প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার #লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) #পর্ব_১৩

0
36

#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৩

জাহানারা পুষ্প আজ কয়েক বছর পর গ্রামীণ রূপের সাজ সেজেছে। বাসায় তিনি একলা ব্যক্তি। ছেলে আর ছেলের বাপ দুটো বাহিরে। বাহিরের অবস্থা সম্পর্কে দেশের সূক্ষ্ম স্তরের মানুষেরও জানা। সেখানে তাকে দেখলে মনে হবে তিনি এসবের কোনো দায় ধরেন না। তিনি নিজের খেয়ালে মগ্ন প্রায়। কপালে টিপ পরে চুলগুলো বেনি করে আয়নার সামনে বসে আছেন। এরূপ কী তার স্বামী মোঃ আবু সিদ্দিক এর পছন্দ? আপনমনে জাহানারা পুষ্প কথাটা ভাবলেন। কপালে উপর সিঁথি কাটা। তার নিচে বাদামী টিপ পরা দেখতে গ্রাম্য মেয়ের আভাস ফুটে উঠেছে তার মাঝে। সেই টিপে হাত রাখতেই তার চোখজোড়া বেয়ে জল গড়াল। পরক্ষণে চোখের জল আলতো হাতের আঙ্গুল দিয়ে মুছে নেয়। জল লাগোয়া স্থানে মেকাপ লাগিয়ে স্থানটা পূর্ণ করে দিল। তিনি উঠে গিয়ে আলমারির দরজা খুললেন। ভেতরে একটা লকার আছে। সেই লকারে তিনি তার পুরনো জিনিস সংরক্ষণ করে রেখেছেন। লকার বদ্ধ আলমারিটি তার বাবার বাড়ির দেওয়া সম্পত্তি। এ কোনো যৌতুক হিসেবে আসেনি এই বাড়িতে বরং তার অতীব পছন্দময় বলে সঙ্গে করে নিয়ে আসা হয়েছিল। অবশ্য মোঃ আবু সিদ্দিক দ্বিরুক্তি করেননি সেই ব্যাপারে। মেয়েটা তার পরিবার ছেড়ে এতটা পথ অতিক্রম করে দূরে পর পরিবারের আপনত্ব বহন করতে রাজি হয়েছে এই যেনো ঢের তার কাছে। কিন্তু জাহানারার কাছে স্বামীর ঐরূপ আদিখ্যেতা ছাড়া বৈকি আর কিছু নয়। রূপে-গুণে-দায়িত্বের দিক দিয়ে স্বামী হিসেবে লোকটা খারাপ নয় মোটেও। তবুও জাহানারার পছন্দ নয় সেই মানুষটিকে। যার কারণে তার অতীত চিরজীবনের জন্য নিঃশেষ হয়ে গেল। জাহানারা
পুষ্প চোখের জল আটকে আলমারির লকার এ নাম্বার লিখে খুললেন। সেখানে লাল রাঙ্গা শাড়ির আঁচল এ মোড়ানো এক সেট সোনার গহনা। পুরনো আমলের গহনা হলেও এখনো দেখলে মনে হবে কতটা সতেজ, কতটা ঝাঁজ সেই গহনার উজ্জ্বলতায়। তিনি হাত বুলিয়ে সেগুলো নিয়ে বিছানায় বসলেন। গহনা সেটটি মোড়ানো সেই আঁচলে। আঁচলটি বুকে আঁকড়ে ধরে গহনার সেট থেকে একজোড়া কানের দুল হাতে নিয়ে আয়নার সামনে বসলেন। আঁচলটি তিনি নিজের কোলের উপর রেখে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের নগ্ন শূন্য কানের কাছে সোনার দুল দুটো ধরলেন। এরূপ অবস্থানে বসে থেকে তিনি কল্পনায় ডুব দিলেন।
‘পুষ্পরাণী তোমাগো সোনার দুলে নাচিতে দেখিলে আমাগো পরাণে প্রেমের জলের জোয়ার বইয়া যায়। কও তো কী করুম আমি তাতে? এহন মন চায় তোমার কান দুটো-রে চুমু দিয়া পূর্ণ করে দেয়।’

বেশি গভীর ভাবতে পারলেন না। কারো মৃদু কণ্ঠে ‘ম্যাম’ ডাক শুনে হুঁশ ফেরল জাহানারা পুষ্পের। তিনি নিজ খেয়ালে মগ্ন ছিলেন বলে ডাকে উপর ডাক শুনতে পেলেন না। চোখ বুঁজে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দুল জোড়া ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখেই তিনি দরজা খুললেন। মেইড অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার মালিকের বউয়ের দিকে। তাকে এরূপ সাজে সে প্রথম দেখছে। সে ভেবে নিল হয়ত তার মালিকের জন্য সাজ সেজেছেন। খুশিমনে বলে,

“ম্যাম বাহিরের পরিবেশ এখন ঠান্ডা। সবাই চলে আসবে খাবার তৈরি করতে যাবো কী?”

