উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন #পর্ব১১ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
139

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব১১
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

স্নিগ্ধ সকালে স্বল্প মেঘেদের আনাগোনা। পরিবেশে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিচ্ছে সূর্যের কিরণ। তাড়াহুড়ো করে তৈরি হচ্ছি। শরীর টা ভালো লাগছে না তবুও কলেজে যেতে হবে। সামনে এক্সাম ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে। তৈরি হয়ে নিচে নামতেই সবাই অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে। বড় আম্মু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“কলেজের ড্রেস পড়ে নেমেছিস কোনো? কলেজে যাবি?”

“হ্যাঁ বড় আম্মু। কলেজে ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে”

“কাল বাদে পরশু তোর আর ইভানের আকদ। এখন না গেলে হয়না?”

“পরের সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা। গতকাল নিহা ফোন করে বলেছে আজকে ক্লাসে স্যার নোট দিবে তাই যেতেই হবে”

বড় আম্মু আর কিছু বললেন না। টেবিলে বসে ভ্রু কুঁচকে ফেললাম। ইভা কোথায়? মেয়েটাকে বললাম আজকে কলেজে যাবো এখন তার খবর নেই।
“বড় আম্মু ইভা কোথায়?”

“সকাল থেকে দেখিনি। গিয়ে দেখ ঘুমাচ্ছে বোধ হয়”

টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আজ ওর ঘুম আমি জনমের মতো বের করবো। ইভার রুমে ঢুকতেই নজরে পড়লো মেম সাহেব পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। ওর কানের সামনে গিয়ে ভোঁ করে উঠলাম। ইভা পিটপিট করে চোখ খুলে বলল,
“মাথা ব্যথা করছে বনু জ্বালাস না”

“কখন থেকে মাথা ব্যথা করছে? মুভ লাগিয়েছিস? ওষুধ খেয়েছিস?”

“মুভ লাগিয়েছি তবুও মাথা ব্যথা কমছে না”

মনটা খারাপ হয়ে গেল। মুখ বেজার করে বললাম,
“তারমানে আজকে আমাকে একা যেতে হবে। শা*লার স্যারের আজকেই ইম্পরট্যান্ট ক্লাস রাখতে হলো”

“মন খারাপ করিস না। মাথা ব্যথা কমলে আমিও যেতাম। কিন্তু ম*রার মাথা ব্যথা কমার নামই নিচ্ছে না”

ইভার গাঁয়ে চাদর তুলে দিয়ে বললাম,
“তুই রেস্ট নে। আমি কলেজে গেলাম”
——-

তপ্ত রোদের তেজে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সূর্য মামা আজ মামীর সাথে ঝগড়া করে এসেছে। এমনি শরীর ভালো নেই। তার ওপর গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অবস্থা খারাপ। বাসার সবাই কি ভুলে গেছে আমার কথা? আর কিছু না ভেবে রিক্সা জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে আছি। তীব্ৰ গরমে মাথাটা কেমন ঘুরছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি ফিট খাবো। মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিবো এমন সময় এক জোড়া হাত আমায় ধরে নিল। সোজা করে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“রোদ তুমি এখানে? কি হয়েছে? শরীর খারাপ? বাড়ি থেকে নিতে আসেনি?”

কোনোমতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,
“কলেজ ছুটি হয়েছে অনেকক্ষন। বাড়ির গাড়ি এখনো আসেনি তাই রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। শরীর ভালো লাগছে না। মাথা ঘুরাচ্ছে”

আরিফ ভাইয়া একটা রিক্সা থামিয়ে উঠতে বলল। উঠে বসতেই আরিফ ভাইয়া বলল,
“ওদিকে সরে বসো”

“কোনো?”

“বোকা মেয়ে এই অসুস্থ শরীরে তুমি বাড়ি যাবে কিভাবে? রাস্তায় যদি বেশি অসুস্থ হয়ে যাও। তাই আমি তোমায় বাড়ি দিয়ে আসবো”

কথা না বেরিয়ে সরে বসলাম। আরিফ ভাইয়া উঠে বসলো। আরিফ ভাইয়া রুদ্র ভাইয়ের ক্লোস ফ্রেন্ড। দুজনের অনেক ভালো বন্ডিং। সব সময় আমাকে ছোটো বোনের মতোই আদর করে। রিক্সা বাড়ির সামনে থামতে নেমে পড়লাম। আরিফ ভাইয়া জিজ্ঞেস করলো,
“একা একা যেতে পারবে নাকি বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসবো?”

