ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড #পর্ব_৩ #সারিকা_হোসাইন

0
31

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৩
#সারিকা_হোসাইন
*******
আট তলা বিশিষ্ট শপিং মলটির খোলা ছাদের একদম রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে রাজ্য।মধ্য আকাশের সূর্যটা তির্যক ভাবে বিকিরণ ছড়িয়ে যাচ্ছে।রোদের উত্তাপে মাথা ফেটে যাবার উপক্রম।চারদিক থেকে এলোমেলো হয়ে আসা বাতাস যদিও কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে।কিন্তু চোখ মেলে পরিস্কার ভাবে কিছুই দেখা যাচ্ছে না,সূর্যের বেগুনি রশ্নির কারনে আপনা আপনি চোখ বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম।রোদ থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবার জন্য রাজ্য পরনের প্যান্টের বেল্ট লুপ এর সাথে গুঁজে রাখা কালো রোদ চশমা চোখে দিয়ে মাথায় একটা ক্যাপ পরে কাঁধের ভারী ব্যাগটি নীচে নামিয়ে রাখলো ।

এরপর অপজিট সাইডের বিল্ডিং টির দিকে তাকিয়ে দক্ষিণ পাশের সমস্ত দরজা জানালা পরখ করে নিলো।
দক্ষিণ পাশের আট তলার সাইড জুড়ে সাতটি জানালা আর চারটি দরজা রয়েছে।তড়িঘড়ি করে রাজ্য ব্যাগের চেইন খুলে সোয়াট টিমের জন্য বরাদ্দকৃত ব্যারেট M82 রাইফেল বের করে তাতে ক্লিপ,গ্রিপ,বুলেট এবং টেলিস্কোপ সেট করে রাইফেল স্ট্যান্ড এর সহিত রেলিংয়ের উপর দাঁড় করালো।

শকুনের মতো নিখুঁত চোখে স্কোপ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্রতিটি জানালা বরাবর তাক করে খুঁজতে লাগলো কাঙ্খিত ব্যাক্তিকে।একে একে সাতটি জানালা দরজা খুঁজেও সেরকম সন্দেহ জনক কিছুই পাওয়া গেলো না।নিরাশ হয়ে রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে নীচে বসে পড়লোসে।এরপর ব্যাগে থাকা পানির বোতলের ক্যাপ খুলে ঢকঢক করে হাফ লিটার এর পুরো বোতল সাবাড় করে দম ছাড়লো।রোদের প্ৰখরতায় শরীর পুড়ে যাচ্ছে ।মাথা বেয়ে বেয়ে মোটা মোটা ঘাম গাল গড়িয়ে গ্রীবাদেশে আছড়ে পড়ছে।
হাফ ছেড়ে কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে আবার স্কোপে চোখ রাখলো রাজ্য।
কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর একটা জানালা বরাবর রাইফেল তাক করতেই ঘটে গেলো শরীর হিম ধরানো মর্মান্তিক এক ঘটনা।

চোখ মুখ কালো কাপড়ে আবৃত এক লোক একজন কিশোরী মেয়ের গলা চেপে ধরে আছে।মেয়েটি নিজেকে বাঁচানোর জন্য প্রানপন চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু লোকটির শক্তির সাথে কোনো ভাবেই মেয়েটি কুলাতে পারছে না।মুহূর্তেই মেয়েটির জিভ বেরিয়ে এলো।
রাজ্য এই ঘটনা সহ্য করতে না পেরে দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে ট্রিগার চাপলো।মুহূর্তেই বিকট শব্দে একটি গুলি বন্দুকের নল থেকে বেরিয়ে প্রবল বেগে আঘাত হানলো ওপাশের জানালার গ্রিলে।গুলির শব্দ হতেই আগন্তুক লোকটি মেয়েটিকে সজোড়ে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে পালিয়ে গেলো ।
এই প্রথম রাজ্য তার টার্গেট মিস করেছে ভাবতেই নিজের উপর নিজের রাগ চটে গেলো।

