নীলের_পরি (৪)

0
17

#নীলের_পরি (৪)

নীলের কথাতে মিসেস সুলতানা বেশ ভয় পেয়ে যান।
তার খেলার কিছুটা হলে ও যে নীল ধরে ফেলেছে, তা নীলের কথার মাঝে ই বুঝতে পারছেন ওনি। নীল মিসেস সুলতানার হাতে একটা চেইক ধরিয়ে দিয়ে বলল, “ফুপি আম্মা,এর জন্য ই তো এত রঙ ঢং তামাশা। দিয়ে দিলাম, আফসোস আমি যথাসম্ভব গুরুজন দের সম্মান করি। না হলে আজকের এই মুহূর্তে আপনি মুখ দেখানোর সুযোগ পেতেন না।

মিসেস সুলতানা চুপসে গেলেন। কারণ এই মুহূর্তে কিছু বলা মানেই নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মা রা। সুলতানা বেগম চুপচাপ সমস্তটা দেখতে লাগলেন। আশে পাশের সবাই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। কারণ তারা কিছু বললেই না তাদের উপর গু লি ছাড়া হয়। বিয়ে বাড়িতে এমন পরিস্থিতির স্বীকার কেউ ই হয় নি বোধহয়।

পরি কে আনা হলো, পরি সমস্তটা এখনো নীরব দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছে বললে ভুল হবে ও যে নিজের মধ্যে ই নেই। শুধু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নীল এসেছে। বিয়ের কার্যক্রম শুরু হলো , কিছুক্ষণ পর পরির মা বাবা কে ও আনা হলো। পরির বাবা মা চেচামেচি শুরু করে দিয়েছেন।
পরির বাবা রেগে নীল কে বললেন,”এই ছেলে আমার মেয়ে কে ছাড়ো,কি হচ্ছে এসব। আর তুমি ই বা কে? তোমাকে আমি পুলিশে দিব,এখনি পুলিশ কে ইনফর্ম করছি।”

নীল একটু হাসল। তারপর বলল,” শশুর মশাই ক্ল্যাম ডাউন। পুলিশ কে ইনফর্ম করে কোনো লাভ ই হবে না।”

পরির বাবা আফজাল হোসেন পুনরায় চেচিয়ে বললেন
,”মানে টা কি? আমি এখনি পুলিশ কে ইনফর্ম করব।
আমার মেয়ে কে জোর করে বিয়ে করা হচ্ছে। এখনি সব বাদরামি যাবে চলে।”

নীল স্টেজ থেকে লাফিয়ে নেমে পরির বাবার সামনে আসল। তারপর পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে একটা কল দিল। আফজাল হোসেন রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে বললেন,”কাকে ফোন করছ? আমার সাথে ফাজলামি কর?”

নীল শান্ত স্বরে বলল, “আপনি ই তো পুলিশ কে ইনফর্ম করবেন বললেন। জামাই থাকতে শশুর কেন কষ্ট করবে? তাই তো হেল্প করছি।”

আফজাল হোসেন কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নীল আফজাল হোসেনের কানে ফোন ধরে বলল,”কথা বলুন শশুর মশাই।”

আফজাল হোসেন কিছু বলবে তার আগেই কমিশনার এর আওয়াজ পেলেন। তাই কিছু বললেন না। আফজাল হোসেন জোরে বললেন,”স্যার এই ডাফার টা আমার মেয়ে কে জোর করে বিয়ে করছে। আপনি তাড়াতাড়ি আপনার ফোর্স পাঠান। এই রাসকেল টা কে এখনি জেলে ভরুন।”

নীল বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনছে। মনে হচ্ছে ও কোনো সিনেমার শুটিং দেখছে।
আফজাল হোসেন নীলের দিকে তাকাতেই নীল ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বলল,”শশুর মশাই আপনি আপনার এক মাত্র জামাই কে পুলিশে দিতে চাচ্ছেন। এটা কি ঠিক?”

আফজাল হোসেন জোরে বললেন,”ডাফার, রাসকেল।”

পুলিশ কমিশনার আফজাল হোসেন কে শান্ত হতে বললেন।
আফজাল হোসেন বললেন,”এমন অবস্থায় কি করে শান্ত থাকব? আপনি তাড়াতাড়ি আপনার ফোর্স পাঠান।”

কমিশনার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,”উই আর সরি মিস্টার হোসেন। আমাদের কাছে ইনফরমেশন আছে আপনি আপনার মেয়ে কে জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন। আর তাছাড়া নীল স্যার এর সামনে আমাদের ক্ষমতা নেই কিছু করার।”

আফজাল হোসেন চেচিয়ে বললেন,”হোয়াট। আপনি কি সব বলছেন? আমাকে কি পাগল মনে হচ্ছে? দেশের কি কোনো আইন কানুন নেই নাকি?”

