নীলের_পরি (১৪

0
159

#নীলের_পরি (১৪)

হলুদে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে পরি। কিন্তু হলুদের শাড়ি পরা টা পরির কাছে খুব ই বিদঘুটে ব্যাপার। ও কখনো শাড়ি পরে নি। খুব ই অস্বস্তি হচ্ছে ওর। কোনো রকমে শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে পরি। মনে হচ্ছে এই বুঝি খুলে গেল। পরি কোনো মতে শাড়ি ধরে ধীরে ধীরে বাসে উঠে বসল। মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে মেয়ের বাড়ি। কিছুক্ষণের মাঝেই পৌছে গেল ওরা। পরি শাড়ি ধরে হালকা পায়ে বাস থেকে নামল। এমন ভাবে হাঁটছে যেন মাটি ও ব্যাথা না পায়। পরি কে এভাবে দেখে পরির কাজিন সিমা মুখ চেপে হাসছে।
পরি রাগি চোখে তাকাতেই সিমা দমে গেল। একটু দূরেই বিশাল বড় গেইট ধরে দাঁড়িয়ে আছে মেয়ের পক্ষের বিশাল বাহিনী ।

মেয়ের পক্ষের কোন মহামান্য ব্যক্তি আসলে নাকি ঢুকতে দিবেন। যত্তসব! পরি বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাইক নিয়ে এন্ট্রি নিল নীল। পরির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। এই ব্যাটার জন্য সবাই কে এত ক্ষন দাঁড় করিয়ে রেখেছে। নীল কে ঘিরে দাঁড়াল সবাই।
পরির মনে হচ্ছে কোনো মিনিস্টার কে অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে। নীল এসেই সবার সাথে কতোক্ষণ কি যেন আলোচনা করে নিল। পরি আড়চোখে কোনে পক্ষের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর ইচ্ছে করছে সব গুলো কে আস্ত কাঁচা ই খে য়ে ফেলতে। বেশ কিছুক্ষণ পর মহামান্য ব্যক্তিদের আলোচনা শেষ হলে বর পক্ষ কে ঢুকতে দিল। পরির এই সব আহ্লাদ সহ্য হচ্ছে না তাই ও ব্যস্ত পায়ে হাঁটা শুরু করল। গেইট দিয়ে ঢুকতেই পরির ক্লাসের ছেলে গুলো পরি কে স্প্রে মে রে স্নো গার্ল করে দিল। পরি ছোট ছোট চোখ করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। হাফসা পরি কে এই অবস্থা তে দেখে আচ্ছা করে ওদের ঝেড়ে দিল। কিন্তু ওরা হাফসা কে পাত্তা না দিয়ে বলল,”দেখ এখন থেকে পরি আমাদের বেয়াইন সো ফাজলামি করার পুরো হক আছে।”

পরি মুখ বাঁকিয়ে বলল,”আমাদের ঐ খানে একবার যা তারপর দেখিস তোদের কি করি।”

পরি কে নিয়ে হাফসা ওর ফুফুর রুমে চলে গেল। পরি কে পরিষ্কার করে দিয়ে শাড়ি টা ঠিক করে দিল। তারপর অনুষ্ঠান মঞ্চে চলে আসল। হাফসা সহ কিছু মেয়ে মাথার উপর ওড়না ধরে ডান্স করতে করতে কনে কে নিয়ে আসল। কনে কে অনুষ্ঠান মঞ্চে বাসাতেই সবাই হলুদ লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কোথা থেকে নীল আর কয়েকটা ছেলে অথার্ৎ রিয়ার ( কনে ) সব ভাইরা হলুদ নিয়ে লাফালাফি করা শুরু করে দিল। পরির বেশ বিরক্ত লাগল। এই ছেলেটা কে সহ্য ই করতে পারে না পরি। কেন যে এমন হয় কে জানে?

কিছুক্ষণের মাঝেই একজন লোকাল গায়ক গান শুরু করে দিলেন। সবাই গানের তালে তালে নাচতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে বর পক্ষ বাসাতে ফিরে আসল। কারণ একটু পর তো কনে পক্ষ হলুদ লাগাতে আসবে। কিছুক্ষণের মাঝেই মেয়ে পক্ষ হলুদ নিয়ে চলে আসল। পরি শাড়ি পরে থাকায় বেশ অস্বস্তি বোধ করছিল। তাই হলুদ লাগিয়ে বের হয়ে আসল। পরি বাসায় যাওয়ার জন্য মাটির রাস্তা তে আসতেই দেখতে পেল নীল ফোনে কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। এক মূহুর্তের জন্য পরির চোখ দুটো নীলে আটকে গেল। রাস্তাতে লাগানো ছোট ছোট রঙিন আলোতে নীল কে অপূর্ব লাগছে। নীল স্কাই ব্লু রঙের পাঞ্জাবি পরেছে হাতা টা কনুই পর্যন্ত মুরানো আর সানগ্লাসে নীল কে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে। নীল কে মনে হচ্ছে সদ্য ফোঁটা কোনো ফুলের সুবাস।

এই মুহূর্তে নীলের জন্য পরির ইচ্ছে করছে দু লাইন কবিতা লিখে ফেলতে। ছেলেরা ও বুঝি এতো মায়াবি হয়? নীলের ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা স্নিগ্ধ হাসি টা দেখে পরির বুকের ভেতর ধুম করে উঠল। নীল কে এত নিষ্পাপ লাগছে কেন?
সবাই তো বলে নীল নাকি মেয়েদের সাথে ফ্লাট করে, তাহলে?

