি। কিছু করার নেই যেতেই হবে।
শুভ ভাইয়ের রুমে এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছি। শুভ ভাইয়ের হাতে রেজাল্ট। একবার রেজাল্ট দেখছেন তো একবার আমাদের দেখছেন। টেনশনে আমি দাঁত দিয়ে নখ কাটছি। এই বুঝি বোম ব্লাস্ট হলো।
শুভ ভাই রাম ধমক দিলেন,
“এটা রেজাল্ট নাকি অন্য কিছু? ইংরেজিতে কেউ ৪০, ৪২ পায়? এটা একটা নাম্বার হলো? তোরা তো গাধাদের কাতারেও পড়িস না। রেজাল্টের এই হাল কেন?”
ইভা মিনিমিন করে বলল,
“প্রশ্ন কঠিন ছিলো তাই”
“পড়ালেখা না করলে প্রশ্ন কঠিনই মনে হবে। পাখি তোর রেজাল্টের অবস্থা এমন কোনো? এই রেজাল্ট নিয়ে মেডিকেল এ পড়তে চাস?”
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আমার স্বপ্ন ডক্টর হওয়া। ডক্টরদের সাদা এপ্রোন আমার অনেক ভালো লাগে। মাঝে মাঝে শুভ ভাই না থাকলে তার এপ্রোন পড়ে নিজেকে কেমন ডক্টর ডক্টর লাগে। আমার খুব ইচ্ছে একদিন আমিও ডক্টর হব। মানুষের চিকিৎসা করবো। কিন্তু পড়ার যে হাল ওতে মেডিকেল তো দূর এইচ এস সি পাশ করতে পারবো কি না সন্দেহ। দাঁত দিয়ে নখ কাটছি। কি বলবো? যে গ্রামার আমার মাথায় ঢোকে না, মাথার কয়েক হাত উপর দিয়ে যায়?
“কালকে থেকে আমার কাছে পড়বি”
ইভা আর আমি একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি। ইভার অবস্থা করুণ। শুভ ভাই পড়ালে যে আমাদের কি হবে আল্লাহ মালুম। দেখা যাবে সারাদিন বই নিয়ে বসিয়ে রাখবে। তাই ইভা ফট করে বলল,
“ভাইয়া তুমি তো সারাদিন ভার্সিটি, হসপিটাল এইসব নিয়ে ব্যাস্ত থাকো। ছোটো ভাইয়া তো এখন বাসায়ই আছে। আমাদের ছোটো ভাইয়া পড়াক?”
শুভ ভাই কিছু একটা ভাবলেন। ভেবে বললেন,
“ঠিক আছে। আমি ইভানকে বলে দিবো”
ইভার মুখে হাসি। মনে হচ্ছে বিশ্ব জয় করে ফেলেছে। এই প্রথম ইভার কোনো কথা শুভ ভাইয়া মানলেন। এমনি সময় তো দুই ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখেন। আমি আছি আমার ভাবনার। শেষ পর্যন্ত ওই লাট সাহেবর কাছে পড়তে হবে আমায়?
#চলবে?
(আপনাদের অনেকেই প্রশ্ন করেছেন রোদকে কে কে ভালোবাসে, তাঁদের বলবো সব প্রশ্নের উত্তর আস্তে ধীরে পাবেন। অপেক্ষা করেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ)