ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড #পর্ব_৪ #সারিকা_হোসাইন

0
34

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৪
#সারিকা_হোসাইন
*******
চলছে শ্রাবণ মাস।যখন তখন আকাশ কালো মেঘে তলিয়ে ঝুপঝুপিয়ে নেমে আসছে শ্রাবনের ধারা।
আজকের আকাশ টা গত কয়েক দিনের তুলনায় অত্যাধিক কালো।
দিনের আলোতেও মনে হচ্ছে যেনো ঘুটঘুটে কাল সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে।মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় কিছুটা ঝলমলে হলেও সবকিছু কেমন যেনো ভুতুড়ে ঠেকছে।

এরকম বৈরী আবহাওয়ায় একটি নির্জন অন্ধকার কক্ষে একের পর এক মদের বোতল খালি করে চলেছে অজ্ঞাত এক লোক।লোকটির ঢকঢক করে বোতল সাবাড় করা দেখে মনে হচ্ছে সে বহু দিনের তৃষ্ণার্ত।দুনিয়াবী কোনো বিষয়েই যেনো তার কোনো খেয়াল নেই।
মদ পান করাই যেনো তার এই মুহূর্তে মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মদের নেশায় যখন সে চূর হয়ে আছে তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের আগমন হচ্ছে।।
এমন সময় পুরো দুনিয়া কাঁপিয়ে ঝরঝর শব্দে মোটা মোটা বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা প্রবল বেগে আছড়ে পড়লো ধরনীতে।পকেটে থাকা বাটন মোবাইল ফোনটি বের করে লোকটি সময় দেখে নিলো।
সময় সন্ধ্যা সাতটা বেজে পনেরো মিনিট।
লোকটি ঘুম ঘুম আধ খোলা চোখে মাথা উঁচিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি মেললো।
গুড়গুড় শব্দে ঝরে যাওয়া ভারী বর্ষনের দিকে তাকিয়ে লোকটি অস্ফুট স্বরে বিশ্রী ভাষায় বলে উঠলো

“সেই একটা মা*ল ছিলো মেয়েটি।একবার বিছানায় তুলতে পারলেই শরীর মন দুটোই জুড়িয়ে যেতো।শালী কোনো ভাবেই প্রস্তাবে রাজি হলো না।কোনো মতে বিছানা পর্যন্ত নিয়ে ভিডিও করতে পারলেই নেহাল চৌধুরীর থেকে যখন তখন কারি কারি টাকা হাতানো যেতো।
শালী আমার ভালোবাসার অভিনয় ধরে ফেলে হোটেল থেকে চলে যেতে চাইলো।
যেই তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চাইলাম ওমনি কোন মাদার ফা**রস এসে গুলি করে দিলো।মুড টাই নষ্ট করে দিলো।ধ্যাৎ।

লোকটি ধীরে ধীরে কথা গুলো বলতে বলতে আবার ঘুমে তলিয়ে গেলো।
কতক্ষন সে এভাবে ঘুমিয়ে রইলো সে নিজেও জানেনা।
কিছুক্ষণ অতিবাহিত হতেই খুব কাছেই বিকট শব্দে বজ্রপাত হলো।
বজ্রপাতের শব্দে আর চোখ ঝলসানো আলোয় লোকটির ঘুম ছুটে গেলো।
কোনো মতে চোখ মেলে উঠে বসে বাইরের দিকে নজর দিলো।
আধ খোলা দরজার কাছে ছায়া মূর্তির মতো কিছু একটা দেখে লোকটি কাঠের পাতানো চৌকি থেকে ঢুলু ঢুলু শরীরে উঠে দাঁড়ালো।
এরপর কোমরে গুঁজে রাখা পিস্তল বের করে বলে উঠলো

“ক ক কে ওখানে?সামনে আয় সালা।দূরে দাঁড়িয়ে লুকা চুপি খেলা আমার পছন্দ না।
কথা গুলো বলতে বলতে কিছুর সাথে উস্টা খেয়ে মেঝেতে এলোমেলো হয়ে লুটিয়ে পড়লো।এরপর চৌকির পা ধরে কোনো মতে উঠে দাঁড়িয়ে নেশাক্ত চোখে আবার দরজার দিকে দৃষ্টি দিলো।
সাথে সাথেই ঘর আলোকিত হয়ে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো।সেই আলোয় বিশালাকার বলিষ্ঠ এক ছায়া মানব তার দৃষ্টি গত হলো।
এবার লোকটি ভয় পেলো।
এক হাতে পিস্তল অন্য হাতে চাকু ধরে বলে উঠলো

