ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড #পর্ব_১৩ #সারিকা_হোসাইন

0
28

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_১৩
#সারিকা_হোসাইন

সারাদিনের মেঘ মেদুর আর বৃস্টির অবসানের পর ধরনীতে কুচকুচে কালো আধার ঘনিয়ে এসেছে সবে।আজ আকাশে রুপালি চাঁদটা উঠেনি।যুবরাজের জন মানব শূন্য ঘরটি রাজ্যের কাছে ডুম ঘরের মতো ঠেকছে।কোনো মানুষ নেই শুধু একটি ছোট কুকুর আর ধবধবে সাদা রঙের মোটা একটা পার্শিয়ান বিড়াল।কুকুরটি যতবার রাজ্যকে দেখেছে ততবার দাঁত খেচিয়ে ঘেউ ঘেউ করে উঠেছে।সারাদিন বহু কষ্টে একা একা এই বিশাল ফ্ল্যাটে দিন পার করেছে রাজ্য।এবার আর একমুহূর্ত দেরি করবে না সে।

কিন্তু একটা জিনিস রাজ্যকে খুব ভাবাচ্ছে।সকালে ডাইনিং টেবিলে যুবরাজকে তার কাছে প্রাণোচ্ছল আর মিশুক প্রকৃতির একটা ছেলে মনে হয়েছে।কিন্তু হঠাৎই ছেলেটা রুমে গিয়ে দরজা আটকেছে সারাদিনের জন্য একবারো বের হয়নি।এটা রাজ্যকে খুব কষ্ট দিয়েছে।সারাটা দিন সে যুবরাজের বেড রুমে শুয়ে বসে দিন কাটিয়েছে।শুয়ে বসে বললে ভুল হবে।সারা রুমে কূট কূট করে এটা সেটা পর্যবেক্ষণ করেছে।

মনে মনে নিজেই নিজেকে শান্তনা দিলো রাজ্য―
“হয়তো মন টন খারাপ হয়েছে।মা বাবাকে মিস করছি হয়তো।”
হঠাৎই নিজের বাড়ির কথা মনে পড়তে ঝট করে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো রাজ্য।সে গত রাতে থেকে উধাও।

“এতক্ষনে নিশ্চয়ই বাবা মা আমার রুমে হাজার বার আমাকে খুঁজেছে।আর এনি?এনি যদি বাড়িতে গিয়ে আমায় খুঁজে তখন?তখন তো বাবা আগুনে কেরোসিন ঢালার মতো করে জ্বলে উঠবে।

নিজের বাবার রাগী রাগী মুখটা মনে পড়তেই নিজের পোশাক টেনে টেনে ঠিক করে চুল গুলো ভালো করে বেঁধে যুবরাজের কক্ষের দিকে ধীরপায়ে হেটে চললো রাজ্য।

দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা।রাজ্য দরজার সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে দরজায় মৃদু নক করলো

কীয়তখন বাদে ভেতর থেকে উত্তর এলো
“এসো”

দরজার নব ঘুরিয়ে রাজ্য যুবরাজের কক্ষে প্রবেশ করতেই সিগারেট এর উটকো গন্ধে নিঃশাস বন্ধ হয়ে এলো।কোনো মতে নিজের নাক চেপে ধরে গন্ধ রোধ করলো রাজ্য।

“এভাবে আলো নিভিয়ে বসে বসে সিগারেট ফুকছেন কেনো?

“আমার ঘর আমার ইচ্ছে”
গমগমে কন্ঠে কথাটি বলে যুবরাজ আবার নিকোটিন এর ধোয়া উড়াতে ব্যাস্ত হলো।
কক্ষটি এতটাই অন্ধকার যে যুবরাজের সিগারেটের আগুনের লাল রঙা স্ফুলিঙ্গ ছাড়া আর কিচ্ছুটি দেখা যাচ্ছে না।

দ্রুত বিড়ি ফুকে এস ট্রে তে অর্ধ খাওয়া সিগারেট ঠেসে ধরে উঠে দাঁড়ালো যুবরাজ।এরপর পুরো রুম আলোকিত করে রাজ্যের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন বান ছুঁড়লো
“এখানে এসেছো কেনো?

