#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ২০ #মেরুন_রঙের_শাড়ি
#নবনী_নীলা
কয়েকদিন হলো কিছুই খেতে পারছি না।খেলেই বমি করে দেই। অর্পা আপু কিছুদিন ছিলেন আমাদের সাথে এদিকের একটা কাজে। কিছুদিন থাকতে হয়েছিলো কিন্তু আজ আপু চলে যাবেন। আমার এমন অবস্থার কথা আমি অভিকে বলিনি তবে আপু জানে।
যাওয়ার আগে আপু আমাকে বললেন,” নওরীন শুনো,তুমি টেস্টটা করিয়ে ফেলো।”
আপুর কথায় আমার মনেও সন্দেহ হচ্ছে। তাই আমি সত্যি সত্যি টেস্ট করিয়ে নিলাম। প্রথমে দোকান থেকে প্রেগনেন্সি কিট আনলাম সেগুলোয় পজিটিভ এসেছে। কিন্তু এইগুলো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এখন কাউকে বলা যাবে না অভিকেও না। কালকে একবার ডক্টরের কাছে যেতে হবে। আমি স্বাভাবিক ভাবে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম কিন্তু মুখের হাসি লুকাতে পারছি। যদি আমি এখনও বিশ্বাস করিনি তবুও ভাবতে ভালো লাগছে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি বলে বোঝাতে পারবো না। আমি অনেক আদর নিয়ে নিজের পেটে হাত রাখলাম।
“তোমার কি পেট ব্যাথা করছে?”, অভির কথায় চমকে আমি হাত নামিয়ে না সূচক মাথা নাড়লাম।
” তোমার চোখে মুখে এতো উচ্ছাস কিসের? “, খাটে বসে এক হাতে ফোন ধরে বললো।আমি অভির পাশে গিয়ে বসলাম আর বললাম,”আজ একটা কান্ড ঘটেছে।”
অভি ল্যাপটপ অন করতে করতে বলল,” কি হয়েছে?”
আমি প্রসঙ্গ বদলাতে বললাম মায়ের বাসা থেকে আমি আমার পুরনো সব বই নিয়ে এসেছিলাম। আজ সকালে সেগুলো ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে একটা বই চোখে পড়ে বইটা ইমনের দেওয়া। আমার জন্মদিনে দিয়েছিলো হুমায়ূন আহমেদের লেখা বইটার নাম,” মৃন্ময়ীর মন ভালো নেই।” এই বইটা আমার এখনো পড়া হয়নি।
এনে যে কোথায় রেখেছিলাম মনে ছিল না। আমি আগ্রহ নিয়ে বইটা খুললাম। খুলতে গিয়ে বই থেকে একটা কাগজ পড়লো কাগজ খুলে দেখি একটা চিঠি। চিঠি বললে ভুল হবে প্রেমপত্র। ইমন যে আমাকে ভালোবাসতো ওর আচরণে সেটা কখনোই বুঝতে দেয় নি। চিঠি পরে আমি নিজেও কিছুক্ষণ অবাক ছিলাম। ভালই হয়েছে আগে দেখিনি তাহলে হয়তো অভি আমার জীবনে আসতো না। হয়তো আমার সাথে অভির ভাগ্য জুড়ে ছিলো বলেও চিঠিটা আমি পাইনি।
খুব সুন্দর করে লেখা চিঠি যে মেয়ে পড়বে সে না দেখেই প্রেমে পড়ে যাবে। অভিকে সেটার কথাই বলবো।
” জানেন আজকে আমি আমার জীবনের প্রথম প্রেম পত্র পেয়েছি।”, আমার কথা শুনে অভি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।এটাই তো দেখতে চাই।
অভি বিস্ময় কাটিয়ে বললো,” মানে?”যদিও এখন অভির চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ।
আমি বললাম,” পুরনো বই খাতা ঘাটতে গিয়ে পেয়েছি।”
” কে লিখেছে?”, গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করলো অভি।
” ইমন।”,আমার কথায় অভি তাকিয়ে আছে।
আমি বললাম,” অবাক হয়েছেন না? আমিও হয়েছি।”
অভি গম্ভীর গলায় বললো,” কোথায় সেই চিঠি?”
আমি বললাম,” যত্ন করে রেখে দিয়েছি। তবে আপনি চাইলে শেষ লেখাটা বলতে পারি।বলবো?”