কমিশনার হালকা হেসে বললেন,”আইন কানুন থেকেই বলছি। আপনাদের নামে যে প্রুফ আমাদের কাছে দেওয়া হয়েছে তাতে আপনাদের ওপর ই চার্জ নিতে হবে। আর তার উপর নীল স্যার যেখানে আছেন সেখানে তো কোনো প্রশ্ন ই আসে না। উই আর সরি মিস্টার হোসেন।”

আফজাল হোসেন রাগে কটমট করছেন। ফোন টা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। যার কারণে ফোন টা কয়েকটা টুকরো হয়ে গেল।

নীল জোরে শব্দ করে হেসে বলল, “বিয়ে হয়ে যাক শশুর মশাই। তারপর আপনাকে ১০০ টা ফোন এনে দিব, সেগুলো না হয় ধীরে ধীরে ভা ঙ বেন।”

আফজাল হোসেন তেড়ে এসে নীলের কলার ধরলেন। তারপর বললেন,”আমার মেয়ে কে ছাড় , না হলে খু ন করে ফেলব তোকে।”

নীল কলারের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,”জীবন থাকতে নয়, নিশ্বাস যতক্ষণ আছে পরি কে আমি ছাড়ব না।
তা ও ঐ ডাফার ইউসলেস প্রান্তর জন্য কখনোই নয়।
পরি রাজি থাকলে ও ছাড়তাম না, আর এখানে তো পরি রাজি ই নয়।”

আফজাল হোসেন নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ঠাটিয়ে চ ড় বসিয়ে দিলেন নীলের গালে। নীলের লোকে রা তেড়ে আসতে লাগলেই নীল হাত দিয়ে নিষেধ করল।
তারপর ওদের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল,”আমি বলেছি তোদের? বলেছি? ওনার দিকে তেড়ে আসার সাহস কি করে হয়? ফারদার যেন এমন না হয় মে রে ফেলে রেখে দিব।”

নীলের রাগি কণ্ঠে চারপাশ স্তব্ধ হয়ে যায়। আফজাল হোসেন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। আর পরি এখনো সে ভাবে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। আশে পাশের কোনো কিছুতেই ধ্যান নেই ওর। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। নীল আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল ধর্ম মতে বিয়ে করবে না, শুধু মাত্র রেজিস্ট্রি করবে। বিয়ে না করে পরি কে তার সাথে নিয়ে যেতে পারবে না এমন নয় , কিন্তু একটা অবিবাহিত মেয়ে কে নিয়ে গেলে লোকে পরির নামে কলঙ্ক ছড়িয়ে দিবে। আর নীল তা কখনোই হতে দিবে না , তাই সকলের সামনে রেজিস্ট্রি করবে আর পরে সবার মতামত নিয়ে ধর্ম মতে বিয়ে। কারণ নীল জানে পরি এখন ঘোরের মধ্যে তে আছে।

নীল পরির দিকে একপলক তাকিয়ে নিলো। কি মায়াবি মেয়েটা , কিন্তু সে কতোটা কষ্ট দিয়েছে ওকে। পরির ভালোর জন্যই তো দিয়েছে , যদি একটু ও জানত এত বড়ো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাহলে সেই প্রথম দিন ই পরি কে বুকের ভেতর আগলে রাখত। কখনো ই দূরে সরিয়ে রাখতে না।

নীল মলিন হেসে ভাবল, আর কষ্ট দিব নারে তোকে।
এবার খুব ভালো রাখব , তুই শুধু আমার।

নীল রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দিল। পরির দিকে পেপার এগিয়ে দিলে ও পরির কোনো রেসপন্স নেই। নীল পরির গালে দু হাত রেখে বলল, “পরি আমার সাথে যাবে তো তুমি?পরি সাইন করে দেও পেপার এ। আমি তো তোমার নীল , আমার কথা শুনবে না তুমি?”

পরি নীলের দিকে তাকিয়ে হালকা মলিন হেসে সাইন করে দিল। মনে হচ্ছে ও পুতুল। যাকে নীল কোনো ইন্সট্রাকশন দিলে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছে। অবশেষে নীল আর পরির আইন মতে বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।

চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here