যুবরাজের এমন প্রশ্নে রাজ্য কিছুটা লজ্জিত হলো।কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলে উঠলো
“আ আসলে আমি চলে যাবো এখন।তাই মনে হলো অপনাকে বলে যাওয়া উচিত।কিন্তু মনে হচ্ছে আপনি বিরক্ত হয়েছেন।অসময়ে বিরক্ত করার জন্য আমি দুঃখিত।

কথাটি বলে রাজ্য পিছন ফিরে প্রস্থান করার জন্য পা বাড়ালো।পেছন থেকে যুবরাজ বজ্র কন্ঠে ডেকে উঠলো
“রাজ্য তুমি কি জন্য গত রাতে আমার বাসায় এসেছিলে?

যুবরাজের এমন ভয়ানক কন্ঠে থরথর করে কেঁপে উঠলো রাজ্য।চোখের কোনে সামান্য অভিমানের জল ও জমলো বটে।এই যুবরাজ আর সকালের যুবরাজ দুজন যেনো আলাদা ব্যাক্তি।এই যুবরাজকে খুব খুব অপরিচিত ভয়ংকর ঠেকছে রাজ্যের কাছে।

“কি হলো প্রশ্ন শুনতে পাওনি?
দ্বিতীয় বার হুংকার ছাড়লো যুবরাজ।

রাজ্য নিজের চোখের কোনে জমে থাকা জল আঙ্গুল দিয়ে মুছে শুকিয়ে যাওয়া রুক্ষ কন্ঠ ফাঁকা ঢোক গিলে ভেজানোর চেষ্টা করলো।

“আমি ইচ্ছে করে এখানে আসিনি।বেনজির আশফির বাড়ি ভেবে ঢুকে পড়েছি।আম সরি।
বহু কষ্টে কথাটি বলে রাজ্য আর এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়ালো না। যুবরাজের সামনে থেকে দৌড়ে এসে মেইন গেটের দরজা খুলতে উড্ডয়ন হলো।

হঠাৎই পেছন থেকে যুবরাজ বলে উঠলো
“এখান দিয়ে যেতে পারবে না তুমি।
কথাটা বলেই রাজ্যের ব্যান্ডেজ করা হাতে চেপে ধরে টেনে হিচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে দাঁড় করালো রাজ্যকে।যুবরাজের হিংস্রতা দেখে মুখের ভাষা যেনো হারিয়ে ফেলছে রাজ্য।

কক্ষটির বিশালাকার দরজা খুলে যুবরাজ আঙ্গুলি নির্দেশ করলো

“এখান থেকে ঝুলে ঝুলে নামবে।আর যদি নামতে গিয়ে পড়ে যাও তাহলে একদম ড্রেনে চলে যাবে।কোনো ঝামেলা হবে না।

কথাটি বলেই যুবরাজ হনহন করে ধড়াস করে রুমের দরজা লাগিয়ে চলে গেলো।
দরজার দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আহত কন্ঠে রাজ্য বললো
“আপনি খুব খারাপ”!

************
জন মানব শূন্য একটি বারে মদ খেয়ে নেশায় চূড় হয়ে টেবিলে উপুড় হয়ে আবোল তাবোল বকছে মোকাদ্দেস নামের এক লোক।বয়স তার পঞ্চাশের উর্ধে।তিন কুলে কেউ না থাকায় মোকাদ্দেস এর বাড়ী ফেরার কোনো তাড়া নেই।
হঠাৎই অদ্ভুত এক শব্দ মোকাদ্দেস এর কর্ণকুহরে প্রবেশ করলো।নেশায় মশগুল মোকাদ্দেস সেটা আমলে না নিয়ে চোখ বুঝে ওভাবেই পড়ে রইলো।
শব্দটির মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো।এবার বেশ বিরক্ত হলো মোকাদ্দেস।কোনো মতে মাথা তুলে শব্দের উৎসের দিকে নজর দিলো সে।মোকাদ্দেস এতোটাই নেশা করেছে যে এক হাত দূরত্বের জিনিস সে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে না।তবুও দুই হাতে চোখ কচলে বোঝার চেষ্টা করলো
“কে শব্দ করছে”

