নীলের_পরি (৭)

0
194

#নীলের_পরি (৭)

খাওয়া শেষ হতেই নীল পরি কে বলল,”ফ্রেস হয়ে এসো।”

পরি মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল, কিন্তু পরক্ষণেই চুপসে গেল। নীল পরির কোনো হেলদোল না দেখে বলল,”কোনো সমস্যা হচ্ছে?”

পরি বেশ অস্বস্তি তে পরে গেল একে তো নীলের সাথে তিন বছর পর দেখা তার উপর এই সমস্ত ঘটনা। পরি কোনো মতেই অস্বস্তি কাটাতে পারছে না। নীল বিষয়টা খানিকটা বুঝতে পেরে বলল,”অস্বস্তি বোধ হচ্ছে? শোনো যেকোনো পরিস্থিতি তেই তো তুমি নিজেকে মানাতে সক্ষম আর আগে তো আমায় যখন তখন হুটহাট যা ইচ্ছে বলে দিতে। তাহলে আজ সংকোচ করছ কেন?”

নীলের কথাতে পরি খানিকটা লজ্জা পেল। কারণ সেই ছোট্ট সময় গুলো তে পরি যা তা কান্ড করত তা ভাবলেই পরির ম রে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। পরি নিজেকে সামলে নিয়ে যথাসম্ভব সংকোচ কাটিয়ে বলল,
“আসলে আমার তো জামা কাপড় লাগবে।”

পরি এই কথাটা বলেই নিচু হয়ে রইল। ওকে দেখে নীল ই
বোকা বনে গেল। আসলেই তো নীল যদি না বলে তাহলে মেয়েটা জানবে কি করে ওর জামা কাপড়ের কথা? নীল নিজের মনে নিজেকে কয়েকটা গালি দিয়ে তারপর কাবাড থেকে এক ডজন কাপড় বের করে পরির সামনে রাখল।
পরি কে কিছু না বলতে দিয়ে ই নীল বলল,”যেটা ইচ্ছে পরে নিও। সব তোমার ই। আমি একটু পর আসছি।”

এই বলেই নীল রুম থেকে হনহনিয়ে বের হয়ে গেল। পরি খানিকটা অবাক ই হলো নীল এত জামা কাপড় ও আনিয়ে রেখেছে দেখে! সব কিছু যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ওর।
কি হচ্ছে এসব? এটা কি সেই তিন বছর আগের নীল যে পরির একটা ম্যাসেজের রিপলে ও দিত না। পরি এ সমস্ত ভাবনার কোনো উত্তর পায় না। তাই সব ভাবনা বাদ দিয়ে শাওয়ার নিতে বাথরুমে চলে আসে।

নীল নিচে যেতেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। নীল কে দেখে অনিক যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। কারণ এতক্ষণ এরা সবাই পাগল করে দিয়েছে তাকে। অনিকের থেকে সমস্ত ডিটেলস নিতে ব্যস্ত ছিল ওরা। আর সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অনিকের যা তা অবস্থা। নীল ওদের পাশে সোফা তে বসতেই নীলের বন্ধুরা সবাই নীল কে আড় চোখে দেখতে লাগল। যার ফলে নীল ওদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু সংকুচিত করে বলল
“এভাবে ভ্যাবলার মতো কি দেখছিস?”

শুরুতেই লিমন ভ্রু নাচিয়ে বলল,”মামম্মা এই সমস্ত কিছুর মানে তো বোঝাও। পরির সাথে কি চলত আগে? হুম, আমরা যখন বলতাম তখন তুমি নিজে রে নিরামিষ দাবি করতে মিয়া। আর এখন দেখি তুমি পুরাই আমিষ!”

লিমনের কথাতে নীল শ্বাস ফেলল। তারপর বলল,”এই সব কিছু ই না। তোরা যা জানতি তাই সত্যি শুধুমাত্র ওর প্রতি মনের অনুভূতি টা তদের কে জানাই নি। দ্যাটস ইট।”

নিশাত চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। সে মনের কথাটা এবার বলেই ফেলল।
“মানে কি?”

নীল সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,”মানে কিছুই না।
ওকে আমি সেই প্রথম থেকেই ভালোবাসি। কিন্তু ওকে বলি নি। আর দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাই বলে তো আমি ওকে সারা জীবনের জন দূরে সরাতে পারি না।ওকে ছাড়া প্রতি মুহূর্ত বি ষা ক্ত লাগে। কি করে ওকে অন্যের হতে দেই বল?”

