প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার #লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) #বোনাস_পর্ব (১৮+ এলার্ট)

0
156

#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#বোনাস_পর্ব
(১৮+ এলার্ট)

“ভাই কইতে ছিলাম আপনার টাকা না দেওনের একটা ব্যবস্থা আছে আমার কাছে। মানিলে আমি অবশ্য টাকা মাফ করে দিমু। এটা স্বাক্ষর ও করে দিমু। কিন্তু শর্ত হইলো আপনার ঐ যে কালো দেইখা বড় মাইয়াটা আছে না? তারে আমি আমার সোহাগী করতে চাই। আসলে হাচা কথা ঐদিন দেইখা খুব মনে ধরছিল আমার। শরমের ঠেলায় কইতে পারি নাই। এহন ওনে অসুস্থ হইয়া পড়ে আছেন। টাকা কেমনে দেবেন? তার চেয়ে ভালা মাইয়া বিয়ে দিয়া দেন। রাজরাণী হওয়া থাকবো। আমার রাজশাহীতে বড় প্রাসাদ আছে। সেহানে….।”

নাছির উদ্দিন জ্বলন্ত অগ্নিগিরির ন্যায় ক’ষে এক চ’ড় বসালেন মোকতাব মিয়ার গালে। তিনি বিছানার থেকে সোজা মাটিতে পড়ে যান। চোখজোড়া রক্তিম করে তিনি নাছির উদ্দিন এর পানে চান। নাছির উদ্দিন বসে থাকা অবস্থায় দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হোন। তবুও নিজেকে দমাননি। গলা উঁচিয়ে কথার দ্বারা এক ঝাড়া মা’রেন।
‘ঐ শু য়ো রের বাচ্চা , কু ত্তা হা রা ম জাদা চোদ*** তোর সাহস কেমনে হলো আমার মাইয়ার দেখে কু নজর দেওয়ার। আরেকবার কইলে তোর চোখ তুইলা আমার পুকুরের মাছরে খাওয়ামু‌। শা*লা বয়স হইয়া মইরা তুইয়ে পড়বি। তোর নজর তাও কচি জোয়ান মাইয়াদের শরীরে ঘুরে বেড়ায়। কু ত্তা তোরে আমি আর সহ্য করতে পারছি না। এই রূপ রূপ কোথায় তুমি জলদি রুমে আসো। এই রূপপপ।’

রূপালি বেগম ঘরে মেহমান স্বরূপ মোকতাব মিয়া অর্থাৎ দোকানের পূর্বের মালিক এসেছেন। হুট করে তার আগমনে খেয়ালে আসল পরিশোধের তারিখ পার হয়ে গিয়েছে। টাকা এখন অব্দি দেওয়া হয়নি। তবুও ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা অত্যন্ত সাবলীল কণ্ঠে তার স্বামীর কথা জিজ্ঞেস করেন।

“নাছির মিয়া কোথায়-রে দোকানের ভাড়া মেটান না বহুদিন হওয়া গেল। উনার কাছ থেইকা বাকি টাকা চাইতে আইলাম।”

ভাড়ার কথা শুনে পুরো মুখে কালো আঁধার ছড়িয়ে পড়ে রূপালি বেগম এর। একে তো ভারি বর্ষণ তার উপর দোকানপাটের দূরদর্শা চলছে। সেখানে বাকি টাকা পরিশোধ করা মোটেও এখন সম্ভবপর নয়। রূপালি বেগম ম্লান গলায় বলেন,
‘ভাইসাব আরেকটু সময় লাগবে। উনি এখন অসুস্থ। শয্যাশায়ী রোগীর মত বিছানায় আসেন এখন।’

“ওহ ছ্যা ছ্যা আমি তাইলে আরেকটু সময় বাড়িয়ে দিলাম।”

এই বলে তিনি ফিরে যেতে গিয়েও থেমে যান। খুব নম্র ভদ্র হয়ে রূপালি বেগম এর নিকট পুনরায় ফিরে এসে বলেন,

“আসলে ভাবী কইতে আইছিলাম। ভাইসাব এখন কোথায় আছেন? একটু দেখা করুন লাগতো। কথা আছে কথা কইয়া চলে যামুনে।”

