রং #(Wrong- ভুল) #পর্বঃ২ #লেখনিতেঃতন্নী_তনু

0
16

#রং
#(Wrong- ভুল)
#পর্বঃ২
#লেখনিতেঃতন্নী_তনু

“কলিং রাফি”।

আমি ফোন ধরলাম না। কয়েকবার ফোন বাজলো। রাত দশটায় মেসেজ এলো। মেসেজ ওপেন করে আমি ঘেমে উঠলাম।
মেসেজ ওপেন করলাম। সেখানে লেখা ছিলো,

— প্লিজ বেলকুনিতে আসো। আমি তোমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি।

আমি বেলকুনিতে উঁকি দিলাম। ও সত‍্যিই এসেছে।আমি দরদর করে ঘামছি।কারণ বাবা বাসার নিচে গেছে পাঁচ মিনিট আগে।রাফির এই বাসার নিচে আসা নতুন কিছু নয়।এর আগে অনেক রাতেই আমি আর রাফি ফোনে কথা বলেছি। সে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থেকেছে আর আমি বেলকুনিতে।কিন্তু সেদিনের রাফির পরিচয় ছিলো শুধু একজন পুরুষ।তাকে কেউ চিনতো না।তবে আজ রাফির অন‍্যে একটি পরিচয় আছে।ও অনিমার হাজব‍্যন্ড। আমার বাবা মা তাকে এই পরিচয়েই চেনেন।সুতরাং এতো রাতে আমার বাসার নিচে আমার বান্ধবীর বরকে দেখে অবশ‍্যেই বাবা সহজ ভাবে নিবেন না। মাথা কাজ করছিলো না। থম মেরে কিছুক্ষণ বসে ছিলাম। অজানা আতঙ্কে আমি ঘেমে যাচ্ছিলাম বারবার ।যে মানুষটা কয়েকটা দিন আগে লুকিয়ে বিয়ে করলো।আমাকে মসলার মতো পিষে পিষে এখন এসেছে আমার বাসার নিচে ঢং করতে। ঢং এরও তো লিমিট আছে। যন্ত্রণায় যন্ত্রণায় জর্জরিত সর্বাঙ্গ আমার। তাকে সামনে থেকে দেখার মতো অসহনীয় যন্ত্রণা অবশ‍্যেই দুটো হবে না।তার সামনে গিয়ে আমি কি বলবো।কোনো ভাষা নেই আমার। ঐদিকে ফোনের উপর ফোন বেজেই চলেছে।আমার উপর দিয়ে যে ঝড় তুফান গিয়েছে যার জন‍্য। তার সাথে ফোনে দু’টো কথা বলার মতো শক্তি আমার নেই। যারা এই পরিস্থিতিতে পরেছেন তারাই বুঝবেন। যে মানুষটা প্রতারণা করে সেই মানুষের স্বর আর তার মুখোমুখি হওয়া কতো বেদনার।অনেক ভেবে চিন্তে কাঁপা কাঁপা হাতে রিপ্লাই করলাম,
— আমি বাসায় নেই। অন‍্যদিন দেখা করি?

— রাগ করেছো সোনা? প্লিজ একটুখানি দেখেই চলে যাবো। তোমাকে না দেখলে আমার ঘুম হয় না।

আমি মেসেজ পড়ে শিহরিত।নাটকবাজ কোথাকার। কথায় মনে হচ্ছে কিচ্ছু হয়নি। সব আগের মতোই আছে। তবে যে পোড়া পুড়েছি। তাতে আমার ভিতরে ঘা ধরে গেছে। এ ঘায়ের জ্বালা কোনো ছলছুতো, মিষ্টি কথাতে মিটবে না। আমি শুধু আজকে বাঁচার জন‍্যে তালমিলিয়ে রিপ্লাই দিলাম।

–তুমি তো বলেই গেছো নেটওয়ার্ক প্রবলেম হতে পারে। রাগ করবো কেনো? তুমি নেই বলেই আমি আন্টির বাসায় এসেছি।এখন চলে যাও। অন‍্য দিন দেখা করবো।