জাহানারা পুষ্প একধ্যানে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।
বাড়িতে তিনটি মেইড কাজ করে নির্দিষ্ট স্থানে। তাদের মধ্যে এই অল্পবয়সী মেয়েটি পেটের দায়ে রান্নার কাজ করে নিজের পড়াশোনা টিকায়। তিনি মুচকি হেসে বলেন,

“ওহ তাহলে আজকের রান্নার জন্য ফ্রিজ থেকে নাও পুঁইশাক করো ডাল দিয়ে, ঢেঁড়স নাও, সিদ্ধ ডিম চারটা তোমার মালিক আর বড় সাহেব এর প্রোটিন দরকার পড়ে তাই। সাথে ডিপ ফ্রিজ থেকে বের করবে দেশি মুরগির পিচ। কেটে আনা হয়েছে। পরিষ্কার করে প্রথমে কষায় নেবে তারপর চুলোয় তেল দিয়ে ভেজে তরকারি করে বাকি কাজ সম্পন্ন করবে। শেষে মরিচ শুঁটকি ভর্তা করিও। যাও যা বলেছি তা করে ভাত বসাবে। ভাতের বস্তায় দেখবে ছোট পট রাখা। পট দিয়ে মেপে মেপে ঠিক ছয় পট দিয়ে রান্না শেষ করে পরিস্থিতি ঠিক থাকতে ফিরে যেও বাসায়।”

মেইডটি খুশি হলো। সে চলে যেতে নিলে তিনি থামিয়ে হাত চুলকানোর ভান করে জিজ্ঞেস করলেন। ‘তোমার নামটা যেনো কী?’ মেইডটি হেসে বলে,’জ্বী আমি হুসনেইন জাহরা’। কতটা মিষ্টি নাম শুনালো সে। জাহানারা পুষ্পের ভালো লাগল। তিনি হাতের ইশারায় যেতে ইঙ্গিত দিলেন।