অভী মুখ ভার করে আছে বুঝাতে চাচ্ছে এইসবে অভির কিছু যায় আসে না কিন্তু আমি ঠিক বুঝেছি অভি আমার যেই ডায়রি পড়েছিল সেখানে এক পাতায় আমি লিখেছিলাম;
“ভালোবাসি কথাটা সবাই মুখে বলে, আজকাল তার ও প্রয়োজন নেই সোসায়াল মিডিয়া আছে আরো সহজ আরো আধুনিক। আমার বন্ধুরা বলে আমি প্রেম করিনা কেনো? আমি বলেছি যদি কেউ কখনো চিঠি লিখে আমাকে মনের কথা জানায় সেদিন প্রেম করবো।”
অভি সেটা পরেছে তাই তার মুখ আরো শুকিয়ে গেছে।অভিকে আরেকটু রাগিয়ে দেই। আমি অভিকে চিঠির শেষের কিছু লাইন বলতে চাইলাম অভি শুনতে চাইল না সে রেগে আছে।
” নওরীন আমাকে কাজ করতে দেও। এইগুলো পরে শুনা যাবে।”,বলে ল্যাপটপে কি জানি করছে। হাতের কাছে পেলে হয়তো চিঠি কুচি কুচি করে রাগ কমতো।
আমি বললাম,” ল্যাপটপ সরান কোল থেকে।”
গম্ভীর মুখে বললো,” কেনো?”
” আপনি সারাদিন ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বসে থাকেন কেনো? ওটা আমার জায়গা, আমি বসবো। ল্যাপটপ কেও দেখি আমার সতীন বনিয়ে ফেলেছেন।”
বলে আমি ল্যাপটপ নিয়ে দূরে রেখে এসে অভির কোলে বসে পড়লাম। অভি হাত ভাজ করে বসে আছে। বেচারার রাগ হচ্ছে কিন্তু রাগ দেখাতেও পারছে না।
শেষে আর রাগ ধরে না রাখতে পেরে বললো,” যাও যত্ন করে রাখা প্রথম প্রেমপত্র পরো। আমাকে কি দরকার? আমাকে কাজ করতে দেও।”
আমি অভির হাতের ভাজ খোলার চেষ্টা আছি। শক্ত করে বসে আছে। প্রচন্ড রেগে গেছে মনে হয়।” আপনাকেই আমার দরকার। হাত খুলুন না। এতো জেলাস হলে কি করে হবে?”বললাম।
” আমি যেনো ইমনের সঙ্গে তোমাকে আর না দেখি। ওর সাথে তুমি কথা বলবে না ফোনেও না।”,দেখে মনে হচ্ছে রেগে এক্কেবারে শেষ।
আমি কিছু বললাম না। রাগ ভাঙ্গাবো কিভাবে সেটাই বুঝতে পারছি না।” আরে জামাই রাগ করেন কেনো? এতো রাগ স্বাস্থের জন্য ভালো না।”
” নওরীন আমি কিন্তু মজার মুডে নেই।”,বলে অন্যদিকে তাকালো অভী।
আমি অনেক কষ্টে হাতের ভাজ খুলে অভির বুকে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।কিন্তু অভির রাগ কমেছে বলে মনে হয় না।আমাকে জড়িয়ে ধরলো না। আমি মুখ তুলে অভির দিকে তাকালাম। রাগ করে আছে কেনো ভাল্লাগছে না। যদিও আমি নিজেই রাগিয়েছি। আমি অভির দিকে তাকিয়ে আছি। হাত দিয়ে অভির চোখ থেকে চশমা খুলে পাশের টেবিলে রাখলাম। অভি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।অভিকে চমকে দিয়ে আমি অভির গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলাম। পুরো ঘটনাটা ঘটলো একটা ঘোরের মাঝে।আমি বুঝতে পেরে চোখ বড় বড় করে ফেলি।কিছু বুঝতে না পেরে উঠে যেতেই অভি আমার কোমর জড়িয়ে আমাকে কাছে নিয়ে এলো। নিজের বিপদ নিজেই ডেকে এনেছি কি আর করার?