“সামনে এসে বাহাদুরি দেখা সালা।সাহস থাকলে চেহারা দেখা।

বৃষ্টি আর বাতাসের দাপটে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা যুবকের লম্বা কালো রঙের পাতলা ট্রেঞ্চ কোটটি এলোপাতাড়ি উড়াউড়ি করছে।যা দেখে মনে হচ্ছে কোনো অশরীরী বৃষ্টি বাতাসে জল কেলি করছে।

হঠাৎই হো হো শব্দে হেসে উঠলো যুবক।তার ভয়ংকর হাসি এই ঘন বর্ষনের রাতকে আরো ভয়াবহ করে তুললো নিমিষে।
মাতাল লোকটি এবার অনেকটাই ভয় পেয়ে ঘেমে উঠলো।এমন মেঘলা বৃষ্টি বাদল ঠান্ডা পরিবেশে তার শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেলো।
লোকটি গায়ের শার্ট প্যান্টের পকেট হাতড়ে গ্যাস লাইট খোঁজার চেষ্টা করলো।
কিন্তু সে গ্যাস লাইটার টি কোথাও খুঁজে পেলো না।

দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা যুবক পিছনে দুই হাত মুড়ে ধীরে ধীরে লোকটির সামনে এসে দাড়ালো।এরপর গমগমে হুংকার ছেড়ে বলে উঠলো

“আমাকে গুলি করে মারতে চেয়েছিলি কেনো?

লোকটি যেনো এবার ধরাশায়ী হয়ে গেলো।মুখের জবান হারিয়ে গেলো।ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে পিপাসায় অস্থির হয়ে উঠলো।

যুবক যতো কাছে এগুয় লোকটি ততোই পিছিয়ে যায়।এরকম পিছাতে পিছাতে আধ ভাঙা কাঠের চৌকির সাথে ধাক্কা খেয়ে বিছানায় পরে যায়।
দ্বিতীয় বার বিদ্যুৎ চমকাতেই লোকটির কাছে যম তুল্য মানুষটির চেহারা পরিস্কার হয়ে যায়।

সে বিছানায় গুটি শুটি মেরে বলে উঠে
“আ আ আমাকে মাফ করে দিন সাহেব।আমি ইচ্ছে করে আপনাকে খুন করতে চাইনি।আমাকে টাকা দিয়ে বলা হয়েছে আপনাকে খুন করতে।ব্যাক্তিগত ভাবে আপনার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই যুবরাজ সাহেব”

লোকটির এমন করুন আকুতি দেখে যুবরাজ হা হা শব্দ তুলে হেসে উঠলো।চারপাশের বজ্রপাতের বিকট শব্দ আর যুবরাজের এমন ভয়ঙ্কর হাসি সব মিলিয়ে দম বন্ধকর পরিস্থিতি মনে হলো লোকটির কাছে।

যুবরাজ বিছানার উপর পা তুলে লোকটির হাতে সজোড়ে পা চেপে জিজ্ঞেস করলো

“হোটেলে মেয়েটিকে কেনো মারতে চেয়ে ছিলি?এই টুকুন মেয়ের সাথে তোর কিসের শত্রুতা?সব সত্যি না বললে এমন শাস্তি দিয়ে মারবো কুকুর ,শেয়ালও আতঙ্কে তোর লাশে মুখ দিবে না।

বলেই যুবরাজ হাতে থাকা চাইনিজ কুড়াল উঁচিয়ে লোকটির চোখ বরাবর কোপ উঠলো।

ভয়ে লোকটি চিৎকার করে বলে উঠলো
ব ব বলছি।সব সত্যি বলছি।আমাকে এভাবে মারবেন না সাহেব।আমি সব সত্যি বলে দেবো আপনাকে।
তার আগে বলুন সব খুলে বললে আমাকে যেতে দিবেন?