____
মোঃ আবু সিদ্দিক বহুক্ষণ পরেই ছাড়া পেলেন ধুপি দোকানের বদ্ধ আবাসন থেকে। কোটগুলো নিয়ে সামনের দিকে নজর দিতেই অবাক হয়ে গেলেন। রাস্তাঘাট র*ক্তে লাল হয়ে আছে। এ দৃশ্য যেনো মর্মান্তিক পূর্ণ। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তিনি নিজের গাড়ির কাছে গেলেন। গাড়ির জানালায় ও র*ক্তের ছিটকে এসে লেগেছে। তিনি আলতো কাঁপা হাতে সেই র*ক্ত ছুঁয়ে দেখতে গিয়েও তার হৃদয় মোচড়ে উঠল। যখন দেখলেন তার গাড়ির ভেতর এক কিশোর ছেলে র*ক্তে ভেজে আছে। তিনি আশ্চর্য হয়ে দরজায় হাত লাগিয়ে খুলতেই দেখতে পেলেন দরজা আপনাআপনি খুলে গিয়েছে। বুঝতে পারলেন গাড়ির দরজায় কোনো না কোনো সমস্যা হয়েছে তাই চাবি হীন খুলে গিয়েছে। তিনি তৎক্ষণাৎ ছেলেটার পাশে বসে তার নাকের উপর আলতো হাত রাখলেন। শ্বাস খুবই নির্বিঘ্নে চলছে। চটজলদি তিনি বেরিয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লেন। ছেলেটাকে হাসপতালে নেওয়া দরকার।
পুলিশের আনাগোনা দেখে তিনি শান্ত মনে হাসপাতালের দিকে গাড়ি নিয়ে গেলেন। মাঝে দুয়েক পুলিশ তার গাড়ির দিকে তাকিয়ে ছিল। যা তিনি আড়চোখে খেয়াল করেছেন। একপলক পেছন ফেরে ছেলেটার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলেন। দেখতে পেলেন ছেলেটার কপালে ভীষণ বাজে ভাবে আঘাত করা হয়েছে। ইশ তরুণ প্রজন্মই আজ নিজ মাতৃভূমিতে নিরাপদহীন এ ভোগছে। হাসপাতালের সামনে আসতেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। একেক আহত ব্যক্তির ঢোল পড়েছে এখানে। তিনি অন্য হাসপাতালে যাওয়ার মত কোনো সুযোগ খুঁজে পেলেন না ছেলেটার বেগতিক দশা দেখে। অসহায় হয়ে তিনি ছেলেটাকে কাঁধে চরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন। আশপাশ জুড়ে হাহাকার কান্নার স্বরে চিৎকার শোনা যাচ্ছে। একে একে সন্তান হারানোর বেদনায় জর্জরিত দশা দেখে তিনি নিজেও তার সন্তান সারোয়ারের চিন্তায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছেন। কাঁধের ছেলেকে কোনো ভাবে একটা স্ট্রেচারে রেখে ইমার্জেন্সি ডক্টরের খোঁজ চালালেন। প্রায় সব ইমার্জেন্সি ডক্টর আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় লেগে পড়ে আছে। তিনি সময়সীমার মাঝে একজন অর্ধবয়স্ক ডক্টর কে পেলেন। তিনি তাকে ছেলেটার চিকিৎসা করার জন্য অনুরোধ করলে ডক্টর ও রাজি হয়ে যান। মোঃ আবু সিদ্দিক ছেলেটাকে কেবিনে পাঠিয়ে সিটে গাঁ হেলিয়ে দিলেন। জোরালো শ্বাস ফেলে তৎক্ষণাৎ নিজ ছেলের নাম্বারে ফোন লাগান।
অন্যত্রে সারোয়ার তন্নতন্ন করে খোঁজ করছে নাজমুরের। তবে কোথাও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন রাস্তাঘাটে শিথিল অবস্থা। আত্মীয় পরাআত্মীয় প্রিয়জন সকলে নিজ নিজ আহত সন্তানদের নিয়ে দৌড়ের উপর আছে। নিহতদের জন্য তো আহাজারি চলছেই। সারোয়ার এর মন হৃদয় এ প্রথম ছোট ভাইয়ের মত মানুষটি কে হারানোর ভয় জেগেছে। তার মাথায় হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কপালের ঘাম মুছে সে আহতদের মাঝে নাজমুলকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। শেহরীনার বাড়ির আশপাশে থাকা প্রতি হাসপাতালে নাজমুর কে তন্নতন্ন করে খুঁজেছে সারোয়ার। না পেয়ে পায়ের গতি কমে সে নিজ গাড়ির কাছে এসে গাড়ির দরজা খুলে বসে পড়ল। চোখজোড়ায় ঘুম হানা দিয়েছে তার। তবুও সে নাজমুর হীন এ পথ থেকে বাড়ি ফিরবে না। হঠাৎ পকেটে ভাইব্রেশন এর শব্দে চমকে গেল সে। তৎক্ষণাৎ পকেট হাতড়ে দেখল তার বাবার ১০টা মিসড কল। সে তটস্থ হয়ে বাবার ফোনে কল দেয়। মোঃ আবু সিদ্দিক ছেলেকে ফোনে না পেয়ে ফোন রেখে সিটে গাঁ হেলিয়ে থাকা অবস্থায় চোখ নিভু করে ফেলে ছিলেন। কিন্তু ফোনের তীব্র শব্দে জেগে গেলেন। ফোন এর মধ্যে ছেলের নাম্বার দেখে খোশমনে চিন্তিত গলায় কল ধরেই বলেন,

“বাবা তুই কোথায়? ঠিক আছিস? কোথায় আছিস তুই বাবা কোথাও যাসনে তুই। আমি হারাতে চাই না তোদের কে।”

সারোয়ার এর ঠোঁট কামড়ে এলো। সে পরিবারের বিরুদ্ধ গেলে তার পরিবার ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। চোখ বুঁজে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,

“আপনি চিন্তা করবেন না আমি ঠিক আছি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন বাবা? আপনার ওষুধ খেয়েছেন? এখন তো দুপুর দুটা বাজছে।”