ও রিপ্লাই দিলো।
–কাল অবশ‍্যেই দেখা করবে। আমার যেনো আবার আসতে না হয় এখানে।

আমি সেদিন চিন্তায় সারারাত ঘুমাতে পারলাম না। কাল কি হবে? কাল যদি দেখা না করি তাহলে যদি ও আবার এখানে আসে? আর যদি বাবা দেখে ফেলে? তিল থেকে তাল হবে মানসম্মান যাবে। সবাই হয়তো আঙ্গুল তুলবে আমার দিকে।নিজের মনের সাথে বোঝাপড়া করলাম।আচ্ছা সব বাদ দিয়ে যদি দেখা করি তাহলে কি হবে। সব সত‍্যি বলবো? সত‍্যি বললে কি হবে?
সত‍্যি বলবো নাকি ও কি কি বলে শুনবো? ঐ বা কেনো সব স্বাভাবিক দেখাতে চাইছে? কি চায় ও?এসব চিন্তা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সারাটা রাত নির্ঘুমে কেটে গেলো। যতোটুকু সুস্থ হয়েছিলাম। নিজেকে শক্ত করেছিলাম। তাও এখন নড়বড়ে। এতোক্ষণ যন্ত্রণায় পুড়ছিলাম। এখন ভয় পাচ্ছি।মানসম্মানের ভয়।কখন কে দেখে ফেলে। কখন যে কার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সারাদিন ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম রাফির মুখোমুখি হবো। ভালোবাসার মানুষ আর বিশ্বাস দুটোই আমি হারিয়েছি।হারানোর কিছুই নেই আমার।মানসম্মানটা অন্তত বাঁচুক। আমি সাহসের সঞ্চয় করলাম।

—-
আমি রাফিকে বিকেল পাঁচটা নাগাদ লেকের কাছে আসতে বললাম। রাফি ঠিক কি কারণে বিয়ে করেছে আমার জানা নেই। অনেক লোভী পুরুষ থাকে যারা মনে করে বউ/গার্লফ্রেন্ড এর চেয়ে পরনারী সুন্দর। তাই বউ রেখে বিয়ে করে।আবার অনেকে গালফ্রেন্ডকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন‍্য নারীকে বউ করে। কেনো যেনো মিস ডায়নার কথাটা খুব মনে পড়ছিলো। “মিস ডায়না ছিলেন সবদিকেই সুন্দরী।তার স্বামী যখন পরকীয়ার কথা তার কাছে স্বীকার করেছিলেন।এরপরে সে একটি গাউন পড়ে লন্ডনের একটি প্রোগ্রামে গিয়েছিলেন।সেই ড্রেসটিকে রিভেঞ্জ ড্রেস বলা হয়।তিনি তার পারসোনাল মেকআপ আর্টিস্টকে বলেছিলেন। আজ তাকে যেনো এমন ভাবে সাজানো হয় যাতে সবাই বলে আমি ই বেষ্ট। আমার হাজব‍্যান্ড আমাকে চুজ করেনি। দোষটা আমার না তার।”রিভেঞ্জ আসলে এভাবেই নিতে হয়। নিজেকে দূর্বল করে নয় নিজেকে বেষ্ট করে গড়ে তুলে রিভেঞ্জ নিতে হয়।
আমিও সূত্রটি ফলো করলাম।
আমার ভেতরেও ব‍্যাথা মোমোর আলোর মতো টিপটিপ করে জ্বলছিলো। শুধু মনে হচ্ছিলো রাফিও সুন্দরের লোভেই যদি অন‍্যনারীকে বিয়ে করে থাকে। তাহলে আজকে আমি তার সামনে গিয়ে তাকে আমৃত্যু ভোগাবো। আফসোসের বন‍্যা বইবে জীবনের শেষ প্রান্তেও। এটিই হবে আমার প্রতিশোধ।যদিও আমার দূর্বল শরীর। তবুও মনের জোড় নিয়ে আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করলাম।তার সামনে কখনো শাড়ি পড়া হয়নি। প্রতিপক্ষের সামনে কখনো দূর্বল হতে নেই। হতে হবে কন্ফিডেন্ট আর স্ট্রং। যাতে দেখেই প্রতিপক্ষ দুধাপ পিছিয়ে যায়।

