উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন #পর্ব১২ #আফিয়া_আফরোজ_আহি

0
53

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন
#পর্ব১২
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

“আমি আপনাকে ঘৃণা করি ইফরান খান ইভান, ঘৃণা করি আপনাকে”

বিরবির করে বলে উঠলাম কথা গুলো। বুক চিরে বেরিয়ে এলো দীর্ঘনিশ্বাস। চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু অশ্রু ভাসমান। এক মনে আকাশ পানে তাকিয়ে অতীতে বিচরণ কিরছিলাম। পিছন থেকে কেউ ডেকে বলল,
“সেই দুপুরে খেয়ে এসে দাঁড়িয়েছো এখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। এখনো এখানে কি করছো?”

বিরবির করে বলে উঠলাম,
“অতীতে বিচরণ”

“কি বললে?”

“কিছু না। ডেকেছিলি কেন সেটা বল?”

“আম্মু তোমাকে সেই কখন থেকে খুঁজছে। পুরো বাড়ি খুঁজে তোমায় এখানে পেলে”

“তুই যা আমি আসছি”

আরু চলে গেল। চোখের পানি মুছে নিজেকে ঠিকঠাক করে নিলাম। অতীত বিচরণ করতে করতে কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে তার খেয়াল নেই। অল্প স্বল্প ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে ঠান্ডা তো একটু পড়বেই। নিচে নেমে ফুপ্পির কাছে গেলাম।
“তুমি আমায় খুঁজছিলে ফুপ্পি?”

“হ্যাঁ। সেই বিকেলে তোকে দেখেছি। কোথায় ছিলি এতক্ষন?”

“এই একটু ছাদে গিয়েছিলাম”

“বিকেলে নাস্তায় কি খাবি বল?”

“গরম গরম পকোড়া হলে কেমন হয় বলো তো?”

আরু সাথে তাল দিয়ে বলল,
“দারুন”

“ঠিক আছে তোরা বস আমি বানিয়ে আনছি”

“তুমি দাড়াও আমিও আসছি”

এমন সময় কোথা থেকে আদ্র ভাই এসে বলল,
“আম্মু তোমার ভাইয়ের মেয়েকে সাবধানে কাজ করতে বলো পড়ে হাত পা পুড়িয়ে আমাদের নামে বদনাম যেনো না হয়। দেখে তো মনে হয়না কোনো কাজের, অর্করমার ঢেঁকি”

“তোমার ভবিষ্যত বউ অকর্মার ঢেঁকি হবে দেখে নিও”

“তাকে নিয়ে ভাবার জন্য আমি আছি। তুই কাজে যা, কাজের বেটি রহিমা”

“ফুপ্পি তোমার ছেলেকে কিছু বলো”

“আদ্র বাজে কথা বলবি না, তাহলে কিন্তু মাইর খাবি”

“ছি ছি ভাইয়া কি অপমান। এতো বড় হয়েও আম্মুর হাতে মাইর খাবে”

“তুই চুপ কর ছোটো বাঁদর”

আদ্র ভাই আর আরুর মাঝে লেগে গেল ঝগড়া। ওদেরকে ওদের মতো ছেড়ে দিয়ে আমি আর ফুপ্পি চলে এলাম রান্না ঘরে। দুজনে মিলে পকোড়া বানাচ্ছি হটাৎ মাথায় দুস্টু বুদ্ধি চেপে বসলো। কতো খানি গুঁড়ো মরিচ নিয়ে একটা পকোড়ার মধ্যে দিয়ে দিলাম।
“এতো ঝাল কে খাবে? এতো ঝাল দিচ্ছিস কেন?”

“ঝাল খেতে ইচ্ছে করছে তাই”

পকোড়া বানানো শেষে প্লেটে করে সবাইকে সার্ভ করে দিলাম। কোলের মধ্যে প্লেট নিয়ে খাচ্ছি আর তাকিয়ে আছি আদ্র ভাইয়ের দিকে তার রিয়েকশন দেখার জন্য। কিন্ত তার কোনো রিয়েকশনই নেই। এতো ঝাল খেলে এতক্ষনে আমি ঝালে নাচানাচি শুরু করে দিতাম। আর সে দিব্বি খেয়েই যাচ্ছে। আদ্র ভাইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম চোখ আর নাকের ডগা লাল হয়ে গিয়েছে। মনে মনে গিল্টি ফিল হচ্ছে। এরকম টা করা উচিত হয়নি। দৌড়ে গিয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে দিলাম। আদ্র ভাই কিছু না বলে ঢকঢক করে পানি খেয়ে উঠে গেলেন।