মোঃ আবু সিদ্দিক তপ্ত গলায় বলেন,’বাবা আসলে আমি বাহিরে আছি। আর হাসপাতালে এখন।’
সারোয়ার এর মাথায় বাজ পড়ল। সে মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করে।
‘বাবা আপনি ঠিক আছেন? কিছু হয়নি তো আপনার! কিছু হলে বলেন আমি ব্যবস্থা নেবো।’

“না না বাবা তা মোটেও করিস না। পরিস্থিতি আমাদের হাতের প্রতিকূলে। তুই কিছু করলে তার বিপরীত দশা হাতের নাগালে পাবি। তাই শান্ত হয়ে থাক।”

ফোন আঁকড়ে সারোয়ার জোরালো হতাশার শ্বাস নিল। দম আটকে আসছে তার। তবুও সে তীব্র মন খারাপী নিয়ে বলে,

“আপনি হাসপতালে কেনো? কী হয়েছে আপনার?”

“বাবা আসলে আমার গাড়িতে একটা ছেলে লুকিয়ে ছিল। সে কে‌ আল্লাহ ভালো জানেন। আহত অবস্থায় পড়ে ছিল‌। আমার মনে হচ্ছে সে আহত অবস্থায় আমার গাড়িতে এসে লুকিয়ে পড়েছিল। তাই তাকে কেউ দেখেনি। তার আহত অবস্থা দেখে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। এখন এখানেই অপেক্ষায় বসে আছি আমি।”

সারোয়ার একপলক চারপাশ দেখে নিল। নাজমুরের খবর নিখোঁজ। তাকে এখন পাওয়া মোটেও সম্ভব নয়। ফলে সে ব্যর্থ হয়ে তার বাবার অবস্থানরত হাসপাতালে যাওয়ার কথা ভেবে নিল। বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“বাবা কোথাও যাবেন না। আমাকে হাসপাতালের নাম বলুন আমি আসছি।”

“ঠিকাছে হাসপাতালের নাম হলো ****। বাবা সাবধানে আয়।”

সারোয়ার মৃদু শব্দে ‘ইন শা আল্লাহ’ বলে ফোন কেটে গাড়ি চালু করে রাস্তায় নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটল।

চলবে…..
(দুঃখিত গতদিন না দেওয়ার জন্য। ব্যস্ততায় সময় কাটছে ইন শা আল্লাহ সময় পেলেই গল্প দেবো।)

রিজওয়ান এর হাত থেকে বাঁচতে অরনিয়া তার গলায় কামড়ে দিল। সে মৃদু চিৎকার দিয়ে নামিয়ে দিল অরনিয়াকে। সেও ছাড়া পেয়েই দৌড় দিল। মিসেস কেয়া মাহবুব সবেই হাত মুছে বেলকনির থেকে বেরিয়ে রুমের দিকে যাচ্ছিলেন। শ্বাশুড়ি কে দেখে অরনিয়া বাঁকা হেসে তাকে জড়িয়ে ধরল। তিনি কিছুটা হকচকিয়ে গেলেন। ছেলে-মেয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে অবাক গলায় জিজ্ঞেস করেন।

“কী হলো তোরা দৌড়াদৌড়ি করছিস কেন?”

রিজওয়ান হাঁফাতে লাগল। অরনিয়া শয়তানি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

“আম্মু আপনার ছেলে না আমায় মারার জন্য দৌড়ে আসছিল। আজ আমি কেনো নাইট আউট করলাম তাই আমায় মারার জন্য পাগলা হয়েছেন উনি।”

মিসেস কেয়া মাহবুব চোখ রাঙিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেন,

“অরনিয়া যা বলছি সত্যি নাকি?”

“নো মম। আপনার বউমাকে বলেন ঘুমাতে আসতে। আজকে তার ক্লান্ত চেহারা দেখেই রুমে নিয়ে যেয়ে ঘুম পাড়াতে চাইছি।”

“তার দরকার নেই আপনি যান ঘুমিয়ে পড়েন আমি বাচ্চাকে দেখে আসছি।”

আমার প্রথম লেখা বইটই এপ্যাসে গল্পের বই #হৃদয়ের_সঙ্গমে_অভিমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই প্রকাশ করা হবে। দাম মাত্র ৪০ টাকা। সবাইকে পড়ার অনুরোধ রইল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here