গোলাপী ব্লাউজের উপর সুভ্র সাদা শাড়ি পড়লাম, গলায় পড়লাম পাতলা চেইন। কানে ছোট্ট দুটো দুল।ডায়মন্ড কার্টের সাদা স্টোনের মায়ের চুড়ি জোড়া পড়ে নিলাম। চুল গুলোকে স্বাধীন করে উড়তে দিলাম। খোলা চুলে কখনো বাইরে যাইনি। কিন্তু আজ যে আমাকে সুন্দর লাগতেই হবে। সুন্দরের খোঁজে ‍যে পুরুষ আমাকে ছেড়ে অন‍্যত্র বিয়ে করলো। তার চোখে আমাকে বিশ্বসুন্দরী লাগতে হবে। যেনো সে আমৃত্যু আফসোস করে।

আমি বিকেল পাঁচটা নাগাদ লেকের পাড়ে দাঁড়ালাম। সে সময়মতো পৌঁছালো। আমি তার চোখে তাকাতে পারছিলাম না। প্রতারককে দেখে আমার বুক কাঁপছিলো। হাত পায়ের শক্তি ফুরিয়ে আসছিলো।অথচ সে মানুষটা কি সুন্দর বিয়ে করে এখন বুক ফুলিয়ে দেখা করতে এসেছে। মনে হচ্ছে কতোই না সৎ।মনে হচ্ছে আমিই চোর সেই পুলিশ।কিন্তু আমি তো চোর নই। চুরি যদি কেউ করে তাহলে সে। আমাকে হতে হবে আজ মিস ডায়না। আত্মবিশ্বাস না থাকলে চলবেই না। আমি ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়ালাম। চাইলাম সবচেয়ে মিষ্টি করে কথা বলবো। যাতে মনে হয় আমার চেয়ে মিষ্টি মেয়ে পৃথিবীতে দ্বিতীয়টা নেই। তারপর না আসল খেলা। সব কষ্টের হিসেব নিবো আমি। রাফি এলো। আমি সালাম দিলাম। সে উত্তর দিলো।তার চোখ দেখেই বুঝলাম সে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। লোভী,প্রতারক, ছ‍্যাবলা কোথাকার।মনে মনে বলতেই এই ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে সে বললো,
–তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। তোমার চুলগুলো এত্তো লম্বা এত্তো সুন্দর?

মনে মনে নিজেকে নোবেল দিচ্ছি। প্ল‍্যান সাকসেস। দেখ কেমন লাগে এখন। আমি ঠোঁট বাকিয়ে হাসলাম। তারপর বললাম,

— আরে না কি বলো?
সে চোখের পলক না ফেলেই বললো,
— অপ্সরী

আমি মনে মনে ভাবলাম,
কতো রুপ মানুষের। কতো সুন্দর মিথ‍্যা বলে অবলিলায়। একনারীকে বিয়ে করে অন‍্য নারীর সৌন্দর্যের বর্ণনা করছে। আমার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো। তবুও সত‍্যির মুখোমুখি আমি হবোই। আমি বললাম,

— রাফি তোমাকে একটা কথা বলবো।

প্রতিউত্তর পাওয়ার আগেই পেছন থেকে একটা কালো গাড়ি এসে থামলো আমাদের সোজাসুজি। গাড়ি থেকে কয়েকজন নামলো। সমস্ত শরীর কালো পোশাকে ঢাকা। মুখ দেখার উপায় নেই কালো মুখোসে বাঁধা। তারা আমাদের দিকেই এগিয়ে এলো। কিছু বোঝার আগেই তারা কিছু একটা স্প্রে করলো। রাফির সাথে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হলো। একপর্যায়ে ওরা রাফিকে গাড়িতে তুলে নিলো। আমার চোখের সামনে সব ঝাপসা। তারপর ই জ্ঞান হারিয়েছি।