পরির বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে। পরি এক মুহূর্ত দেরি না করে বাসায় চলে আসল। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে ফোন হাতে বসে পড়ল। নীল কে হঠাৎ ই এত ভালো লাগছে কেন? পরি কোনো কিছু না ভেবেই নীল কে ম্যাসেজ দিল। টুকটাক কথা হলো ওদের। কিন্তু নীল কে এখনো জানানো হয় নি ও রূপা নয় কারণ পরি আসল সত্যি টা জানতে চায়। কেন জানতে চায় তা পরি ও জানে না। কিন্তু সব কিছুই ওকে জানতে হবে।

বিয়ের দিন নীলের সাথে দেখা হলো না পরির। পরি দের তাড়া থাকায় বিয়ে হওয়ার পর পর ই বাসায় ফিরে আসে ওরা। নীল কে দেখতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু কেন এই বাসনা? পরি ভেবে পায় না। হঠাৎ করেই যেন পরি নীলের উপর দুর্বল হয়ে গেল। পরি মন খারাপ করে বাসাতে বসে রইল। মনে পড়ল ম্যাসেজ দেওয়ার কথা। তাই পরি হন্তদন্ত হয়ে ম্যাসেজ দিল কিছুক্ষণের মাঝেই নীল রিপলে দিল।
পরি বলল,”কেমন গেল আজকের দিন?”

“হুম অনেক ভালো।”

“জি এফ খুঁজে পেয়েছ?”

“হ্যাঁ পেয়েছি কয়েক জন। আর ও কয়েকজন দরকার। তোমার চেনা জানা কেউ থাকলে খুঁজে দেও।”

পরির রাগ হলো না কিন্তু খুব অভিমান হলো। পরি কিছু বলল না। বেশ কিছুক্ষণ পর রিপলে দিল,”হুম খুঁজে দিব নে।”

“হুম।”

তারপর টুকটাক কিছু কথা বলে পরি ডিনার করতে চলে গেল। একটু খাবার মুখে দিয়েই পরি আর খেল না।
ভালো লাগছে না ওর। প্লেটে পানি ঢেলে উঠে গেল।

আজ বউভাত। পরি সহ কিছু কাজিন মিলে ঠিক করেছে স্প্রে এর বদলা নিবে। তাই রাস্তার মাঝে এক গাদা স্প্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই একের পর এক কনে পক্ষের লোক আসতে লাগল।

গেইট দিয়ে যেই ঢুকছে তাকেই স্প্রে দিয়ে ভূত বানিয়ে দিচ্ছে। এই নিয়ে হাসাহাসি ও হচ্ছে বেশ। পরি সহ সবাই বাড়ির ভেতর যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পেছন থেকে একটা বাইক আসতে লাগল। নেহা বলল,”পরি এই বেটা কে ও ভুত বানাব।”

বাইকটি সামনে আসতেই পরি সহ সবাই স্প্রে দিয়ে বর্ষন তুলে দিল। কিন্তু বাইকে থাকা ছেলেটা বাইক চলতি অবস্থা তেই ওহ হোও শব্দ করে দু দিকে দু হাত মেলে দিল। পরি লক্ষ্য করল এটা নীল। পরি এক দৃষ্টিতে নীলের বাইকের দিকে চেয়ে রইল। এই রকম ফ্লিমি এন্ট্রি দেখে পরির বাকি কাজিন রা তো ক্রাশ খেল। পরির খুব রাগ হলো। এত ভাব নেওয়ার কি ছিল। পরি কোনো কথা না বলেই বাড়িতে চলে আসল। সন্ধ্যার দিকে বউ বিদায় দেওয়া হবে বলে আবার আসল। পরির মন টা একদম ভালো নেই। কেন বার বার পরি নীলের উপর আসক্ত হয়ে যাচ্ছে? কিছুই ভালো লাগছে না ওর। ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেই ছিঁড়ে ফেলতে।
বউ বিদায়ের সময় নীল কে আর দেখল না পরি। বউ কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর পরি সোফাতে বসে আনমনে ভাবছে। একটু পরে একটা বাচ্চা এসে একটা চকলেট এর বক্স ধরিয়ে দিয়ে গেল। কে দিয়েছে বলতেই বাচ্চা টা বলল
“আমি জানি না।”

বাচ্চা টা নিতান্তই ছোট পরি তাই আর প্রশ্ন করল না। বাচ্চা টা দৌড়ে চলে গেল। ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাসায় চলে আসল। কিছুই ভালো লাগছে না। সারাক্ষণ মাথায় নীল ঘুরছে। পরি বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে নীলের প্রতি এতো আকর্ষণ কি করে হলো।
বাসায় এসে ফোন স্ক্রল করতে লাগল। ফেসবুকে এসেই একটা স্ট্যাটাস দিল।

“হঠাৎ মায়ায় জড়ানো টা খুবই যন্ত্রণাদায়ক আর কারো প্রতি ঘৃনা থেকে আসক্ত হওয়া টা তো মারাক্তক ক্ষতিকারক।”

নীলের ম্যাসেজ চমকে উঠল পরি। নীল তো কখনো তাকে আগে থেকে ম্যাসেজ দেয় না। আজ কেন দিল? পরি তড়িঘড়ি করে ম্যাসেজ চেইক করল। ম্যাসেজ টা দেখেই পরি হা হয়ে গেল। পরি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলল। ফোন টা হাত থেকে কখন যে বেডে পড়ে গেছে সেই দিকে কোনো ধ্যান ই নেই পরির।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

নেক্সট
https://www.facebook.com/100076527090739/posts/297537929473775/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here