সামনে দাঁড়ানো মৃত্যদূত তুল্য মানুষটিকে দেখে মোকাদ্দেসের সকল নেশা সেকেন্ডের ব্যাবধানে কেটে গেলো।
সামনে দাঁড়ানো লম্বা চওড়া শক্ত পোক্ত মানুষটির হাতে বিশালাকার এক হ্যামার।মেঝের সাথে ঘষে ঘষে টেনে নিয়ে আসার কারনে সেই হ্যামার থেকে এমন বিকট শব্দ আসছে।টেবিলে ভর দিয়ে বিস্ফারিত চোখে দাঁড়িয়ে গেলো মোকাদ্দেস।

সামনে দাঁড়ানো আগন্তুক কে দেখে মোকাদ্দেস এর হৃদপিণ্ড বুকের খাঁচা ভেদ করে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।পানি পিপাসায় বুকের ছাতি পর্যন্ত খা খা করে উঠলো।হাতের কাছে উল্টে পড়ে থাকা মদের খালি বোতল টেবিলে বাড়ি দিতেই ঝনঝন শব্দে চারপাশ আলোড়িত হলো।সেই শব্দে মোকাদ্দেস নিজেই ভয়ে কেঁপে উঠলো।

রাতের সকল নিস্তবতা ভেদ করে আগন্তুক বিদঘুটে শব্দে হেসে উঠলো।এই হাসির মানে মোকাদ্দেস জানে।কিন্তু কিছুতেই দুদিনের ছোকরার সামনে দুর্বল হবে না মোকাদ্দেস।দরকার পড়লে নিজে মরার আগে এই মদের ভাঙা বোতলের টুকরো এই জানোয়ারের বুকে গেঁথে দিয়ে তবেই সে মরবে।

“মনে মনে আমাকে কিভাবে মারবি সেটা ভেবে ফেলেছিস তবে নাকি,?

গমগমে ভয়ঙ্কর কন্ঠে প্রশ্ন খানা করে সিংহের মতো মোকাদ্দেস এর দিকে তাকিয়ে রইলো আগন্তুক।সেই দৃষ্টি দেখে ভয়ে অন্তরাত্মা লাফিয়ে উঠলো মোকাদ্দেস এর।তবুও উপরে মোকাদ্দেস শক্ত রইলো।

আগন্তুক হাতুড়ি মেঝেতে সামান্য ঠুক ঠুক করতে করতে মোকাদ্দেস এর দিকে দৃষ্টি দিলো

“এই হাতুড়ি দিয়ে তোর মাথায় একটা বাড়ি দিলে কি হবে জানিস?তোর মগজ গলে ছিটকে ঢাকা শহর পার হয়ে অন্য বিভাগে চলে যাবে।কিন্তু তোর মগজ আমি এভাবে নষ্ট হতে দেবো না।তোর মগজ আমি নিজে ভেজে খাবো।

আগন্তুক এর মুখে এমন বীভৎস কথা শুনে পেট গুলিয়ে উঠলো মোকাদ্দেস এর।মুহূর্তেই বমির উদ্রেক হলো।আটকাতে না পেরে সেখানেই বমি করে দিলো মোকাদ্দেস।

এটা দেখে আগন্তুক হো হো শব্দ তুলে হেসে উঠলো
“তোর কলিজা,চোখ সব আমি তুলে নেবো মোকাদ্দেস।জীবনে অনেক ভুগিয়েছিস আমাকে।এবার আমাকে একটু শান্তি দে তুইও শান্তিতে থাক”