“টার্গেট মিস হয়ে গেলো সুইটহার্ট?
হঠাৎই নির্জন ছাদে ব্যারিটোন ভয়েসে এমন কথা শুনে থমকে দাঁড়ালো রাজ্য।
পিছন ফিরে অদ্ভুত সৌন্দর্যের সেই পুরুষকে দেখে কোনো কথার উত্তর না দিয়ে রাইফেল এর পার্টস গুলো দ্রুত হাতে খুলে ব্যাগে ভরতে উদ্দত হলো।

“টার্গেট বরাবর বুলেট শুট করতে চাইলে মনে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব না রেখে “তোকে আমি মেরেই ফেলবো” এই টার্গেট নিয়ে গুলি ছুড়তে হবে ডার্লিং।”

দ্বিতীয় বার যুবকটির মুখে এমন হেঁয়ালি কথা শুনে রাজ্যের মাথায় রাগ কিলবিল করে উঠলো।এই মুহূর্তে লোকটির এমন গায়ে পড়া ভাব তার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।তারমধ্যে লোকটি দেখতেও সন্দেহ জনক।লোকটির চিন্তা মন থেকে সরিয়ে নিজের সব কিছু গুছিয়ে ছাদ ত্যাগ করার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই যুবরাজ পথ আগলে দাঁড়িয়ে আবেশ মেশানো কন্ঠে বলে উঠলো

‘”কতক্ষন ধরে একা একা বকবক করে যাচ্ছি এভয়েড করছো কেনো?

রাজ্য এবার তার তরতর করে বেড়ে যাওয়া রাগ কে কন্ট্রোল করতে না পেরে বুক বরাবর এক কঠিন পাঞ্চ মেরে দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো
“আমি কবেকার সুইটহার্ট আপনার?কঠিন সিচুয়েশন এ বকবক করে মাথা খারাপ করে দিচ্ছেন!

ঘুষির মাত্রা এতোই সজোরে ছিলো যে অন্য কেউ হলে পিছন দিকে দুই হাত জায়গা সরে যেতো।কিন্তু যুবরাজ ঠাঁয় সেই জায়গাতেই শক্ত অবস্থানে মুখে হাসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
কোনো প্রকার ব্যাথাও যেনো সে অনুভব করেনি তাকে দেখে এমনটাই মনে হলো রাজ্যের।

এই মুহূর্তে এই সাংঘাতিক ছেলেটিকে নিয়ে তার ভাববার মোটেও সময় নেই।হাত ঘড়িতে সময় দেখে কানে থাকা ব্লুটুথ ডিভাইস ক্লিক করে ওপাশের ব্যাক্তির উদ্দেশ্যে তেজী কন্ঠে বলে উঠলো
“প্লিজ কভার দ্যাট হোটেল।দ্যা ক্রিমিনাল ইজ ট্রাইঙ টু ইসক্যাপ”

কথা গুলো বলেই যুবরাজের চোখে চোখ রেখে কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো
“মুভ”

যুবরাজ মুচকি হেসে গভীর দৃষ্টিতে এমন ভাবে রাজ্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছে যেনো পৃথিবীর কোনো বিষয়েই তার খেয়াল নেই।
রাজ্য যুবরাজের এমন বেহুদা অবস্থা দেখে নিজেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে যেতে বলে উঠলো
“শেইমলেস”

*********
“মেয়েটি তোকে নির্লজ্জ্ব খেতাবে ভূষিত করে চলে গিয়েছে।হুঁশে আয় ডুড”

হঠাৎই রায়াফের কন্ঠে হুশ ফিরলো যুবরাজের।রাজ্যের ঘুষি মারার স্থানে হাত বুলিয়ে ফিচেল হেসে যুবরাজ বলে উঠলো

“,বউ তো দেখছি আমার থেকে আরো দুই ধাপ উপরে।আই লাইক ইট”

“মেয়ে কিন্তু পুলিশের স্পেশাল ফোর্স,ভস্ম করে দেবে তোকে”
কথাটি বলেই রেলিং ধরে নিচের রাস্তার দিকে অনুসন্ধানের নজরে তাকালো রায়াফ।

“আমি ভস্ম হতে চাই”সাবলীল স্বীকারোক্তি যুবরাজের।

রায়াফ তার প্রখর দৃষ্টি যুবরাজের দিকে নিবদ্ধ করে বলে উঠলো
“নিজের সর্বনাশ তাহলে ডেকে আনতে চাইছিস?