___________________
আমি আজ ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করেছি, চেকআপ করে তিনি বলেছেন আমি প্রেগনেন্ট। এ কেমন আনন্দ আমি জানি না। অভিকে সারপ্রাইজ দিবো।খবর শুনে নিশ্চই সে অনেক খুশি হবে। আমি বাসায় এসে খুব সুন্দর করে সব কিছু ঘুছিয়ে রাখলাম। অনেক সময় নিয়ে গোসল করলাম। বার বার শুধু রিপোর্টটা দেখছি কত ছোট, এক মাস হয়েছে মাত্র।আমি কাউকে বলিনি সবার আগে অভিকে বলবো। কিন্তু সে কখন আসবে?
আমি ড্রয়ার খুলে সেই মেরুন রঙের শাড়িটা বের করে পড়লাম। অভির দেওয়া প্রথম শাড়ি অন্য সব শাড়ি পড়েছি কিন্তু এটা পড়িনি ইচ্ছে ছিলো খুব আনন্দের একটা দিনে এটা পড়বো।আজকের চেয়ে আনন্দের দিন আমার জীবনে নেই।
অভি এলো রাত আটটায় প্রতিদিন সাতটায় আসে কিন্তু আজ একটু দেরি হয়েছে।নওরীন সেজে বসে আছে। কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে নওরীন একটা কাপড়ের টুকরা এনে দরজা অল্প খুলে অভির দিকে কাপড়ের টুকরা বাড়িয়ে দিল। নওরীন মুখ বের করলো না। অভি নওরীনের কাণ্ডে এখন আর অবাক হয় না, সব স্বাভাবিক মনে হয়। উল্টা পাল্টা কাজ না করলে তার কাছে অস্বাভাবিক লাগে।
অভি ভ্রু কুঁচকে বললো,” কি এটা?”
নওরীন ভিতর থেকে বললো,” এটা দিয়ে চোখ বাধুন।”
অভি কিছু বুঝতে না পেরে বললো,” কেনো? চোখে বাঁধবো কেনো?”
” আহা ! বাঁধতে বলেছি বাধুন।”, নওরীনের কথায় উপায় না পেয়ে অভি কাপড়টা দিয়ে নিজের চোখ বাধল না হলে আজ হয়তো ভিতরেই যেতে দিবে না।
অভি চোখ বেধে বললো,” হুম , করেছি।”
নওরীন দরজা পুরো খুললো।তারপর প্রথমে অভি ঠিক করে চোখ বেধেছে কিনা দেখে অভিকে ভিতরে আনল।
“নওরীন কি শুরু করলে তুমি?”, ন্ওরিন অভিকে চুপ করে থাকতে বলে হাত ধরে টেনে করিডোরে নিয়ে গিয়ে চোখের বাঁধন খুলে দিল। অভী অবাক হয়েছে কারণ করিডর খুব সুন্দর করে সাজানো বিভিন্ন রঙের বাতি জ্বলছে তার মাঝে এক সারিতে কিছু মোমবাতি অপূর্ব লাগছে। অভি নওরীনের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ! মেরুন রঙের শাড়িটাতে অসাধারণ লাগছে তাকে। অভি হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,” আজকে কি কিছু স্পেশাল?”
” শুধু স্পেশাল না অনেক স্পেশাল।”,বলে নওরীন একটা টেডি বিয়ার অভির কোলে দিলো।
অভি টেডি বিয়ারের দিকে তাঁকিয়ে বললো,” এটা কি?”
” বলবো না।”, নওরীন চলে যেতেই অভি নওরীনকে জড়িয়ে কাছে নিয়ে এলো।
” মনে হচ্ছে তুমি অনেক খুশি। কি হয়েছে ? বলো।”, অভির প্রশ্নে নওরীন বললো,”কেউ আসবে।”
অভি অবাক হয়ে বললো,” কে আসবে ? এখন এই সময়ে আসবে?”
” না এখন না। আরো নয় দশ মাস পর আসবে।”, নওরীনের কথায অভি ঠিক বুঝে উঠতে পারল না সে বললো,” মানে।”
নওরীন টেডি বিয়ার কে দেখিয়ে হাসলো। অভি চোখ বড় করে ফেললো বিস্ময়,আনন্দ সব একসাথে তার চেহারায় ফুটে উঠেছে অভি বললো,” তুমি প্রেগনেন্ট?”
নওরীন হা সূচক মাথা নাড়ল। অভি খুশিতে নওরীনকে কোলে তুলে নিলো। অভির খুশী দেখে নওরীন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কতো সুন্দর একটা সময়ের মধ্যে দিয়েই না তারা যাচ্ছে।
[ চলবে ]