যুবরাজ তার মাথার এলোমেলো চুলগুলো একটা ইলাস্টিকের সহিত বাঁধতে বাঁধতে বলে উঠলো

“তোর গল্প যদি আমার মন ছুঁয়ে যায় তাহলে পুরস্কার সমেত তোকে ছেড়ে দেবো।কিন্তু যদি একটাও মিথ্যে বলেছিস তাহলে…….
বলেই লোকটির চুলের ঝুটি টেনে ধরে বলে উঠলো

মগজ সহ চুল তুলে নেবো।

এদিকে চুলের ব্যাথায় লোকটি কাতরাতে কাতরাতে বলে উঠলো
“কিচ্ছু লুকাবো না সাহেব।সব বলবো।মায়ের দুধের কসম।

যুবরাজ পাশে পড়ে থাকা ভাঙা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে উঠলো
“গল্প স্টার্ট কর।এমন ভাবে রসিয়ে রসিয়ে বলবি যাতে আমার মজা লাগে।ঠিকাছে?

লোকটি বিছানা থেকে উঠে যুবরাজের পায়ের কাছে গিয়ে বসে পড়ে।এরপর চোখ মুখের ঘাম মুছে বলতে শুরু করে―

“মেয়েটি অনেক বড় কোটি পতির মেয়ে।মেয়েটি তার কলেজের এক ছেলেকে পছন্দ করে।এটা আমি জেনে যাই।সেই ছেলের নাম করে আমি মেয়েটির ব্যাগে প্রতিদিন চিঠি লিখে মেয়েটিকে পটিয়েছি।ছেলেটির নাম করে ওকে আমি চিঠিতে বলেছি আমাকে পেতে হলে ওই হোটেলে দুই রাত কাটাতে হবে আমার সঙ্গে।না হলে আমি ওর সাথে রিলেশনে যাবো না।মেয়েটি ছেলেটির প্রেমে এতোই অন্ধ হয়ে গেছিলো যে,সে এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।
মেয়েটি যখন হোটেলে উঠে তখন আমি মেয়েটির সামনে যাই এবং মুখ ঢেকে রাখি।
মেয়েটিকে আমি শারীরিক সম্পর্কের জন্য জোড় করতেই সে আমার চেহারা দেখে ফেলে এবং সাথে সাথেই আমাকে চড় মেরে দেয়।চড় খেয়ে আমার মাথায় খুন চেপে যায় আর আমি তার গলা টিপে ধরি।কিন্তু বিশ্বাস করুন সাহেব রুহিতা চৌধুরী কে খুন করার আমার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না।আমি শুধু ওকে ভোগ করে ভিডিও বানাতে চেয়ে ছিলাম।

আমার ইচ্ছে ছিলো মেয়েটির বাবা মানে নেহাল চৌধুরী খুবই সম্মানীয় ব্যাক্তি।একবার মেয়েটির স্ক্যান্ডাল তার সামনে তুলে ধরতে পারলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে পারবো।কিন্তু তার আগেই কে যেনো আমাকে গুলি করে দেয়।

কথা গুলো বলে লোকটি যুবরাজের মুখভাব বুঝার জন্য উপরে চোখ তুলে তাকায়।

যুবরাজ লাইটার দিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফুঁক মেরে ধোয়া উড়িয়ে সেই ধোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে

“তোকে যে গুলি করেছে সে আমার জান।কিন্তু জানের আলাপ পরে।আগে বল রুহিতা চৌধুরী যেই ছেলেকে পছন্দ করতো সেই ছেলে কোথায়?কারন ছেলেটির সাথে তার প্রতিদিন দেখা হলে মেয়েটি তোর নোংরা ফাঁদে এভাবে পা দেবার কথা না।

লোকটি ডানে বামে তাকিয়ে ভীত কন্ঠে যুবরাজের পা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো
“আমার চিঠি রাখার ব্যাপারটা ছেলেটা দেখে ফেলেছিলো।শুধু তাই নয় আমাকে ঘুষি মেরে শাসিয়েছে সালা দুই দিনের পোলাপান।তাই চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে ড্রেনে ফেলে দিয়েছি।

এবার যুবরাজের চোয়াল শক্ত হয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো।
দ্রুত সিগারেট ফুকে জলন্ত ফিল্টার লোকটির ঠোঁটে চেপে ধরলো।এরপর গর্জে উঠে বলে উঠলো