“সমস্যা নেই যেতে পারবো ভাইয়া”

আরিফ ভাইয়া বিদায় নিয়ে চলে যাবে এমন সময় বলে উঠলাম,
“বাড়িতে চলেন ভাইয়া। অনেক দিন আসেন না। আপনাকে দেখে সবাই খুশি হবে”

ভাইয়া কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“অন্য একদিন আসবো। আজকে কিছু কাজ আছে তুমি সাবধানে যেও”

আমি মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়ে চলে এলাম। বাসায় এসে কারো সাথে কথা না বলে সোজা ওপরে চলে এলাম। ব্যাগটা কাঁধ থেকে নামিয়ে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলাম। বিকেলে চেঁচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। নিচে নামতেই চোখ পড়লো ইভান ভাই সবার মাঝে দাঁড়িয়ে কি যেন বলছেন। সামনে এগিয়ে গিয়ে যা শুনলাম,
“তোমাদের আদরের মেয়েকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তোমরা জানো আজকে তার এক প্রেমিক তাকে বাড়িতে দিয়ে গিয়েছে। এমন মেয়েকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না”

প্রেমিক? কার প্রেমিক? কি বলেছেন ইভান ভাই কিছুই বুঝতে পারছি না। বড় আব্বু ইভান ভাইকে শাসিয়ে বলল,
“মুখ সামলে কথা বলো ইভান। বিয়ে করবে না সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু তুমি রোদের সম্পর্কে উল্টোপাল্টা বলতে পারো না”

“আমি জানি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে না। তাই তোমাদের জন্য আমি প্রমান রেখেছি”

ইভান ভাই ফোনে একটা ছবি বের করে সবাইকে দেখালেন। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখো আরিফ ভাইয়া যখন আমার মাথায় হাত রেখেছিলেন সেই সময়ের একটা ছবি। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। রুদ্র ভাই এগিয়ে এসে ছবিটা দেখে বলল,
“দেখ ইভান আমার বোনের নামে একদম আজে বাজে কথা বলবি না। আর এটা তো আমার বন্ধু আরিফ। ও রোদকে বোনের মতো ভালোবাসে”

“আমি বাজে কথা বলছি? দুজন একসাথে এক রিক্সায় এসেছে। বাড়ি অবধি পৌঁছে দিয়ে গেছে। ওদের মধ্যে যদি কিছুই না থাকে তাহলে বাড়িতে এলো না কোনো?”

আদ্র ভাই বললেন,
“অনেক বাজে কথা বলেছিস ইভান আর না। আমরা জানি রোদ কেমন। তোর কাছে থেকে অন্তত ওর বিষয়ে আমাদের জানতে হবে না। তাও আমি প্রণাম করে দিতে চাই যে রোদ নির্দোষ”

আদ্র ভাই রুদ্র ভাইকে বললেন,
“রুদ্র তোর বন্ধুকে ফোন কর। ওর মুখ থেকেই সবাই সবটা শুনুক। আমি চাইনা কেউ রোদকে অবিশ্বাস করুক। ওর চরিত্রে কোনো দাগ লাগুক”

রুদ্র ভাই ফোন করলেন আরিফ ভাইয়াকে। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই রুদ্র ভাইয়া জিজ্ঞেস করলেন,
“আরিফ তুই আজকে রোদকে বাড়িতে দিয়ে গিয়েছিস?”

“হ্যাঁ। বেচারি কলেজের সমানে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলো। তার ওপর ওর শরীর খারাপ লাগছিলো। আমি সেই পথ দিয়েই যাচ্ছিলাম। ও মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিয়েছিল। আমি ধরে ফেলেছিলাম বলে ব্যথা পায়নি। ভাবলাম মেয়েটা এমনিতেই অসুস্থ ওকে একা ছাড়া ঠিক হবে না। তাই বাড়ি অবধি দিয়ে এসেছিলাম”

“ও আচ্ছা। তা বাড়িতে এলিনা কোনো?”

“রোদ বাড়িতে যেতে বলেছিলো কিন্তু আমার কাজ থাকায় চলে আসতে হয়েছে। বাড়িতে যায়নি বলে রাগ করিস না দোস্ত। পড়ে একদিন বাড়ি এসে আড্ডা দিবো”

“তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। আমার বোনটাকে দায়িত্ব নিয়ে বাড়িতে দিয়ে যাওয়ার জন্য”

“থা*প্পড় চিনিস বেটা। ধন্যবাদ কিরে? তোর বোন আমার বোন না? আমি আমার বোনকে বাড়ি দিয়ে এসেছি। তুই কে? তোকে চিনি না”

“তোর চিনাও লাগবে না। পড়ে কথা বলছি। এখন রাখছি”

রুদ্র ভাইয়া ফোন কেটে দিয়ে বলল,
“দেখলে আমি বলেছিলাম আরিফ রোদকে বোনের মতো ভালোবাসে”