আরুর রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। মনটা ভালো নেই। অনুশোচনা হচ্ছে। আদ্র ভাইয়ের সাথে এমনটা করা ঠিক হয়নি। রুম থেকে বেরিয়ে তাকে খুঁজছি কিন্তু তার দেখা নেই। আদ্র ভাইয়ের রুমে উঁকি দিয়ে দেখি সেখানেও তার দেখা নেই। সারা বাড়ি খুঁজে ছাদে গিয়ে তাকে পেলাম। মহাশয় কার সাথে যেন কথা বলছিলো আমাকে দেখে ওপাশের ব্যক্তিকে বললেন,
“রাখছি,পড়ে কথা হবে”

আদ্র ভাই ঘুরে আমার দিকে তাকালেন। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,
“কিছু বলবি?”

হাত মুচড়ামুচরি করছি। কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।
“সরি”

“কিসের জন্য?”

“তোমার পকোড়ায় ঝাল দেওয়ার জন্য”

“আমি কিছু মনে করিনি। আর এমনিতেও ঐটুকু ঝালে আমার কিছু হয়না”

“সেটা দেখতেই পাচ্ছিলাম”

“তুই আমাকে দেখিসও?”

“তো? তোমার কি মনে হয় আমি অন্ধ?”

“হয়তো”

“তুমি আমাকে অন্ধ বললে?”

এক কথায় দু কথায় আমাদের ঝগড়া লেগে গেল। আমি রণ মূর্তি ধারণ করে আদ্র ভাইকে ইচ্ছে মতো এটা সেটা বলছি সে চুপচাপ শুনছে। এক সময় কাছে এসে গাল টেনে দিয়ে বলল,
“তোকে এভাবেই মানায়। তোর মুখে দুঃখি দুঃখি ভাবটা মানায় না”

“দিলে তো ঝগড়া করার মুড নষ্ট করে?”

“আবার শুরু কর আমি শুনছি”

“এখন মুড নেই”

কিছুক্ষন দুজনের মাঝে নীরবতা। অতঃপর আদ্র ভাই কথা বলা শুরু করলেন। তার যেন একটাই কাজ আমাকে হাসানো। তার একটাই কথা “তোর মুখে হাসিটাই মানায় দুঃখ নয়”। আদ্র ভাই আমাকে গল্প শুনেচ্ছেন আর আমি এক মনে তার দিকে তাকিয়ে আছি। মানুষটা ছিলো বলেই আমি এখনো এতটা চঞ্চল, দুস্টু রয়ে গেছি। ইভান ভাই সেদিন চলে যাওয়ার পর অনেকটা ভেঙ্গে পড়ি। একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলাম। নিজেকে রুমে বন্দি করে নিয়েছিলাম একপ্রকার। সবাই অনেক বলেও বের করতে পারেনি। খাওয়া দাওয়া সব লাটে তুলে দেবদাসী হয়ে গিয়েছিলাম। সামনে পরীক্ষা ছিলো কিন্তু আমার যেন তার কোনো হুসই ছিলো না। তখন এক অন্য আদ্র ভাইকে আবিষ্কার করেছিলাম। যে কিনা ভাই কিংবা গুরুজন হিসেবে নয় বরং বন্ধুর মতো আমাকে বুঝিয়েছে, আমাকে সামলেছে। ফুপ্পিরা কয়েক দিন পর চলে গেলেও তিনি রয়ে গিয়েছিলেন। সব সময় আমার আশেপাশে ছিলেন। এই মানুষটা না থাকলে বোধ হয় এই আমিটাই হারিয়ে যেত। তার দিকে তাকিয়ে ভাবছি এই মানুষটাকে যে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবে সে নিঃসন্দেহে অনেক ভাগ্যবতী হবে। আদ্র ভাইয়ের সঙ্গে অনেক ক্ষণ গল্প করে চলে এলাম।
——–

শীতের সকালে কুয়াশায় ঢাকা চারপাশ। কুয়াশার কারণে দূরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। খালি পায়ে শিশির এর ওপর দিয়ে হেঁটে চলেছি। খুবই ভালো লাগছে। তবে শীতও লাগছে। লাগবে নাই বা কেন গাঁয়ে কোনো গরম জামা যে নেই। শীতের দিনে একটু আকটু শীত অনুভূত না হলে হয়। সকাল সকাল ঠান্ডা একটু বেশিই লাগছে। ঠান্ডাকে পাত্তা না দিয়ে শিশিরে ভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটে চলেছি দিব্বি। হটাৎ মাথায় একটা গান এলো,
“এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো”