“তোর গল্প আমার পছন্দ হয়নি।তুই আমাকে খুশি করতে ব্যার্থ হয়েছিস।আর যেই ব্যাক্তি যুবরাজ শাহীর কে খুশি করতে ব্যার্থ হয় সে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার হারায়।
শুধু তাই নয়,
তুই আমাকে অনেক ভাবে অখুশি করেছিস।

“প্রথমত আমাকে গুলি করে মারতে চেয়েছিস, এরপর একটা নিরপরাধ ছেলেকে মেরেই ফেলেছিস সাথে একটা মেয়েকে ব্যাবহার করে টাকা কামাতে চেয়েছিস।আর সবচেয়ে অখুশি যেটা করেছিস সেটা হলো আমার জান তোকে গুলি করে ব্যার্থ হয়ে মন খারাপ করেছে।
তার মন খারাপ দেখে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে।তুই বিশাল মাপের অপরাধী।তুই এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার হারিয়েছিস তোতলা মামুন।

তোতলা মামুন যুবরাজের পা ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বলে উঠলো
“শেষ বারের মতোন ক্ষমা করে দিন স্যার।আমি স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে গিয়ে ধরা দেবো।আমার সকল খারাপ কাজের দোষ স্বীকার করে আত্ম সমর্পন করবো।দয়া করে আমাকে মারবেন না।আমি ভুল করেছি।আমাকে বাঁচতে দিন।

যুবরাজ লোকটির চোখ বরাবর চাইনিজ কুড়াল দিয়ে এক কোপ বসিয়ে বলে উঠে
“তোকে বাঁচিয়ে রাখার মোড ই নষ্ট হয়ে গেছে আমার।তোকে এমন ভাবে মারবো যে তোর লাশের অস্তিত্ব পর্যন্ত কেউ খুঁজে পাবেনা।

মুহূর্তেই ছোট খুপরি ঘরটি চিৎকার আর আর্তনাদে ভরে গেলো।সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চললো বৃষ্টি আর মেঘের গর্জন।নির্জন কক্ষের ভারী গোঙানি মিশ্রিত আর্তনাদ কারো কানেই পৌঁছালো না এই গভীর রাতে।
মিনিট বিশেক পরে যুবরাজ ছাতা মাথায় ঘর থেকে বেরিয়ে তার সহযোগী দের বলে উঠলো
“আমার কাজ শেষ ,আবর্জনা এমন ভাবে সাফ করবে যেনো কিছুই হয়নি এখানে।”

যুবরাজ গাড়ি স্টার্ট দিতেই বিকট শব্দে আগুন জ্বলে উঠলো ছোট কাঠের আর চাটাইয়ের তৈরি আধ ভাঙা পুরাতন বাড়িটি।
যুবরাজ শ্লেষত্বক হেসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলে উঠলো
“সেনরিটা”

________
বাইরের ঝুপ ঝুপ বৃষ্টির ঠান্ডা বাতাসে গায়ে কাঁথা মুড়িয়ে গভীর ঘুমে পাড়ি জমিয়েছে রাজ্য।হঠাৎই মৃদু পিঁপড়ের কামড়ের মতো ব্যাথায় আউচ্ শব্দ করে গুঙ্গিয়ে উঠলো সে।কিন্তু চোখ মেলার সাধ্য হলো না।চোখের পাতাদ্বয় ক্রমশ ভারী হয়ে সেটে রইলো।শুধু গভীর ঘুমে তলানির আগে মনে হলো
কোনো ঠান্ডা শরীর তাকে জাপ্টে ধরে আছে।যার ঠান্ডা বরফ হাত দুটো রাজ্যের মেদহীন পেটে বিচরণ করছে।শরীর অজানা শিহরনে শিহরিত হচ্ছে।আবেশে কোল বালিশ জড়িয়ে ধরতেই মনে হলো এখানে তুলোর তৈরি বালিশের পরিবর্তে শক্তপোক্ত দৈত্য শুয়ে আছে।যা তাকে উষ্ণ স্পর্শে বিরক্ত করে চলছে বারবার।
সুন্দর এক স্বপ্নে হারিয়ে শুয়ে থাকা দৈত্য কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো রাজ্য।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here