বড় আব্বু ঠাস করে ইভান ভাইয়ের গালে থা*প্পড় বসিয়ে দিলো। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। বড় আব্বুকে এই পর্যন্ত কারো গাঁয়ে কখনো হাত তুলতে দেখিনি। বজ্র কণ্ঠে বলেন,
“তুমি কি রোদকে বিয়ে করবে না এই ঘটনার পর আমি নিজে তোমার সাথে রোদের বিয়ে দেবো না। তুমি রোদের নখেরও যোগ্য না। আমার নিজের কাছে নিজের লজ্জা লাগছে। আমি তোমার মতো ছেলের পিতা। আমি তোমায় সঠিক শিক্ষা দিতে পারিনি। আজকে তুমি যা করলে তার জন্য তোমাকে পস্তাতে হবে। তুমি যে খাঁটি সোনা হারিয়েছো সেটা একদিন তুমি বুঝবে। আমি তোমায় আমার চোখের সামনে দেখতে চাইনা। এই মুহূর্তে তুমি আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে”

ইভান ভাই বড় আম্মুর দিকে তাকালেন। তবে বড় আম্মু নিরুত্তর। বড় আব্বু আমার কাছে এসে মাথায় হাত রেখে বললেন,
“তোমার বড় আব্বুকে ক্ষমা করে দিও”

আমি কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না। একটা সাধারণ বিষয় নিয়ে যে এতো কিছু ঘটে যাবে সেটা আমার ভাবনার বাহিরে ছিলো। বড় আব্বু নিজের রুমে চলে গেলেন। তার পিছু পিছু বড় আম্মুও গেলেন। সবাই যার যার কাজে চলে যাচ্ছে। রুদ্র ভাই যাওয়ার আগে বলেন,
“রোদ রুমে যা”
——–

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। মানুষটা আমাকে ভালো না বাসুক কিন্তু সে আমার নামে এতটা বাজে কথা বলতে পারলো? ইভান ভাই মানুষটা একটুও ভালো না। আমি তাকে কখনো ক্ষমা করবো না কখনো না। হটাৎ কেউ পিছনে এসে দাঁড়ালো। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছু ফিরে দেখি ইভান নামক নিকৃষ্ট মানুষটা। তাকে দেখে দু কদম দূরে সরে এলাম। চি*ল্লিয়ে বললাম,
“আপনি এখানে কি করছেন? এখান থেকে যান। আপনি আমার চোখের সামনে থেকে যান। আমি আপনাকে সহ্য করতে পারছি না”

“এমনিও আমি এখানে থাকতে আসিনি। আমি চলে যাবো আমার ভালোবাসার মানুষের কাছে। হয়তো খুবই শিগ্রই বিয়ের দাওয়াত পাবি”

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। এতো কিছু করেও তার মাঝে বিন্দু মাত্র অনুতপ্ততা নেই। অশ্রুসিক্ত নয়নে তার পানে চেয়ে বললাম,
“আমায় ভালো নাই বাসলেন, কিন্ত আমার চরিত্র নিয়ে খারাপ কথা কেন বললেন? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি? আপনি কেন আমার সাথে এমন করলেন ইভান ভাই?”

ইভান ভাই নিরুত্তর। তার মুখে কোনো কথা নেই। চোখের পানি মুছে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আপনি যেভাবে আমার অনুভূতি নিয়ে খেলেছেন আল্লাহ না করুক আপনার সাথে যেন এমন না হয়। আপনার সাথে এমনটা হলে আপনি বুঝতেন মন ভাঙার কষ্ট কাকে বলে। দোয়া করি আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখে থাকুন ভালো থাকুন”

“তুই বললেও আমি ভালো থাকবো না বললেও”

“অহংকার করা ভালো নয়, কথাটা মনে রাখবেন ইভান ভাই”

ইভান ভাই চলে যাচ্ছে। আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম,
“আপনি আমায় কেন ভালোবাসলেন না ইভান ভাই? কেন আমার নামে কলঙ্ক দিলেন? কেন ?”

ইভান ভাই পিছু ফিরে তাকালেন। তার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। এগিয়ে এলেন কাছে। তাকে কাছে আসতে দেখে পিছিয়ে গেলাম। সে এগিয়েই যাচ্ছে। একসময় পিঠ গিয়ে ঠেকলো ব্যালকনির গ্রিলের সাথে। পিছনে যাওয়ার জায়গা নেই। ইভান ভাই কাছে এসে ঝুঁকে ফিসফিস করে কানে কানে বললেন,
“ইটস রিভেঞ্জ”

#চলবে?

(চোখের দেখা সব সময় সত্যিই নাও হতে পারে। আমাদের জীবনে আমরা যাকে হিরো ভাবি সে সব সময় হিরো হয় না। মাঝে মাঝে ভিলেনও হয়। আবার কেউ নিরবে ভালোবেসে যায় অনন্ত কাল। আশা করবো কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না। আমি গল্প টা যেভাবে সাজিয়েছিল সেভাবেই লিখতে চাই। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্ব টি কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here