আগন্তুক তার লম্বা থাবা যুক্ত হাত দিয়ে মোকাদ্দেস এর গলা চিপে ধরতেই মোকাদ্দেস তার হাতে থাকা কাঁচের ভাঙা বোতলের টুকরো দিয়ে আগন্তুক এর শরীরে আঘাত করলো।
সহসাই ঝরঝর করে রক্ত ঝড়লো তার শরীর থেকে।সেই রক্তের দিকে তাকিয়ে শ্লেষ হাসলো আগন্তুক।

“তোর প্রতি আমি অনেক খুশি হলাম মোকাদ্দেস।তুই মরার আগেও বাঁচার চেষ্টা করেছিস ।এমন কাউকে খুন করার মজাই আলাদা।যারা মুহূর্তেই ধরাশায়ী হয়ে যায় তাদের আমার পছন্দ না।এই যে তুই আমাকে আঘাত করে চরম পর্যায়ের কন্ট্রোল লেস রাগটা তুলে দিলি!এখন তোকে বীভৎস ভাবে মারতে আমার কোনো অনোসূচনা হবে না।

এবার মোকাদ্দেস তার শরীরের সকল শক্তি খুইয়ে ফেললো।হাটু মুড়ে দুই হাত জোড় করে কেঁদে উঠলো মোকাদ্দেস

“আমাকে মারবেন না সাহেব।আমাকে ছেড়ে দিন।আমি ভুল করে ফেলেছি।আমি সারা জীবন আপনার গোলাম হয়ে থাকবো।শেষ বারের মতন আমায় ক্ষমা করুন।
মোকাদ্দেস এর কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হলো।কিন্তু সেই কান্না হাওয়ায় মিলিয়ে আবার পরিবেশ নিস্তব্ধ হলো।

“তোকে না মারলে আমি ঘুমাতে পারবো না রে মোকাদ্দেস।খুনের নেশা বড্ড খারাপ।একেক জনের একেক রকম নেশা থাকে জানিস তো নাকি?আমার নেশা হচ্ছে খুনের নেশা।তুই মরে যা মোকাদ্দেস।না হলে আমি নিজেই মরে যাবো।

আগন্তুক তার হাতের ভারী হ্যামার দিয়ে মোকাদ্দেস এর চিবুক বরাবর আঘাত করতেই গগনবিদারী এক চিৎকার দিয়ে উঠলো মোকাদ্দেস।
কিন্তু কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো আগন্তুক।তার সারা শরীর মোকাদ্দেস এর রক্তে রঞ্জিত।এটাই তো সে চেয়েছিলো।রক্তের স্বাদের চাইতে বড় স্বাদ আর কি আছে এই নশ্বর ধরনীতে?

মোকাদ্দেস এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে আঘাত করার সাথে সাথেই।ওতো ভারী বস্তুর আঘাত মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ কিভাবে সহ্য করবে?

মোকাদ্দেস এর চেহারা পুরোটাই থেতলে গিয়েছে।চেহারা দেখে কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না এই লোকের সঠিক পরিচয় কি?
এমন বীভৎস চেহারা যে কেউ দেখলে ভয়ে জ্ঞান হারাবে।
কিন্তু আগন্তুক খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে এই চেহারা আর তৃপ্তির হাসি হেসে যাচ্ছে সমানে।

এক হাতে হ্যামার অন্য হাতে মোকাদ্দেস এর পা টেনে টেনে আগন্তুক তার গাড়ির দিকে অগ্রসর হলো

“এবার লাশটির সকল অর্গান গুলো খুলে নিলেই কাজ শেষ।”

________
চারিদিকে মিষ্টি মধুর ফজরের আজান হচ্ছে।একটু পরেই রাতের কালিমা দূর হয়ে ভোরের আলো ফুটবে।সারা রাত দুই চোখের পাতা এক করেনি রাজ্য।যুবরাজের এমন রুক্ষ বিহেভ কোনো ভাবেই মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না সে।