–“বিশ্বাস করুন স‍্যার এর বাইরে আমি কিচ্ছু জানি না।”

এতোটুকু বলে দম নিলো সিনথিয়া।সামনের চেয়ারে বসে আছে এই শহরের সৎ,নিষ্ঠ,আদর্শবান এসপি ইরফাদ সিনহা জয়।

সেদিনের পর রাফিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সিনথিয়া জ্ঞান হারিয়ে পড়েছিলো লেকের ধারে। তাকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলো পথের মানুষজন। যেহেতু রাফিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। থানায় মিসিং ডায়েরি করা হয়েছে।রাফির কল লিষ্ট চেক করে যে নম্বরটি শেষে পাওয়া গেছে তা সিনথিয়ার নম্বর। আর শেষ কথা যেহেতু সিনথিয়ার সাথেই হয়েছিলো।এমনকি শেষ লোকেশনে সিনথিয়া আর রাফিকে একই জায়গায় দেখা গিয়েছে। তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই আঙ্গুল সিনথিয়ার দিকেই উঠছে। কিছু মেসেজ চেক করে জানা গেছে সিনথিয়ার সাথে রাফির প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। যেহেতু কিছুদিন আগে রাফি বিয়ে করেছে। এই তথ‍্য মোতাবেক ধরে নেওয়া হচ্ছে কি*ডন‍্যাপিং এর মাস্টারমাইন্ড সিনথিয়াই। রাফিকে প্ল‍্যানমাফিক অন‍্যের দ্বারা গুম করে নিজেকে বাঁচানোর জন‍্যে জ্ঞান হারানোর নাটক সাজিয়েছে। রাফি নিখোঁজ হওয়ার আগ মূহুর্তে দুজনকে একই লোকেশনে দেখা গেছে। এই সূত্র ধরে সিনথিয়াকে থানায় ডাকা হয়েছে।

ডিআইজি যতো ধরণের ক্রিটিক‍্যাল কেস এসপি সিনহা কে দিয়েই সলভ করান। ডু অর ডাই অবস্থার কেস গুলো এসপি সিনহার হাতে তুলে দিয়েই তিনি নিশ্চিন্ত হন। কিন্তু এই কেসটি এসপি সিনহা নিতে চাননি। তবে ডিআইজি জানেন রায়হান রাফি এখন জীবন মরণের মাঝখানে ঝুলছেন।এই সকল ক্রিটিক‍্যাল কেস এসপি সিনহা হাত ধরেই সমাধান সম্ভব।যাতে সাপও মরে লাঠিও না ভাঙ্গে। রোগী মরার আগে ডাক্তার হাজির করতে না পারলে পুরো দেশ ছড়িয়ে যাবে। “প্রেমিকাকে না জানিয়ে প্রেমিকের অন‍্যত্র বিয়ে। অতঃপর প্রেমিকার প্ল‍্যানে প্রেমিক খুন।পুলিশকে জানানোর পরেও বসে বসে তারা আঙুল চুসেছেন। কাজের কাজ করেন না। সরকার শুধু শুধু বেতন দিয়ে পালেন।”

এমনিতে তো পুলিশের দোষের অভাব নেই। তাই ডিআইজি নির্দেশ দিয়েছেন কেসটি এসপি সিনহাকেই সলভ করতে হবে।কি আর করা। তাই এসপি সাহেব তার কাজে নেমে গেছেন।