যুবরাজ কিছুক্ষন মৌন থেকে ফুঁস করে শ্বাস ছেড়ে গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো
“মানুষের সর্বনাশ করে বেড়ালে নিজের সর্বনাশ ও একদিন হবে এটাই ন্যাচারাল।এত নিখুঁত হিসেব কষে কি জীবন চলবে?

রায়াফ বুঝতে পারলো যুবরাজ কঠিন ভাবে কট খেয়েছে এই মেয়ের মনের আঙিনায়।এই পথ থেকে সরে আসতে হলে যেকোনো একজনকে জীবনের দ্যা এন্ড মেনে নিতে হবে।
“কারন যেই জিনিস যুবরাজের মনে ধরেছে সে সেটা আদায় করেই ছাড়বে।
“আর জেনে শুনে একজন ক্রিমিনাল কে কোনো মেয়েই সাদরে গ্রহণ করবে না।

রায়াফের ভাবনার ভাটা পড়লো যুবরাজের ভরাট কন্ঠে।

“চল আমার সুইটি কে হেল্প করি”
বলেই কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো যুবরাজ

রায়াফ অবাক হয়ে জানতে চাইলো কিভাবে?

“সুইটি যাকে খুঁজছে সে আমার শিকার।একজন আদর্শ স্বামীর কর্তব্য কি জানিস?
বউয়ের কাজ সহজ করে দেয়া।
“আ উইল কিল হিম”

কথাগুলো বলেই হো হো শব্দে হেসে উঠলো যুবরাজ।যুবরাজের ভয়ানক সেই হাসি শো শো শব্দে বয়ে চলা বাতাসে বাড়ি খেয়ে ভয়ংকর এক আলোড়ন সৃষ্টি করলো পুরো ছাদ জুড়ে।
যুবরাজের এই হাসির মানে রায়াফ জানে।

নিজের কাঁধের ব্যাগ থেকে ট্যাব বের করে অনেক গুলো ছবির ভেতর থেকে একটি ছবি বের করে তার উপর লাল রঙের ক্রস সাইন আকলো এবং মনে মনে বলে উঠলো
“আজকে তুই শেষ বাস্টার্ড”

———
অন্ধকার কক্ষে ইজি চেয়ারে চোখ বুজে শুয়ে শুয়ে বিভিন্ন ভাবনা ভেবে চলেছেন সাদাফ শাহীর।নবনীতার বড় বড় মায়াবী চোখের পাপড়ি ঝাপটানোর মুহূর্ত তাকে আজো রুমন্থিত করে।মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে নবনীতা সাদাফ শাহীরের হাত ধরে বহু কষ্টে ভেঙে ভেঙে বলে ছিলেন
“আমার ছেলে যেনো কারো ক্ষতি করতে না পারে।ও যেনো মানুষের মতো মানুষ হয়।কথা দাও তুমি আমার ছেলেকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে?যুবরাজ যেনো মায়ের অভাবে আর পাঁচটা ছেলে মেয়ের মতো নষ্ট না হয়”

নবনীতার মৃত্যু পূর্ব ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত সেই করুন আকুতি আজো সাদাফ শাহীরের কানে বাজে।
তিনি দুঃস্বপ্নেও ভাবেন নি তার ছেলে একজন খুনি হবে।
ছেলেকে সঠিক ভাবে মানুষ করতে না পারার ব্যার্থতা শান্তি নিদ্রা যাপন পর্যন্ত করতে দেয়না সাদাফ শাহিরকে।

“ভাইয়া ঘুমাচ্ছ?
সামিনার মৃদু কন্ঠের প্রশ্নে চোখ মেলে তাকালেন সাদাফ শাহীর।
চেয়ারে হেলান দিয়ে রাখা মাথা তুলে হাঁটুতে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন।
এরপর বোনের দিকে করুন দৃষ্টি পেতে প্রশ্ন বান ছুড়ে বলে উঠলেন―
“আমার ছেলে মানুষের জীবন কেড়ে নেয় এটা তুই কবে থেকে জানতিস?