“কিছু তো একটা আছে তবে এই কিছুটা কি?সেটা আমাকে জানতেই হবে!
ঝটপট বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেস হয়ে ওযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো রাজ্য।

নামাজ শেষ করে ল্যাপটপে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ সারতে সারতে সাত টার উপরে বেজে গেলো।ঘড়িতে সময় দেখে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলো রাজ্য।
গোসল সেরে নিজের ইউনিফর্ম পরে ড্রয়িং রুমে আসতেই রেজোয়ান চৌধুরী কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো
“আজকাল কাজের খুব চাপ মনে হচ্ছে?রাতে দিনে মিলিয়েও বাসায় থাকার ফুসরত পাচ্ছ না?

রাজ্য জানে তার বাবার এমন আচরণের মানে কি?রাতে ফিরে শেরহামের মেসেজ দেখেই সে সব কিছু বুঝে গিয়েছে।ছেলেটা একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছে বলে মনে হচ্ছে রাজ্যের কাছে।

রেজোয়ান চৌধুরীর কথাকে পাত্তা না দিয়ে একটা চেয়ার টেনে খাবার টেবিলে বসে পড়লো রাজ্য।

“মা দ্রুত খাবার দাও অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে!

“এদিকে আমি যে একটা প্রশ্ন করেছি সেটার উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করছো না নাকি?
চড়া মেজাজ দেখিয়ে কথাটি বলে রক্ত চক্ষু নিয়ে রাজ্যের পানে তাকিয়ে রইলেন রেজোয়ান চৌধুরী।

খাওয়া বন্ধ করে প্লেটে পরোটা টা ছুড়ে ফেলে রাজ্য কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো
“চাকরি টা ছেড়ে দেই বাবা কি বলো?আজ নতুন আমাকে বাড়ি থেকে হুটহাট বেরিয়ে যেতে দেখেছো?সারা দিন রাত এতো কাজের প্রেসারে থাকি তার মধ্যে বাসায় এলে একের পর এক তোমার হাজার খানেক প্রশ্ন।এগুলো আর জাস্ট নিতে পারছি না আমি।

প্লেটে পরোটা রেখেই হাত ঝাড়া দিয়ে শব্দ করে চেয়ার টেনে উঠে গেলো রাজ্য।

তনুজা বুকের দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে ঝুটা প্লেট টেবিল থেকে সরাতে সরাতে বলে উঠলেন
“তুমি দিনে দিনে এমন রুক্ষ হয়ে যাচ্ছ কিভাবে রেহানের বাবা?

রেহান নাম শুনে বুকের ভেতর ধক করে উঠলো রেজোয়ান চৌধুরীর ।রক্ত জমা চোখ দুটো জলে ছলছল করে উঠলো।কুঁচকে যাওয়া বৃদ্ধ চোখের সামনে ভেসে উঠলো আটাশ বছর বয়সী ধবধবে ফর্সা,লম্বা চওড়া সুদর্শন হাসি মাখানো ছেলের চেহারা খানা।
ছেলেকে সমস্ত স্বাধীনতা দিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ পাঠিয়েছিলেন তিনি।রেজোয়ান চৌধুরী চেয়েছিলেন ছেলে পুলিশের বড় অফিসার হবে।কিন্তু রেহানের এক জেদ সে ডক্টর হবে।ছেলের জেদ মেনে নিয়ে ছেলেকে বাইরে পাঠিয়ে দিলেন।
বিদেশে ভালো মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়ে রেহান বড় ডক্টর ঠিকই হলো কিন্তু দেশে আর ফিরে এলো না।লাশ টার হদিস পর্যন্ত পাওয়া গেলো না আজ পর্যন্ত।কোথা থেকে কখন কি হয়ে গেলো বৃদ্ধ বাবা মা কিছুই আন্দাজ করতে পারলেন না।
রেজোয়ান চৌধুরী আজো ভেবে পান না তার সহজ সরল হাসি খুশি ছেলেটাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার কি কারন?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here