পুলিশি জিঙ্গাসা বাদের “পেপার এন্ড সল্ট” নরম এবং গরম পদ্ধতিতে কি করে তথ‍্য আদায় করতে হয় তা এসপি ভালো মতোই জানেন।টেবিলের এক প্রান্তে বসে আছে ইরফাদ সিনহা জয়। অপর প্রান্তে সিনথিয়া।
বিশালাকার ছয় ফুটিয়া সুদর্শন পুরুষটির হাতে রিভলবার। ট্রিগারে আঙ্গুল রেখেছেন। রিভলবারটি তাক করে রেখেছেন সিনথিয়ার হাতের উপর। কথার মধ‍্যে মিথ‍্যার আভাস পেলে ট্রিগার চেপে দিবেন এই ভয় ই দেখিয়েছেন মুখোমুখি বসার আগে। তার এতো লুতুপুতু করে কথা বের করার টাইম নেই। হয় এসপাড় নয় ওসপার। তবে পুরোটা সময় সিনথিয়া একবারের জন‍্যেও চোখ তুলে তাকায়নি। সে তার কথার উপর অবিচল। হাতের উপর ভারী পিস্তলের অস্তিত্ব থাকলেও সে একদমে পুরো গল্পটা বলে গেছে। বাইশ বছরের মেয়েটি যেনো পাথরে পরিণত হয়েছে। ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে মেয়েটা।এসপি ইরফাদ সিনহা পিস্তলটা সরিতে নিলেন। মেয়েটির নিরবতা, নিস্তব্ধতা দেখে একটু গমগমে স্বর পাল্টে একজন সাধারণ স্বাভাবিক স্বরে কথা বললেন,

— হোয়াট আ থ্রিলিং স্টোরি।এরপর কি হবে এটা ভাবতেই তো আমার রাতের ঘুম ই চলে যাবে।রিয়েলি হার্ট টাচিং। মুভি বানানো যাবে।

সিনথিয়া এসপি সিনহার আকস্মিক স্বর পরিবর্তনে অবাক হলো।আসার পর থেকে এসপির গলা ছিলো বাঘের গর্জনের মতো গমগমে। দূর থেকে শুনেও মনে হচ্ছিলো সে বাঘের খাঁচায় ঢুকছে। তার আর রক্ষা নেই।দেখতে অতি মাত্রায় সুদর্শন হলেও ভয়ে প্রয়োজনেও মানুষটার দিকে দ্বিতীয় বার তাকায়নি সিনথিয়া। সে ধরেই নিয়েছিলো বাঘের খাঁচায় ঢুকছে এদিক সেদিক হলেই সোজা উপরে চলে যাবে । যা বলতে বলেছে একলাইন ও এদিক সেদিক করেনি। কিন্তু হঠাৎ এসপির নরম স্বরে কথা শুনেও সিনথি ধীরে ধীরে চোখ তুলে তাকালো। সামনে বসে থাকা সুন্দর সুপুরুষটি তার কথায় মৃদু হাসছে।

–তিনি কি মজা নিচ্ছেন।
সিনথিয়ার ভিষণ রাগ হলো। এতোক্ষণ হাতের তালুর উল্টোপিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে, এতো রূঢ় ব‍্যবহার করে এখন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছে।মজা নিচ্ছে? সিনথিয়া একটু ইতস্তত বোধ করলো।

এসপি সিনহা যেনো উপহাস করে বললো,

— তোমার মতো পুচকে মেয়ে করবে কি*ড*নাপ /মা*র্ডা*র। হাউ ফানি। কোথেকে এসব ধরে নিয়ে আসে আমাদের ডিআইজি সাহেব। সময় নষ্ট শুধু। ইউ ক‍্যান গো নাউ মিস সিন্ড্রেলা।

এসপি ইরফাদের এমন কথায় সিনথির মুখটা কালো হয়ে এলো। কেমন মানুষ। ঘন্টার মধ‍্যে কতো রূপ দেখাচ্ছে। এই ভয় দেখাচ্ছে, ইমোশনের গল্প শুনে মজা নিচ্ছে, আবার তাচ্ছিল্য করছে, উপহাস করছে। কথা বলার ইচ্ছা না থাকলেও সিনথিয়া বললো,

— সিন্ড্রেলা না সিনথিয়া..