মোকতাব মিয়ার কথা শুনে রূপালি বেগম ও নাকচ করতে পারেননি। ঘোমটা ভালো করে টেনেটুনে লোকটাকে দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেন। ভেতরের রুমে অনুমতি চাইতে স্বামীর কাছে যান। এর মাঝে অবশ্য মোকতাব এর কু নজর পুরো ঘরের মধ্যে তল্লাশি দেওয়া শেষ। নাছির উদ্দিন শুনে কিছুটা বিরক্ত বোধ করেন তবুও মেহমান মানুষ দেখে নাকচ করেননি। স্বসম্মানে ভেতরে আসার জন্য পাঠান। রূপালি বেগম আজ্ঞা দেন। এতে মোকতাব মিয়াকে স্বামীর কাছে দিয়ে তিনি সরে আসেন রুমের ভেতর থেকে। কেননা নাছির উদ্দিন মোটেও পছন্দ করেন পর পরপুরুষের সামনে নিজ স্ত্রী মেয়ে সন্তানদের উপস্থিতি।
রূপালি বেগম রান্নাঘরে চা পানির ব্যবস্থা করছিলেন। আকস্মিক স্বামীর রুম থেকে জোরালো কণ্ঠে ‘রূপ’ ডাক শুনে হতবিহল হয়ে ছুটে যান। কোনো অঘটন ঘটল না তো?
কিন্তু রুমে এসে আশ্চর্য হয়ে যান। মাটিতে গালে হাত দিয়ে র ক্তে লাল কাঁ টা ঠোঁট নিয়ে মোকতাব মিয়াকে বসে থাকতে দেখে তিনি আশ্চর্যান্বিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন।

“এ কী উনি মেঝেতে বসে আছেন কেনো! উনার দেখি মুখে হাতের ছাপ ও লেগেছে কী হয়েছে গো বলুন তো?”

“রূপ এখনি রান্নাঘরের থেকে দা টা আমার জন্য নিয়ে আসো। এই লোকটারে আমি আজকা খু ন কইরা তুইবো। এরে এখনি খু ন করমু হা লার পুতরে।”

রূপালি বেগম তার কণ্ঠস্বর বের করতে চাইলেও নাছির উদ্দিন গরম চোখে চোখ রাঙান। রূপালি বেগম স্বামীর বিপরীতে কথা বলতে পারেন না। তিনি সোজা রান্নাঘরে যান।এর মাঝে মোকতাব মিয়া চোখ লাল করে নাছির উদ্দিন কে শাসিয়ে দেন।

“এডা তুই ঠিক করলি না-রে নাছির। তুই চিনস নাই আমারে, জানিস না আমার পাওয়ার। তোকে আর তোর এই সংসারটারে নরক দেখাইয়া ছাড়মু। দেখে নিস আমার নজর তোর সংসারকে জ্বালাইয়া মারবো।”

নাছির উদ্দিন রেগেমেগে তার পাশে রাখা পানি ভর্তি কাঁচের গ্লাসটি নিয়ে ছুঁ ড়ে মা রেন মোকতাব মিয়ার দিকে। তিনিও তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া জানাতে না পেরে ঠাসস করে কপাল বরাবর গ্লাসটি লেগে যায়। যার কারণে তিনি কপাল চেপে চিৎকার করে মেঝেতে বসে পড়েন। রূপালি বেগম এসে মুখে হাত চেপে ধরেন। পাড়া পড়শীর কাছে আওয়াজটা গণহারে পৌঁছে গেল। নাসমা ঘুম ছিল বাবার রুম থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ঘুম ঘুম চোখ ডলে ডলে বাবার রুমে এসে এক লোককে র ক্তা ক্ত হয়ে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেয়।
রূপালি বেগম ভয়ে মেয়েকে দেখে তাকে বুকে চেপে ধরেন। নাছির উদ্দিন ধপ করে গাঁ হেলিয়ে দিলেন বিছানায়। রা গের তেজস্ক্রিয়তায় তিনি মারাত্মক ভুল কর্ম করে ফেলেছেন।
নাসমুর ঘরে নেই। সে তার বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছে। তার ল্যাব প্র্যাকটিক্যাল নিয়ে বন্ধুগণের মাঝে শলা পরামর্শ করতে। রূপালি বেগম বাক বিতণ্ডা খুঁজে না পেয়ে ঠোঁট কামড়ে বুদ্ধি সাজায় মনে। স্বামীর কাছ থেকে পরে পুরো বিষয় জানা যাবে। আপাতত পরিস্থিতি সামলাতে হবে। তিনি বাহিরে গিয়ে উঠান পেরিয়ে কাঁদা মাটির পাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে আহাজারি করে সবাইকে ডাকেন।
কয়েকপলে ছড়িয়ে গেল এলাকার চেয়ারম্যানের বাসায় মোকতাব মিয়া নামের এক লোক আহত হয়েছে। আহত হওয়ার মূল ঘটনার প্রেক্ষাপটে জানা গিয়েছে। লোকটা পা পিছলে কাঁচের গ্লাস নিয়ে হেঁচকে পড়ে ছিলেন। উক্ত প্রসঙ্গ সত্য না মিথ্যে এ বিষয়ে তিনি আহত থাকায় জবাব দিতে পারেননি।