সবাই একসঙ্গে বলে উঠল, “ওহ হোওও। মামম্মা তুমি তো সেই লেবেলের প্রেমিক।”

নীল মৃদু হেসে বলল,”এখন কি আপনারা ডিনার করতে যাবেন? নাকি এখনো মাথা টা নষ্ট করবেন?”

রিয়াদ বলল,”না দাদা ভাই এখন খুব ক্ষুধা লেগেছে।
তাড়াতাড়ি চলো। আর বসতে পারছি না।”

কিন্তু জিহান পথের বাঁধা হলো। সে বলল,”দাদা ভাই ভাবি নিয়ে আসলা এখন বাসর সাজাব না নাকি?”

নীল মুচকি হেসে বলল,”সে তো সাজাবি ই বটে তবে আজকে না যখন বিয়ে করব তখন।”

জিহান চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,”আবার বিয়ে? তোমার মনে কি চলে?”

নীলের এবার বেশ হাসি পেল। নিজেকে দমিয় রেখে বলল
“আরে বেটা আবার বিয়ে বলতে পরি কেই বিয়ে। কিন্তু সেটা সবার মতামত নিয়ে ধর্ম মতে হবে।”

লিমন বলল,”তুই বেটা জিনিস ই বটে।”

“তদের বন্ধু বলে কথা। একটু তো ডাফার হতে হবে।”

সবাই একসাথে হাসতে লাগল। তারপর সবাই একসাথে ডিনার করতে চলে গেল।

পরি শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে তোয়ালে দিয়ে ভালো মতো চুল গুলো মুছে নিল। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই সে নিজেকে দেখে চমকে গেল। কারণ সে তার নিজেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে দেখছে। মনে হচ্ছে একদিনের মাঝে ই কেউ ওর চেহারার লাবন্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে। নিজেকে দেখতে বেশ ভালো লাগছে ওর। মাথার চুল গুলো খুলে রেখেই সুন্দর করে বেঁধে নিয়ে বেডে এসে বসে পড়ল। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। রুমটা এত সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা আর এত সুন্দর ডেকোরেশন যে পরি বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে চারপাশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। বিশাল বড়ো রুমের পাশে খোলা বারান্দা। পরির ইচ্ছে হলো একটু বারান্দাতে যেতে। তাই সে বারান্দা তে চলে গেল। বারান্দায় গিয়ে হা হয়ে গেল তার মুখ। এটাকে কি বলে তা পরির জানা নেই,কারণ এটা রীতি মতো একটা ছোট্ট পার্ক! বারান্দা টা রুমের থেকে ও বিশাল। রুমের থেকে বারান্দা বড় হয় তা পরির জানা ছিল না। এটা খোলা বারান্দা নয় বরং ছাঁদ হয়ে গেছে। চারপাশে নানা রকমের ফুল গাছ লাগানো। এক সাইটে বিশাল বড় দোলনা যা আরটিফিশিয়াল ফুলে সজ্জিত। চারপাশে রঙিন ড্রিম লাইট লাগানো আর থেকে থেকে নানান ধরনের পশু পাখির স্ট্যাচু। সেই স্ট্যাচু গুলো তে বসার জন্য সুন্দর আসন।

এই বারান্দার মাঝে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য দেখে পরি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গেল। তারপর ছুটে গিয়ে সেই সমস্ত সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগল। পরি এই মুহূর্তে সেই ছোট্ট বাচ্চা পরি হয়ে গেছে। মনের মধ্যে সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। আজকের ঘটনা গুলো পরির মন থেকে এই মুহূর্তে আকাশের মেঘ হয়ে উবে গেছে। পরির এই ছোট্ট বাচ্চামি গুলো দরজার পাশে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে লাগল নীল।
তার মনে হচ্ছে,হাজার বছর ধরে খাঁচায় থাকা কোনো বন্দিনী আজ মুক্তি পেয়েছে। যার জন্য মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে। এই সুন্দর মূহুর্তে নীল পরির বাচ্চামো তে হারিয়ে গেল। তার মনে হতে হলো, ইস যদি এই সময় টা থমকে যেত। খুব কি ক্ষতি হত?

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ ন‍ৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here