বড় ভাইয়ের মুখে এমন প্রশ্ন শুনে ভয়ে কেঁপে উঠেন সামিনা।যেই সত্য এতো গুলো দিন তিনি চেপে এসেছেন সেটা তার ভাই কিভাবে উন্মোচন করলেন?

★★★★★
বিশালাকার হোটেলটির চারপাশ পুলিশ আর পুলিশের স্পেশাল ফোর্স সোয়াটের দখলে।
[সোয়াট হচ্ছে পুলিশের এমন একটি সংস্থা যারা সমস্ত কঠিন সিচুয়েশন দক্ষ হাতে হ্যান্ডেল করার জন্য উচ্চ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হন।
সোয়াটের সদস্যরা সব সময় ভারী অস্ত্র বহন করেন।এবং এমন সব ক্রিমিনাল তারা এরেস্ট করতে সক্ষম হন যারা সাধারণ পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।গোয়েন্দা গিরি থেকে শুরু করে ক্রিমিনাল কিলিং সমস্ত টাই দক্ষ হাতে সামলান সোয়াটের সদস্য।]

রাজ্য, এনি,সহ তাদের দশ জনের একটি টিম কেউ লিফট ধরে কেউ সিঁড়ি বেয়ে আট তলার উদ্দেশ্যে দৌড়ে চলেছে।হোটেলে অবস্থান রত কাউকেই নীচে নামতে দেয়া হয়নি।এমনকি প্রত্যেকের রুমে চলেছে কঠিন সার্চিং মিশন।
আট তলার নির্দিষ্ট রুমে এসে একটি মেয়েকে অচেতন অবস্থায় ফ্লোরে পরে থাকতে দেখে এনি দৌড়ে মেয়েটির কাছে চলে যায়।
রিভলবার হাতে সকলেই সজাগ দৃষ্টিতে চারপাশে চোখ বুলিয়ে সন্দেহ জনক কিছুই খুঁজে পেলো না।
মেয়েটির পালস চেক করে শক্ত কন্ঠে সহযোগী দের উদ্দেশ্যে এনি বলে উঠল
“ভিকটিমের পালস রেট খুব কম।ইমারজেন্সি হসপিটাল শিফট করার ব্যাবস্থা করুন প্লিজ।
পুলিশের চারজন সহকারী মেয়েটিকে ধরে লিফটে করে দ্রুত পাশেই অবস্থান রত হসপিটালে নিয়ে চলে গেলো।
রাজ্য চারপাশে চোখ বুলিয়ে জানালার সাথে লেগে থাকা ভোঁতা বুলেট টেনে বের করে হাতে নিয়ে চারপাশে আরেকবার চোখ বুলালো।
পুরো রুম চকচকে ক্লিন।কোথাও কোনো কিছু এলোমেলো অবস্থায় নেই।
রাজ্য ভেবেই পাচ্ছে না এই অল্প বয়সী মেয়েটা এখানে কি করছে আর তাকে কেউ খুনই বা করতে চাইবে কেনো?

টানা দুই ঘণ্টার তল্লাশি চালিয়েও কিছুই পাওয়া গেলো না হোটেলটিতে।আর রিশিপশনিস্ট এর কাছ থেকে জানা যায় মেয়েটির নাম রুহিতা চৌধুরী।সে নিজেই এই হোটেলটি দুই দিনের জন্য বুক করেছে।মেয়েটির কন্টাক্ট নম্বর ছাড়া আর কোনো ইনফরমেশন তাদের কাছে নেই।
রাজ্য রিশিপশনিস্ট এর কাছ থেকে নম্বর টি নিয়ে তার টিম মেম্বার নিয়ে চলে গেলো হসপিটাল এর উদ্দেশ্যে।

রাজ্যকে এনি আশ্চর্যের সুরে প্রশ্ন করলো
“তোর অবাক লাগছে না এই টুকু একটা মেয়ে এতো দামি একটি হোটেলে দুই রাতের জন্য রুম বুক করেছে?

“অবাক তো লাগছেই।এখন সব প্রশ্নের উত্তর এই মেয়েটি ই দিতে পারবে।সে কেনো এই রুম বুক করেছে আর এই অজ্ঞাত লোকটি ই বা কে?আর কি জন্য তাকে মারতে চাইছে?
তার আগে মেয়েটির পরিবারের সাথে দেখা করা প্রয়োজন।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here