___
জাহানারা পুষ্প রুমে এসে দেখেন মোঃ আবু সিদ্দিক উদাসীন হয়ে জানালার ধারে চেয়ার টেনে বসে আছেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তিনি একপলক তাকিয়ে চলে যেতে নিয়েও কী ভেবে স্বামীর দিকে এগিয়ে যান। স্বামীর পেছনে এসে দাঁড়াতেই তিনি চটকে ধরে ফেলেন।
‘বউ পেছনে কেনো দাঁড়িয়ে আছো? সামনে এসে বসো।’
জাহানারা পুষ্প শুনে জবাবহীন প্রতিক্রিয়া দেখান। চেয়ার এক হাতে ধরে জানালার বিপরীত পাশে টেনে বসেন। বরাবর, মুখোমুখি দুজনে। তবে চোখের দৃষ্টি একজনের জানালার বাহিরে প্রাকৃতিক সমাবেশের দিকে আরেক জনের তার অর্ধাঙ্গিনীর দিকে। মোঃ আবু সিদ্দিক তপ্ত শ্বাস ফেলেন। স্ত্রীর হাতে আলগোছ ছুঁয়ে দিলেন। কেঁপে উঠেন জাহানারা পুষ্প। কেননা আবেশময়ী স্পর্শ তিনি এ প্রথম অনুভব করছেন। পূর্বে তিনি অন্যমনস্ক থাকায় কখনো স্বামীর স্পর্শ কে আমলে নিতেন না। বলতে গেলে তিনি একধরণের পুতুলের ভাব নিয়ে নিজেকে প্রদর্শন করতেন। আজ স্বামীর স্পর্শ কে তিনি প্রথম করে চিনছেন। মোঃ আবু সিদ্দিক মৃদু কণ্ঠে আওড়ান।

“জানো পুষ্প আমার না তোমাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। পরিস্থিতি আমাদের হাতের মুঠোয় ছিল না। আজ যা বলব হয়ত তুমি শুনে তোমার মনে থাকা আমার জন্যে দয়াটা মিটে যাবে। সেখানে ভালোবাসা অটুট হতে শুরু করবে। কিন্তু আমি চাই তুমি আমায় ঘৃণা করেই আজীবন পার করে দিও। আমার তোমাকে পাওয়া হয়ে গিয়েছে। তুমিময় স্বাদ আমি কিশোর জীবনেই গ্রহণ করে ফেলে ছিলাম। মনে পড়ে সেই সাঁঝবেলার কথা? যখন তুমি একজোড়া ঝুমকা,পায়ে আলতা আর নুপূর পড়ে পুরো গ্রামের চারপাশ ঘুরে বেড়াতে! তোমার সেই নুপূরের ঝুনঝুনি আমার হৃদয়ে ঢোলা দিয়ে ছিল। আমি সেই নুপূর পরিহিত ঝুনঝুনির প্রেমে পড়েছিলাম। কখনো যদি আমায় একটু হলেও মন থেকে ভালোবেসে থাকো তবে একজোড়া নুপূর পরে আমার সামনে দীর্ঘক্ষণ বসে থেকো। বেশিক্ষণ না শুধু তিনঘণ্টা। তারপর তুমি তোমার মত পাখা ঝাপ্টে উড়ে বেড়াবে। আমি সেই তোমার উড়ন্ত পাখার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসব।”

জাহানারা পুষ্পের কথাগুলো শুনে কেমন যেনো বুকটা চিনচিনে ব্যথা করে উঠল। তিনি বুঝছেন না আজ হঠাৎ সারোয়ার এর বাবার হলো কী? তিনি অদ্ভুত কথা কেন বলছেন? জাহানারা পুষ্প আলগোছে স্বামীর হাত চেপে ধরে মৃদু চাপ দেন। চমকিত, পুলকিত হয়ে গেলেন মোঃ আবু সিদ্দিক। তার স্ত্রী এ প্রথম পৃথকভাবে তার হাতে সমর্থন করেছেন। তিনি লোভ সামলাতে না পেরে আবদার করে বসলেন।
‘একবার আমায় জড়িয়ে ধরবে ঝুনঝুনি?’
স্বামীর এ আব্দার শুনে থমকে যান জাহানারা পুষ্প। তবুও তার কেনো যেনো আজ বারণ করতে মন সায় দিচ্ছে না। ফলে তিনি মুচকি হেসে স্বামীকে দুহাত মেলে বুকে জড়িয়ে নেন। মোঃ আবু সিদ্দিক স্ত্রীর পিঠে চোখের জল ফেলেন। যা স্ত্রী বোঝার আগেই তিনি হাত দিয়ে মুছে নেন। মিনিট খানেক থেকে তিনি নিজ থেকে সরে আসেন। স্ত্রীর হাত ধরে বলেন,

“শুনো তোমার থেকে আমি অনেক কিছু লুকিয়েছি। হয়ত পরে বলার মত সময় সুযোগ নাও পেতে পারি।

চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর আজকে তিন পর্ব দিয়ে ফেলেছি। এখন কাল বা পরশু গল্প আসবে না।)
পড়ুন ই-বুক গল্প #হৃদয়ের_সঙ্গমে_অভিমান
https://link.boitoi.com.bd/o5AG

পেজ লিঙ্ক https://www.facebook.com/tasmihaalraiyan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here