— আপাদত তুমি সিন্ড্রেলা। সিন্ড্রেলার গল্প শুনেছো?আশা করি জানো। এই কেসের সিন্ড্রেলা তুমি। শতভাগ ক্লু যখন মিলে যাবে তার মানে জুতো তোমার পায়ে যখন লেগে যাবে। থানায় তুলে নিয়ে আসবো মিস সিন্ড্রেলা।

সিনথিয়া বোকা বনে গেলো। কেমন লোক রে বাবা। এই বললো, আমাকে দ্বারা এসব কি*ড*ন‍্যাপ সম্ভব না।উপহাস করলো। আবার বলছে, জুতো তোমার পায়ে লাগলে তুমিই সিন্ড্রেলা। মানে আমিই কিডনাপার।ছেড়েও দিলো না ধরেও রাখলো না। এমন কেনো মানুষটা।

____________

ক্লান্ত শরীর নিয়ে না চাইতেই ঘুমে তলিয়ে গেলো সিনথি। এতো প্রেশার সে নিতে পারছে না। কি অন‍্যায় করেছিলো সে। ভালোইতো বেসেছিলো শুধু। এখন সবদিক দিয়ে সে ফেঁসে গেছে। এই বেড়াজাল থেকে সে কোনো ভাবেই বের হতে পারছেনা।

ঐদিকে বস্তির ময়লার স্তুপে অজ্ঞাত পুরুষের মরদেহ পাওয়া গেছে। লাশ উদ্ধার করে ল‍্যাবে পাঠানো হয়েছে। লাসের পকেট থেকে বেড়িয়েছে একটি ফোন। আর ফোনের ভেতরে সীমকার্ড। সীমকার্ডটি কার নামে রেজিস্ট্রি করা সেটি নিশ্চিত করতে পাঠানো হয়েছে। সবশেষে জানা যায় সিমটি সিনথিয়ার নামে রেজস্ট্রি করা। যেহেতু রাফি নিঁখোজ সাথে মরদেহের ফোনে সিনথিয়ার সিমকার্ড। পুলিশসদশ‍্য সবাই ভেবে নিলো সিনথিয়াই মাস্টারমাইন্ড। এসপি ইরফাদ সিনহার নির্দেশে সহকারী পুলিশ অফিসার সিনথিয়ার সচল নম্বরে কল দিলেন।

— মিস সিনথিয়া বলছেন?

–জ্বি
— একটি অজ্ঞাত লাশ পাওয়া গেছে। আর সে লাশের পকেটে থাকা ফোনে পাওয়া গেছে সিমকার্ড। সিমকার্ডটি আপনার নামে রেজিস্ট্রি করা। বুঝতেই পারছেন আশা করি। ইরফাদ সিনহা স‍্যার আপনাকে থানায় দেখা করতে বলেছেন। ঠিক সময়ের মধ‍্যে থানায় চলে আসবেন।

সিনথিয়া হৃদস্পন্দন থেমে গেলো। মাথার মধ‍্যে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।কিসব হচ্ছে তার সাথে। যদি লাশটা রাফির হয়। পুরো পৃথিবীর কেউ তার ইমোশনের গল্প বসে বসে শুনবে না।সবাই ভাববে সেই মার্ডারার। আইন চাইবে প্রমাণ। সে কি করে বোঝাবে যার একটা পোকা মারার সাহস নেই সে করবে মার্ডার?

#গল্পটা থ্রিলার ক‍্যাটাগড়ির হবে। আমি চাইবো সবাই আমাকে ভিষণ ভাবে সাপোর্ট করবেন। তাহলে আমি আপনাদের এমন কিছু লেখনি উপহার দিবো যা আপনাদের হৃদয় স্পর্শ করবে। আমি চাই সবাই গঠনমূলক আলোচনা করুন। প্রত‍্যেকটা রহস‍্য, প্রত‍্যেকটা প্রশ্নের উত্তর ধাপে ধাপে আসবে। আস্থা হারাবেন না।

#কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here