কিন্তু কথা হচ্ছে মানুষ এই গানটা গায় যখন সে তার প্ৰিয় মানুষের সাথে থাকে। কিন্তু আমার প্ৰিয় মানুষ কোথায়? না চাইতেও জঘন্য অতীত মনে গেল। প্ৰিয় মানুষ! তাও আবার আমার? এমন সময় মনে হলো গাঁয়ে কেউ কিছু জড়িয়ে দিচ্ছে। তাকিয়ে দেখি আদ্র ভাই তার গাঁয়ের জ্যাকেট আমায় পড়িয়ে দিচ্ছেন।
“গাঁয়ে শীতের জামা কোথায়?”

“এইযে”

“এটা তো আমি পড়িয়ে দিলাম”

“তুমি দাও আর আমি দেই দিলেই হলো”

“ঠান্ডার মাঝে এখানে কি করছিস?”

“শিশিরের ওপর দিয়ে হাটছি”

“ঠান্ডা লেগে যাবে তো”

“লাগবে না। তুমিও হাঁটো দেখবে ভালো লাগবে”

আদ্র ভাই আর আমি পাশাপাশি হাটছি আর গল্প করছি। অনেকক্ষন হাটাহাটি করার পর ফুপ্পির ডাক পড়লো। দুজন চলে এলাম বাসার ভিতরে। আমি চলে গেলাম ফুপ্পির কাছে আর আদ্র ভাই ওপরের নিজের রুমের দিকে। যাওয়ার আগে মিনিমিনে স্বরে বলে গেলেন,
“রৌদ্রময়ীর পদযুগলে শুন্যতা মানায় না। সেখানে নুপুরের রিনঝিন শব্দ মানায়”

বিকেলে আরু আর আমি গল্প করছি আর আচার খাচ্ছি। আরু এখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। তবে আমাদের মাঝে বন্ডিং খুবই ভালো। দুজন গল্প করছি এমন সময় পাশের বাড়ির ছাদে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। একটু পর পর আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। আমাদের দুজনের বিষয়টা খুবই বিরক্ত লাগছে। একটু পর ছেলেটা শিস বাজানো শুরু করলো। আমরা পাত্তা না দিয়ে গল্প করছি। এমন সময় ছাদে আগমন ঘটলো আদ্র ভাইয়ের। তিনি কিছুক্ষন বেপারটা লক্ষ্য করে ছেলেটার উদ্যেশে বলল,
“কিরে শিমুল তুই যে এই বয়সে এসেও প্রতিদিন বিছানা ভিজাস এটা কি সবাই জানে? নাকি মাইকিং করে জানাবো”

ছেলেটা বোধ হয় আদ্র ভাইয়ের কথায় লজ্জা পেল। কোনো দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে ছাদ থেকে নেমে গেল। আমি,আরু আর আদ্র ভাই উচ্চশব্দে হেসে দিলাম। অরুকে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“ঘটনা কি সত্যি?”

“আরে না”

আদ্র ভাই বললেন,
“এখনো দুধের দাঁত পড়েনি ছেলে আসছে মেয়ে দেখতে”

“ও মেয়ে দেখলে তোমার কি? নিজে দেখতে পাচ্ছ না বলে অন্যকেও দেখতে দিবে না”

“ইচ্ছে করলেই আমি অনেক মেয়ে দেখতে পারি কিন্তু ইচ্ছে নেই। আমি এক নারীতে আসক্ত পুরুষ”

“কে সে?”

“চোখের সামনেই আছে খুঁজে দেখ পেয়ে যাবি”

আদ্র ভাই চলে গেলেন আমি তাকিয়ে আছি তার যাওয়ার দিকে। কে সেই মেয়ে যাকে সে এতটা ভালোবাসে? তবে যেই হোক মেয়েটা খুবই ভাগ্যবতী। কিন্তু আদ্র ভাই যে বলে গেল চোখের সামনে আছে। আশেপাশে খুঁজে দেখলাম আমি আর আরু ছাড়া কোনো মেয়ের অস্তিত্ব দূর দুরন্ত অবধি নেই। তাহলে কে সেই ভাগ্যবতী রমণী?

#চলবে?

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here